Ajker Patrika

একটি মানববন্ধন ও সরকারি দল

সম্পাদকীয়
একটি মানববন্ধন ও সরকারি দল

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সৈয়দ মাসুদ রুমী সেতুতে টোল আদায়কে কেন্দ্র করে মানববন্ধন হয়েছে। সেতুটি কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের কুমারখালী লাহিনীপাড়ায় অবস্থিত। সাধারণত জনস্বার্থ-সংক্রান্ত দাবিতে মুখর হয় বিরোধী দল অথবা এলাকার সচেতন মানুষের ব্যানারে এমন কোনো গোষ্ঠী, যাঁদের কোনোভাবেই সরকারি প্রতিনিধি ভাবা যায় না। ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু কুমারখালীর সেতুতে পায়েচালিত যানবাহন থেকে টোল না তোলার বিষয়ে যে মানববন্ধন হলো, তাতে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যেমন অংশ নিয়েছেন, তেমনি স্থানীয় সংসদ সদস্যও এর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। এরপর এই দাবি আদায় না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

বিষয়টি নিয়ে ভাবতে গেলে প্রথমেই কয়েকটি প্রশ্ন উঠে আসে। প্রথমত, সেতুর টোল যদি শুধু যন্ত্রচালিত যানের জন্য নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে হঠাৎ করে পায়েচালিত যানের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা শুরু হলো কেন? দ্বিতীয়ত, বহুদিন ধরে টোল আদায় হচ্ছে। নির্মাণ ব্যয়ের কয়েক গুণ টাকা উঠে গেলেও কেন এই সেতু পার হতে যানবাহন টোল দেবে? এই ইজারাদারেরা কি সেতু রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন নাকি শুধু টোল আদায় করে ‘মাছের তেলে মাছ’ ভাজেন?

প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া জরুরি। সে না হয় ধাপে ধাপে পাওয়া যাবে। কিন্তু একটি প্রশ্নের জবাব খুব দ্রুত দিতে হবে। এই পুরো ব্যাপারটার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আছে। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী হঠাৎ করেই ইজারাদার ও সওজ বিভাগের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার সঙ্গে মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যন্ত্রচালিত যান থেকে শুধু টোল আদায় হবে কেন, পায়েচালিত যান থেকেও যদি টোল আদায় করা যায়, তাহলে তো কারও কারও পকেট ভরে! মুফতে যদি প্রতিদিন নগদ নারায়ণ আসতে থাকে ট্যাঁকে, তাহলে আপত্তির কী আছে?

তাই দিনমজুর আর খেটে খাওয়া মানুষদের এই ভোগান্তিতে যারা ফেলল, তাদের ঠিকুজি সন্ধান করা দরকার। আদৌ তারা পায়েচালিত যানের কাছ থেকে টোল আদায় করার অনুমতি পেয়েছে কি না, সেটা জানা দরকার। যদি পেয়ে থাকে, তাহলে কোন কর্তৃপক্ষ কী কারণে এ রকম অমানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটাও জানা দরকার। আর যদি নিজেদের ‘যোগসাজশে’ শুধু ফায়দা লোটার জন্য নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তাহলে তাদের চিহ্নিত করে কঠিন সাজা দিতে হবে।

এই মানববন্ধনের ইতিবাচক দিক হচ্ছে, ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ এই ‘চালাক’ লোকদের পাশে না দাঁড়িয়ে খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। আমরা আশা করব, সেতুর টোল আর আদায় করা হবে কি না, সে ব্যাপারেও এখন সচেতনতা সৃষ্টি হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে, নির্মাণ ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি টোল আদায়ের পরও টোল আদায় করা যৌক্তিক কি না।

জেলা প্রশাসক এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়েছে। বল এখন তাঁদের কোর্টে। দেখা যাক, তাঁরা সততার সঙ্গে খেলায় অংশগ্রহণ করেন কি না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত