Ajker Patrika

‘পেলাস্টিক হামার ব্যবসা খাচে’

গোলাম কবির বিলু, পীরগঞ্জ
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ১০
‘পেলাস্টিক হামার ব্যবসা খাচে’

‘পেলাস্টিক হামার ব্যবসা খাচে। হামরা জন্মের পর থাকিই মাটির জিনিসপত্র বানে বাজারোত বিক্রি করি সংসার চলাই। হামার এই পাড়ার অনেকেরই জমিজমা নাই। মাটির জিনিসের কাম করে। সেই মাটির জিনিস একন বাজারোত চলে না। একন পেলাস্টিকের জিনিস বেরাচে। সেই জন্যে হামরা একন অনেকটা বেকার হয়া আচি।’

কথাগুলো বলছিল স্কুলছাত্রী মল্লিকা রানী। সে পীরগঞ্জের কুমেদপুর ইউনিয়নের বারুদহ দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় সে ইউনিয়নের চন্ডীপুর পালপাড়ায় বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে মিলে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করছিল।

সম্প্রতি পালপাড়ায় গিয়ে মল্লিকার দেখা পাওয়া যায়। সে ও তার মা কল্পনা রানী মাটির শরা আর পাতিল বানাচ্ছিলেন। কয়েকজনকে দেখা গেল বানানো জিনিস রোদে শুকাতে দিচ্ছেন।

কল্পনা জানান, তাঁরা প্রতিদিনই মাটির জিনিস তৈরি করেন। মাটি দিয়ে শরা, চাড়ি, মটকি, ঢাকনি, থালা, গ্লাস, কলস, হাঁড়ি, পাতিল, তস্তি, কড়াই, ব্যাংকসহ অনেক কিছু বানান। এগুলো প্রায় দুই সপ্তাহ রোদে শুকানোর পর আগুনে পোড়াতে হয়। এরপর বিক্রি করা হয়। এভাবেই চলে সংসারের খরচ ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ।

কথা হয় গৃহবধূ সবিতা রানীর সঙ্গে। তাঁর বাবার বাড়ি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা সদরে। তিনি বলেন, ‘বাবার বাড়িতে ছোটবেলা থেকে মাটি দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করতাম। স্বামীর বাড়িতে এসেও একই কাজ করছি। আমাদের এটি বাপ-দাদার পেশা।’

সবিতার স্বামী প্রশান্ত চন্দ্র পাল জানান, আগের মতো মাটি পাওয়া যায় না। এখন দূর থেকে মাটি আনা লাগে। দামও বেশি। ফলে খরচ বেশি পড়ে। কিন্তু মাটির জিনিসপত্রের দাম তেমন নেই। তবু অন্য কাজের সুযোগ না থাকায় এসব বানাচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পালপাড়ায় দেড় শতাধিক পরিবার বাস করছে। মাটির তৈরি জিনিসপত্র আগুনে পোড়ার জন্য এখানে ২০টি ভাটা রয়েছে। ঢাকা, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে এখান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে যান।

কুমেদপুর ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কুমোরদের জীবন জীবিকা খুবই কষ্টের। আধুনিক মানসম্মত মাটির জিনিসপত্র তৈরিতে আমি মৃৎশিল্পীদের জন্য সরকারি বরাদ্দে প্রকল্প দিয়ে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করব। পাশাপাশি তাঁদের তৈরি করা পণ্য বাজারজাতকরণেও উদ্যোগ নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত