জাহীদ রেজা নূর
একটা নির্বাচন তো হয়েই যাবে। কিন্তু তারপর কী হবে? এ নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা কি দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে?ভাঙা রেকর্ডের মতো এই কথাগুলো স্মরণ করিয়ে দিতে হয়। অবস্থা এমন হয়েছে, এ কথাগুলোকে খুব একটা গুরুত্বও আর দেওয়া হয় না। ক্ষমতার রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এমন কোনো প্রতিষ্ঠান আর নেই। পত্র-পত্রিকার ধার কমে গেছে অনেকটাই।
ফেসবুক বা এ রকম যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় প্রত্যেকেই কথা বলছে, শুনছে কম। কথা বলার অধিকারটাই বহাল আছে, শোনার নয়। তাই সবাই যখন কথা বলতে থাকে, কেউই কারও কথা শোনে না, তখন যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়, তা পূরণ করা কঠিন। তাই মৌলিক জায়গাগুলোয় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা কতটা, সেটা নিয়ে আমরা আর মাথা ঘামাই না। তাই নির্বাচন আসলে জীবনযাত্রায়, ভাবনায়, পরিকল্পনায়, প্রায়োগিক আচরণে কী কী পরিবর্তন আনতে পারে, সেটা গৌণ হয়ে যায়।
বুঝলাম, একটা নির্বাচন হলে সংবিধান সমুন্নত থাকবে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা সচল থাকবে। সেটা তো আসলে কেতাবি কথা। যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তাতে এই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা সচল থাকার মানে কী? এর সুফল কি জনগণ পাবে? তারা কি আদৌ একটা অসাম্প্রদায়িক, সহনশীল সমাজে বসবাস করার সুযোগ পাবে? তারা কি তাদের মৌলিক অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারবে?
আমাদের দেশে বুদ্ধিজীবিতা এখন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটা সাদা চোখেই দেখা যায়। দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে মোক্ষ লাভ হতে পারে—এই চিন্তা যিনি করেন, তিনি আদৌ বুদ্ধিজীবী নন। যে মানুষই সত্য বলুন না কেন, তার পাশে দাঁড়ানোর মতো কজন মানুষ আছেন আমাদের দেশে? আমরা কার কথা শোনার জন্য আগ্রহী হব? ‘কে আমাদের পথ দেখাবে?’
২. আমজনতা অর্থনীতি বোঝে না। অর্জিত বা সঞ্চিতি অর্থ দিয়ে জীবনকে অর্থবহ করে তোলার উপায় খোঁজে মাত্র। মাস শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার সংস্থান হলে সেই টাকা দিয়ে জীবনের ছক কাটে। পারিবারিক বাজেটটাও দেশের বাজেটের মতো। কারও কারও বাজেটে টান পড়ে, কারও কারও থাকে উদ্বৃত্ত বাজেট। আমজনতা কোনো গবেষণা ছাড়াই বুঝতে পারে, অর্থব্যবস্থায় কিছু একটা ঘাপলা রয়েছে।
মাঝে মাঝে পত্রিকায় দেখা যায় হাজার কোটি টাকা পাচারের সংবাদ। দু-এক দিন সেই সংবাদ থাকে টক অব দ্য টাউন হয়ে। এরপর নতুন আরেক রাঘব বোয়ালের খবর প্রকাশিত হলে আগের চুরি-বাটপারির কথা ভুলে নতুনটা নিয়ে উৎসুক হয়ে পড়ে আমজনতা। মুখরোচক বেগমপাড়া আড্ডায় থাকার পর সুইস ব্যাংকে কার কত টাকা আছে, সেটা হয় আলোচনার বিষয়। ঋণখেলাপিরা কী করে কোনো শাস্তি ছাড়াই মহানন্দে জনগণের টাকা লোপাট করে যাচ্ছেন, সে কথা বলার পর ব্যাংকের সুযোগসন্ধানী কর্মকর্তাদের কথাও আসে আমজনতার মুখে। জনগণের টাকাকে নিজের টাকা মনে করে এই ব্যাংক কর্মকর্তারা যেভাবে কপট শিল্পপতিদের ঋণের ব্যবস্থা করে দেন, সেই আলোচনায় তাদের দিন কাটে।
আমজনতাও মাঝে মাঝে ভাবনায় পড়ে। যখন তারা নিজের কাছেই নিজে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, উন্নয়ন হচ্ছে বটে, কিন্তু উন্নয়নের নামে লুটপাটও তো হচ্ছে। এরপর তারা ভাবে, এক সরকার আসে, লুটপাটের জন্য একশ্রেণির সুবিধাভোগী সৃষ্টি করে, তারা দেশে ও বিদেশে আখের গোছায়, এরপর যদি আরেক সরকার আসে, তারাও তখন আগের সরকারের লুটপাটের পথগুলোকে নিজের পবিত্র পথ বলে গণ্য করে, নিজের সুবিধা বাড়ানোর জন্য আরও নতুন নতুন পথের সন্ধান করতে থাকে।
সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা এই লুটেরার দল উন্নয়নের নামেই ‘ধান্দা’টা করে। আমজনতা স্মরণ করে দেখার চেষ্টা করে, বিএনপির শাসনামলে হাওয়া ভবন কিংবা মিস্টার টেন পার্সেন্ট নামে হাওয়ায় কিছু কথা ছড়িয়েছিল। সে সময় যেকোনো বড় কাজের জন্য হাওয়া ভবনের আশীর্বাদের খবর ঘুরত এখানে-সেখানে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে হাওয়া ভবন হাওয়া হয়ে গেছে বটে, কিন্তু সেই ট্র্যাডিশন কি টিকে নেই? আমজনতা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকে।
কেন বাংলাদেশের এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে হলে তা পৃথিবীর যেকোনো স্থানের রাস্তার চেয়ে ব্যয়বহুল হয়, সেটা নিয়েও আমজনতা ভাবে এবং ভাবতে না চাইলেও তারা তখন দেশের নব্য ধনীদের তত্ত্ব-তালাশ করতে গিয়ে এমন এক মহা সত্য আবিষ্কার করে, যাতে তার অবস্থা হয় কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতো। তখন তারা ভাবতে বসে, কেন এত মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হয়? যাঁরা পড়াশোনা করে আরেকটু গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁদের কেউ কেউ বুঝে উঠতে পারেন, উন্নত বিশ্ব বিভিন্ন ‘প্রজেক্ট’-এর যে লোভনীয় প্রস্তাব নিয়ে আসে, তার বেশির ভাগের সঙ্গেই জাতির স্বার্থের কোনো যোগ নেই।
অবকাঠামো উন্নয়ন, এই সেবা, সেই সেবা বলে টাকার থলে নিয়ে বিদেশিরা অপেক্ষা করতে থাকে। আসলে একটা ছিপ নিয়ে তারা বসে পুকুরের পাড়ে। বড়শিতে কোনো মাছ ওঠে কি না, সেটাই দেখে। তারা ‘কীভাবে কীভাবে’ যেন একদল নীতিনির্ধারককে ‘ম্যানেজ’ করে ফেলে। তারপর সারা দেশে প্রচারণা চলতে থাকে, এই প্রজেক্ট হলে আমূল পাল্টে যাবে দেশের চেহারা।
তলে তলে দেখা যায়, আঁতাত হয়েছে যাদের সঙ্গে, তাদের চেহারা পাল্টে গেছে। আর এই যে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আসছে, তার সিংহভাগ নানাভাবে ফিরে যাচ্ছে ওই বড়লোক দেশগুলোতেই। স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার সময় ধনী দেশগুলো কিংবা বিশ্বব্যাংক বা এডিবির কর্মকর্তারা লুকিয়ে হাসতে থাকেন। তাঁরা দরিদ্র দেশটির সেই মানুষদের হাত করে নেন, যারা দেশের মান-সম্মান বিকিয়ে দিতে প্রস্তুত। ঋণ করে ঘি খাওয়ার কথা বলেছিলেন প্রাচীনকালের মনীষী চার্বাক। আমাদের সুযোগসন্ধানী দল চার্বাকের জড়বাদী দর্শন গ্রহণ না করেও ঋণের টাকায় ঘি খাওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করেছে। ঋণ করে শুধু নিজেরাই ঘি খায়, আমজনতার জন্য থাকে বুড়ো আঙুল।
আমজনতা যখন এ কথা বুঝতে শুরু করে, তখন তার মনে জন্ম নেয় ক্রোধ। সেই ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য সে অন্যদের সঙ্গে ঐক্য গড়ার প্রয়াস নেয়। সেই রাজনৈতিক দলকে খোঁজে যে দল জনতার ক্রোধ বুঝতে পারবে এবং আমজনতাকে এভাবে প্রতারণা করার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। অর্থলিপ্সুদের দেখিয়ে দেবে, এভাবে দেশের বারোটা বাজিয়ে বিদেশের দালালি করলে কেউই পার পাবে না।
কিন্তু যখন অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের হাত শক্ত করার জন্য নিজেকে তাদের কাছে সমর্পণ করে, তখন আমজনতা দেখতে পায়, এই দল তো কেবল অপেক্ষায় আছে, কখন ক্ষমতা বদলে যাবে আর প্রজেক্টগুলোর অর্থের জোগান চলে আসবে সেই দলের গভীরে বসে থাকা রাঘববোয়ালদের হাতে এবং তখন শুরু হবে অদ্ভুত এক খেলা! এখন যাঁরা অর্থ পাচারের সমালোচনা করছেন, তখন তাঁরাই অর্থ পাচার করবেন আর এখন যাঁরা অর্থ পাচার করছেন, তাঁরা তখন অর্থ পাচারের সমালোচনা করবেন। ভাইস ভার্সা।
এই তো, রোববারের কাগজে বেরিয়েছে সিপিডির ব্রিফিংয়ের খবর। বলা হচ্ছে, ব্যাংক থেকে ১৫ বছরে নাকি ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এখন হাওয়া ভবন আমলে কত টাকা লোপাট হয়েছিল, সে খবরটাও সামনে আসুক। আমজনতা তখন বুঝতে পারবে, আসলে ক্ষমতায় যাওয়ার অর্থটা কী!
নির্বাচনের আগে বা পরে আমজনতার কি যাওয়ার কোনো জায়গা আছে? আমজনতা তাহলে যাবে কোথায়?
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
একটা নির্বাচন তো হয়েই যাবে। কিন্তু তারপর কী হবে? এ নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা কি দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে?ভাঙা রেকর্ডের মতো এই কথাগুলো স্মরণ করিয়ে দিতে হয়। অবস্থা এমন হয়েছে, এ কথাগুলোকে খুব একটা গুরুত্বও আর দেওয়া হয় না। ক্ষমতার রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এমন কোনো প্রতিষ্ঠান আর নেই। পত্র-পত্রিকার ধার কমে গেছে অনেকটাই।
ফেসবুক বা এ রকম যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় প্রত্যেকেই কথা বলছে, শুনছে কম। কথা বলার অধিকারটাই বহাল আছে, শোনার নয়। তাই সবাই যখন কথা বলতে থাকে, কেউই কারও কথা শোনে না, তখন যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়, তা পূরণ করা কঠিন। তাই মৌলিক জায়গাগুলোয় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা কতটা, সেটা নিয়ে আমরা আর মাথা ঘামাই না। তাই নির্বাচন আসলে জীবনযাত্রায়, ভাবনায়, পরিকল্পনায়, প্রায়োগিক আচরণে কী কী পরিবর্তন আনতে পারে, সেটা গৌণ হয়ে যায়।
বুঝলাম, একটা নির্বাচন হলে সংবিধান সমুন্নত থাকবে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা সচল থাকবে। সেটা তো আসলে কেতাবি কথা। যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তাতে এই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা সচল থাকার মানে কী? এর সুফল কি জনগণ পাবে? তারা কি আদৌ একটা অসাম্প্রদায়িক, সহনশীল সমাজে বসবাস করার সুযোগ পাবে? তারা কি তাদের মৌলিক অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারবে?
আমাদের দেশে বুদ্ধিজীবিতা এখন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটা সাদা চোখেই দেখা যায়। দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে মোক্ষ লাভ হতে পারে—এই চিন্তা যিনি করেন, তিনি আদৌ বুদ্ধিজীবী নন। যে মানুষই সত্য বলুন না কেন, তার পাশে দাঁড়ানোর মতো কজন মানুষ আছেন আমাদের দেশে? আমরা কার কথা শোনার জন্য আগ্রহী হব? ‘কে আমাদের পথ দেখাবে?’
২. আমজনতা অর্থনীতি বোঝে না। অর্জিত বা সঞ্চিতি অর্থ দিয়ে জীবনকে অর্থবহ করে তোলার উপায় খোঁজে মাত্র। মাস শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার সংস্থান হলে সেই টাকা দিয়ে জীবনের ছক কাটে। পারিবারিক বাজেটটাও দেশের বাজেটের মতো। কারও কারও বাজেটে টান পড়ে, কারও কারও থাকে উদ্বৃত্ত বাজেট। আমজনতা কোনো গবেষণা ছাড়াই বুঝতে পারে, অর্থব্যবস্থায় কিছু একটা ঘাপলা রয়েছে।
মাঝে মাঝে পত্রিকায় দেখা যায় হাজার কোটি টাকা পাচারের সংবাদ। দু-এক দিন সেই সংবাদ থাকে টক অব দ্য টাউন হয়ে। এরপর নতুন আরেক রাঘব বোয়ালের খবর প্রকাশিত হলে আগের চুরি-বাটপারির কথা ভুলে নতুনটা নিয়ে উৎসুক হয়ে পড়ে আমজনতা। মুখরোচক বেগমপাড়া আড্ডায় থাকার পর সুইস ব্যাংকে কার কত টাকা আছে, সেটা হয় আলোচনার বিষয়। ঋণখেলাপিরা কী করে কোনো শাস্তি ছাড়াই মহানন্দে জনগণের টাকা লোপাট করে যাচ্ছেন, সে কথা বলার পর ব্যাংকের সুযোগসন্ধানী কর্মকর্তাদের কথাও আসে আমজনতার মুখে। জনগণের টাকাকে নিজের টাকা মনে করে এই ব্যাংক কর্মকর্তারা যেভাবে কপট শিল্পপতিদের ঋণের ব্যবস্থা করে দেন, সেই আলোচনায় তাদের দিন কাটে।
আমজনতাও মাঝে মাঝে ভাবনায় পড়ে। যখন তারা নিজের কাছেই নিজে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, উন্নয়ন হচ্ছে বটে, কিন্তু উন্নয়নের নামে লুটপাটও তো হচ্ছে। এরপর তারা ভাবে, এক সরকার আসে, লুটপাটের জন্য একশ্রেণির সুবিধাভোগী সৃষ্টি করে, তারা দেশে ও বিদেশে আখের গোছায়, এরপর যদি আরেক সরকার আসে, তারাও তখন আগের সরকারের লুটপাটের পথগুলোকে নিজের পবিত্র পথ বলে গণ্য করে, নিজের সুবিধা বাড়ানোর জন্য আরও নতুন নতুন পথের সন্ধান করতে থাকে।
সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা এই লুটেরার দল উন্নয়নের নামেই ‘ধান্দা’টা করে। আমজনতা স্মরণ করে দেখার চেষ্টা করে, বিএনপির শাসনামলে হাওয়া ভবন কিংবা মিস্টার টেন পার্সেন্ট নামে হাওয়ায় কিছু কথা ছড়িয়েছিল। সে সময় যেকোনো বড় কাজের জন্য হাওয়া ভবনের আশীর্বাদের খবর ঘুরত এখানে-সেখানে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে হাওয়া ভবন হাওয়া হয়ে গেছে বটে, কিন্তু সেই ট্র্যাডিশন কি টিকে নেই? আমজনতা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকে।
কেন বাংলাদেশের এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে হলে তা পৃথিবীর যেকোনো স্থানের রাস্তার চেয়ে ব্যয়বহুল হয়, সেটা নিয়েও আমজনতা ভাবে এবং ভাবতে না চাইলেও তারা তখন দেশের নব্য ধনীদের তত্ত্ব-তালাশ করতে গিয়ে এমন এক মহা সত্য আবিষ্কার করে, যাতে তার অবস্থা হয় কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতো। তখন তারা ভাবতে বসে, কেন এত মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হয়? যাঁরা পড়াশোনা করে আরেকটু গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁদের কেউ কেউ বুঝে উঠতে পারেন, উন্নত বিশ্ব বিভিন্ন ‘প্রজেক্ট’-এর যে লোভনীয় প্রস্তাব নিয়ে আসে, তার বেশির ভাগের সঙ্গেই জাতির স্বার্থের কোনো যোগ নেই।
অবকাঠামো উন্নয়ন, এই সেবা, সেই সেবা বলে টাকার থলে নিয়ে বিদেশিরা অপেক্ষা করতে থাকে। আসলে একটা ছিপ নিয়ে তারা বসে পুকুরের পাড়ে। বড়শিতে কোনো মাছ ওঠে কি না, সেটাই দেখে। তারা ‘কীভাবে কীভাবে’ যেন একদল নীতিনির্ধারককে ‘ম্যানেজ’ করে ফেলে। তারপর সারা দেশে প্রচারণা চলতে থাকে, এই প্রজেক্ট হলে আমূল পাল্টে যাবে দেশের চেহারা।
তলে তলে দেখা যায়, আঁতাত হয়েছে যাদের সঙ্গে, তাদের চেহারা পাল্টে গেছে। আর এই যে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আসছে, তার সিংহভাগ নানাভাবে ফিরে যাচ্ছে ওই বড়লোক দেশগুলোতেই। স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার সময় ধনী দেশগুলো কিংবা বিশ্বব্যাংক বা এডিবির কর্মকর্তারা লুকিয়ে হাসতে থাকেন। তাঁরা দরিদ্র দেশটির সেই মানুষদের হাত করে নেন, যারা দেশের মান-সম্মান বিকিয়ে দিতে প্রস্তুত। ঋণ করে ঘি খাওয়ার কথা বলেছিলেন প্রাচীনকালের মনীষী চার্বাক। আমাদের সুযোগসন্ধানী দল চার্বাকের জড়বাদী দর্শন গ্রহণ না করেও ঋণের টাকায় ঘি খাওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করেছে। ঋণ করে শুধু নিজেরাই ঘি খায়, আমজনতার জন্য থাকে বুড়ো আঙুল।
আমজনতা যখন এ কথা বুঝতে শুরু করে, তখন তার মনে জন্ম নেয় ক্রোধ। সেই ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য সে অন্যদের সঙ্গে ঐক্য গড়ার প্রয়াস নেয়। সেই রাজনৈতিক দলকে খোঁজে যে দল জনতার ক্রোধ বুঝতে পারবে এবং আমজনতাকে এভাবে প্রতারণা করার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। অর্থলিপ্সুদের দেখিয়ে দেবে, এভাবে দেশের বারোটা বাজিয়ে বিদেশের দালালি করলে কেউই পার পাবে না।
কিন্তু যখন অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের হাত শক্ত করার জন্য নিজেকে তাদের কাছে সমর্পণ করে, তখন আমজনতা দেখতে পায়, এই দল তো কেবল অপেক্ষায় আছে, কখন ক্ষমতা বদলে যাবে আর প্রজেক্টগুলোর অর্থের জোগান চলে আসবে সেই দলের গভীরে বসে থাকা রাঘববোয়ালদের হাতে এবং তখন শুরু হবে অদ্ভুত এক খেলা! এখন যাঁরা অর্থ পাচারের সমালোচনা করছেন, তখন তাঁরাই অর্থ পাচার করবেন আর এখন যাঁরা অর্থ পাচার করছেন, তাঁরা তখন অর্থ পাচারের সমালোচনা করবেন। ভাইস ভার্সা।
এই তো, রোববারের কাগজে বেরিয়েছে সিপিডির ব্রিফিংয়ের খবর। বলা হচ্ছে, ব্যাংক থেকে ১৫ বছরে নাকি ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এখন হাওয়া ভবন আমলে কত টাকা লোপাট হয়েছিল, সে খবরটাও সামনে আসুক। আমজনতা তখন বুঝতে পারবে, আসলে ক্ষমতায় যাওয়ার অর্থটা কী!
নির্বাচনের আগে বা পরে আমজনতার কি যাওয়ার কোনো জায়গা আছে? আমজনতা তাহলে যাবে কোথায়?
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪