এ কে এম শামসুদ্দিন

বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো তিনটি স্তরে বিভক্ত, যার সর্বনিম্ন স্তর হলো উপজেলা। উপজেলা প্রশাসনিক প্রধান হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা ইউএনও।
একজন ইউএনও বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু ইদানীং কিছু কিছু ইউএনওর উগ্র আচরণে মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার ঝড় তুলেছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মেহরুবা ইসলাম ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ট্রফি আছাড় দিয়ে ভেঙে আলোচনায় আসেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এ ঘটনার ঠিক আগের দিন রাতে, বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পালের বিরুদ্ধে আলমগীর হোসেন শেখ নামের এলজিইডির চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। মারধরের একপর্যায়ে আলমগীর সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। তাঁর এই অচেতন হয়ে পড়ে থাকার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনো ঘুরছে। এর আগে গত ২১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণকাজের কোয়ালিটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়সার খসরু স্থানীয় সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, যার অডিও রেকর্ড প্রকাশ হয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ হয়। যোগাযোগমাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের শুধু তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশই নয়, বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষমতার আস্ফালন দেখানো ও তাঁদের মুখের অকথ্য ভাষার ব্যবহারকে ‘মাস্তানদের চেয়েও খারাপ ভাষা’ বলে দেশের উচ্চ আদালত মন্তব্য করেছেন।
তারও আগে গত ৯ জুলাই মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুনা লায়লাকে ‘ম্যাডাম’ না বলে আপা সম্বোধন করায় তাঁর সঙ্গে থাকা পুলিশ স্থানীয় এক ব্যবসায়ী তপন চন্দ্র দাসকে লাঠিপেটা করে। গত বছরের ৪ জানুয়ারি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তিনি কোনো রাখঢাক না করে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি করেন। একই বছরের আগস্ট মাসে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনসুর উদ্দিন আরও বেশি গর্হিত কাজ করেছেন। তিনি হিন্দুসম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে নালা তৈরি করতে নিষেধ করায় মুনসুর উদ্দিন হিন্দুসম্প্রদায়ের স্থানীয় দুজন মানুষকে ‘থাপ্পড়’ দিয়ে দাঁত ফেলে দেবেন বলে ধমক দেন। শুধু তাই-ই নয়, তাঁদের জমি ‘খাস’ করে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন ওই ইউএনও। এতৎসংক্রান্ত একটি অভিযোগপত্র ডেপুটি কালেক্টর (ডিসি) অফিসে জমাও পড়েছে।
দেশে এখন সিনিয়র থেকে শুরু করে সহকারী সচিব পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন ৫ হাজার ৯৭৩ জন। মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের পদগুলোর মধ্যে ডিসি ও ইউএনওর পদ দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশে মোট উপজেলা ৪৯২টি। প্রতিটি উপজেলায় একজন করে ইউএনও নিয়োগ করা আছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউএনওসহ প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কিছু কিছু কর্মকর্তার অসভ্য আচরণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। সরকারি আচরণ বিধিমালায় ৩৪টি নির্দেশনা রয়েছে। এসব নির্দেশনায় আচরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্যক্রম কেমন হবে, তা উল্লেখ থাকলেও নাগরিকদের সঙ্গে আচরণ বিষয়ে আলাদা কোনো বিধান নেই। অবশ্য ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী বিধিমালায়, নাগরিকদের সঙ্গে যেকোনো অসদাচরণ শাস্তিযোগ্য হবে—এমন একটি বিধির উল্লেখ আছে। এখানে অসদাচরণ বলতে ‘অসংগত আচরণ, চাকরি শৃঙ্খলাহানিকর আচরণ বা শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণকে বোঝানো হয়েছে। গত ১০ বছরে প্রশাসনের প্রায় ৩ হাজার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, নারীঘটিত সমস্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচ শর মতো বিভাগীয় মামলা হলেও এর মধ্যে মাত্র এক শর মতো কর্মকর্তাকে লঘু ও গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ শাস্তি চাকরিচ্যুতির নজির নেই বললেই চলে।
শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করে বলে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এমন ঘটনাও ঘটেছে, শাস্তি দেওয়ার পরও শাস্তি মওকুফ করে নেওয়ার উদাহরণ আছে। আমাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে, কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চারদিকে বেশ হইচই পড়ে গিয়েছিল। ফলে সুলতানা পারভীন ও রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজিম উদ্দিন বিভাগীয় শাস্তির মুখে পড়েছিলেন। পরে তাঁরা উভয়ই পৃথকভাবে আবেদন করে শাস্তি মওকুফ করে নিয়েছিলেন। এ ঘটনায় কী প্রমাণিত হয়?
এটা কি প্রমাণিত হয় না যে যত বড় ঘটনাই হোক বা যত গর্হিত অপরাধই করুক না কেন, এর পরিণতি বেশি হলে বিভাগীয় শাস্তি মাত্র, যা আবার আবেদন করে মওকুফও করা যায়। সুলতানা পারভীনের এ ঘটনা প্রশাসনিক ক্যাডারের ইতিহাসে অন্যতম কলঙ্কজনক উদাহরণ হয়ে থাকবে অনেক দিন।
বর্তমানে উপজেলাগুলোতে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা তেমনভাবে কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তাঁদের কাজে বাধা তৈরি করছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সামন্তবাদী আচরণ। তাঁদের এমন ক্ষমতায়ন করা হয়েছে যে তাঁরা এখন আর সেই ভার সামাল দিতে পারছেন না। এ কারণেই তরুণ বয়সী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যেই ক্ষমতার এমন অপব্যবহার করেন, যা পুরো প্রশাসনিক ক্যাডারের জন্য লজ্জা বয়ে আনে। তাঁদের এই কার্যকলাপ নিয়ে উপজেলা পরিষদেরও অনেক অভিযোগ আছে। ‘বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানারে উপজেলা চেয়ারম্যানরা অনেক আগে থেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন। তাঁরা বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিহীন জনপ্রশাসন সংবিধানবহির্ভূত ও ভয়ংকর।’ তাঁদের অভিযোগ, উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা থাকলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সবকিছু উপেক্ষা করে উপজেলায় শাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের পাশ কাটিয়ে সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাঁরা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপজেলা পরিষদের বদলে নাম ব্যবহার করছেন উপজেলা প্রশাসন। চেয়ারম্যানের অনুমোদন ছাড়াই সব কাজ পরিচালনা করছেন। অথচ উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাঁদের সচিবের দায়িত্ব পালন করার কথা। উল্লেখ্য, উপজেলা পরিষদ আইন (সংশোধিত) ২০১১ অনুযায়ী, সব উপজেলাকে প্রশাসনিক একাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। আইনটির তৃতীয় তফসিলে ১২টি মন্ত্রণালয়ের উপজেলাভিত্তিক ১৭টি বিভাগকে উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অথচ উপজেলা চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে ইউএনওরা এই ১৭টি বিভাগের সভাপতি হয়ে বসে আছেন। উপজেলা পরিষদ আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আদেশ, পরিপত্র জারি করে উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে। আমতান্ত্রিক এই কূটচালে উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা স্বাধীনভাবে কাজ করতেও পারছেন না।
এ জন্য অবশ্য ইউএনওদের পুরোপুরি দোষও দেওয়া যাচ্ছে না। সরকার থেকে এই আইন যত দিন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তত দিন এ সমস্যার সমাধান হবে না। সরকারের অতিমাত্রায় আমলানির্ভরতা স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের কোণঠাসা করে ফেলছে। এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২০১৪ সালের একতরফা সাধারণ নির্বাচনের পর থেকেই।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর সরকারের এই আমলানির্ভরতা আরও বেড়ে গেছে। এই দুটো নির্বাচনে বর্তমান সরকারের ক্ষমতাসীন হওয়ার পেছনে ইউএনওদের কী ভূমিকা ছিল, তা নতুন করে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগেই আমলাতন্ত্রনির্ভরতা বেড়েছে। এ কারণেই বর্তমানে দেশে যে বিধিব্যবস্থা চালু আছে তাতে জনগণের সার্বভৌমত্ব পুরো নিশ্চিত করে না। নির্বাহী বিভাগের কাছে একচেটিয়া ক্ষমতা চলে গেছে। দেশের শাসনব্যবস্থা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে তাতে ডিসি, ইউএনওসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা নিজেদের প্রভু এবং জনগণকে প্রজা মনে করেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, গণতান্ত্রিক দুর্বলতা ও জনবিচ্ছিন্নতা বাড়লে একচেটিয়া ব্যবস্থা কায়েম হয়। আর একচেটিয়া ব্যবস্থা যখন চালু হয়, তখন ক্ষমতার অপপ্রয়োগও হয় বেশি। ফলে প্রশাসনের শৃঙ্খলাতেও ঘাটতি দেখা দেয়। কেউ কাউকে মানতে চান না। ক্ষমতার দাপট দেখাতে তাঁরা একধরনের তৃপ্তি খুঁজে পান। তারই যেন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আলীকদম উপজেলার ইউএনও মেহরুবা ইসলাম, বগুড়া সদর উপজেলা ইউএনও সমর কুমার পাল এবং আদিতমারীর ইউএনও মুনসুর উদ্দিনের বেপরোয়া আচরণের মধ্য দিয়ে।
এ দেশের মানুষ প্রজা নয়, নাগরিক। নাগরিকদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যেকোনো অসদাচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি পেতেই
হবে। প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীনের মতো বিভাগীয় শাস্তি দিয়ে পরে মাফ করে দেওয়ার মতো ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে মেহরুবা ইসলাম ও সমর কুমার পালের মতো ইউএনওর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ঠেকানো যাবে না।

বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো তিনটি স্তরে বিভক্ত, যার সর্বনিম্ন স্তর হলো উপজেলা। উপজেলা প্রশাসনিক প্রধান হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা ইউএনও।
একজন ইউএনও বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু ইদানীং কিছু কিছু ইউএনওর উগ্র আচরণে মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার ঝড় তুলেছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মেহরুবা ইসলাম ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ট্রফি আছাড় দিয়ে ভেঙে আলোচনায় আসেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এ ঘটনার ঠিক আগের দিন রাতে, বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পালের বিরুদ্ধে আলমগীর হোসেন শেখ নামের এলজিইডির চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। মারধরের একপর্যায়ে আলমগীর সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। তাঁর এই অচেতন হয়ে পড়ে থাকার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনো ঘুরছে। এর আগে গত ২১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণকাজের কোয়ালিটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়সার খসরু স্থানীয় সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, যার অডিও রেকর্ড প্রকাশ হয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ হয়। যোগাযোগমাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের শুধু তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশই নয়, বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষমতার আস্ফালন দেখানো ও তাঁদের মুখের অকথ্য ভাষার ব্যবহারকে ‘মাস্তানদের চেয়েও খারাপ ভাষা’ বলে দেশের উচ্চ আদালত মন্তব্য করেছেন।
তারও আগে গত ৯ জুলাই মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুনা লায়লাকে ‘ম্যাডাম’ না বলে আপা সম্বোধন করায় তাঁর সঙ্গে থাকা পুলিশ স্থানীয় এক ব্যবসায়ী তপন চন্দ্র দাসকে লাঠিপেটা করে। গত বছরের ৪ জানুয়ারি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তিনি কোনো রাখঢাক না করে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি করেন। একই বছরের আগস্ট মাসে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনসুর উদ্দিন আরও বেশি গর্হিত কাজ করেছেন। তিনি হিন্দুসম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে নালা তৈরি করতে নিষেধ করায় মুনসুর উদ্দিন হিন্দুসম্প্রদায়ের স্থানীয় দুজন মানুষকে ‘থাপ্পড়’ দিয়ে দাঁত ফেলে দেবেন বলে ধমক দেন। শুধু তাই-ই নয়, তাঁদের জমি ‘খাস’ করে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন ওই ইউএনও। এতৎসংক্রান্ত একটি অভিযোগপত্র ডেপুটি কালেক্টর (ডিসি) অফিসে জমাও পড়েছে।
দেশে এখন সিনিয়র থেকে শুরু করে সহকারী সচিব পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন ৫ হাজার ৯৭৩ জন। মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের পদগুলোর মধ্যে ডিসি ও ইউএনওর পদ দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশে মোট উপজেলা ৪৯২টি। প্রতিটি উপজেলায় একজন করে ইউএনও নিয়োগ করা আছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউএনওসহ প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কিছু কিছু কর্মকর্তার অসভ্য আচরণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। সরকারি আচরণ বিধিমালায় ৩৪টি নির্দেশনা রয়েছে। এসব নির্দেশনায় আচরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্যক্রম কেমন হবে, তা উল্লেখ থাকলেও নাগরিকদের সঙ্গে আচরণ বিষয়ে আলাদা কোনো বিধান নেই। অবশ্য ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী বিধিমালায়, নাগরিকদের সঙ্গে যেকোনো অসদাচরণ শাস্তিযোগ্য হবে—এমন একটি বিধির উল্লেখ আছে। এখানে অসদাচরণ বলতে ‘অসংগত আচরণ, চাকরি শৃঙ্খলাহানিকর আচরণ বা শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণকে বোঝানো হয়েছে। গত ১০ বছরে প্রশাসনের প্রায় ৩ হাজার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, নারীঘটিত সমস্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচ শর মতো বিভাগীয় মামলা হলেও এর মধ্যে মাত্র এক শর মতো কর্মকর্তাকে লঘু ও গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ শাস্তি চাকরিচ্যুতির নজির নেই বললেই চলে।
শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করে বলে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এমন ঘটনাও ঘটেছে, শাস্তি দেওয়ার পরও শাস্তি মওকুফ করে নেওয়ার উদাহরণ আছে। আমাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে, কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চারদিকে বেশ হইচই পড়ে গিয়েছিল। ফলে সুলতানা পারভীন ও রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজিম উদ্দিন বিভাগীয় শাস্তির মুখে পড়েছিলেন। পরে তাঁরা উভয়ই পৃথকভাবে আবেদন করে শাস্তি মওকুফ করে নিয়েছিলেন। এ ঘটনায় কী প্রমাণিত হয়?
এটা কি প্রমাণিত হয় না যে যত বড় ঘটনাই হোক বা যত গর্হিত অপরাধই করুক না কেন, এর পরিণতি বেশি হলে বিভাগীয় শাস্তি মাত্র, যা আবার আবেদন করে মওকুফও করা যায়। সুলতানা পারভীনের এ ঘটনা প্রশাসনিক ক্যাডারের ইতিহাসে অন্যতম কলঙ্কজনক উদাহরণ হয়ে থাকবে অনেক দিন।
বর্তমানে উপজেলাগুলোতে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা তেমনভাবে কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তাঁদের কাজে বাধা তৈরি করছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সামন্তবাদী আচরণ। তাঁদের এমন ক্ষমতায়ন করা হয়েছে যে তাঁরা এখন আর সেই ভার সামাল দিতে পারছেন না। এ কারণেই তরুণ বয়সী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যেই ক্ষমতার এমন অপব্যবহার করেন, যা পুরো প্রশাসনিক ক্যাডারের জন্য লজ্জা বয়ে আনে। তাঁদের এই কার্যকলাপ নিয়ে উপজেলা পরিষদেরও অনেক অভিযোগ আছে। ‘বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানারে উপজেলা চেয়ারম্যানরা অনেক আগে থেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন। তাঁরা বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিহীন জনপ্রশাসন সংবিধানবহির্ভূত ও ভয়ংকর।’ তাঁদের অভিযোগ, উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা থাকলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সবকিছু উপেক্ষা করে উপজেলায় শাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের পাশ কাটিয়ে সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাঁরা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপজেলা পরিষদের বদলে নাম ব্যবহার করছেন উপজেলা প্রশাসন। চেয়ারম্যানের অনুমোদন ছাড়াই সব কাজ পরিচালনা করছেন। অথচ উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাঁদের সচিবের দায়িত্ব পালন করার কথা। উল্লেখ্য, উপজেলা পরিষদ আইন (সংশোধিত) ২০১১ অনুযায়ী, সব উপজেলাকে প্রশাসনিক একাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। আইনটির তৃতীয় তফসিলে ১২টি মন্ত্রণালয়ের উপজেলাভিত্তিক ১৭টি বিভাগকে উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অথচ উপজেলা চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে ইউএনওরা এই ১৭টি বিভাগের সভাপতি হয়ে বসে আছেন। উপজেলা পরিষদ আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আদেশ, পরিপত্র জারি করে উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে। আমতান্ত্রিক এই কূটচালে উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা স্বাধীনভাবে কাজ করতেও পারছেন না।
এ জন্য অবশ্য ইউএনওদের পুরোপুরি দোষও দেওয়া যাচ্ছে না। সরকার থেকে এই আইন যত দিন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তত দিন এ সমস্যার সমাধান হবে না। সরকারের অতিমাত্রায় আমলানির্ভরতা স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের কোণঠাসা করে ফেলছে। এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২০১৪ সালের একতরফা সাধারণ নির্বাচনের পর থেকেই।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর সরকারের এই আমলানির্ভরতা আরও বেড়ে গেছে। এই দুটো নির্বাচনে বর্তমান সরকারের ক্ষমতাসীন হওয়ার পেছনে ইউএনওদের কী ভূমিকা ছিল, তা নতুন করে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগেই আমলাতন্ত্রনির্ভরতা বেড়েছে। এ কারণেই বর্তমানে দেশে যে বিধিব্যবস্থা চালু আছে তাতে জনগণের সার্বভৌমত্ব পুরো নিশ্চিত করে না। নির্বাহী বিভাগের কাছে একচেটিয়া ক্ষমতা চলে গেছে। দেশের শাসনব্যবস্থা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে তাতে ডিসি, ইউএনওসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা নিজেদের প্রভু এবং জনগণকে প্রজা মনে করেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, গণতান্ত্রিক দুর্বলতা ও জনবিচ্ছিন্নতা বাড়লে একচেটিয়া ব্যবস্থা কায়েম হয়। আর একচেটিয়া ব্যবস্থা যখন চালু হয়, তখন ক্ষমতার অপপ্রয়োগও হয় বেশি। ফলে প্রশাসনের শৃঙ্খলাতেও ঘাটতি দেখা দেয়। কেউ কাউকে মানতে চান না। ক্ষমতার দাপট দেখাতে তাঁরা একধরনের তৃপ্তি খুঁজে পান। তারই যেন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আলীকদম উপজেলার ইউএনও মেহরুবা ইসলাম, বগুড়া সদর উপজেলা ইউএনও সমর কুমার পাল এবং আদিতমারীর ইউএনও মুনসুর উদ্দিনের বেপরোয়া আচরণের মধ্য দিয়ে।
এ দেশের মানুষ প্রজা নয়, নাগরিক। নাগরিকদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যেকোনো অসদাচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি পেতেই
হবে। প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীনের মতো বিভাগীয় শাস্তি দিয়ে পরে মাফ করে দেওয়ার মতো ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে মেহরুবা ইসলাম ও সমর কুমার পালের মতো ইউএনওর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ঠেকানো যাবে না।
এ কে এম শামসুদ্দিন

বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো তিনটি স্তরে বিভক্ত, যার সর্বনিম্ন স্তর হলো উপজেলা। উপজেলা প্রশাসনিক প্রধান হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা ইউএনও।
একজন ইউএনও বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু ইদানীং কিছু কিছু ইউএনওর উগ্র আচরণে মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার ঝড় তুলেছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মেহরুবা ইসলাম ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ট্রফি আছাড় দিয়ে ভেঙে আলোচনায় আসেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এ ঘটনার ঠিক আগের দিন রাতে, বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পালের বিরুদ্ধে আলমগীর হোসেন শেখ নামের এলজিইডির চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। মারধরের একপর্যায়ে আলমগীর সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। তাঁর এই অচেতন হয়ে পড়ে থাকার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনো ঘুরছে। এর আগে গত ২১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণকাজের কোয়ালিটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়সার খসরু স্থানীয় সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, যার অডিও রেকর্ড প্রকাশ হয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ হয়। যোগাযোগমাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের শুধু তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশই নয়, বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষমতার আস্ফালন দেখানো ও তাঁদের মুখের অকথ্য ভাষার ব্যবহারকে ‘মাস্তানদের চেয়েও খারাপ ভাষা’ বলে দেশের উচ্চ আদালত মন্তব্য করেছেন।
তারও আগে গত ৯ জুলাই মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুনা লায়লাকে ‘ম্যাডাম’ না বলে আপা সম্বোধন করায় তাঁর সঙ্গে থাকা পুলিশ স্থানীয় এক ব্যবসায়ী তপন চন্দ্র দাসকে লাঠিপেটা করে। গত বছরের ৪ জানুয়ারি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তিনি কোনো রাখঢাক না করে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি করেন। একই বছরের আগস্ট মাসে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনসুর উদ্দিন আরও বেশি গর্হিত কাজ করেছেন। তিনি হিন্দুসম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে নালা তৈরি করতে নিষেধ করায় মুনসুর উদ্দিন হিন্দুসম্প্রদায়ের স্থানীয় দুজন মানুষকে ‘থাপ্পড়’ দিয়ে দাঁত ফেলে দেবেন বলে ধমক দেন। শুধু তাই-ই নয়, তাঁদের জমি ‘খাস’ করে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন ওই ইউএনও। এতৎসংক্রান্ত একটি অভিযোগপত্র ডেপুটি কালেক্টর (ডিসি) অফিসে জমাও পড়েছে।
দেশে এখন সিনিয়র থেকে শুরু করে সহকারী সচিব পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন ৫ হাজার ৯৭৩ জন। মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের পদগুলোর মধ্যে ডিসি ও ইউএনওর পদ দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশে মোট উপজেলা ৪৯২টি। প্রতিটি উপজেলায় একজন করে ইউএনও নিয়োগ করা আছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউএনওসহ প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কিছু কিছু কর্মকর্তার অসভ্য আচরণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। সরকারি আচরণ বিধিমালায় ৩৪টি নির্দেশনা রয়েছে। এসব নির্দেশনায় আচরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্যক্রম কেমন হবে, তা উল্লেখ থাকলেও নাগরিকদের সঙ্গে আচরণ বিষয়ে আলাদা কোনো বিধান নেই। অবশ্য ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী বিধিমালায়, নাগরিকদের সঙ্গে যেকোনো অসদাচরণ শাস্তিযোগ্য হবে—এমন একটি বিধির উল্লেখ আছে। এখানে অসদাচরণ বলতে ‘অসংগত আচরণ, চাকরি শৃঙ্খলাহানিকর আচরণ বা শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণকে বোঝানো হয়েছে। গত ১০ বছরে প্রশাসনের প্রায় ৩ হাজার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, নারীঘটিত সমস্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচ শর মতো বিভাগীয় মামলা হলেও এর মধ্যে মাত্র এক শর মতো কর্মকর্তাকে লঘু ও গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ শাস্তি চাকরিচ্যুতির নজির নেই বললেই চলে।
শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করে বলে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এমন ঘটনাও ঘটেছে, শাস্তি দেওয়ার পরও শাস্তি মওকুফ করে নেওয়ার উদাহরণ আছে। আমাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে, কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চারদিকে বেশ হইচই পড়ে গিয়েছিল। ফলে সুলতানা পারভীন ও রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজিম উদ্দিন বিভাগীয় শাস্তির মুখে পড়েছিলেন। পরে তাঁরা উভয়ই পৃথকভাবে আবেদন করে শাস্তি মওকুফ করে নিয়েছিলেন। এ ঘটনায় কী প্রমাণিত হয়?
এটা কি প্রমাণিত হয় না যে যত বড় ঘটনাই হোক বা যত গর্হিত অপরাধই করুক না কেন, এর পরিণতি বেশি হলে বিভাগীয় শাস্তি মাত্র, যা আবার আবেদন করে মওকুফও করা যায়। সুলতানা পারভীনের এ ঘটনা প্রশাসনিক ক্যাডারের ইতিহাসে অন্যতম কলঙ্কজনক উদাহরণ হয়ে থাকবে অনেক দিন।
বর্তমানে উপজেলাগুলোতে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা তেমনভাবে কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তাঁদের কাজে বাধা তৈরি করছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সামন্তবাদী আচরণ। তাঁদের এমন ক্ষমতায়ন করা হয়েছে যে তাঁরা এখন আর সেই ভার সামাল দিতে পারছেন না। এ কারণেই তরুণ বয়সী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যেই ক্ষমতার এমন অপব্যবহার করেন, যা পুরো প্রশাসনিক ক্যাডারের জন্য লজ্জা বয়ে আনে। তাঁদের এই কার্যকলাপ নিয়ে উপজেলা পরিষদেরও অনেক অভিযোগ আছে। ‘বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানারে উপজেলা চেয়ারম্যানরা অনেক আগে থেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন। তাঁরা বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিহীন জনপ্রশাসন সংবিধানবহির্ভূত ও ভয়ংকর।’ তাঁদের অভিযোগ, উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা থাকলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সবকিছু উপেক্ষা করে উপজেলায় শাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের পাশ কাটিয়ে সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাঁরা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপজেলা পরিষদের বদলে নাম ব্যবহার করছেন উপজেলা প্রশাসন। চেয়ারম্যানের অনুমোদন ছাড়াই সব কাজ পরিচালনা করছেন। অথচ উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাঁদের সচিবের দায়িত্ব পালন করার কথা। উল্লেখ্য, উপজেলা পরিষদ আইন (সংশোধিত) ২০১১ অনুযায়ী, সব উপজেলাকে প্রশাসনিক একাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। আইনটির তৃতীয় তফসিলে ১২টি মন্ত্রণালয়ের উপজেলাভিত্তিক ১৭টি বিভাগকে উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অথচ উপজেলা চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে ইউএনওরা এই ১৭টি বিভাগের সভাপতি হয়ে বসে আছেন। উপজেলা পরিষদ আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আদেশ, পরিপত্র জারি করে উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে। আমতান্ত্রিক এই কূটচালে উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা স্বাধীনভাবে কাজ করতেও পারছেন না।
এ জন্য অবশ্য ইউএনওদের পুরোপুরি দোষও দেওয়া যাচ্ছে না। সরকার থেকে এই আইন যত দিন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তত দিন এ সমস্যার সমাধান হবে না। সরকারের অতিমাত্রায় আমলানির্ভরতা স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের কোণঠাসা করে ফেলছে। এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২০১৪ সালের একতরফা সাধারণ নির্বাচনের পর থেকেই।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর সরকারের এই আমলানির্ভরতা আরও বেড়ে গেছে। এই দুটো নির্বাচনে বর্তমান সরকারের ক্ষমতাসীন হওয়ার পেছনে ইউএনওদের কী ভূমিকা ছিল, তা নতুন করে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগেই আমলাতন্ত্রনির্ভরতা বেড়েছে। এ কারণেই বর্তমানে দেশে যে বিধিব্যবস্থা চালু আছে তাতে জনগণের সার্বভৌমত্ব পুরো নিশ্চিত করে না। নির্বাহী বিভাগের কাছে একচেটিয়া ক্ষমতা চলে গেছে। দেশের শাসনব্যবস্থা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে তাতে ডিসি, ইউএনওসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা নিজেদের প্রভু এবং জনগণকে প্রজা মনে করেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, গণতান্ত্রিক দুর্বলতা ও জনবিচ্ছিন্নতা বাড়লে একচেটিয়া ব্যবস্থা কায়েম হয়। আর একচেটিয়া ব্যবস্থা যখন চালু হয়, তখন ক্ষমতার অপপ্রয়োগও হয় বেশি। ফলে প্রশাসনের শৃঙ্খলাতেও ঘাটতি দেখা দেয়। কেউ কাউকে মানতে চান না। ক্ষমতার দাপট দেখাতে তাঁরা একধরনের তৃপ্তি খুঁজে পান। তারই যেন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আলীকদম উপজেলার ইউএনও মেহরুবা ইসলাম, বগুড়া সদর উপজেলা ইউএনও সমর কুমার পাল এবং আদিতমারীর ইউএনও মুনসুর উদ্দিনের বেপরোয়া আচরণের মধ্য দিয়ে।
এ দেশের মানুষ প্রজা নয়, নাগরিক। নাগরিকদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যেকোনো অসদাচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি পেতেই
হবে। প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীনের মতো বিভাগীয় শাস্তি দিয়ে পরে মাফ করে দেওয়ার মতো ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে মেহরুবা ইসলাম ও সমর কুমার পালের মতো ইউএনওর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ঠেকানো যাবে না।

বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো তিনটি স্তরে বিভক্ত, যার সর্বনিম্ন স্তর হলো উপজেলা। উপজেলা প্রশাসনিক প্রধান হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা ইউএনও।
একজন ইউএনও বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু ইদানীং কিছু কিছু ইউএনওর উগ্র আচরণে মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার ঝড় তুলেছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মেহরুবা ইসলাম ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ট্রফি আছাড় দিয়ে ভেঙে আলোচনায় আসেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এ ঘটনার ঠিক আগের দিন রাতে, বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পালের বিরুদ্ধে আলমগীর হোসেন শেখ নামের এলজিইডির চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। মারধরের একপর্যায়ে আলমগীর সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। তাঁর এই অচেতন হয়ে পড়ে থাকার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনো ঘুরছে। এর আগে গত ২১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণকাজের কোয়ালিটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়সার খসরু স্থানীয় সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, যার অডিও রেকর্ড প্রকাশ হয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ হয়। যোগাযোগমাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের শুধু তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশই নয়, বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষমতার আস্ফালন দেখানো ও তাঁদের মুখের অকথ্য ভাষার ব্যবহারকে ‘মাস্তানদের চেয়েও খারাপ ভাষা’ বলে দেশের উচ্চ আদালত মন্তব্য করেছেন।
তারও আগে গত ৯ জুলাই মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুনা লায়লাকে ‘ম্যাডাম’ না বলে আপা সম্বোধন করায় তাঁর সঙ্গে থাকা পুলিশ স্থানীয় এক ব্যবসায়ী তপন চন্দ্র দাসকে লাঠিপেটা করে। গত বছরের ৪ জানুয়ারি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তিনি কোনো রাখঢাক না করে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি করেন। একই বছরের আগস্ট মাসে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনসুর উদ্দিন আরও বেশি গর্হিত কাজ করেছেন। তিনি হিন্দুসম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে নালা তৈরি করতে নিষেধ করায় মুনসুর উদ্দিন হিন্দুসম্প্রদায়ের স্থানীয় দুজন মানুষকে ‘থাপ্পড়’ দিয়ে দাঁত ফেলে দেবেন বলে ধমক দেন। শুধু তাই-ই নয়, তাঁদের জমি ‘খাস’ করে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন ওই ইউএনও। এতৎসংক্রান্ত একটি অভিযোগপত্র ডেপুটি কালেক্টর (ডিসি) অফিসে জমাও পড়েছে।
দেশে এখন সিনিয়র থেকে শুরু করে সহকারী সচিব পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন ৫ হাজার ৯৭৩ জন। মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের পদগুলোর মধ্যে ডিসি ও ইউএনওর পদ দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশে মোট উপজেলা ৪৯২টি। প্রতিটি উপজেলায় একজন করে ইউএনও নিয়োগ করা আছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউএনওসহ প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কিছু কিছু কর্মকর্তার অসভ্য আচরণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। সরকারি আচরণ বিধিমালায় ৩৪টি নির্দেশনা রয়েছে। এসব নির্দেশনায় আচরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্যক্রম কেমন হবে, তা উল্লেখ থাকলেও নাগরিকদের সঙ্গে আচরণ বিষয়ে আলাদা কোনো বিধান নেই। অবশ্য ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী বিধিমালায়, নাগরিকদের সঙ্গে যেকোনো অসদাচরণ শাস্তিযোগ্য হবে—এমন একটি বিধির উল্লেখ আছে। এখানে অসদাচরণ বলতে ‘অসংগত আচরণ, চাকরি শৃঙ্খলাহানিকর আচরণ বা শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণকে বোঝানো হয়েছে। গত ১০ বছরে প্রশাসনের প্রায় ৩ হাজার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, নারীঘটিত সমস্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচ শর মতো বিভাগীয় মামলা হলেও এর মধ্যে মাত্র এক শর মতো কর্মকর্তাকে লঘু ও গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ শাস্তি চাকরিচ্যুতির নজির নেই বললেই চলে।
শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করে বলে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এমন ঘটনাও ঘটেছে, শাস্তি দেওয়ার পরও শাস্তি মওকুফ করে নেওয়ার উদাহরণ আছে। আমাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে, কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চারদিকে বেশ হইচই পড়ে গিয়েছিল। ফলে সুলতানা পারভীন ও রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজিম উদ্দিন বিভাগীয় শাস্তির মুখে পড়েছিলেন। পরে তাঁরা উভয়ই পৃথকভাবে আবেদন করে শাস্তি মওকুফ করে নিয়েছিলেন। এ ঘটনায় কী প্রমাণিত হয়?
এটা কি প্রমাণিত হয় না যে যত বড় ঘটনাই হোক বা যত গর্হিত অপরাধই করুক না কেন, এর পরিণতি বেশি হলে বিভাগীয় শাস্তি মাত্র, যা আবার আবেদন করে মওকুফও করা যায়। সুলতানা পারভীনের এ ঘটনা প্রশাসনিক ক্যাডারের ইতিহাসে অন্যতম কলঙ্কজনক উদাহরণ হয়ে থাকবে অনেক দিন।
বর্তমানে উপজেলাগুলোতে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা তেমনভাবে কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তাঁদের কাজে বাধা তৈরি করছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সামন্তবাদী আচরণ। তাঁদের এমন ক্ষমতায়ন করা হয়েছে যে তাঁরা এখন আর সেই ভার সামাল দিতে পারছেন না। এ কারণেই তরুণ বয়সী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যেই ক্ষমতার এমন অপব্যবহার করেন, যা পুরো প্রশাসনিক ক্যাডারের জন্য লজ্জা বয়ে আনে। তাঁদের এই কার্যকলাপ নিয়ে উপজেলা পরিষদেরও অনেক অভিযোগ আছে। ‘বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানারে উপজেলা চেয়ারম্যানরা অনেক আগে থেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন। তাঁরা বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিহীন জনপ্রশাসন সংবিধানবহির্ভূত ও ভয়ংকর।’ তাঁদের অভিযোগ, উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা থাকলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সবকিছু উপেক্ষা করে উপজেলায় শাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের পাশ কাটিয়ে সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাঁরা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপজেলা পরিষদের বদলে নাম ব্যবহার করছেন উপজেলা প্রশাসন। চেয়ারম্যানের অনুমোদন ছাড়াই সব কাজ পরিচালনা করছেন। অথচ উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাঁদের সচিবের দায়িত্ব পালন করার কথা। উল্লেখ্য, উপজেলা পরিষদ আইন (সংশোধিত) ২০১১ অনুযায়ী, সব উপজেলাকে প্রশাসনিক একাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। আইনটির তৃতীয় তফসিলে ১২টি মন্ত্রণালয়ের উপজেলাভিত্তিক ১৭টি বিভাগকে উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অথচ উপজেলা চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে ইউএনওরা এই ১৭টি বিভাগের সভাপতি হয়ে বসে আছেন। উপজেলা পরিষদ আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আদেশ, পরিপত্র জারি করে উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে। আমতান্ত্রিক এই কূটচালে উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা স্বাধীনভাবে কাজ করতেও পারছেন না।
এ জন্য অবশ্য ইউএনওদের পুরোপুরি দোষও দেওয়া যাচ্ছে না। সরকার থেকে এই আইন যত দিন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তত দিন এ সমস্যার সমাধান হবে না। সরকারের অতিমাত্রায় আমলানির্ভরতা স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের কোণঠাসা করে ফেলছে। এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২০১৪ সালের একতরফা সাধারণ নির্বাচনের পর থেকেই।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর সরকারের এই আমলানির্ভরতা আরও বেড়ে গেছে। এই দুটো নির্বাচনে বর্তমান সরকারের ক্ষমতাসীন হওয়ার পেছনে ইউএনওদের কী ভূমিকা ছিল, তা নতুন করে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগেই আমলাতন্ত্রনির্ভরতা বেড়েছে। এ কারণেই বর্তমানে দেশে যে বিধিব্যবস্থা চালু আছে তাতে জনগণের সার্বভৌমত্ব পুরো নিশ্চিত করে না। নির্বাহী বিভাগের কাছে একচেটিয়া ক্ষমতা চলে গেছে। দেশের শাসনব্যবস্থা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে তাতে ডিসি, ইউএনওসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা নিজেদের প্রভু এবং জনগণকে প্রজা মনে করেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, গণতান্ত্রিক দুর্বলতা ও জনবিচ্ছিন্নতা বাড়লে একচেটিয়া ব্যবস্থা কায়েম হয়। আর একচেটিয়া ব্যবস্থা যখন চালু হয়, তখন ক্ষমতার অপপ্রয়োগও হয় বেশি। ফলে প্রশাসনের শৃঙ্খলাতেও ঘাটতি দেখা দেয়। কেউ কাউকে মানতে চান না। ক্ষমতার দাপট দেখাতে তাঁরা একধরনের তৃপ্তি খুঁজে পান। তারই যেন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আলীকদম উপজেলার ইউএনও মেহরুবা ইসলাম, বগুড়া সদর উপজেলা ইউএনও সমর কুমার পাল এবং আদিতমারীর ইউএনও মুনসুর উদ্দিনের বেপরোয়া আচরণের মধ্য দিয়ে।
এ দেশের মানুষ প্রজা নয়, নাগরিক। নাগরিকদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যেকোনো অসদাচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি পেতেই
হবে। প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীনের মতো বিভাগীয় শাস্তি দিয়ে পরে মাফ করে দেওয়ার মতো ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে মেহরুবা ইসলাম ও সমর কুমার পালের মতো ইউএনওর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ঠেকানো যাবে না।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো তিনটি স্তরে বিভক্ত, যার সর্বনিম্ন স্তর হলো উপজেলা। উপজেলা প্রশাসনিক প্রধান হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা ইউএনও। একজন ইউএনও বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু ইদানীং কিছু কিছু ইউএনওর উগ্র আচরণে মানুষের মনে ক্ষোভের
০১ অক্টোবর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো তিনটি স্তরে বিভক্ত, যার সর্বনিম্ন স্তর হলো উপজেলা। উপজেলা প্রশাসনিক প্রধান হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা ইউএনও। একজন ইউএনও বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু ইদানীং কিছু কিছু ইউএনওর উগ্র আচরণে মানুষের মনে ক্ষোভের
০১ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো তিনটি স্তরে বিভক্ত, যার সর্বনিম্ন স্তর হলো উপজেলা। উপজেলা প্রশাসনিক প্রধান হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা ইউএনও। একজন ইউএনও বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু ইদানীং কিছু কিছু ইউএনওর উগ্র আচরণে মানুষের মনে ক্ষোভের
০১ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো তিনটি স্তরে বিভক্ত, যার সর্বনিম্ন স্তর হলো উপজেলা। উপজেলা প্রশাসনিক প্রধান হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা ইউএনও। একজন ইউএনও বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু ইদানীং কিছু কিছু ইউএনওর উগ্র আচরণে মানুষের মনে ক্ষোভের
০১ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫