সানজিদা সামরিন
সম্প্রতি স্পেনে পিরিয়ড বা মাসিক ঋতুচক্রের সময় নারী কর্মীদের চাকরি থেকে ছুটি দেওয়ার প্রস্তাবটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পেয়েছে। চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি আইনটি পাস হয়। ব্যাপারটাকে সাধুবাদ না জানালে নয়। কারণ, আমাদের দেশে পিরিয়ড এমন একটি বিষয়, যা নিয়ে কথা বলারই যেন কিছু নেই।
আমার অভিভাবক গোত্রের যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা যদি লেখাটা পড়ে থাকেন, তাহলে এখনই বুঝি জিব কাটলেন। ছি! পত্রিকার পাতায় মাসিক নিয়ে এত বিস্তারিত লেখার কী আছে? কেউবা নারীবাদী বলেই হয়তো গালি দিলেন। কিন্তু নারী হয়ে জন্মে যে বিষয়টা কোনো মাসেই এড়াতে পারছি না এবং যা কোনো নারীই এড়াতে পারছেন না, সেটা তো অনুচ্চারিত কোনো শব্দ হতে পারে না।
মনে পড়ে, যখন প্রথম পিরিয়ড শুরু হয়, তখন ক্লাস সেভেনে উঠেছি মাত্র। শুরু হওয়ার ঠিক এক মাস আগেই বড় বোন নারীজীবনের স্বাভাবিক এই দিনগুলোর কথা বলেছিলেন। ফলে জীবনের প্রথম পিরিয়ডের ঘটনা আমাকে সেভাবে ভড়কে দিতে পারেনি। তবে মাসের এই পাঁচ-সাত দিন আসার আগের দু-এক দিন থেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হতাম। তলপেটে ভয়ানক ব্যথায় প্রায় মূর্ছা যাওয়ার মতো অবস্থা হতো। আমার বা সে সময়ে আমাদের কিশোরীদের পারিপার্শ্বিকতা যা শিখিয়েছিল, তা হলো—পিরিয়ড জীবনের অতি স্বাভাবিক ঘটনা, কিন্তু তা যেন লজ্জার ও লুকোনোরও বিষয়। এ সময় পেটে ব্যথা হলে নীরবে বালিশ চেপে শুয়ে থাকাই শ্রেয়। বাড়িতে বাবা-ভাই রয়েছেন; ব্যথায় কাতরালে, চিৎকার করলে সে প্রশ্নের উত্তর কী দেব? কিন্তু বাস্তবতা ওসব ছলনার চেয়ে শক্তিশালী।
স্কুল ও কলেজ অবধি পিরিয়ডকালীন তীব্র ব্যথা হলে দু-এক দিন করে অনুপস্থিত থাকতে হয়েছে। কেন ক্লাসে যাইনি, ভাইয়েরা সে প্রশ্ন করলে মা চুপ করে থাকতেন। ভাইয়েরা বকুনি দিয়ে চলে যেতেন। কিন্তু সে সময়কার সমাজ আমার মাসহ প্রায় সব মাকে এটাই শিখিয়েছিল, নিজের বা কন্যার পিরিয়ড লজ্জার বিষয়, লুকোনোরও। তাঁদের দোষ দিতে পারি না। তবে কর্মজীবনে প্রবেশের পর ধীরে ধীরে ব্যথার সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়েছে, তার থেকে পালাতে পারিনি। মগের পর মগ গরম পানি, চা আর পেইনকিলার খেয়ে দিনগুলো কেটে গেছে একভাবে। সে সময় হেভি ব্লিডিং ও পেটে ব্যথা শয্য়াশায়ী করলেও এখন ঠিকই কুঁজো হয়ে হলেও রান্নাঘরে খুন্তি নাড়তে আর অফিসে কি-বোর্ড চপকাতে ঘাবড়াই না।
কিন্তু প্রসঙ্গটা ব্যথাতেই শেষ নয়; প্রিমেন্সট্রুয়াল সিনড্রোম, যেটাকে এ দেশে একপ্রকার ন্যাকামো হিসেবেই মূলত ট্রিট করা হয়। যেহেতু ডাক্তার নই, সেহেতু অত হরমোনের নাম জপে সুবিধে করতে পারব না। তবে নিজেকে বাদ দিয়েও বন্ধু, আত্মীয়, সহকর্মী ও চারপাশের পরিচিত নারীদের দেখেছি প্রিমেন্সট্রুয়াল সিনড্রোমে জর্জরিত হতে। কারও শরীর-মুখ ফুলে যাচ্ছে, দুর্বল লাগছে; কারও চোখের নিচে কালি, গালে-কপালে বিনা নোটিশে ব্রণ উঠে যাচ্ছে। একের পর এক মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া হচ্ছে কিন্তু ক্রেভিং কমছে না। অকারণে জীবনের সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতাগুলো মনে পড়ে চোখে জল চলে আসছে। অথবা মায়াময় সম্পর্কগুলোর কথা মনে পড়ে কান্না পাচ্ছে বিনা কারণে। কখনোবা কথাই বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না, নড়তেও না। কিন্তু পরিবারের ছেলেমানুষেরা (বাবা, ভাই, স্বামী, পুত্র) কি কখনো খেয়াল করেছেন এই শারীরিক ও মানসিক চাপগুলো থাকা সত্ত্বেও আপনার পরিবারের নারী বা মেয়েরা ঠিকই রেঁধেছেন, অফিস-বাড়ি সামলেছেন, অতিথি সমাদর করেছেন, শিশুর যত্ন নিয়েছেন, বাজার-সদাই করেছেন, আপনাদের ফরমাশ খাটা বাদ রাখেননি। আমাকে পুরুষবিদ্বেষী নারীবাদী ভাবার কারণ নেই, বয়োজ্যেষ্ঠ নারীদেরও বলছি—কন্যা বা পুত্রবধূর এই ব্যথাকে অনুভব করুন। মেয়েদের পিরিয়ড ও প্রেগন্যান্সিতে একটা কথা খুব প্রচলিত আছে বাঙালি মা-খালাদের মুখে, ‘আমরা কি সন্তানের জন্ম দিইনি বা আমাদের কি মাসিক হয়নি? তাই বলে কি শুয়ে-বসে ছিলাম? কাজ করিনি?’
ভাবুন তো, আপনাদের পিরিয়ডকালীন ব্যথাকে কেউ গুরুত্ব দেয়নি বা গর্ভকালীন সব কাজ স্বাভাবিক রাখতে বাধ্য হয়েছেন বলে দিনগুলো সহজে কেটেছে বা ধকল যায়নি তা কিন্তু নয়! নারীর শরীরকে শরীর ভাবতে শেখা, নারীর ক্লান্তিকে ক্লান্তি ভাবা ও তাঁর ব্যথাকে অনুভব করা এখন সময়ের দাবি। হেভি ব্লিডিংয়ের সঙ্গে শরীরে আয়রন ডিফিসিয়েন্সির সম্পর্কও রয়েছে। ফলে যখন মেয়েটি বলছে, মাথাটা ঘুরছে বা দুর্বল লাগছে, তখন মোবাইল স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে বা টিভির ভলিউমটা কমিয়ে তার কপালে একটু হাত রাখুন। তীব্র ব্যথার সময় একটু চা বানিয়ে দিন, এগিয়ে দিন হটব্যাগ। একটু সহমর্মী হওয়া প্রয়োজন। কারণ, যত্ন নারী-পুরুষ সবার দরকার।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
সম্প্রতি স্পেনে পিরিয়ড বা মাসিক ঋতুচক্রের সময় নারী কর্মীদের চাকরি থেকে ছুটি দেওয়ার প্রস্তাবটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পেয়েছে। চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি আইনটি পাস হয়। ব্যাপারটাকে সাধুবাদ না জানালে নয়। কারণ, আমাদের দেশে পিরিয়ড এমন একটি বিষয়, যা নিয়ে কথা বলারই যেন কিছু নেই।
আমার অভিভাবক গোত্রের যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা যদি লেখাটা পড়ে থাকেন, তাহলে এখনই বুঝি জিব কাটলেন। ছি! পত্রিকার পাতায় মাসিক নিয়ে এত বিস্তারিত লেখার কী আছে? কেউবা নারীবাদী বলেই হয়তো গালি দিলেন। কিন্তু নারী হয়ে জন্মে যে বিষয়টা কোনো মাসেই এড়াতে পারছি না এবং যা কোনো নারীই এড়াতে পারছেন না, সেটা তো অনুচ্চারিত কোনো শব্দ হতে পারে না।
মনে পড়ে, যখন প্রথম পিরিয়ড শুরু হয়, তখন ক্লাস সেভেনে উঠেছি মাত্র। শুরু হওয়ার ঠিক এক মাস আগেই বড় বোন নারীজীবনের স্বাভাবিক এই দিনগুলোর কথা বলেছিলেন। ফলে জীবনের প্রথম পিরিয়ডের ঘটনা আমাকে সেভাবে ভড়কে দিতে পারেনি। তবে মাসের এই পাঁচ-সাত দিন আসার আগের দু-এক দিন থেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হতাম। তলপেটে ভয়ানক ব্যথায় প্রায় মূর্ছা যাওয়ার মতো অবস্থা হতো। আমার বা সে সময়ে আমাদের কিশোরীদের পারিপার্শ্বিকতা যা শিখিয়েছিল, তা হলো—পিরিয়ড জীবনের অতি স্বাভাবিক ঘটনা, কিন্তু তা যেন লজ্জার ও লুকোনোরও বিষয়। এ সময় পেটে ব্যথা হলে নীরবে বালিশ চেপে শুয়ে থাকাই শ্রেয়। বাড়িতে বাবা-ভাই রয়েছেন; ব্যথায় কাতরালে, চিৎকার করলে সে প্রশ্নের উত্তর কী দেব? কিন্তু বাস্তবতা ওসব ছলনার চেয়ে শক্তিশালী।
স্কুল ও কলেজ অবধি পিরিয়ডকালীন তীব্র ব্যথা হলে দু-এক দিন করে অনুপস্থিত থাকতে হয়েছে। কেন ক্লাসে যাইনি, ভাইয়েরা সে প্রশ্ন করলে মা চুপ করে থাকতেন। ভাইয়েরা বকুনি দিয়ে চলে যেতেন। কিন্তু সে সময়কার সমাজ আমার মাসহ প্রায় সব মাকে এটাই শিখিয়েছিল, নিজের বা কন্যার পিরিয়ড লজ্জার বিষয়, লুকোনোরও। তাঁদের দোষ দিতে পারি না। তবে কর্মজীবনে প্রবেশের পর ধীরে ধীরে ব্যথার সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়েছে, তার থেকে পালাতে পারিনি। মগের পর মগ গরম পানি, চা আর পেইনকিলার খেয়ে দিনগুলো কেটে গেছে একভাবে। সে সময় হেভি ব্লিডিং ও পেটে ব্যথা শয্য়াশায়ী করলেও এখন ঠিকই কুঁজো হয়ে হলেও রান্নাঘরে খুন্তি নাড়তে আর অফিসে কি-বোর্ড চপকাতে ঘাবড়াই না।
কিন্তু প্রসঙ্গটা ব্যথাতেই শেষ নয়; প্রিমেন্সট্রুয়াল সিনড্রোম, যেটাকে এ দেশে একপ্রকার ন্যাকামো হিসেবেই মূলত ট্রিট করা হয়। যেহেতু ডাক্তার নই, সেহেতু অত হরমোনের নাম জপে সুবিধে করতে পারব না। তবে নিজেকে বাদ দিয়েও বন্ধু, আত্মীয়, সহকর্মী ও চারপাশের পরিচিত নারীদের দেখেছি প্রিমেন্সট্রুয়াল সিনড্রোমে জর্জরিত হতে। কারও শরীর-মুখ ফুলে যাচ্ছে, দুর্বল লাগছে; কারও চোখের নিচে কালি, গালে-কপালে বিনা নোটিশে ব্রণ উঠে যাচ্ছে। একের পর এক মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া হচ্ছে কিন্তু ক্রেভিং কমছে না। অকারণে জীবনের সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতাগুলো মনে পড়ে চোখে জল চলে আসছে। অথবা মায়াময় সম্পর্কগুলোর কথা মনে পড়ে কান্না পাচ্ছে বিনা কারণে। কখনোবা কথাই বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না, নড়তেও না। কিন্তু পরিবারের ছেলেমানুষেরা (বাবা, ভাই, স্বামী, পুত্র) কি কখনো খেয়াল করেছেন এই শারীরিক ও মানসিক চাপগুলো থাকা সত্ত্বেও আপনার পরিবারের নারী বা মেয়েরা ঠিকই রেঁধেছেন, অফিস-বাড়ি সামলেছেন, অতিথি সমাদর করেছেন, শিশুর যত্ন নিয়েছেন, বাজার-সদাই করেছেন, আপনাদের ফরমাশ খাটা বাদ রাখেননি। আমাকে পুরুষবিদ্বেষী নারীবাদী ভাবার কারণ নেই, বয়োজ্যেষ্ঠ নারীদেরও বলছি—কন্যা বা পুত্রবধূর এই ব্যথাকে অনুভব করুন। মেয়েদের পিরিয়ড ও প্রেগন্যান্সিতে একটা কথা খুব প্রচলিত আছে বাঙালি মা-খালাদের মুখে, ‘আমরা কি সন্তানের জন্ম দিইনি বা আমাদের কি মাসিক হয়নি? তাই বলে কি শুয়ে-বসে ছিলাম? কাজ করিনি?’
ভাবুন তো, আপনাদের পিরিয়ডকালীন ব্যথাকে কেউ গুরুত্ব দেয়নি বা গর্ভকালীন সব কাজ স্বাভাবিক রাখতে বাধ্য হয়েছেন বলে দিনগুলো সহজে কেটেছে বা ধকল যায়নি তা কিন্তু নয়! নারীর শরীরকে শরীর ভাবতে শেখা, নারীর ক্লান্তিকে ক্লান্তি ভাবা ও তাঁর ব্যথাকে অনুভব করা এখন সময়ের দাবি। হেভি ব্লিডিংয়ের সঙ্গে শরীরে আয়রন ডিফিসিয়েন্সির সম্পর্কও রয়েছে। ফলে যখন মেয়েটি বলছে, মাথাটা ঘুরছে বা দুর্বল লাগছে, তখন মোবাইল স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে বা টিভির ভলিউমটা কমিয়ে তার কপালে একটু হাত রাখুন। তীব্র ব্যথার সময় একটু চা বানিয়ে দিন, এগিয়ে দিন হটব্যাগ। একটু সহমর্মী হওয়া প্রয়োজন। কারণ, যত্ন নারী-পুরুষ সবার দরকার।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪