Ajker Patrika

বিএসএমএমইউর ভিসি শারফুদ্দিনের পদে পদে অনিয়ম

রাশেদ রাব্বি ও মারুফ কিবরিয়া, ঢাকা 
আপডেট : ৩১ মে ২০২৩, ০৯: ৩১
বিএসএমএমইউর ভিসি শারফুদ্দিনের পদে পদে অনিয়ম

উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে অনিয়মের আশ্রয়, যোগ্যতার ঘাটতি নিয়ে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি লাভ, পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ, অনৈতিক উপায়ে অর্থ উত্তোলন, দরপত্রে অনিয়মের মতো বিস্তর অভিযোগ উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে। আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল করা অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

২১ মে দুদকে জমা পড়া অভিযোগে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে জাপান ও মালয়েশিয়া থেকে আমন্ত্রণ পান উপাচার্য। মালয়েশিয়ার ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটিতে একটি সেমিনারে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ ছিল, যাবতীয় ব্যয় তারাই বহন করবে। একই ধরনের বিষয় উল্লেখ করা হয় জাপানের শিপ হেলথ কেয়ারের আমন্ত্রণপত্রেও। কিন্তু দেশে ফিরে অধ্যাপক শারফুদ্দিন ভ্রমণ খরচ বাবদ ৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৭৭ টাকা বিল জমা দেন অর্থ শাখায়।

বিএসএমএমইউয়ে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত নথি থেকে জানা যায়, শারফুদ্দিন আহমেদ সহযোগী অধ্যাপক পদে ব্যক্তিগত পদোন্নতির লক্ষ্যে গঠিত নির্বাচন কমিটির কাছে ২০০১ সালের ২ জুন সাক্ষাৎকার দেন। তখন তিনি চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ছিলেন। পদোন্নতির জন্য তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘাটতি ছিল। সাক্ষাৎকার শেষে নির্বাচন কমিটির মন্তব্যে বলা হয়, শারফুদ্দিন আহমেদ পদোন্নতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী কোনো শর্ত পূরণ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্তীকৃত ও প্রকাশনা থাকায় বিশেষ বিবেচনায় সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ থাকায় বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিল সভায় পাঠাতে কমিটি সুপারিশ করে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কোনো শিক্ষক কোনো বিষয়ে ক্লাস নিলে অনারারি শিক্ষক হিসেবে সম্মানী ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু অধ্যাপক শারফুদ্দিন উপাচার্য হওয়ার পর ক্লাসপ্রতি ২ হাজার টাকা সম্মানী নিয়েছেন। বিএসএমএমইউর ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের নথি থেকে জানা যায়, শারফুদ্দিন আহমেদ ২০২২ সালের জুন মাসে চারটি এবং জুলাই মাসে দুটি ক্লাস নিয়ে ১২ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা নিয়েছেন। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রোগ্রাম ইনচার্জ শাহ আলম ওই নথিতে সই করেন। গত বছরের ২৮ এপ্রিল অনারারি শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ।

এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওনারা (দুদক) কমিটি করে যেভাবে আগায়, আগাক। এ ব্যাপারে পত্রপত্রিকায় আমি আর কথা বলতে চাই না।’ এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে এখনো কিছু জানি না। ফাইল দেখে বলতে হবে। তবে একজন উপাচার্যের বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা খুবই দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত।’ 

চার শর্তে সহযোগী অধ্যাপক
অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ ২০০১ সালে সহযোগী অধ্যাপক হতে সাক্ষাৎকার দিয়েও নির্বাচন কমিটির শক্ত সুপারিশ না থাকায় পদোন্নতি পাননি। এরপরও তিনি সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়মিত না হয়েই সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির চেষ্টা চালিয়ে যান। ২০০৪ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি আবারও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৪ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভায় চার শর্তে তাঁকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আবদুল গফুরের সই করা এক চিঠিতে শারফুদ্দিনকে নিয়োগপ্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে সম্মতিপত্র বিভাগীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দিতে বলা হয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ২৪ এপ্রিল ২০০৪ সালের আবেদনের সূত্রে এবং ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানানো যাচ্ছে, ‘আপনি বর্তমানে চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের যে পদে নিয়োজিত আছেন, সেই পদটিকে সহযোগী অধ্যাপক পদে আপগ্রেড করে ব্যক্তিগত পদোন্নতির মাধ্যমে উক্ত পদে আপনাকে নিম্নলিখিত শর্তে নিয়োগ করা হয়েছে—১. ১০,৭০০-১৩,১০০ /- টাকা বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী নির্ধারিত মূল বেতন এবং অন্যান্য ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। ২. নিয়োগকৃত পদের দায়িত্বসহ অব্যবহিত পূর্ব পদের দায়িত্বও পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নতুন বা পৃথক কোনো ইউনিট দেওয়া হবে না। ৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন (১৯৯৮ সনের ১ নং আইন), বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত ও প্রণীত সংশ্লিষ্ট সব সংবিধি, অধ্যাদেশ, প্রবিধান ও নিয়ম অনুযায়ী চাকরি নিয়ন্ত্রিত হবে। ৪. এমএস ডিগ্রি প্রাপ্তির তারিখ (২৬-৪-২০০৪ ইং) থেকে এ নিয়োগ কার্যকর হবে।’

 ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি
২০০৪ সালে কয়েকটি শর্তে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পেলেও ২০০৭ সালে এসে আবারও শারফুদ্দিন আহমেদের নিয়োগের সময় পাল্টে যায় ভূতাপেক্ষভাবে। এমনকি আগের বেতন স্কেল ১০,৭০০-১৩,১০০ টাকার পরিবর্তে নতুন জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী ১৫,০০০-১৯,৮০০ টাকা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আবদুল গফুর স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনি ২০০৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তারিখে পুনঃআবেদন করেছিলেন। সেই সূত্রে জানানো যাচ্ছে যে, গত ২০০১ সালের ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তী ৪ আগস্টের একাডেমিক কাউন্সিলের ৯ম সভার (কার্যবিবরণীর) সুপারিশ অনুযায়ী পদোন্নতি কার্যকরের জন্য ২০০১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তারিখের স্মারক (আদেশ নং-৭১৭১) দ্বারা গঠিত বিশেষ কমিটির সুপারিশ ও ভাইস চ্যান্সেলরের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের যে পদে আপনি নিয়োজিত ছিলেন, সেই পদটিকে ২০০৪ সালের ৯ নভেম্বর তারিখের স্মারক (আদেশ পত্র নং-বিএসএমএমইউ/ ২০০৪/৮১০৭) দ্বারা আপগ্রেড করে নির্ধারিত শর্তে ব্যক্তিগত পদোন্নতির মাধ্যমে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।’

পরীক্ষা ছাড়াই কোর্সে ভর্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কোনো কোর্সে ভর্তি হতে হলে অবশ্যই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। কিন্তু ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য বরাবর সরাসরি এমএস (চক্ষু) কোর্সে ভর্তির সুযোগ চান শারফুদ্দিন। ওই আবেদনে বিভাগীয় চেয়ারম্যান, ডিন, উপ-উপাচার্যের সুপারিশ ছিল। তবে নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যানকে উপেক্ষা করে সেটি উপাচার্য বরাবর পাঠানো হয়। উপাচার্য এটি অনুমোদনও করেন। তবে একাডেমিক কাউন্সিলের নথিতে উল্লেখ করা হয়, ভর্তি কমিটি উপেক্ষা করে ভর্তি করার ক্ষমতা উপাচার্যের নেই।

৯ বছরের শিক্ষা ছুটি ছেলের
অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদের বড় ছেলে ডা. তাজবীর আহমেদ। পিতার ক্ষমতাবলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল অফিসার হিসেবে চাকরি পাওয়ার পর ৫ বছরের শিক্ষা ছুটি নিয়ে জাপানে চলে যান। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে যোগ দিয়ে পুনরায় চার বছরের শিক্ষা ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো যান। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পাঁচ বছরের ওপরে শিক্ষা ছুটি নেওয়ার সুযোগ নেই। পরে ছুটি নিতে হলে অবশ্যই সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এ-সংক্রান্ত কোনো চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। 

বিনা ভাড়ায় ক্যানটিন
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১২টি ক্যানটিন পরিচালিত হয়। এগুলোর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্যানটিন, ডক্টরস ক্যাফেটেরিয়া (এ ব্লক, ৫ম তলা), আল মদিনা (বি ব্লক, নিচতলা), অপটিকস সেন্টার (ওপিডি-২, নিচতলা), টিচার্স লাউঞ্জ (ব্লক বি, ২য় তলা) এই ৫টি দোকান ও ক্যানটিন থেকে ভাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু কাটারিং (সি ব্লক ১১ তলা), ডক্টরস হোস্টেল (এ ব্লক ৭ম তলা), টিএসসি ক্যানটিন, বহির্বিভাগ-১ স্ন্যাকস কর্নার, বহির্বিভাগ-২ স্ন্যাকস কর্নার, বহির্বিভাগ-৩ স্ন্যাকস কর্নার, সিঅ্যান্ডসি—এই সাতটি ক্যানটিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা জমা হয় না। বিষয়টি উপাচার্যের নজরে আনলেও তিনি নীরব ভূমিকায় আছেন।

দরপত্রে অনিয়ম
জানা যায়, ২০২১ সালের মার্চে বিএসএমএমইউর উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইয়ার-ই-মাহবুবের নেতৃত্বে মিডিয়া সেল গঠন করেন অধ্যাপক শারফুদ্দিন। এর পর থেকে এই সেলের মাধ্যমে দরপত্র ছাড়াই কয়েক কোটি টাকার প্রকাশনার কাজ করা হয়। চলতি বছরের ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে ভুলে ভরা ম্যাগাজিন ও ব্যাগ ছাপিয়ে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নামে বিপুল টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, দরপত্র ছাড়াই কোটেশনের মাধ্যমে সমাবর্তন আয়োজন করে ৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ভুয়া বিলের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের দায় উপাচার্য এড়াতে পারেন না।

দরপত্র-সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ ক্লিনিং কোম্পানি নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করে। এতে সাত সদস্যের কমিটি থাকলেও কমিটির মতামত মূল্যায়ন করা হয়নি। দরপত্রের শিডিউল প্রকাশের পর দেখা যায়, প্রথম লটের ১০টি কোম্পানির মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা একটিকে, দ্বিতীয় লটেও ছয়টির মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে থাকা কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এভাবে ষষ্ঠ লট পর্যন্ত যেসব কোম্পানি বিএসএমএমইউর ক্লিনিংয়ের দায়িত্ব পেয়েছে, তাদের কারও ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয় বিধিমালা, ২০০৮ মানা হয়নি। একই অভিযোগ আছে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রদান, ফটোকপি কাম স্টেশনারি দোকানের দরপত্রের ক্ষেত্রে।

নিয়োগ-বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতি
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী কোনো নিকটাত্মীয় পরীক্ষার্থী হলে প্রতিষ্ঠানের কোনো অধ্যাপক, শিক্ষক অথবা কর্মকর্তা ওই পরীক্ষার দায়িত্বে থাকতে পারেন না। কিন্তু শারফুদ্দিন আহমেদের ছোট ছেলে তানভীর আহমেদ ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর স্নাতকোত্তর (এমডি/এমএস) কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। ওই পরীক্ষার সার্বিক তত্ত্বাবধান কমিটির প্রধান ছিলেন উপাচার্য নিজে। তানভীর আহমেদ এখন বিএসএমএমইউর স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী। একই সঙ্গে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি অটোল্যারিংগোলজি বিভাগে কনসালট্যান্ট পদে আছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, উপাচার্যের এমন অন্তত ১১ আত্মীয় চাকরি পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুদকে অভিযোগে বলা হয়, যত নিয়োগ হয়েছে, সেগুলোর সামান্যই বিজ্ঞাপন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

সুষ্ঠু অনুসন্ধানের প্রত্যাশা
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকা দেশ ও জাতির জন্য দুঃখজনক। যেহেতু দুর্নীতি-সংক্রান্ত অভিযোগ, দুদক অবস্থান বা ব্যক্তির দিক বিবেচনা না করে অনুসন্ধান করবে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে বলে মনে করি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত