Ajker Patrika

খালপাড়ের মাটি বিক্রি

মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৩৯
Thumbnail image

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালী ও বিনোদপুর ইউনিয়নের ১৫ কিলোমিটার কাঁচিকাটা খাল পুনঃখননের মাটি বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজন ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে। এভাবে খালের মাটি বিক্রি করে দিলে খালটির পাড় উন্মুক্ত হয়ে যাবে। মাঠের পানি প্রবেশ করবে খালটিতে। এতে পানির সঙ্গে কাদামাটি ঢুকে আবারও তা মরা খালে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩১ মে উপজেলার চরপাচুরিয়া সুইচ গেট হতে রাজাপুর ইউনিয়নের রাড়িখালী পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল খননের পর রাস্তায় ফেলে রাখা অতিরিক্ত মাটি বিক্রয়ের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসক। প্রতি ঘনমিটার ১০ টাকা হারে ইট ভাটার কাছে মাটি বিক্রির ৫০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা থাকলে তা দেয়নি ভাটা মালিকেরা। পরে মাটি বিক্রির প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন সেই মাটি রাস্তায় ও খাল পাড়ে পড়ে ছিল।

সম্প্রতি উপজেলার নাড়ানপুর এলাকার এনএসবি ব্রিকসের মালিক শহিদুজ্জামান শহিদ ও হাটবাড়িয়া এলাকার স্টার ব্রিকসের মালিক অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম তাঁরা মিয়া ওই মাটি জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন বলে দাবি করেন। সেসব মাটি চড়া তাঁরা দামে বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রির অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কানুটিয়া-চৌবাড়িয়া সড়কের স্থানীয় ইউনুচের বাড়ির পাশে চৌবাড়িয়া মৃধা পাড়ার ব্রিজের পাশে এবং চৌবাড়িয়া দক্ষিণ পাড়া আতিয়ার মাস্টারের বাড়ির পাশ থেকে অবাধে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি পরিবহনের জন্য ১৫ থেকে ২০টি অবৈধ ট্রলি রাস্তার পাশে রাখা হয়েছে। এসব গাড়িতে ছোট বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে। রাস্তায় ফেলা মাটি ও ধুলাতে চলাচলে বিপাকে পড়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। 
খালপাড়ের বাসিন্দা আতিয়ার রহমান মাস্টার বলেন, ‘খাল খননের ফলে অনেক উপকার পেয়েছি। তবে খালপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করে দেওয়ায় আমাদের এসব সুবিধা বেশি দিন থাকবে বলে মনে হয় না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার দুই বাসিন্দা বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে এ ব্যাপারে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতে চাইলেও তা অজানা কারণে হয়নি। ভাটা মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না​।’

লিটন ভাটার মালিক নুরুল মোল্লা বলেন, ‘আমি তাঁরা মিয়া ও শহিদের কাছ থেকে খাল পাড়ের মাটি কিনেছি। এ জন্য আমার লোকজন দিয়ে মাটি কেটে ভাটায় নিচ্ছি।’

এনএসবি ব্রিকসের মালিক শহিদুজ্জামান শহিদ বলেন, ‘আমরা ডিসি অফিস থেকে খাল পুনঃখননের মাটি কিনেছি। তাই এখন এসব মাটি আমরা বিক্রি করছি।’ তবে এ সময় তাঁর মাটি কাছে ক্রয়ের রশিদ দেখতে চাইলে তিনি মাটি ক্রয়ের কোনো রশিদ দেখাতে পারেননি।

স্টার ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম তাঁরা মিয়া বলেন, ‘আমরা পার স্কয়ার ফিট দশ টাকা হারে মাটি কিনে নিয়েছি। সোনালী ব্যাংক মহম্মদপুর শাখায় আমরা টাকা জমি দিয়েছি। তার ভাউচার বই প্রমাণ হিসাবে দেখাতে পারব।’

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক আগে মাটি বিক্রির চিঠি পেলেও পরে তা বাতিল হয়ে গেছে। মাটি কাটার বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছি। দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে মাগুরা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী শান্ত দত্ত বলেন, ‘নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার বদলি হওয়ার পর মাটি বিক্রির বিষয়টি বন্ধ হয়ে যায়। খাল পাড়ের ওই মাটি বিক্রি হয়নি। মাটি কাটার খোঁজ পেয়ে সরেজমিনে আমরা লোক পাঠিয়েছি।’

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ও জেলা পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই মাটি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে, এমন অসংখ্য অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর খাল পুনঃখননের মাটি বিক্রির চিঠি দেওয়া হয়েছিল। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও খাল পাড়ের এসব মাটি চুরি করে কেটে নিচ্ছে বলে শুনেছি।’

আশরাফুল আলম আরও বলেন, ‘যদি কেউ বলে মাটি কিনেছি তাহলে তাঁকে মাটি ক্রয়ের রশিদ দেখাতে হবে। তা না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত