পাভেল পার্থ

জামদানি শাড়ি অনন্য হয়েছে তার পাড়ের নকশার জন্য। কলকা পাইড়, ইঁন্দুর পাইড়, বেলজিয়াম পাইড়, শাল পাইড়, হাপাইলক্ষ্মী পাইড়, জাদু পাইড়, গাছ পাইড়, কুইলতা পাইড়, ডরিং পাইড়, দুবলা পাইড়, নকশিপাতা পাইড়, বেলপাতা পাইড়, কাউয়ারঠেংগি পাইড়, কচুপাতা পাইড়, ফুল পাইড়, মাদলী পাইড়, পানশী পাইড়, দুই করলা পাইড়, দুবলা জাল পাইড়, মদন পাইড়, করলা পাইড়, ইঞ্চি পাইড়, আম পাইড়, মালা পাইড়, ময়ূরখেস পাইড়, পান পাইড়—এ রকম অসংখ্য পাড়ের নকশা আছে জামদানি বুননে। শীতলক্ষ্যা নদীর কোলে জামদানি শাড়ির জন্ম। জনবসতিঘেঁষা নদীর ভোরের বাতাস, শিশিরবিন্দু, স্থানীয় মাটির রসে ভেজা দেশি ধানের খই, ভাতের মাড়—সব মিলিয়ে শীতলক্ষ্যা অববাহিকার নারীরা তৈরি করেন জামদানি শাড়ি বোনার জন্য এক বিশেষ মন্ড। বাংলাদেশে শাড়ি ও তাঁতের ভিন্নতা আছে। আছে টাঙ্গাইল, পাবনা, কুষ্টিয়া, মণিপুরি, বেইন কিংবা হাজং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বানানো তাঁত।
চলতি আলাপের শুরুটাই হয়েছে এক জামদানি শাড়ির বিবরণে। এমন এক শাড়ি ঘিরেই কতগুলো প্রাণ জড়িত এবং কত ধরনের মানুষ জড়িত, তা একটিবার ভাবার জন্য। এই প্রাণসমূহ একে অপরের সঙ্গে কী জটিল সম্পর্কে যুক্ত ও নির্ভরশীল, তা কি আমরা জানবার চেষ্টা করি? ইঁদুর, গাছ, মন্দির, ময়ূর, বাঁশ, ধাতু, ধান, তুলা, সুতা, রং, শিশু, নারী, প্রবীণ, হাট, দোকান—কত কী! প্রশ্ন হলো প্রকৃতি ও সংস্কৃতিতে বিরাজমান এই বৈচিত্র্যকে আমরা কতজন জানি, কতজন মানি। জামদানি শাড়ির মতো এক জীবনের সঙ্গে আরও কত জীবনের সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতা, তা কি আমরা স্মরণে রাখি?
প্রকৃতি ও সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্য আর নির্ভরতাই এই মাতৃদুনিয়ায় আমাদের জীবন মহাবয়ানের আখ্যান বিকশিত করে চলেছে। প্রাণ ও সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্য কোনোভাবে আলগা হয়ে গেলে, কোনো বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা আঘাতপ্রাপ্ত হলে পুরো জীবনধারাই ওলটপালট হয়ে যায়। দীর্ণ ও মুমূর্ষু হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে ২০ বছর ধরে তা-ই হয়ে চলেছে। প্রশ্নহীন, অবিরাম। রাষ্ট্রের অবিচার, এজেন্সির খবরদারি, বহুজাতিক আগ্রাসন আর নানা গোষ্ঠীর নামে কতক লুটেরা দুর্বৃত্তের অন্যায় দেশজুড়ে এক লুণ্ঠন ও বিচারহীন সংস্কৃতি জারি করেছে। ২০ হাজার ধান জাতের বাংলাদেশে সব দেশি ধানের জাত গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। মনস্যান্টো, সিনজেনটা, কারগিল, ডুপন্ট, বায়ার ক্রপ সায়েন্স, বিএসএফ-এর মতো বহুজাতিক কৃষি-বাণিজ্য কোম্পানির মুনাফাকে চাঙা রাখতে বৈধ করা হয়েছে তথাকথিত সবুজবিপ্লব। জমিন থেকে বিষ দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কেঁচো, শামুক, ব্যাঙ কি মৌমাছি। মাটির শরীর আজ রক্তাক্ত। ধানের সঙ্গে সঙ্গে বিদায় হয়েছে মানুষের স্মৃতি আর কৃত্যরীতি। বৈচিত্র্য আর নিজস্ব কৃষিরীতি হারিয়ে এককালের কৃষকসমাজ আজ বহুজাতিক কোম্পানির বন্দী দাস। বৈচিত্র্যবিমুখ এই ধারা ক্রমেই সমাজ, বর্গ, পরিবার, ব্যক্তির মন ও শরীর দখল করেছে। তৈরি হয়েছে এক প্রশ্নহীন সহিংস সময়। সহিংসতার এই প্রেক্ষাপটকে কেবল জঙ্গিবাদ, লুটেরা অর্থনীতি আর সন্ত্রাসবাদ দিয়ে দেখলে চলে না। এই বিশ্লেষণ নির্ঘণ্টের গভীরে যায় না, তলিয়ে দেখে না। কেন কিছু মানুষ ধান, পাখি, মাছ, গাছ কি মানুষের বৈচিত্র্য সহ্য করতে পারছে না? এই মনস্তত্ত্ব বনের বাঘকে খুন করে চামড়া বিক্রি করে, নদী দখল করে মাছ মেরে ফেলে। এই মনস্তত্ত্বই মানুষের সমাজে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক, লৈঙ্গিক, ভাষিক ভিন্নতাকে সহ্য করতে পারে না। তাই নিরন্তর খুন হচ্ছে ভিন্নমত, উধাও হচ্ছে বৈচিত্র্য। সহিংস হয়ে ওঠা রক্তাক্ত সময়কে বুঝতে অবশ্যই বৈচিত্র্যবিমুখ এই মনস্তত্ত্বকে গভীরভাবে পাঠ করা জরুরি। আর তা না হলে সহিংস সময় আরও প্রবল ও বৈধ হতে থাকবে।
২. মহামতি খনার একটি বচন আছে, ‘ব্যাঙ ডাকে ঘন ঘন, শীঘ্র হবে বৃষ্টি যেন’। এককালে ব্যাঙের ডাক জানান দিত, বর্ষা আসছে। ব্যাঙের সঙ্গে পরিবেশ-প্রতিবেশের সম্পর্ক গভীর। আবহাওয়াগত পরিবর্তনশীলতায় দ্রুত যেসব প্রজাতির আচরণে সাড়া ও প্রভাব তৈরি হয়, ব্যাঙ তাদের অন্যতম। গ্রাম জনপদে একটা সময় বৃষ্টির প্রার্থনা করে ঘটা করে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হতো। স্থানীয় প্রাণবৈচিত্র্য, লোকায়ত জীবন—সব মিলিয়ে প্রতিবেশগত সেই ভারসাম্যের সুরক্ষা আর নেই। ধনী মানুষ ব্যাঙ মেরে রপ্তানি করে আরও ধনী হয়েছে। ব্যাঙের খাদ্য পোকাদের বিষ দিয়ে মেরেছে। ব্যাঙের বসত দখল করেছে। ব্যাঙ ও মেঘের সম্পর্ক বুঝতে পারা নিম্নবর্গের মানুষকেও জখম আর উচ্ছেদ করেছে। প্রাণ, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে আগলে নিয়ে বিকশিত হওয়া জ্ঞানপ্রবাহ, চিন্তা, বিশ্বাস ও চর্চাকে তছনছ করে দিয়েছে। বৈচিত্র্যমুখী জীবনের সম্পর্ক এবং একের সঙ্গে অন্যের জটিল নির্ভরশীলতাকে লন্ডভন্ড করেছে। এতে প্রজাতি হিসেবে মানুষ নিজেই আজ কাহিল ও সংকটের মুখোমুখি। কারণ, প্রকৃতিতে মানুষের মতো নির্ভরশীল আর কোনো প্রজাতি নেই।
মানুষ নিজে নিজে একা খাদ্য কি আশ্রয় বা সংস্কৃতি—কোনো কিছুই তৈরি করতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ জল, মাটি, বাতাস, গাছ, মাছ, পাখি, অরণ্য, সমতল—সবকিছুর ওপরই নির্ভরশীল। নিদারুণভাবে মানুষ বারবার অবিরাম তার এই নির্ভরশীলতার সম্পর্কগুলোকে আমলে নিচ্ছে না। অন্যায়ভাবে সবকিছু জখম করে অকৃতজ্ঞতাকে টিকিয়ে রাখছে। মানুষ নিজের মায়ের দুধের ঋণের কথা আন্দাজ করে। কিন্তু মাছের পোনাদের এতিম করে মা মাছকে জোর করে ধরে আনাকে ‘মৎস্য উন্নয়ন’ হিসেবে বৈধ করে। যে গাছ নিজের জনমভর মানুষকে দমের বাতাস জোগায়, মানুষ নির্মম কায়দায় সেই গাছকে উপড়ে ফেলে। এমনকি রাজনৈতিক সহিংসতার বাহাদুরি দেখাতেও গাছকে হত্যা করে।
মানুষের এই অকৃতজ্ঞতা আর বিস্তৃতির সংস্কৃতি ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠছে। মানুষের কাছে তাই এখন কেঁচো কি গাছ, মানুষ কি পাখির বৈচিত্র্য নিয়ে গড়ে ওঠা সংসারের কোনো গুরুত্ব নেই। প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার প্রতি ঋণ স্বীকারের সংস্কৃতি থেকে মানুষ প্রতিদিন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। আর এই বিচ্ছিন্নতার বোধই সহিংস সময়কে বৈধ করে তুলছে।
৩. কৃষিজমিনের পতঙ্গকুল হত্যার জন্যই দুনিয়ায় বহুজাতিক কোম্পানির বিষ-বাণিজ্যের সূচনা হয়েছে। আর তাকে বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে কৃষি এজেন্সি, বিদ্যায়তন ও জাতিরাষ্ট্রগুলো। অথচ এখনো বাংলাদেশে অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজে অনেক পোকা খাদ্য ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেক অঞ্চলে বাঙালি জীবনে পোকা ঐতিহ্যগত চিকিৎসায় কাজে লাগে। যে পোকাদের কাছ থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন ঋতু পরিবর্তনশীলতার আভাস পেতেন, যেসব পোকা ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনের চলার সাথি, সেসব পোকা আজ রাসায়নিক কৃষির নামে করপোরেট বিষ কোম্পানির বিষের যন্ত্রণায় মারা যাচ্ছে। যে বন আমাদের জীবনের বন্ধু, সেই বন আজ কলাবাগান আর একাশিয়া বাগানে পরিণত হয়েছে।
আমাদের জল-জঙ্গল-জুম-জমিন থেকে প্রকৃতির সব প্রাণবৈচিত্র্য আমাদের ভোগবাদী বিলাসিতার কারণেই বিদায় নিয়েছে। হয়েছে নিশ্চিহ্ন। প্রাণবৈচিত্র্যের এই সর্বনাশা বিলুপ্তিই আমাদের জলবায়ুজনিত জটিলতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতাকে আগলে না দাঁড়ালে ক্রমেই মানুষ হিসেবে আমরা আরও জটিল সংকটের মুখোমুখি হতে বাধ্য। সামনে হয়তো অপেক্ষা করছে আরও প্রবল সহিংস সময়। তবে মনে রাখা জরুরি, আমরাই নিদারুণভাবে এটি প্রশ্রয় দিয়ে বৈধ করে চলেছি। এর সব দায় স্বীকার করেই আজ আমাদের দায়িত্বগুলো বুঝে নেওয়া জরুরি। আর কাজটি নতুন প্রজন্মের, পূর্ব প্রজন্ম থেকে যারা অভিজ্ঞতা আর নির্দেশনাই কেবল ধার করতে পারে।
৪. ব্যাখ্যা আর পরিসংখ্যানের নানা তর্ক থাকলেও অস্বীকার করার উপায় নেই, জলবায়ু সংকট আজ এক বৈশ্বিক দুশ্চিন্তার ময়দান। জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ের ফলে প্রায় ১০ লাখ বৈচিত্র্যময় প্রজাতির বিলুপ্তির আশঙ্কা করছেন পুস্তকি বিশেষজ্ঞরা। প্রাণবৈচিত্র্যের নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়া সরাসরি আঘাত করবে পৃথিবীর বিপন্ন শরীরকেও। জলবায়ুর কারণে পরিবর্তিত বিপন্ন এই আমাদের একমাত্র প্রিয় পৃথিবী আবারও প্রাণ ফিরে পেতে পারে কেবল প্রাণবৈচিত্র্যের সব সদস্যের যৌথ মিলন আর পরস্পরনির্ভরশীল সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমেই। আর এটি সম্ভব বৈচিত্র্য ও ভিন্নতাকে পাঠ করা নিম্নবর্গের নিজস্ব কায়দা আর লোকায়ত উদ্যোগগুলোর ভেতর দিয়েই।
এখনো দেশে বাঙালি হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজ কেবল পূজা-পার্বণের ভেতর দিয়ে সংরক্ষণ করেন—এমন অনেক পবিত্র বনভূমি, যেখানে বৈশিষ্ট্যময় প্রজাতিসমূহের দেখা মেলে। বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের বোস্তামী কাছিম, খানজাহান আলীর মাজারের কুমির ধলা পাহাড়-কালা পাহাড়, হজরত শাহজালালের মাজারের গজার মাছ কি রাষ্ট্রের কোনো বিভাগ বা বাজেট বাঁচিয়ে রেখেছে? এই সব প্রজাতি সংরক্ষিত হয় জনগোষ্ঠীর লোকায়ত বিশ্বাস ও ভালোবাসার ভেতর দিয়েই। আজ সহিংস ও বিপন্ন সময়ে আমাদের রাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান থেকে শুরু করে ব্যক্তির নিজস্ব আচরণ অবধি এই সব প্রসঙ্গ বিবেচনা করা জরুরি।
৫. প্রাণবৈচিত্র্য বলতে আমরা বুঝে থাকি চারপাশের সব দেখা-অদেখা এমনকি কল্পনার প্রাণজগৎকেও। শুধু পতঙ্গ, পাখি, মাছ, সরীসৃপ, উভচর, মানুষ, বৃক্ষগুল্ম, অণুজীব মিলেই প্রাণের বৈচিত্র্য নয়। আমাদের প্রাণবৈচিত্র্য ধারণায় রূপকথার ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী আছে, পঙ্খিরাজ ঘোড়া আছে।
সমস্যা হলো রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নানা সময় ‘প্রাণবৈচিত্র্যের’ সংজ্ঞায়ন করছে একেবারেই একপেশে কায়দায় এবং ঔপনিবেশিক চিন্তাকাঠামোর ভেতরে থেকে। প্রাণবৈচিত্র্য বলতে মূলত উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলকে বোঝানো হয়েছে। স্পষ্টভাবে এখানে প্রজাতি হিসেবে মানুষ অনুপস্থিত। আর এটি ঘটেছে মূলত কিছু একতরফা পশ্চিমা বিদ্যায়তনিক বাহাদুরির জোরেই। অথচ বাংলাদেশে যাঁরা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাণবৈচিত্র্যকে তত্ত্বায়ন ও প্রাণবৈচিত্র্যের সীমানা সূচিত করতে চাইছেন, তাঁরা নিজেরাই এক প্রবল ‘প্রাণবৈচিত্র্য’ ধারণা বহন করে চলেছেন তাঁদের শরীর ও সংস্কৃতির প্রবাহে। তত্ত্বায়ন ও কাঠামোর জায়গাতে বরাবরের মতো তারা নিজের সূত্র ও সম্ভাবনাকে বাদ দিয়ে অপরের ভুলকে বগলদাবা করে ‘চিন্তার দাসত্বকেই’ প্রমাণ করে চলেছেন।
আজ যদি ‘প্রাণবৈচিত্র্য’ এত ছোট্ট এক গণ্ডি ও সীমানায় আটকে যায়, তবে তা আমাদের মনস্তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতাকেই বিশ্বদরবারে প্রমাণ করবে। বৈচিত্র্যের সীমানা ঘিরে এই বিশৃঙ্খল চিন্তাপদ্ধতি প্রকৃতি ও সংস্কৃতির জটিল সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতাকে অস্বীকার করবে। প্রজাতির ওপর নির্ভরশীলতার বিজ্ঞান থেকে মানুষ ক্রমেই আরও বিস্মৃত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
বিচ্ছিন্নতার এই বোধই মানুষকে লুটেরা, সন্ত্রাসী, ধর্ষক, হন্তারক কি জঙ্গি করে তোলে। টিকে থাকে সহিংসতার গণিত। আমরা এই মিথ্যা গণিত চাই না। প্রাণ, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার প্রতি আমাদের আজন্ম ঋণ স্বীকারের ভেতর দিয়েই নিজের তরতাজা অস্তিত্বকে এই দুনিয়ায় বিকশিত করে তুলতে চাই। প্রকৃতির সব সদস্যকে নিয়েই গড়ে উঠুক আগামীর সংস্কৃতি।
লেখক: প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণবিষয়ক গবেষক

জামদানি শাড়ি অনন্য হয়েছে তার পাড়ের নকশার জন্য। কলকা পাইড়, ইঁন্দুর পাইড়, বেলজিয়াম পাইড়, শাল পাইড়, হাপাইলক্ষ্মী পাইড়, জাদু পাইড়, গাছ পাইড়, কুইলতা পাইড়, ডরিং পাইড়, দুবলা পাইড়, নকশিপাতা পাইড়, বেলপাতা পাইড়, কাউয়ারঠেংগি পাইড়, কচুপাতা পাইড়, ফুল পাইড়, মাদলী পাইড়, পানশী পাইড়, দুই করলা পাইড়, দুবলা জাল পাইড়, মদন পাইড়, করলা পাইড়, ইঞ্চি পাইড়, আম পাইড়, মালা পাইড়, ময়ূরখেস পাইড়, পান পাইড়—এ রকম অসংখ্য পাড়ের নকশা আছে জামদানি বুননে। শীতলক্ষ্যা নদীর কোলে জামদানি শাড়ির জন্ম। জনবসতিঘেঁষা নদীর ভোরের বাতাস, শিশিরবিন্দু, স্থানীয় মাটির রসে ভেজা দেশি ধানের খই, ভাতের মাড়—সব মিলিয়ে শীতলক্ষ্যা অববাহিকার নারীরা তৈরি করেন জামদানি শাড়ি বোনার জন্য এক বিশেষ মন্ড। বাংলাদেশে শাড়ি ও তাঁতের ভিন্নতা আছে। আছে টাঙ্গাইল, পাবনা, কুষ্টিয়া, মণিপুরি, বেইন কিংবা হাজং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বানানো তাঁত।
চলতি আলাপের শুরুটাই হয়েছে এক জামদানি শাড়ির বিবরণে। এমন এক শাড়ি ঘিরেই কতগুলো প্রাণ জড়িত এবং কত ধরনের মানুষ জড়িত, তা একটিবার ভাবার জন্য। এই প্রাণসমূহ একে অপরের সঙ্গে কী জটিল সম্পর্কে যুক্ত ও নির্ভরশীল, তা কি আমরা জানবার চেষ্টা করি? ইঁদুর, গাছ, মন্দির, ময়ূর, বাঁশ, ধাতু, ধান, তুলা, সুতা, রং, শিশু, নারী, প্রবীণ, হাট, দোকান—কত কী! প্রশ্ন হলো প্রকৃতি ও সংস্কৃতিতে বিরাজমান এই বৈচিত্র্যকে আমরা কতজন জানি, কতজন মানি। জামদানি শাড়ির মতো এক জীবনের সঙ্গে আরও কত জীবনের সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতা, তা কি আমরা স্মরণে রাখি?
প্রকৃতি ও সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্য আর নির্ভরতাই এই মাতৃদুনিয়ায় আমাদের জীবন মহাবয়ানের আখ্যান বিকশিত করে চলেছে। প্রাণ ও সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্য কোনোভাবে আলগা হয়ে গেলে, কোনো বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা আঘাতপ্রাপ্ত হলে পুরো জীবনধারাই ওলটপালট হয়ে যায়। দীর্ণ ও মুমূর্ষু হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে ২০ বছর ধরে তা-ই হয়ে চলেছে। প্রশ্নহীন, অবিরাম। রাষ্ট্রের অবিচার, এজেন্সির খবরদারি, বহুজাতিক আগ্রাসন আর নানা গোষ্ঠীর নামে কতক লুটেরা দুর্বৃত্তের অন্যায় দেশজুড়ে এক লুণ্ঠন ও বিচারহীন সংস্কৃতি জারি করেছে। ২০ হাজার ধান জাতের বাংলাদেশে সব দেশি ধানের জাত গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। মনস্যান্টো, সিনজেনটা, কারগিল, ডুপন্ট, বায়ার ক্রপ সায়েন্স, বিএসএফ-এর মতো বহুজাতিক কৃষি-বাণিজ্য কোম্পানির মুনাফাকে চাঙা রাখতে বৈধ করা হয়েছে তথাকথিত সবুজবিপ্লব। জমিন থেকে বিষ দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কেঁচো, শামুক, ব্যাঙ কি মৌমাছি। মাটির শরীর আজ রক্তাক্ত। ধানের সঙ্গে সঙ্গে বিদায় হয়েছে মানুষের স্মৃতি আর কৃত্যরীতি। বৈচিত্র্য আর নিজস্ব কৃষিরীতি হারিয়ে এককালের কৃষকসমাজ আজ বহুজাতিক কোম্পানির বন্দী দাস। বৈচিত্র্যবিমুখ এই ধারা ক্রমেই সমাজ, বর্গ, পরিবার, ব্যক্তির মন ও শরীর দখল করেছে। তৈরি হয়েছে এক প্রশ্নহীন সহিংস সময়। সহিংসতার এই প্রেক্ষাপটকে কেবল জঙ্গিবাদ, লুটেরা অর্থনীতি আর সন্ত্রাসবাদ দিয়ে দেখলে চলে না। এই বিশ্লেষণ নির্ঘণ্টের গভীরে যায় না, তলিয়ে দেখে না। কেন কিছু মানুষ ধান, পাখি, মাছ, গাছ কি মানুষের বৈচিত্র্য সহ্য করতে পারছে না? এই মনস্তত্ত্ব বনের বাঘকে খুন করে চামড়া বিক্রি করে, নদী দখল করে মাছ মেরে ফেলে। এই মনস্তত্ত্বই মানুষের সমাজে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক, লৈঙ্গিক, ভাষিক ভিন্নতাকে সহ্য করতে পারে না। তাই নিরন্তর খুন হচ্ছে ভিন্নমত, উধাও হচ্ছে বৈচিত্র্য। সহিংস হয়ে ওঠা রক্তাক্ত সময়কে বুঝতে অবশ্যই বৈচিত্র্যবিমুখ এই মনস্তত্ত্বকে গভীরভাবে পাঠ করা জরুরি। আর তা না হলে সহিংস সময় আরও প্রবল ও বৈধ হতে থাকবে।
২. মহামতি খনার একটি বচন আছে, ‘ব্যাঙ ডাকে ঘন ঘন, শীঘ্র হবে বৃষ্টি যেন’। এককালে ব্যাঙের ডাক জানান দিত, বর্ষা আসছে। ব্যাঙের সঙ্গে পরিবেশ-প্রতিবেশের সম্পর্ক গভীর। আবহাওয়াগত পরিবর্তনশীলতায় দ্রুত যেসব প্রজাতির আচরণে সাড়া ও প্রভাব তৈরি হয়, ব্যাঙ তাদের অন্যতম। গ্রাম জনপদে একটা সময় বৃষ্টির প্রার্থনা করে ঘটা করে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হতো। স্থানীয় প্রাণবৈচিত্র্য, লোকায়ত জীবন—সব মিলিয়ে প্রতিবেশগত সেই ভারসাম্যের সুরক্ষা আর নেই। ধনী মানুষ ব্যাঙ মেরে রপ্তানি করে আরও ধনী হয়েছে। ব্যাঙের খাদ্য পোকাদের বিষ দিয়ে মেরেছে। ব্যাঙের বসত দখল করেছে। ব্যাঙ ও মেঘের সম্পর্ক বুঝতে পারা নিম্নবর্গের মানুষকেও জখম আর উচ্ছেদ করেছে। প্রাণ, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে আগলে নিয়ে বিকশিত হওয়া জ্ঞানপ্রবাহ, চিন্তা, বিশ্বাস ও চর্চাকে তছনছ করে দিয়েছে। বৈচিত্র্যমুখী জীবনের সম্পর্ক এবং একের সঙ্গে অন্যের জটিল নির্ভরশীলতাকে লন্ডভন্ড করেছে। এতে প্রজাতি হিসেবে মানুষ নিজেই আজ কাহিল ও সংকটের মুখোমুখি। কারণ, প্রকৃতিতে মানুষের মতো নির্ভরশীল আর কোনো প্রজাতি নেই।
মানুষ নিজে নিজে একা খাদ্য কি আশ্রয় বা সংস্কৃতি—কোনো কিছুই তৈরি করতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ জল, মাটি, বাতাস, গাছ, মাছ, পাখি, অরণ্য, সমতল—সবকিছুর ওপরই নির্ভরশীল। নিদারুণভাবে মানুষ বারবার অবিরাম তার এই নির্ভরশীলতার সম্পর্কগুলোকে আমলে নিচ্ছে না। অন্যায়ভাবে সবকিছু জখম করে অকৃতজ্ঞতাকে টিকিয়ে রাখছে। মানুষ নিজের মায়ের দুধের ঋণের কথা আন্দাজ করে। কিন্তু মাছের পোনাদের এতিম করে মা মাছকে জোর করে ধরে আনাকে ‘মৎস্য উন্নয়ন’ হিসেবে বৈধ করে। যে গাছ নিজের জনমভর মানুষকে দমের বাতাস জোগায়, মানুষ নির্মম কায়দায় সেই গাছকে উপড়ে ফেলে। এমনকি রাজনৈতিক সহিংসতার বাহাদুরি দেখাতেও গাছকে হত্যা করে।
মানুষের এই অকৃতজ্ঞতা আর বিস্তৃতির সংস্কৃতি ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠছে। মানুষের কাছে তাই এখন কেঁচো কি গাছ, মানুষ কি পাখির বৈচিত্র্য নিয়ে গড়ে ওঠা সংসারের কোনো গুরুত্ব নেই। প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার প্রতি ঋণ স্বীকারের সংস্কৃতি থেকে মানুষ প্রতিদিন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। আর এই বিচ্ছিন্নতার বোধই সহিংস সময়কে বৈধ করে তুলছে।
৩. কৃষিজমিনের পতঙ্গকুল হত্যার জন্যই দুনিয়ায় বহুজাতিক কোম্পানির বিষ-বাণিজ্যের সূচনা হয়েছে। আর তাকে বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে কৃষি এজেন্সি, বিদ্যায়তন ও জাতিরাষ্ট্রগুলো। অথচ এখনো বাংলাদেশে অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজে অনেক পোকা খাদ্য ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেক অঞ্চলে বাঙালি জীবনে পোকা ঐতিহ্যগত চিকিৎসায় কাজে লাগে। যে পোকাদের কাছ থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন ঋতু পরিবর্তনশীলতার আভাস পেতেন, যেসব পোকা ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনের চলার সাথি, সেসব পোকা আজ রাসায়নিক কৃষির নামে করপোরেট বিষ কোম্পানির বিষের যন্ত্রণায় মারা যাচ্ছে। যে বন আমাদের জীবনের বন্ধু, সেই বন আজ কলাবাগান আর একাশিয়া বাগানে পরিণত হয়েছে।
আমাদের জল-জঙ্গল-জুম-জমিন থেকে প্রকৃতির সব প্রাণবৈচিত্র্য আমাদের ভোগবাদী বিলাসিতার কারণেই বিদায় নিয়েছে। হয়েছে নিশ্চিহ্ন। প্রাণবৈচিত্র্যের এই সর্বনাশা বিলুপ্তিই আমাদের জলবায়ুজনিত জটিলতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতাকে আগলে না দাঁড়ালে ক্রমেই মানুষ হিসেবে আমরা আরও জটিল সংকটের মুখোমুখি হতে বাধ্য। সামনে হয়তো অপেক্ষা করছে আরও প্রবল সহিংস সময়। তবে মনে রাখা জরুরি, আমরাই নিদারুণভাবে এটি প্রশ্রয় দিয়ে বৈধ করে চলেছি। এর সব দায় স্বীকার করেই আজ আমাদের দায়িত্বগুলো বুঝে নেওয়া জরুরি। আর কাজটি নতুন প্রজন্মের, পূর্ব প্রজন্ম থেকে যারা অভিজ্ঞতা আর নির্দেশনাই কেবল ধার করতে পারে।
৪. ব্যাখ্যা আর পরিসংখ্যানের নানা তর্ক থাকলেও অস্বীকার করার উপায় নেই, জলবায়ু সংকট আজ এক বৈশ্বিক দুশ্চিন্তার ময়দান। জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ের ফলে প্রায় ১০ লাখ বৈচিত্র্যময় প্রজাতির বিলুপ্তির আশঙ্কা করছেন পুস্তকি বিশেষজ্ঞরা। প্রাণবৈচিত্র্যের নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়া সরাসরি আঘাত করবে পৃথিবীর বিপন্ন শরীরকেও। জলবায়ুর কারণে পরিবর্তিত বিপন্ন এই আমাদের একমাত্র প্রিয় পৃথিবী আবারও প্রাণ ফিরে পেতে পারে কেবল প্রাণবৈচিত্র্যের সব সদস্যের যৌথ মিলন আর পরস্পরনির্ভরশীল সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমেই। আর এটি সম্ভব বৈচিত্র্য ও ভিন্নতাকে পাঠ করা নিম্নবর্গের নিজস্ব কায়দা আর লোকায়ত উদ্যোগগুলোর ভেতর দিয়েই।
এখনো দেশে বাঙালি হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজ কেবল পূজা-পার্বণের ভেতর দিয়ে সংরক্ষণ করেন—এমন অনেক পবিত্র বনভূমি, যেখানে বৈশিষ্ট্যময় প্রজাতিসমূহের দেখা মেলে। বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের বোস্তামী কাছিম, খানজাহান আলীর মাজারের কুমির ধলা পাহাড়-কালা পাহাড়, হজরত শাহজালালের মাজারের গজার মাছ কি রাষ্ট্রের কোনো বিভাগ বা বাজেট বাঁচিয়ে রেখেছে? এই সব প্রজাতি সংরক্ষিত হয় জনগোষ্ঠীর লোকায়ত বিশ্বাস ও ভালোবাসার ভেতর দিয়েই। আজ সহিংস ও বিপন্ন সময়ে আমাদের রাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান থেকে শুরু করে ব্যক্তির নিজস্ব আচরণ অবধি এই সব প্রসঙ্গ বিবেচনা করা জরুরি।
৫. প্রাণবৈচিত্র্য বলতে আমরা বুঝে থাকি চারপাশের সব দেখা-অদেখা এমনকি কল্পনার প্রাণজগৎকেও। শুধু পতঙ্গ, পাখি, মাছ, সরীসৃপ, উভচর, মানুষ, বৃক্ষগুল্ম, অণুজীব মিলেই প্রাণের বৈচিত্র্য নয়। আমাদের প্রাণবৈচিত্র্য ধারণায় রূপকথার ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী আছে, পঙ্খিরাজ ঘোড়া আছে।
সমস্যা হলো রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নানা সময় ‘প্রাণবৈচিত্র্যের’ সংজ্ঞায়ন করছে একেবারেই একপেশে কায়দায় এবং ঔপনিবেশিক চিন্তাকাঠামোর ভেতরে থেকে। প্রাণবৈচিত্র্য বলতে মূলত উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলকে বোঝানো হয়েছে। স্পষ্টভাবে এখানে প্রজাতি হিসেবে মানুষ অনুপস্থিত। আর এটি ঘটেছে মূলত কিছু একতরফা পশ্চিমা বিদ্যায়তনিক বাহাদুরির জোরেই। অথচ বাংলাদেশে যাঁরা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাণবৈচিত্র্যকে তত্ত্বায়ন ও প্রাণবৈচিত্র্যের সীমানা সূচিত করতে চাইছেন, তাঁরা নিজেরাই এক প্রবল ‘প্রাণবৈচিত্র্য’ ধারণা বহন করে চলেছেন তাঁদের শরীর ও সংস্কৃতির প্রবাহে। তত্ত্বায়ন ও কাঠামোর জায়গাতে বরাবরের মতো তারা নিজের সূত্র ও সম্ভাবনাকে বাদ দিয়ে অপরের ভুলকে বগলদাবা করে ‘চিন্তার দাসত্বকেই’ প্রমাণ করে চলেছেন।
আজ যদি ‘প্রাণবৈচিত্র্য’ এত ছোট্ট এক গণ্ডি ও সীমানায় আটকে যায়, তবে তা আমাদের মনস্তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতাকেই বিশ্বদরবারে প্রমাণ করবে। বৈচিত্র্যের সীমানা ঘিরে এই বিশৃঙ্খল চিন্তাপদ্ধতি প্রকৃতি ও সংস্কৃতির জটিল সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতাকে অস্বীকার করবে। প্রজাতির ওপর নির্ভরশীলতার বিজ্ঞান থেকে মানুষ ক্রমেই আরও বিস্মৃত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
বিচ্ছিন্নতার এই বোধই মানুষকে লুটেরা, সন্ত্রাসী, ধর্ষক, হন্তারক কি জঙ্গি করে তোলে। টিকে থাকে সহিংসতার গণিত। আমরা এই মিথ্যা গণিত চাই না। প্রাণ, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার প্রতি আমাদের আজন্ম ঋণ স্বীকারের ভেতর দিয়েই নিজের তরতাজা অস্তিত্বকে এই দুনিয়ায় বিকশিত করে তুলতে চাই। প্রকৃতির সব সদস্যকে নিয়েই গড়ে উঠুক আগামীর সংস্কৃতি।
লেখক: প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণবিষয়ক গবেষক
পাভেল পার্থ

জামদানি শাড়ি অনন্য হয়েছে তার পাড়ের নকশার জন্য। কলকা পাইড়, ইঁন্দুর পাইড়, বেলজিয়াম পাইড়, শাল পাইড়, হাপাইলক্ষ্মী পাইড়, জাদু পাইড়, গাছ পাইড়, কুইলতা পাইড়, ডরিং পাইড়, দুবলা পাইড়, নকশিপাতা পাইড়, বেলপাতা পাইড়, কাউয়ারঠেংগি পাইড়, কচুপাতা পাইড়, ফুল পাইড়, মাদলী পাইড়, পানশী পাইড়, দুই করলা পাইড়, দুবলা জাল পাইড়, মদন পাইড়, করলা পাইড়, ইঞ্চি পাইড়, আম পাইড়, মালা পাইড়, ময়ূরখেস পাইড়, পান পাইড়—এ রকম অসংখ্য পাড়ের নকশা আছে জামদানি বুননে। শীতলক্ষ্যা নদীর কোলে জামদানি শাড়ির জন্ম। জনবসতিঘেঁষা নদীর ভোরের বাতাস, শিশিরবিন্দু, স্থানীয় মাটির রসে ভেজা দেশি ধানের খই, ভাতের মাড়—সব মিলিয়ে শীতলক্ষ্যা অববাহিকার নারীরা তৈরি করেন জামদানি শাড়ি বোনার জন্য এক বিশেষ মন্ড। বাংলাদেশে শাড়ি ও তাঁতের ভিন্নতা আছে। আছে টাঙ্গাইল, পাবনা, কুষ্টিয়া, মণিপুরি, বেইন কিংবা হাজং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বানানো তাঁত।
চলতি আলাপের শুরুটাই হয়েছে এক জামদানি শাড়ির বিবরণে। এমন এক শাড়ি ঘিরেই কতগুলো প্রাণ জড়িত এবং কত ধরনের মানুষ জড়িত, তা একটিবার ভাবার জন্য। এই প্রাণসমূহ একে অপরের সঙ্গে কী জটিল সম্পর্কে যুক্ত ও নির্ভরশীল, তা কি আমরা জানবার চেষ্টা করি? ইঁদুর, গাছ, মন্দির, ময়ূর, বাঁশ, ধাতু, ধান, তুলা, সুতা, রং, শিশু, নারী, প্রবীণ, হাট, দোকান—কত কী! প্রশ্ন হলো প্রকৃতি ও সংস্কৃতিতে বিরাজমান এই বৈচিত্র্যকে আমরা কতজন জানি, কতজন মানি। জামদানি শাড়ির মতো এক জীবনের সঙ্গে আরও কত জীবনের সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতা, তা কি আমরা স্মরণে রাখি?
প্রকৃতি ও সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্য আর নির্ভরতাই এই মাতৃদুনিয়ায় আমাদের জীবন মহাবয়ানের আখ্যান বিকশিত করে চলেছে। প্রাণ ও সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্য কোনোভাবে আলগা হয়ে গেলে, কোনো বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা আঘাতপ্রাপ্ত হলে পুরো জীবনধারাই ওলটপালট হয়ে যায়। দীর্ণ ও মুমূর্ষু হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে ২০ বছর ধরে তা-ই হয়ে চলেছে। প্রশ্নহীন, অবিরাম। রাষ্ট্রের অবিচার, এজেন্সির খবরদারি, বহুজাতিক আগ্রাসন আর নানা গোষ্ঠীর নামে কতক লুটেরা দুর্বৃত্তের অন্যায় দেশজুড়ে এক লুণ্ঠন ও বিচারহীন সংস্কৃতি জারি করেছে। ২০ হাজার ধান জাতের বাংলাদেশে সব দেশি ধানের জাত গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। মনস্যান্টো, সিনজেনটা, কারগিল, ডুপন্ট, বায়ার ক্রপ সায়েন্স, বিএসএফ-এর মতো বহুজাতিক কৃষি-বাণিজ্য কোম্পানির মুনাফাকে চাঙা রাখতে বৈধ করা হয়েছে তথাকথিত সবুজবিপ্লব। জমিন থেকে বিষ দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কেঁচো, শামুক, ব্যাঙ কি মৌমাছি। মাটির শরীর আজ রক্তাক্ত। ধানের সঙ্গে সঙ্গে বিদায় হয়েছে মানুষের স্মৃতি আর কৃত্যরীতি। বৈচিত্র্য আর নিজস্ব কৃষিরীতি হারিয়ে এককালের কৃষকসমাজ আজ বহুজাতিক কোম্পানির বন্দী দাস। বৈচিত্র্যবিমুখ এই ধারা ক্রমেই সমাজ, বর্গ, পরিবার, ব্যক্তির মন ও শরীর দখল করেছে। তৈরি হয়েছে এক প্রশ্নহীন সহিংস সময়। সহিংসতার এই প্রেক্ষাপটকে কেবল জঙ্গিবাদ, লুটেরা অর্থনীতি আর সন্ত্রাসবাদ দিয়ে দেখলে চলে না। এই বিশ্লেষণ নির্ঘণ্টের গভীরে যায় না, তলিয়ে দেখে না। কেন কিছু মানুষ ধান, পাখি, মাছ, গাছ কি মানুষের বৈচিত্র্য সহ্য করতে পারছে না? এই মনস্তত্ত্ব বনের বাঘকে খুন করে চামড়া বিক্রি করে, নদী দখল করে মাছ মেরে ফেলে। এই মনস্তত্ত্বই মানুষের সমাজে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক, লৈঙ্গিক, ভাষিক ভিন্নতাকে সহ্য করতে পারে না। তাই নিরন্তর খুন হচ্ছে ভিন্নমত, উধাও হচ্ছে বৈচিত্র্য। সহিংস হয়ে ওঠা রক্তাক্ত সময়কে বুঝতে অবশ্যই বৈচিত্র্যবিমুখ এই মনস্তত্ত্বকে গভীরভাবে পাঠ করা জরুরি। আর তা না হলে সহিংস সময় আরও প্রবল ও বৈধ হতে থাকবে।
২. মহামতি খনার একটি বচন আছে, ‘ব্যাঙ ডাকে ঘন ঘন, শীঘ্র হবে বৃষ্টি যেন’। এককালে ব্যাঙের ডাক জানান দিত, বর্ষা আসছে। ব্যাঙের সঙ্গে পরিবেশ-প্রতিবেশের সম্পর্ক গভীর। আবহাওয়াগত পরিবর্তনশীলতায় দ্রুত যেসব প্রজাতির আচরণে সাড়া ও প্রভাব তৈরি হয়, ব্যাঙ তাদের অন্যতম। গ্রাম জনপদে একটা সময় বৃষ্টির প্রার্থনা করে ঘটা করে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হতো। স্থানীয় প্রাণবৈচিত্র্য, লোকায়ত জীবন—সব মিলিয়ে প্রতিবেশগত সেই ভারসাম্যের সুরক্ষা আর নেই। ধনী মানুষ ব্যাঙ মেরে রপ্তানি করে আরও ধনী হয়েছে। ব্যাঙের খাদ্য পোকাদের বিষ দিয়ে মেরেছে। ব্যাঙের বসত দখল করেছে। ব্যাঙ ও মেঘের সম্পর্ক বুঝতে পারা নিম্নবর্গের মানুষকেও জখম আর উচ্ছেদ করেছে। প্রাণ, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে আগলে নিয়ে বিকশিত হওয়া জ্ঞানপ্রবাহ, চিন্তা, বিশ্বাস ও চর্চাকে তছনছ করে দিয়েছে। বৈচিত্র্যমুখী জীবনের সম্পর্ক এবং একের সঙ্গে অন্যের জটিল নির্ভরশীলতাকে লন্ডভন্ড করেছে। এতে প্রজাতি হিসেবে মানুষ নিজেই আজ কাহিল ও সংকটের মুখোমুখি। কারণ, প্রকৃতিতে মানুষের মতো নির্ভরশীল আর কোনো প্রজাতি নেই।
মানুষ নিজে নিজে একা খাদ্য কি আশ্রয় বা সংস্কৃতি—কোনো কিছুই তৈরি করতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ জল, মাটি, বাতাস, গাছ, মাছ, পাখি, অরণ্য, সমতল—সবকিছুর ওপরই নির্ভরশীল। নিদারুণভাবে মানুষ বারবার অবিরাম তার এই নির্ভরশীলতার সম্পর্কগুলোকে আমলে নিচ্ছে না। অন্যায়ভাবে সবকিছু জখম করে অকৃতজ্ঞতাকে টিকিয়ে রাখছে। মানুষ নিজের মায়ের দুধের ঋণের কথা আন্দাজ করে। কিন্তু মাছের পোনাদের এতিম করে মা মাছকে জোর করে ধরে আনাকে ‘মৎস্য উন্নয়ন’ হিসেবে বৈধ করে। যে গাছ নিজের জনমভর মানুষকে দমের বাতাস জোগায়, মানুষ নির্মম কায়দায় সেই গাছকে উপড়ে ফেলে। এমনকি রাজনৈতিক সহিংসতার বাহাদুরি দেখাতেও গাছকে হত্যা করে।
মানুষের এই অকৃতজ্ঞতা আর বিস্তৃতির সংস্কৃতি ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠছে। মানুষের কাছে তাই এখন কেঁচো কি গাছ, মানুষ কি পাখির বৈচিত্র্য নিয়ে গড়ে ওঠা সংসারের কোনো গুরুত্ব নেই। প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার প্রতি ঋণ স্বীকারের সংস্কৃতি থেকে মানুষ প্রতিদিন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। আর এই বিচ্ছিন্নতার বোধই সহিংস সময়কে বৈধ করে তুলছে।
৩. কৃষিজমিনের পতঙ্গকুল হত্যার জন্যই দুনিয়ায় বহুজাতিক কোম্পানির বিষ-বাণিজ্যের সূচনা হয়েছে। আর তাকে বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে কৃষি এজেন্সি, বিদ্যায়তন ও জাতিরাষ্ট্রগুলো। অথচ এখনো বাংলাদেশে অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজে অনেক পোকা খাদ্য ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেক অঞ্চলে বাঙালি জীবনে পোকা ঐতিহ্যগত চিকিৎসায় কাজে লাগে। যে পোকাদের কাছ থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন ঋতু পরিবর্তনশীলতার আভাস পেতেন, যেসব পোকা ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনের চলার সাথি, সেসব পোকা আজ রাসায়নিক কৃষির নামে করপোরেট বিষ কোম্পানির বিষের যন্ত্রণায় মারা যাচ্ছে। যে বন আমাদের জীবনের বন্ধু, সেই বন আজ কলাবাগান আর একাশিয়া বাগানে পরিণত হয়েছে।
আমাদের জল-জঙ্গল-জুম-জমিন থেকে প্রকৃতির সব প্রাণবৈচিত্র্য আমাদের ভোগবাদী বিলাসিতার কারণেই বিদায় নিয়েছে। হয়েছে নিশ্চিহ্ন। প্রাণবৈচিত্র্যের এই সর্বনাশা বিলুপ্তিই আমাদের জলবায়ুজনিত জটিলতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতাকে আগলে না দাঁড়ালে ক্রমেই মানুষ হিসেবে আমরা আরও জটিল সংকটের মুখোমুখি হতে বাধ্য। সামনে হয়তো অপেক্ষা করছে আরও প্রবল সহিংস সময়। তবে মনে রাখা জরুরি, আমরাই নিদারুণভাবে এটি প্রশ্রয় দিয়ে বৈধ করে চলেছি। এর সব দায় স্বীকার করেই আজ আমাদের দায়িত্বগুলো বুঝে নেওয়া জরুরি। আর কাজটি নতুন প্রজন্মের, পূর্ব প্রজন্ম থেকে যারা অভিজ্ঞতা আর নির্দেশনাই কেবল ধার করতে পারে।
৪. ব্যাখ্যা আর পরিসংখ্যানের নানা তর্ক থাকলেও অস্বীকার করার উপায় নেই, জলবায়ু সংকট আজ এক বৈশ্বিক দুশ্চিন্তার ময়দান। জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ের ফলে প্রায় ১০ লাখ বৈচিত্র্যময় প্রজাতির বিলুপ্তির আশঙ্কা করছেন পুস্তকি বিশেষজ্ঞরা। প্রাণবৈচিত্র্যের নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়া সরাসরি আঘাত করবে পৃথিবীর বিপন্ন শরীরকেও। জলবায়ুর কারণে পরিবর্তিত বিপন্ন এই আমাদের একমাত্র প্রিয় পৃথিবী আবারও প্রাণ ফিরে পেতে পারে কেবল প্রাণবৈচিত্র্যের সব সদস্যের যৌথ মিলন আর পরস্পরনির্ভরশীল সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমেই। আর এটি সম্ভব বৈচিত্র্য ও ভিন্নতাকে পাঠ করা নিম্নবর্গের নিজস্ব কায়দা আর লোকায়ত উদ্যোগগুলোর ভেতর দিয়েই।
এখনো দেশে বাঙালি হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজ কেবল পূজা-পার্বণের ভেতর দিয়ে সংরক্ষণ করেন—এমন অনেক পবিত্র বনভূমি, যেখানে বৈশিষ্ট্যময় প্রজাতিসমূহের দেখা মেলে। বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের বোস্তামী কাছিম, খানজাহান আলীর মাজারের কুমির ধলা পাহাড়-কালা পাহাড়, হজরত শাহজালালের মাজারের গজার মাছ কি রাষ্ট্রের কোনো বিভাগ বা বাজেট বাঁচিয়ে রেখেছে? এই সব প্রজাতি সংরক্ষিত হয় জনগোষ্ঠীর লোকায়ত বিশ্বাস ও ভালোবাসার ভেতর দিয়েই। আজ সহিংস ও বিপন্ন সময়ে আমাদের রাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান থেকে শুরু করে ব্যক্তির নিজস্ব আচরণ অবধি এই সব প্রসঙ্গ বিবেচনা করা জরুরি।
৫. প্রাণবৈচিত্র্য বলতে আমরা বুঝে থাকি চারপাশের সব দেখা-অদেখা এমনকি কল্পনার প্রাণজগৎকেও। শুধু পতঙ্গ, পাখি, মাছ, সরীসৃপ, উভচর, মানুষ, বৃক্ষগুল্ম, অণুজীব মিলেই প্রাণের বৈচিত্র্য নয়। আমাদের প্রাণবৈচিত্র্য ধারণায় রূপকথার ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী আছে, পঙ্খিরাজ ঘোড়া আছে।
সমস্যা হলো রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নানা সময় ‘প্রাণবৈচিত্র্যের’ সংজ্ঞায়ন করছে একেবারেই একপেশে কায়দায় এবং ঔপনিবেশিক চিন্তাকাঠামোর ভেতরে থেকে। প্রাণবৈচিত্র্য বলতে মূলত উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলকে বোঝানো হয়েছে। স্পষ্টভাবে এখানে প্রজাতি হিসেবে মানুষ অনুপস্থিত। আর এটি ঘটেছে মূলত কিছু একতরফা পশ্চিমা বিদ্যায়তনিক বাহাদুরির জোরেই। অথচ বাংলাদেশে যাঁরা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাণবৈচিত্র্যকে তত্ত্বায়ন ও প্রাণবৈচিত্র্যের সীমানা সূচিত করতে চাইছেন, তাঁরা নিজেরাই এক প্রবল ‘প্রাণবৈচিত্র্য’ ধারণা বহন করে চলেছেন তাঁদের শরীর ও সংস্কৃতির প্রবাহে। তত্ত্বায়ন ও কাঠামোর জায়গাতে বরাবরের মতো তারা নিজের সূত্র ও সম্ভাবনাকে বাদ দিয়ে অপরের ভুলকে বগলদাবা করে ‘চিন্তার দাসত্বকেই’ প্রমাণ করে চলেছেন।
আজ যদি ‘প্রাণবৈচিত্র্য’ এত ছোট্ট এক গণ্ডি ও সীমানায় আটকে যায়, তবে তা আমাদের মনস্তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতাকেই বিশ্বদরবারে প্রমাণ করবে। বৈচিত্র্যের সীমানা ঘিরে এই বিশৃঙ্খল চিন্তাপদ্ধতি প্রকৃতি ও সংস্কৃতির জটিল সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতাকে অস্বীকার করবে। প্রজাতির ওপর নির্ভরশীলতার বিজ্ঞান থেকে মানুষ ক্রমেই আরও বিস্মৃত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
বিচ্ছিন্নতার এই বোধই মানুষকে লুটেরা, সন্ত্রাসী, ধর্ষক, হন্তারক কি জঙ্গি করে তোলে। টিকে থাকে সহিংসতার গণিত। আমরা এই মিথ্যা গণিত চাই না। প্রাণ, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার প্রতি আমাদের আজন্ম ঋণ স্বীকারের ভেতর দিয়েই নিজের তরতাজা অস্তিত্বকে এই দুনিয়ায় বিকশিত করে তুলতে চাই। প্রকৃতির সব সদস্যকে নিয়েই গড়ে উঠুক আগামীর সংস্কৃতি।
লেখক: প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণবিষয়ক গবেষক

জামদানি শাড়ি অনন্য হয়েছে তার পাড়ের নকশার জন্য। কলকা পাইড়, ইঁন্দুর পাইড়, বেলজিয়াম পাইড়, শাল পাইড়, হাপাইলক্ষ্মী পাইড়, জাদু পাইড়, গাছ পাইড়, কুইলতা পাইড়, ডরিং পাইড়, দুবলা পাইড়, নকশিপাতা পাইড়, বেলপাতা পাইড়, কাউয়ারঠেংগি পাইড়, কচুপাতা পাইড়, ফুল পাইড়, মাদলী পাইড়, পানশী পাইড়, দুই করলা পাইড়, দুবলা জাল পাইড়, মদন পাইড়, করলা পাইড়, ইঞ্চি পাইড়, আম পাইড়, মালা পাইড়, ময়ূরখেস পাইড়, পান পাইড়—এ রকম অসংখ্য পাড়ের নকশা আছে জামদানি বুননে। শীতলক্ষ্যা নদীর কোলে জামদানি শাড়ির জন্ম। জনবসতিঘেঁষা নদীর ভোরের বাতাস, শিশিরবিন্দু, স্থানীয় মাটির রসে ভেজা দেশি ধানের খই, ভাতের মাড়—সব মিলিয়ে শীতলক্ষ্যা অববাহিকার নারীরা তৈরি করেন জামদানি শাড়ি বোনার জন্য এক বিশেষ মন্ড। বাংলাদেশে শাড়ি ও তাঁতের ভিন্নতা আছে। আছে টাঙ্গাইল, পাবনা, কুষ্টিয়া, মণিপুরি, বেইন কিংবা হাজং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বানানো তাঁত।
চলতি আলাপের শুরুটাই হয়েছে এক জামদানি শাড়ির বিবরণে। এমন এক শাড়ি ঘিরেই কতগুলো প্রাণ জড়িত এবং কত ধরনের মানুষ জড়িত, তা একটিবার ভাবার জন্য। এই প্রাণসমূহ একে অপরের সঙ্গে কী জটিল সম্পর্কে যুক্ত ও নির্ভরশীল, তা কি আমরা জানবার চেষ্টা করি? ইঁদুর, গাছ, মন্দির, ময়ূর, বাঁশ, ধাতু, ধান, তুলা, সুতা, রং, শিশু, নারী, প্রবীণ, হাট, দোকান—কত কী! প্রশ্ন হলো প্রকৃতি ও সংস্কৃতিতে বিরাজমান এই বৈচিত্র্যকে আমরা কতজন জানি, কতজন মানি। জামদানি শাড়ির মতো এক জীবনের সঙ্গে আরও কত জীবনের সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতা, তা কি আমরা স্মরণে রাখি?
প্রকৃতি ও সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্য আর নির্ভরতাই এই মাতৃদুনিয়ায় আমাদের জীবন মহাবয়ানের আখ্যান বিকশিত করে চলেছে। প্রাণ ও সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্য কোনোভাবে আলগা হয়ে গেলে, কোনো বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা আঘাতপ্রাপ্ত হলে পুরো জীবনধারাই ওলটপালট হয়ে যায়। দীর্ণ ও মুমূর্ষু হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে ২০ বছর ধরে তা-ই হয়ে চলেছে। প্রশ্নহীন, অবিরাম। রাষ্ট্রের অবিচার, এজেন্সির খবরদারি, বহুজাতিক আগ্রাসন আর নানা গোষ্ঠীর নামে কতক লুটেরা দুর্বৃত্তের অন্যায় দেশজুড়ে এক লুণ্ঠন ও বিচারহীন সংস্কৃতি জারি করেছে। ২০ হাজার ধান জাতের বাংলাদেশে সব দেশি ধানের জাত গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। মনস্যান্টো, সিনজেনটা, কারগিল, ডুপন্ট, বায়ার ক্রপ সায়েন্স, বিএসএফ-এর মতো বহুজাতিক কৃষি-বাণিজ্য কোম্পানির মুনাফাকে চাঙা রাখতে বৈধ করা হয়েছে তথাকথিত সবুজবিপ্লব। জমিন থেকে বিষ দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কেঁচো, শামুক, ব্যাঙ কি মৌমাছি। মাটির শরীর আজ রক্তাক্ত। ধানের সঙ্গে সঙ্গে বিদায় হয়েছে মানুষের স্মৃতি আর কৃত্যরীতি। বৈচিত্র্য আর নিজস্ব কৃষিরীতি হারিয়ে এককালের কৃষকসমাজ আজ বহুজাতিক কোম্পানির বন্দী দাস। বৈচিত্র্যবিমুখ এই ধারা ক্রমেই সমাজ, বর্গ, পরিবার, ব্যক্তির মন ও শরীর দখল করেছে। তৈরি হয়েছে এক প্রশ্নহীন সহিংস সময়। সহিংসতার এই প্রেক্ষাপটকে কেবল জঙ্গিবাদ, লুটেরা অর্থনীতি আর সন্ত্রাসবাদ দিয়ে দেখলে চলে না। এই বিশ্লেষণ নির্ঘণ্টের গভীরে যায় না, তলিয়ে দেখে না। কেন কিছু মানুষ ধান, পাখি, মাছ, গাছ কি মানুষের বৈচিত্র্য সহ্য করতে পারছে না? এই মনস্তত্ত্ব বনের বাঘকে খুন করে চামড়া বিক্রি করে, নদী দখল করে মাছ মেরে ফেলে। এই মনস্তত্ত্বই মানুষের সমাজে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক, লৈঙ্গিক, ভাষিক ভিন্নতাকে সহ্য করতে পারে না। তাই নিরন্তর খুন হচ্ছে ভিন্নমত, উধাও হচ্ছে বৈচিত্র্য। সহিংস হয়ে ওঠা রক্তাক্ত সময়কে বুঝতে অবশ্যই বৈচিত্র্যবিমুখ এই মনস্তত্ত্বকে গভীরভাবে পাঠ করা জরুরি। আর তা না হলে সহিংস সময় আরও প্রবল ও বৈধ হতে থাকবে।
২. মহামতি খনার একটি বচন আছে, ‘ব্যাঙ ডাকে ঘন ঘন, শীঘ্র হবে বৃষ্টি যেন’। এককালে ব্যাঙের ডাক জানান দিত, বর্ষা আসছে। ব্যাঙের সঙ্গে পরিবেশ-প্রতিবেশের সম্পর্ক গভীর। আবহাওয়াগত পরিবর্তনশীলতায় দ্রুত যেসব প্রজাতির আচরণে সাড়া ও প্রভাব তৈরি হয়, ব্যাঙ তাদের অন্যতম। গ্রাম জনপদে একটা সময় বৃষ্টির প্রার্থনা করে ঘটা করে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হতো। স্থানীয় প্রাণবৈচিত্র্য, লোকায়ত জীবন—সব মিলিয়ে প্রতিবেশগত সেই ভারসাম্যের সুরক্ষা আর নেই। ধনী মানুষ ব্যাঙ মেরে রপ্তানি করে আরও ধনী হয়েছে। ব্যাঙের খাদ্য পোকাদের বিষ দিয়ে মেরেছে। ব্যাঙের বসত দখল করেছে। ব্যাঙ ও মেঘের সম্পর্ক বুঝতে পারা নিম্নবর্গের মানুষকেও জখম আর উচ্ছেদ করেছে। প্রাণ, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে আগলে নিয়ে বিকশিত হওয়া জ্ঞানপ্রবাহ, চিন্তা, বিশ্বাস ও চর্চাকে তছনছ করে দিয়েছে। বৈচিত্র্যমুখী জীবনের সম্পর্ক এবং একের সঙ্গে অন্যের জটিল নির্ভরশীলতাকে লন্ডভন্ড করেছে। এতে প্রজাতি হিসেবে মানুষ নিজেই আজ কাহিল ও সংকটের মুখোমুখি। কারণ, প্রকৃতিতে মানুষের মতো নির্ভরশীল আর কোনো প্রজাতি নেই।
মানুষ নিজে নিজে একা খাদ্য কি আশ্রয় বা সংস্কৃতি—কোনো কিছুই তৈরি করতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ জল, মাটি, বাতাস, গাছ, মাছ, পাখি, অরণ্য, সমতল—সবকিছুর ওপরই নির্ভরশীল। নিদারুণভাবে মানুষ বারবার অবিরাম তার এই নির্ভরশীলতার সম্পর্কগুলোকে আমলে নিচ্ছে না। অন্যায়ভাবে সবকিছু জখম করে অকৃতজ্ঞতাকে টিকিয়ে রাখছে। মানুষ নিজের মায়ের দুধের ঋণের কথা আন্দাজ করে। কিন্তু মাছের পোনাদের এতিম করে মা মাছকে জোর করে ধরে আনাকে ‘মৎস্য উন্নয়ন’ হিসেবে বৈধ করে। যে গাছ নিজের জনমভর মানুষকে দমের বাতাস জোগায়, মানুষ নির্মম কায়দায় সেই গাছকে উপড়ে ফেলে। এমনকি রাজনৈতিক সহিংসতার বাহাদুরি দেখাতেও গাছকে হত্যা করে।
মানুষের এই অকৃতজ্ঞতা আর বিস্তৃতির সংস্কৃতি ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠছে। মানুষের কাছে তাই এখন কেঁচো কি গাছ, মানুষ কি পাখির বৈচিত্র্য নিয়ে গড়ে ওঠা সংসারের কোনো গুরুত্ব নেই। প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার প্রতি ঋণ স্বীকারের সংস্কৃতি থেকে মানুষ প্রতিদিন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। আর এই বিচ্ছিন্নতার বোধই সহিংস সময়কে বৈধ করে তুলছে।
৩. কৃষিজমিনের পতঙ্গকুল হত্যার জন্যই দুনিয়ায় বহুজাতিক কোম্পানির বিষ-বাণিজ্যের সূচনা হয়েছে। আর তাকে বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে কৃষি এজেন্সি, বিদ্যায়তন ও জাতিরাষ্ট্রগুলো। অথচ এখনো বাংলাদেশে অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজে অনেক পোকা খাদ্য ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেক অঞ্চলে বাঙালি জীবনে পোকা ঐতিহ্যগত চিকিৎসায় কাজে লাগে। যে পোকাদের কাছ থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন ঋতু পরিবর্তনশীলতার আভাস পেতেন, যেসব পোকা ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনের চলার সাথি, সেসব পোকা আজ রাসায়নিক কৃষির নামে করপোরেট বিষ কোম্পানির বিষের যন্ত্রণায় মারা যাচ্ছে। যে বন আমাদের জীবনের বন্ধু, সেই বন আজ কলাবাগান আর একাশিয়া বাগানে পরিণত হয়েছে।
আমাদের জল-জঙ্গল-জুম-জমিন থেকে প্রকৃতির সব প্রাণবৈচিত্র্য আমাদের ভোগবাদী বিলাসিতার কারণেই বিদায় নিয়েছে। হয়েছে নিশ্চিহ্ন। প্রাণবৈচিত্র্যের এই সর্বনাশা বিলুপ্তিই আমাদের জলবায়ুজনিত জটিলতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতাকে আগলে না দাঁড়ালে ক্রমেই মানুষ হিসেবে আমরা আরও জটিল সংকটের মুখোমুখি হতে বাধ্য। সামনে হয়তো অপেক্ষা করছে আরও প্রবল সহিংস সময়। তবে মনে রাখা জরুরি, আমরাই নিদারুণভাবে এটি প্রশ্রয় দিয়ে বৈধ করে চলেছি। এর সব দায় স্বীকার করেই আজ আমাদের দায়িত্বগুলো বুঝে নেওয়া জরুরি। আর কাজটি নতুন প্রজন্মের, পূর্ব প্রজন্ম থেকে যারা অভিজ্ঞতা আর নির্দেশনাই কেবল ধার করতে পারে।
৪. ব্যাখ্যা আর পরিসংখ্যানের নানা তর্ক থাকলেও অস্বীকার করার উপায় নেই, জলবায়ু সংকট আজ এক বৈশ্বিক দুশ্চিন্তার ময়দান। জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ের ফলে প্রায় ১০ লাখ বৈচিত্র্যময় প্রজাতির বিলুপ্তির আশঙ্কা করছেন পুস্তকি বিশেষজ্ঞরা। প্রাণবৈচিত্র্যের নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়া সরাসরি আঘাত করবে পৃথিবীর বিপন্ন শরীরকেও। জলবায়ুর কারণে পরিবর্তিত বিপন্ন এই আমাদের একমাত্র প্রিয় পৃথিবী আবারও প্রাণ ফিরে পেতে পারে কেবল প্রাণবৈচিত্র্যের সব সদস্যের যৌথ মিলন আর পরস্পরনির্ভরশীল সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমেই। আর এটি সম্ভব বৈচিত্র্য ও ভিন্নতাকে পাঠ করা নিম্নবর্গের নিজস্ব কায়দা আর লোকায়ত উদ্যোগগুলোর ভেতর দিয়েই।
এখনো দেশে বাঙালি হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজ কেবল পূজা-পার্বণের ভেতর দিয়ে সংরক্ষণ করেন—এমন অনেক পবিত্র বনভূমি, যেখানে বৈশিষ্ট্যময় প্রজাতিসমূহের দেখা মেলে। বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের বোস্তামী কাছিম, খানজাহান আলীর মাজারের কুমির ধলা পাহাড়-কালা পাহাড়, হজরত শাহজালালের মাজারের গজার মাছ কি রাষ্ট্রের কোনো বিভাগ বা বাজেট বাঁচিয়ে রেখেছে? এই সব প্রজাতি সংরক্ষিত হয় জনগোষ্ঠীর লোকায়ত বিশ্বাস ও ভালোবাসার ভেতর দিয়েই। আজ সহিংস ও বিপন্ন সময়ে আমাদের রাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান থেকে শুরু করে ব্যক্তির নিজস্ব আচরণ অবধি এই সব প্রসঙ্গ বিবেচনা করা জরুরি।
৫. প্রাণবৈচিত্র্য বলতে আমরা বুঝে থাকি চারপাশের সব দেখা-অদেখা এমনকি কল্পনার প্রাণজগৎকেও। শুধু পতঙ্গ, পাখি, মাছ, সরীসৃপ, উভচর, মানুষ, বৃক্ষগুল্ম, অণুজীব মিলেই প্রাণের বৈচিত্র্য নয়। আমাদের প্রাণবৈচিত্র্য ধারণায় রূপকথার ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী আছে, পঙ্খিরাজ ঘোড়া আছে।
সমস্যা হলো রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নানা সময় ‘প্রাণবৈচিত্র্যের’ সংজ্ঞায়ন করছে একেবারেই একপেশে কায়দায় এবং ঔপনিবেশিক চিন্তাকাঠামোর ভেতরে থেকে। প্রাণবৈচিত্র্য বলতে মূলত উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলকে বোঝানো হয়েছে। স্পষ্টভাবে এখানে প্রজাতি হিসেবে মানুষ অনুপস্থিত। আর এটি ঘটেছে মূলত কিছু একতরফা পশ্চিমা বিদ্যায়তনিক বাহাদুরির জোরেই। অথচ বাংলাদেশে যাঁরা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাণবৈচিত্র্যকে তত্ত্বায়ন ও প্রাণবৈচিত্র্যের সীমানা সূচিত করতে চাইছেন, তাঁরা নিজেরাই এক প্রবল ‘প্রাণবৈচিত্র্য’ ধারণা বহন করে চলেছেন তাঁদের শরীর ও সংস্কৃতির প্রবাহে। তত্ত্বায়ন ও কাঠামোর জায়গাতে বরাবরের মতো তারা নিজের সূত্র ও সম্ভাবনাকে বাদ দিয়ে অপরের ভুলকে বগলদাবা করে ‘চিন্তার দাসত্বকেই’ প্রমাণ করে চলেছেন।
আজ যদি ‘প্রাণবৈচিত্র্য’ এত ছোট্ট এক গণ্ডি ও সীমানায় আটকে যায়, তবে তা আমাদের মনস্তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতাকেই বিশ্বদরবারে প্রমাণ করবে। বৈচিত্র্যের সীমানা ঘিরে এই বিশৃঙ্খল চিন্তাপদ্ধতি প্রকৃতি ও সংস্কৃতির জটিল সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতাকে অস্বীকার করবে। প্রজাতির ওপর নির্ভরশীলতার বিজ্ঞান থেকে মানুষ ক্রমেই আরও বিস্মৃত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
বিচ্ছিন্নতার এই বোধই মানুষকে লুটেরা, সন্ত্রাসী, ধর্ষক, হন্তারক কি জঙ্গি করে তোলে। টিকে থাকে সহিংসতার গণিত। আমরা এই মিথ্যা গণিত চাই না। প্রাণ, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার প্রতি আমাদের আজন্ম ঋণ স্বীকারের ভেতর দিয়েই নিজের তরতাজা অস্তিত্বকে এই দুনিয়ায় বিকশিত করে তুলতে চাই। প্রকৃতির সব সদস্যকে নিয়েই গড়ে উঠুক আগামীর সংস্কৃতি।
লেখক: প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণবিষয়ক গবেষক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

জামদানি শাড়ি অনন্য হয়েছে তার পাড়ের নকশার জন্য। কলকা পাইড়, ইঁন্দুর পাইড়, বেলজিয়াম পাইড়, শাল পাইড়, হাপাইলক্ষ্মী পাইড়, জাদু পাইড়, গাছ পাইড়, কুইলতা পাইড়, ডরিং পাইড়, দুবলা পাইড়...
২৯ জুন ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

জামদানি শাড়ি অনন্য হয়েছে তার পাড়ের নকশার জন্য। কলকা পাইড়, ইঁন্দুর পাইড়, বেলজিয়াম পাইড়, শাল পাইড়, হাপাইলক্ষ্মী পাইড়, জাদু পাইড়, গাছ পাইড়, কুইলতা পাইড়, ডরিং পাইড়, দুবলা পাইড়...
২৯ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

জামদানি শাড়ি অনন্য হয়েছে তার পাড়ের নকশার জন্য। কলকা পাইড়, ইঁন্দুর পাইড়, বেলজিয়াম পাইড়, শাল পাইড়, হাপাইলক্ষ্মী পাইড়, জাদু পাইড়, গাছ পাইড়, কুইলতা পাইড়, ডরিং পাইড়, দুবলা পাইড়...
২৯ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

জামদানি শাড়ি অনন্য হয়েছে তার পাড়ের নকশার জন্য। কলকা পাইড়, ইঁন্দুর পাইড়, বেলজিয়াম পাইড়, শাল পাইড়, হাপাইলক্ষ্মী পাইড়, জাদু পাইড়, গাছ পাইড়, কুইলতা পাইড়, ডরিং পাইড়, দুবলা পাইড়...
২৯ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫