Ajker Patrika

নগরের আয়তন বৃদ্ধির প্রস্তাব

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১৭: ৫২
নগরের আয়তন বৃদ্ধির প্রস্তাব

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আগামী ২৫ জুন খুলে যাচ্ছে পদ্মা সেতু। এ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পদ্মা সেতু চালু হতে যাওয়ায় চলমান মহাসড়ক ফোর লেন না করলে অচল হয়ে পড়বে বরিশাল নগর। পাশাপাশি নগরে জনবসতির চাপ তীব্র হবে। এতে ব্যাহত হবে বসবাস। নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এমন আশঙ্কায় বরিশাল নগরের আয়তন প্রায় ৬ গুণ বাড়িয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তবে এর আগে জনদুর্ভোগ কাটিয়ে উঠতে এখনই কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে।

মঙ্গলবার সকালে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের চৌমাথায় দাঁড়িয়ে দেখা গেল একের পর এক গাড়ি যাচ্ছে। এর মধ্যেও অদূরের সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ থেকে ক্লাস শেষে মহাসড়ক পেরিয়ে নবগ্রাম রোডে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছে একদল শিক্ষার্থী।

কথা হয় কলেজ শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান, জাবেদ হোসেন, জিনিয়া আক্তারের সঙ্গে। তারা জানায়, প্রতিদিন এই সড়ক পাড়ি দেওয়া অনেক ঝুঁকির। একই কথা জানালেন নবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ইয়াছিন আলী। পদ্মা সেতু হলে এই মহাসড়কের নগরের কাশিপুর থেকে দপদপিয়া ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা করছে প্রশাসনও। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রস্তুতিই নেই। ইতিমধ্যে বিআরটিএ’র এক সভায় পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের আগেই বরিশাল নগরের ১২ কিলোমিটার প্রশস্তকরণের জন্য বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান তাগিদ দেন সড়ক ও জনপথ বিভাগকে।

বরিশাল মাওয়া রুটের বিআরটিসি বাসচালক মনির হোসেন বলেন, এই মহাসড়কের মৃত্যুর ঝুঁকি এড়াতে এখনই রাস্তা প্রশস্ত করা দরকার। একই আশঙ্কা করছেন নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি কিশোর কুমার দে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য ও বিএম কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আক্তারুজ্জামান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, পদ্মা সেতু সারা দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক যোগাযোগ বাড়াবে। বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বৃদ্ধি পাবে এ অঞ্চলে। কিন্তু যে সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে তা কাজে লাগাতে হলে ফোর লেন বাস্তবায়ন জরুরি। নতুবা অর্থনৈতিক সুফল পরিপূর্ণভাবে পাবে না জনগণ। কেননা পদ্মা সেতু ছেড়ে দিলে পরিবহন সংখ্যা বেড়ে যাবে, ট্যাংক লরি ঢুকবে, যানজট সৃষ্টি হবে, দুর্ঘটনা বাড়বে, সামাজিক অনাচারও বৃদ্ধি পাবে। কয়েক বছরে এই নগরী বসবাসে ব্যাহত হবে। এই ঝামেলা কাটিয়ে উঠতে নগরের আয়তনও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি মহাসড়ক প্রশস্তকরণ, ট্রাফিক সিস্টেম জোরদার করা, নিয়মিত নজরদারি, আধুনিক যানবাহন, জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ স্থানীয় সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে। অধ্যাপক আক্তারুজ্জামান খান আরও বলেন মহাসড়কের আশপাশ দিয়ে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল দূরে সরাতে হবে। পদ্মা সেতু চালু হলে শিল্পায়ন হবে। কিন্তু সেটি হতে হবে টেকসই পরিবেশসম্মত। আর স্থাপনা নির্মাণের নামে জমি অধিগ্রহণ যেন এলোমেলোভাবে করা না হয়, সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।

এদিকে পদ্মা সেতু চালুতে এই নগরে জনবসতির চাপ কমাতে আশার আলো দেখিয়েছে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের বরিশালের সিনিয়র প্ল্যানার মো. আসাদুজ্জামান আজকের পত্রিকা’কে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে নগরে চাপ তো পড়বেই। এখানে নগরায়ণের হার বাড়বে। যে কারণে জরুরি ভিত্তিতে ফোর লেন করতে হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থারও উন্নয়ন করতে হবে।

তিনি জানান, তাঁরা নগরায়ণ মোকাবিলায় মাস্টার প্ল্যান আধুনিকায়ন ও সংশোধন করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। বরিশাল নগরের আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে নগরের আয়তন মাত্র ৭০ বর্গকিলোমিটার। এর আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ৪০৮ বর্গকিলোমিটার। প্রায় ৬ গুণ আয়তন কোথা থেকে আসবে এ প্রসঙ্গে সিনিয়র প্ল্যানার আসাদুজ্জামান বলেন, এই প্রস্তাবনায় সদর উপজেলা ও বাবুগঞ্জের অর্ধেক এলাকাই রয়েছে। রহমতপুর ব্রিজ থেকে দপদপিয়া খয়রাবাদ পর্যন্ত নগরের আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে মেট্রোপলিটন পুলিশের গোটা বাউন্ডারিই নগরের মধ্যে আসবে।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন

নগরের চাপ কমাতে এমন পদক্ষেপকে ইতিবাচক দেখছেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর সুফল কাজে লাগিয়ে বরিশাল নগরকে টেকসই ও পরিবেশসম্মত উন্নয়নে আগাতে হবে।

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত