Ajker Patrika

প্রকাশ্যে বিক্রি বিপন্ন বাগাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
প্রকাশ্যে বিক্রি বিপন্ন বাগাড়

সিলেট নগরের লালবাজারে গতকাল প্রদর্শনী করে বিক্রি করা হলো ১৫০ কেজি ওজনের একটি বাগাড়। অথচ বিপন্ন প্রজাতির এ মাছ শিকার ও ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রায়ই সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা থেকে ধরে এভাবে বিক্রি করা হয় বাগাড়। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, বন অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তরের উদাসীনতায় মাইকিং করে চলছে এমন অপরাধমূলক কার্যক্রম।

এর আগে গত ১১ এপ্রিল কুশিয়ারা নদী থেকে শিকার করা ৬০ কেজির বাগাড়, ২৭ মার্চ সুরমা নদী থেকে শিকার করা ১০০ কেজির বাগাড় ও ১২ জানুয়ারি সুরমা নদী থেকে শিকার করা ১২০ কেজির বাগাড় মাছ এই বাজারে বিক্রি হয়েছিল। এ ছাড়া এ বাজারে নিয়মিত ছোট-মাঝারি আকারের বাগাড় বিক্রি হয়।

শুধু তা-ই নয়, বড় আকারের বাগাড় বিক্রির জন্য লালবাজারে নিয়ে আসার পর মাইকিং করা হয় এবং নাগরিকদের প্রদর্শনীর জন্য বাজারে রাখা হয়। বাগাড় বিক্রিকে কেন্দ্র করে লালবাজারে উৎসবমুখর পরিস্থিতি হয়। বলা হয়, এই মাছ খেলে নানান অসুখ-বিসুখ ভালো হয়। তবে মৎস্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় উপপরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বাগাড় খেলে অসুখ-বিসুখ ভালো হয়ে যায় কথাটি সঠিক নয়। এই মাছ বিপন্নের পথে। বন্য আইনে এটি ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন কিংবা দখলে রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বাগাড় বা বাঘাইড়-এর বৈজ্ঞানিক নাম Bagarius yarrelli। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)-এর রেড লিস্ট অনুযায়ী মিঠা পানির এ মাছটি ‘মহাবিপন্ন’। এ ছাড়া বাগাড় বাংলাদেশ বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর ২ নম্বর তফসিলভুক্ত একটি সংরক্ষিত বন্য প্রাণী।

এই আইন অনুযায়ী বাগাড় শিকার, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন কিংবা দখলে রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম বলেন, সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারায় এখনো এত বড় বাগাড় রয়েছে, বিষয়টি খুবই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু মহাবিপন্ন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ এ মাছ ঢালাওভাবে শিকার ও বিক্রির বিষয়টি দুঃখজনক। এভাবে শিকার করতে থাকলে অচিরেই মাছটি একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

লালবাজারে প্রদর্শিত বাগাড়টির বিক্রেতা বিল্লাল মিয়া গতকাল বলেন, ‘মাছটি গত মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় কুশিয়ারা নদীতে জেলেদের হাতে ধরা পড়ে। পরে জেলেদের কাছ থেকে কিনে বিক্রির জন্য লালবাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। এর দাম ধরা হয়েছে প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা। আজ (বুধবার) সকালে মাছটি কেটে কেজি দরে বিক্রি করছি। সব শেষ, দুই-তিন কেজি রয়েছে।’

সিলেট বিভাগীয় বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মাহমুদুল হক খান বলেন, ‘আমাদের রেঞ্জ অফিসাররা বন্য প্রাণী নিধনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। বাগাড়ের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না।’ জানানোর জন্য প্রতিবেদককে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, খোঁজখবর নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রেঞ্জ অফিসারদের নির্দেশ দেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত