Ajker Patrika

গল্পটা কি নতুন কিছু?

নাফিসা চৌধুরী
আপডেট : ১০ মে ২০২২, ১১: ১১
গল্পটা কি নতুন কিছু?

‘মেয়ে মানুষের এত ছেলেবন্ধু কিসের?’—ঘরে ঢুকতেই মায়ের চিৎকার।

ভার্সিটি থেকে হেঁটে হেঁটে টুম্পা, শাপলা আর রনি বাসা পর্যন্ত এল ক্লাসের অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে আলাপ করতে করতে। টুম্পাদের চার বাড়ি আগেই শাপলাদের বাড়ি। টুম্পার মা রোজ মেয়ের ফেরার সময় বারান্দায় এসে দাঁড়ান। রনিকে দেখে কপাল কুঁচকে ঘরে চলে গেলেন আজ।

‘মা, রনি আমার বন্ধু, আমরা একসঙ্গে কলেজে পড়েছি আর এখন ভার্সিটিতে পড়ি। তুমি ওকে খুব ভালো করে চেন। ও কেমন ছেলে, তা জানো। আর আমার তো বন্ধু হাতে গোনা ছয়জন।’

‘শোন টুম্পা, তুই এখন বড় হয়েছিস। তোর ছয়জন বন্ধুর মধ্যে চারজনই তো ছেলে। আর এত কী বাসায় ফেরার পরও ফোনে কথা? তোর বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। এটাই সমাধান।’

‘হ্যাঁ মা, চারজনই ছেলে, আমাদের ক্লাসে প্রেজেন্টেশন করার যে গ্রুপ, সেটা আমাদের ছয়জনের। গ্রুপ কলে আমাদের অ্যাসাইনমেন্ট বা পরীক্ষার কথা হয় শুধু। ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার মা। বিয়ে কোনো কিছুর সমাধান নয়, যার সঙ্গে বিয়ে হবে, সে-ও তো ছেলে। হতে পারে কারও বন্ধু!’

‘তোকে মহিলা কলেজে ভর্তি না করানোটাই আমার ভুল হয়েছে। আবার মুখে মুখে কথা বলছিস। কালও পাশের বাসার ভাবি জিজ্ঞেস করছিল, “টুম্পার সঙ্গে ছেলেটা কে, ওর বয়ফ্রেন্ড? এখন তো এসব নরমাল।”’

‘মা, তুমি এসব কী বলছ? তুমি কী বুঝতে পারছ? আমার বন্ধু ওরা। আমি এ পর্যন্ত কখনো এমন কিছু করিনি যাতে তোমাদের ছোট হতে হয়! তুমি প্রায়ই আমাকে এ ধরনের কথা বলছ কেন, মা?’

‘হ্যাঁ, খুব উদ্ধার করেছিস আমাকে। তোর জন্য মানুষের কথা শোনা লাগে, ছোট করার আর বাকি কী আছে? ছেলে আর মেয়ে কখনো বন্ধু হতে পারে না। মনে রাখিস।’

‘সব ছেলে এক না মা, আর ওরা যারা আমার বন্ধু, তারা তো আমার বন্ধুই আছে। কই এত দিনেও কোনো সমস্যা হয়নি তো। তুমি মানুষের কথা শুনে আমাকে ভুল বুঝলে শুধু।’

কাঁদতে কাঁদতে টুম্পা তার শোবার ঘরে চলে গেল। এটা নতুন না। টুম্পার মায়ের বদ্ধমূল ধারণা, ছেলে-মেয়ে কখনো ভালো বন্ধু হয় না। কেউ না কেউ প্রেমে পড়েই। আশপাশের কয়েকজন আন্টি তাঁদের মেয়েদের কলেজে ওঠার আগেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। এখন তাঁরা টুম্পার জন্য পাত্রের খোঁজ নিয়ে আসেন প্রতি সপ্তাহে। টুম্পার বাবার কারণে কেউ আর এগোতে পারে না। বাবা চান, টুম্পা পড়াশোনা শেষ করুক আগে।

কিন্তু পাশের বাসার আন্টিরা বলেন, ‘দেখেন ভাবি, মেয়েরা কুড়িতেই বুড়ি, আর বয়স বেড়ে গেলে ভালো ছেলে পাওয়া যাবে না, বাজারে দাম কমে যাবে, আমার মেয়েকে আমি সময় থাকতেই পার করে দিয়েছি।’

আবার কেউ বলেন, ‘বিয়ের পর পড়াশোনা করুক, যে কদিন ভালো লাগে, ও তো আর চাকরি করবে না।’

আর এসব শুনে তার মায়ের দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়। মনে মনে মা ভাবে, ‘মেয়ে তো! বিয়ে তো দেওয়াই লাগবে, তাহলে আগে হলেই তো ভালো। ঠিকই তো বলছে সবাই।’

এসব কথা টুম্পার কানেও আসে, মন খারাপ নিয়েই তার দিনযাপন, শুধু সে তার বাবার কথা ভেবে শান্তি পায়। জানে, বাবা তাকে বুঝবে।

কথোপকথনের মাধ্যমে যে কথাগুলো বলা হলো, সেগুলো কি নতুন লাগছে? নাকি চির চেনা একটা গল্প বললাম? আমাদের আশপাশে প্রতিদিন এই গল্প নতুন করে লেখা হচ্ছে। বারবার হচ্ছে। কারণ, নারীতে-পুরুষে যে বিভাজন তৈরি করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে সচেতনভাবে প্রতিবাদ হচ্ছে খুব কম। নারী-পুরুষ সম্পর্ককে এভাবেই আলাদা করে দেখা হচ্ছে দিনের পর দিন। বাইরে নয়, ঘরের ভেতরেই তো তৈরি হচ্ছে এই দূরত্ব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ব্যবসায়ীকে বালুতে পুঁতে রেখে ‘৪ কোটি টাকা আদায়’

ঢাবিতে ‘তুর্কি এনজিও সমর্থিত’ সংগঠনের ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ মানচিত্রে ভারতের অংশ, বললেন জয়শঙ্কর

কালো জাদুর অভিযোগে মবের তাণ্ডব, এক পরিবারে পাঁচজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা

অদৃশ্য শর্তে বাংলাদেশের জন্য ট্রাম্পের ১৫% শুল্ক ছাড়

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে খোলাচিঠি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত