২৬৮ মামলায় আসামি আ.লীগের ২৬২৬৪

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর দলের মন্ত্রী-এমপি ও নেতা-কর্মীদের নামে ২৬৮টি মামলা হয়েছে। শুধু শেখ হাসিনার নামেই হয়েছে ১০০ মামলা। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করা হয়েছে ২৬ হাজার ২৬৪ জনের। একই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে অন্তত ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৫৫ জনকে। 

বেসরকারি সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) আগস্ট মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এমএসএফের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। 

গতকাল শনিবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর বিজয় উদ্‌যাপনের জন্য সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। এরই মাঝে ক্ষোভ মেটাতে গিয়ে কিছু ব্যক্তি ওই দিন বিকেল থেকেই সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, মন্ত্রী-এমপিসহ সরকারি দলের অনেক নেতার ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। রাজধানীতে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়েও হামলা করা হয়। এর পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা ও তাদের উপাসনালয়ে হামলার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, ৩৭ জেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। 

এমএসএফের বলছে, ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে কমপক্ষে ৮০৯ জন নিহত হয়েছেন। আগস্ট মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ২৩টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২০৪ জন। তাঁদের মধ্যে ৯ জন নিহত ও ১৯৫ জন আহত হয়েছেন। সহিংসতার ২৩টি ঘটনার মধ্যে ১২টি ঘটনা ঘটেছে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে, ৯টি বিএনপি-আওয়ামী লীগে, ১টি আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও অপর ১টি ঘটনা ঘটেছে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির। নিহতদের মধ্যে ৫ জন বিএনপির আর ৩ জন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক। 

এ মাসে কারা হেফাজতে ৭ জনের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গত মাসে এর সংখ্যা ছিল ২ জন। আগস্ট মাসে ৩৭ জন সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এসব বিষয়ে ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে ১ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ২৮ জন। আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় এবং পরবর্তী সংঘাতে এ পর্যন্ত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা করা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন ২৫ জন সাংবাদিক। এ মাসে সাইবার নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলার একটিতে গ্রেপ্তার হয়েছেন একজন। 

আগস্ট মাসে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে তিনজন বাংলাদেশি নিহত, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন আরও তিনজন। একই সময়ে আট বাংলাদেশিকে আটক করে ধরে নিয়ে গেছে তারা। আগস্টে ১৩৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা ১৯টি, দলবদ্ধ ধর্ষণ ৮টি, ধর্ষণ ও হত্যা ২টি। 

এমএসএফ বলছে, আগস্টে গণপিটুনির ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতিতে বা নিষ্ক্রিয়তার কারণে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। এ মাসে অন্তত ২০টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ২০ জন নিহত ও ৪ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন।