তাপস মজুমদার
রবীন্দ্র কবিতার মূল সুর, যাঁরা তাঁর কাব্য পড়েছেন, তাঁরা হয়তো অনেকেই ধরতে পারেন। প্রকৃতি, প্রেম, আন্তর্জাতিকতা আর প্রধানত মানুষ এবং জীবনজিজ্ঞাসা সেখানে ভীষণভাবে প্রশ্রয় পেয়েছে।
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় শ্রেষ্ঠত্বের সন্ধান করা হয়তো বোকামি। সঞ্চয়িতা প্রকাশের সময় তিনি পরোক্ষভাবে বলেছেন, তাঁর সব কবিতাকে তিনি কবিতা বলে স্বীকার করেন না। কিন্তু তাঁর অজস্র কবিতা যে কবিতা হয়ে উঠেছে এবং বাংলা সাহিত্যের সভায় যে তা মহামূল্যবান, তিনি নিজে না বললেও বিদ্বজ্জনের কাছে সে কথা আজ অবধি অনিবার্যভাবে স্বীকৃতি লাভ করে আসছে। তাঁরই একটি কবিতা ‘এবার ফিরাও মোরে’। চিত্রা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। আমার দৃষ্টিতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। কবিতাটি রাজশাহীতে লেখা। ‘আপন হতে বাহির হয়ে’ বাইরে দাঁড়ানোর তাগিদ।
‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতাটি শুরু হয়েছে এ রকম বক্তব্য নিয়ে—সংসারে অন্য সবাই যখন সারাক্ষণ তাদের নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত, তখন ‘তুই’ পলাতক বালকের মতো, মাঝদুপুরে মাঠের মাঝে, তরুর বিষণ্ন ছায়ায়, ক্লান্ত উত্তপ্ত বাতাসে, যে বাতাস আবার দূরের বনের গন্ধ বয়ে নিয়ে আসছে—সারা দিন বাঁশি বাজিয়ে কাটিয়ে দিলি! কেন, তুই কি কোনো আর্তনাদ শুনতে পাস না! দূরে কোথাও আগুন জ্বলছে, তুই কি তা দেখতে পাস না! অন্ধত্বের মধ্যে মা অথবা মাতৃভূমি আটকে পড়েছে বুঝতে পারিস না! অক্ষমের বুক থেকে রক্ত শুষে নিচ্ছে সক্ষমেরা, তুই কি তা অনুভব করতে পারিস না! হীন স্বার্থের কাছে অসহায়ের বেদনা যে পরিহাসে পরিণত হচ্ছে, দুর্বল দীন মানুষগুলো যে ভয়ে সংকুচিত হয়ে লুকিয়ে পড়ছে, সে ঘটনা কি লক্ষ করতে পারিস না!
অতঃপর আহ্বান—তুই উঠে পড়! শোন কোন মহা আহ্বানধ্বনি তোকে উচ্চকণ্ঠে ডেকে চলেছে জনতাকে জাগানোর জন্য। যার উদ্দেশ্যে বলা সেই জনই প্রকৃতপক্ষে অন্তরের গভীর থেকে এই ডাক শুনতে পাচ্ছে।
এর পরবর্তী অংশে রবীন্দ্রনাথ দরিদ্র ও অসহায় মানুষের একটি চিত্র এঁকেছেন: শত শতাব্দীর অত্যাচার, নিপীড়ন, অনাহার, আর অসহায়ত্ব নিয়ে করুণ-মূর্তি মানুষগুলো কেমন বোবা ও বোকা হয়ে আছে। তারা কোনো প্রতিবাদ করতে জানে না (হয়তো বলার মতো উপযুক্ত জায়গাও তাদের নেই)। সৃষ্টিকর্তা বা মানুষকে দোষও দেয় না। জীবনটাকে কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখে। এই দারিদ্র্য ও অসহায়ত্ব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলতেই থাকে। এমন অবস্থায় কেউ যদি তার মুখের সামান্য অন্নটুকুও কেড়ে নেয়, তবু তারা শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দিয়ে তাঁর ওপরেই ভার ছেড়ে দেয়।
এই সব বোবা, অবুঝ ও অসহায় মানুষের দল তো রয়েছেই চারদিকে। কিন্তু করণীয় কী?
খুব সহজ ভাষায় রবীন্দ্রনাথ তার জবাব দিয়ে বলেছেন, ‘এই সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে দিতে হবে ভাষা/এই সব শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা!’
কী করে দিতে হবে এই ভাষা, কী করে জাগিয়ে তুলতে হবে এই আশা! এ জায়গাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং খুব পরিষ্কার; যেকোনো সমস্যার সমাধানে মানুষের একত্র হওয়া অত্যাবশ্যক। আমাদের সমস্যাগুলো সমস্যাই থেকে যায়, যদি আমরা পরস্পরের মধ্যে আন্তযোগাযোগ প্রসারিত না করি। বিচ্ছিন্নতা কখনো সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখে না। একত্র হওয়ার শক্তিই প্রখর। অপ্রতিরোধ্য। আমরা তখনই পরাজিত হই, যখন সম্মিলিত শক্তির ক্ষমতাকে অস্বীকার করি এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি।
কবির ভাষায়:
‘মুহূর্ত তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে/ যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে/ যখনই জাগিবে তুমি তখনই সে পলাইবে ধেয়ে।’
কবি জানাচ্ছেন, অশুভ শক্তি তার হীনতা জানে বলেই মানুষ যখন একত্র হয় এবং সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ায়, তখন সে পথের কুকুরের মতো ভয় পেয়ে পালায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঠিক এ বিষয়টিই আমরা লক্ষ করেছি। আপাতদৃষ্টিতে তাদের, অর্থাৎ পাকিস্তানিদের শক্তির প্রচণ্ডতা প্রকাণ্ড মনে হলেও বাঙালির সম্মিলিত শক্তির কাছে পাকিস্তানি অপশক্তি পরাভূত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ‘আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব’ কথাটি সফল করে তুলেছিল গ্রামের কোটি মানুষ। রবীন্দ্রনাথ এই কবিতায় যে আহ্বান জানিয়েছিলেন ‘যদি থাকে প্রাণ/তবে তাই লহ সাথে, তবে তাই করো আজি দান’ এই ধ্বনির প্রতিফলনই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ঘটে গিয়েছিল। একতার শক্তির আর কিছুর আবশ্যক নেই। শুধু দেহে প্রাণ থাকলেই চলবে।
পরেই আছে—
‘অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু/ চাই বল, চাই স্বাস্থ্য আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু/ সাহসবিস্তৃত বক্ষপট।’
কবিতার এই পঙ্ক্তিতেই কবি সম্পূর্ণ জীবনের কথা বলে দিয়েছেন। মানুষের সম্পূর্ণতা অর্জনে যেমন খাদ্য চাই, তেমনি একইভাবে চাই আলো-বাতাস-বল-আয়ু-আনন্দ। আর চাই সাহসী বুকের পাটা। সাহস ছাড়া কোনো কাজই করা সম্ভব নয়।
রবীন্দ্রনাথ সংসারসীমা ছাড়িয়ে দূরে চলে যাওয়াকে প্রশ্রয় দেন না। কল্পনাবিলাস বর্জন করে নিত্যদিনের বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলাই তাঁর চাওয়া। কল্পনার কুঞ্জ থেকে কর্মচঞ্চল মানুষের কাছে ফিরতে হবে। সেখানে বাধা আছে, ঝড় আছে, নিরন্তর দ্বন্দ্ব-সংঘাত আছে, আছে মায়া। এসবকে অতিক্রম করে, আপনার নিজের সুখ, নিজের দুঃখকে মিথ্যা জ্ঞান করে চলতে পারলে সত্যিকারের বাঁচা হয় বলে তিনি জানান। কবিতার ভাষায়, ‘এবার ফিরাও মোরে, লয়ে যাও সংসারের তীরে/ হে কল্পনে, রঙ্গময়ী! দুলায়ো না সমীরে সমীরে/ তরঙ্গে তরঙ্গে আর, ভুলায়োনা মোহিনী মায়ায়।...স্বার্থমগ্ন যেজন বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে/ সে কখনো শেখেনি বাঁচিতে।’ বৃহৎ জগতের বৃহৎ মানুষ হয়ে উঠতে হলে মানুষের নিজের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিসীমাকে পেরিয়ে যেতে হয়। এই অনিবার্যতার কথাই এখানে ধ্বনিত হয়েছে।
ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতবর্ষের মুক্তির প্রতীকী বার্তাও এখানে আমরা পেয়ে যাই। পাশাপাশি জনগণের কল্যাণের বার্তাও।
আদর্শ হারিয়ে যাচ্ছে। অস্থিরতা প্রতিক্ষণে অনিবার্য হয়ে উঠছে। প্রাণচঞ্চলতা অপসৃত হতে চলেছে। কেন এমন হবে! জীবন তো চলমান! সেখানে আনন্দ চাই। মুক্ত বায়ু চাই। কলহ নয়, নেতিবাচকতা নয়, জগদ্দল অচলায়তনকে ভেঙে ফেলে সামনে চলা প্রয়োজন। নতুন পথের সন্ধান করা প্রয়োজন। পরাধীনতা বা নৈরাজ্য নয়, সতর্কতার সঙ্গে ইতিবাচকতার চর্চা করা প্রয়োজন।
এই কবিতায় কবি সত্য ও সুন্দরকে খোঁজার চেষ্টা করেছেন। বিশ্ব মানবতার বাণী শুনিয়েছেন। বাস্তবধর্মিতাকে আলিঙ্গন করতে বলেছেন। চেয়েছেন আমাদের জীবন চলা ছন্দময় হোক। জ্ঞানের পরিচর্যা প্রধান হয়ে উঠুক। গানহীন, প্রাণহীন, ছন্দহীন জীবন কোনো জীবন নয়।
রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি কর্মের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। এ দেশে কর্মঠ মানুষ আছে, কর্মহীন বা বেকার মানুষও আছে। পাশাপাশি স্বার্থপর, কর্মবিমুখ এমনকি জনস্বার্থপরিপন্থী মানুষেরও অভাব নেই। আপন স্বার্থকে ক্ষুদ্র করে দেখে সৎ সাহস নিয়ে বৃহৎ পরিসরের মানুষের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার কবির এই আহ্বান অনুধাবন করা আজ বিশেষ প্রয়োজন। আর সেই অনুধাবনকে কার্যে রূপ দিতে পারলে তা দেশ তথা বিশ্বকে ভীষণভাবে বদলে দিতে পারে।
কোনো মহৎ শিল্প কালের ঘেরাটোপের মধ্যে আটকে থাকে না। এ কবিতাটিও তাই সর্বকালের।
রবীন্দ্র কবিতার মূল সুর, যাঁরা তাঁর কাব্য পড়েছেন, তাঁরা হয়তো অনেকেই ধরতে পারেন। প্রকৃতি, প্রেম, আন্তর্জাতিকতা আর প্রধানত মানুষ এবং জীবনজিজ্ঞাসা সেখানে ভীষণভাবে প্রশ্রয় পেয়েছে।
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় শ্রেষ্ঠত্বের সন্ধান করা হয়তো বোকামি। সঞ্চয়িতা প্রকাশের সময় তিনি পরোক্ষভাবে বলেছেন, তাঁর সব কবিতাকে তিনি কবিতা বলে স্বীকার করেন না। কিন্তু তাঁর অজস্র কবিতা যে কবিতা হয়ে উঠেছে এবং বাংলা সাহিত্যের সভায় যে তা মহামূল্যবান, তিনি নিজে না বললেও বিদ্বজ্জনের কাছে সে কথা আজ অবধি অনিবার্যভাবে স্বীকৃতি লাভ করে আসছে। তাঁরই একটি কবিতা ‘এবার ফিরাও মোরে’। চিত্রা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। আমার দৃষ্টিতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। কবিতাটি রাজশাহীতে লেখা। ‘আপন হতে বাহির হয়ে’ বাইরে দাঁড়ানোর তাগিদ।
‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতাটি শুরু হয়েছে এ রকম বক্তব্য নিয়ে—সংসারে অন্য সবাই যখন সারাক্ষণ তাদের নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত, তখন ‘তুই’ পলাতক বালকের মতো, মাঝদুপুরে মাঠের মাঝে, তরুর বিষণ্ন ছায়ায়, ক্লান্ত উত্তপ্ত বাতাসে, যে বাতাস আবার দূরের বনের গন্ধ বয়ে নিয়ে আসছে—সারা দিন বাঁশি বাজিয়ে কাটিয়ে দিলি! কেন, তুই কি কোনো আর্তনাদ শুনতে পাস না! দূরে কোথাও আগুন জ্বলছে, তুই কি তা দেখতে পাস না! অন্ধত্বের মধ্যে মা অথবা মাতৃভূমি আটকে পড়েছে বুঝতে পারিস না! অক্ষমের বুক থেকে রক্ত শুষে নিচ্ছে সক্ষমেরা, তুই কি তা অনুভব করতে পারিস না! হীন স্বার্থের কাছে অসহায়ের বেদনা যে পরিহাসে পরিণত হচ্ছে, দুর্বল দীন মানুষগুলো যে ভয়ে সংকুচিত হয়ে লুকিয়ে পড়ছে, সে ঘটনা কি লক্ষ করতে পারিস না!
অতঃপর আহ্বান—তুই উঠে পড়! শোন কোন মহা আহ্বানধ্বনি তোকে উচ্চকণ্ঠে ডেকে চলেছে জনতাকে জাগানোর জন্য। যার উদ্দেশ্যে বলা সেই জনই প্রকৃতপক্ষে অন্তরের গভীর থেকে এই ডাক শুনতে পাচ্ছে।
এর পরবর্তী অংশে রবীন্দ্রনাথ দরিদ্র ও অসহায় মানুষের একটি চিত্র এঁকেছেন: শত শতাব্দীর অত্যাচার, নিপীড়ন, অনাহার, আর অসহায়ত্ব নিয়ে করুণ-মূর্তি মানুষগুলো কেমন বোবা ও বোকা হয়ে আছে। তারা কোনো প্রতিবাদ করতে জানে না (হয়তো বলার মতো উপযুক্ত জায়গাও তাদের নেই)। সৃষ্টিকর্তা বা মানুষকে দোষও দেয় না। জীবনটাকে কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখে। এই দারিদ্র্য ও অসহায়ত্ব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলতেই থাকে। এমন অবস্থায় কেউ যদি তার মুখের সামান্য অন্নটুকুও কেড়ে নেয়, তবু তারা শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দিয়ে তাঁর ওপরেই ভার ছেড়ে দেয়।
এই সব বোবা, অবুঝ ও অসহায় মানুষের দল তো রয়েছেই চারদিকে। কিন্তু করণীয় কী?
খুব সহজ ভাষায় রবীন্দ্রনাথ তার জবাব দিয়ে বলেছেন, ‘এই সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে দিতে হবে ভাষা/এই সব শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা!’
কী করে দিতে হবে এই ভাষা, কী করে জাগিয়ে তুলতে হবে এই আশা! এ জায়গাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং খুব পরিষ্কার; যেকোনো সমস্যার সমাধানে মানুষের একত্র হওয়া অত্যাবশ্যক। আমাদের সমস্যাগুলো সমস্যাই থেকে যায়, যদি আমরা পরস্পরের মধ্যে আন্তযোগাযোগ প্রসারিত না করি। বিচ্ছিন্নতা কখনো সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখে না। একত্র হওয়ার শক্তিই প্রখর। অপ্রতিরোধ্য। আমরা তখনই পরাজিত হই, যখন সম্মিলিত শক্তির ক্ষমতাকে অস্বীকার করি এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি।
কবির ভাষায়:
‘মুহূর্ত তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে/ যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে/ যখনই জাগিবে তুমি তখনই সে পলাইবে ধেয়ে।’
কবি জানাচ্ছেন, অশুভ শক্তি তার হীনতা জানে বলেই মানুষ যখন একত্র হয় এবং সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ায়, তখন সে পথের কুকুরের মতো ভয় পেয়ে পালায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঠিক এ বিষয়টিই আমরা লক্ষ করেছি। আপাতদৃষ্টিতে তাদের, অর্থাৎ পাকিস্তানিদের শক্তির প্রচণ্ডতা প্রকাণ্ড মনে হলেও বাঙালির সম্মিলিত শক্তির কাছে পাকিস্তানি অপশক্তি পরাভূত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ‘আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব’ কথাটি সফল করে তুলেছিল গ্রামের কোটি মানুষ। রবীন্দ্রনাথ এই কবিতায় যে আহ্বান জানিয়েছিলেন ‘যদি থাকে প্রাণ/তবে তাই লহ সাথে, তবে তাই করো আজি দান’ এই ধ্বনির প্রতিফলনই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ঘটে গিয়েছিল। একতার শক্তির আর কিছুর আবশ্যক নেই। শুধু দেহে প্রাণ থাকলেই চলবে।
পরেই আছে—
‘অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু/ চাই বল, চাই স্বাস্থ্য আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু/ সাহসবিস্তৃত বক্ষপট।’
কবিতার এই পঙ্ক্তিতেই কবি সম্পূর্ণ জীবনের কথা বলে দিয়েছেন। মানুষের সম্পূর্ণতা অর্জনে যেমন খাদ্য চাই, তেমনি একইভাবে চাই আলো-বাতাস-বল-আয়ু-আনন্দ। আর চাই সাহসী বুকের পাটা। সাহস ছাড়া কোনো কাজই করা সম্ভব নয়।
রবীন্দ্রনাথ সংসারসীমা ছাড়িয়ে দূরে চলে যাওয়াকে প্রশ্রয় দেন না। কল্পনাবিলাস বর্জন করে নিত্যদিনের বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলাই তাঁর চাওয়া। কল্পনার কুঞ্জ থেকে কর্মচঞ্চল মানুষের কাছে ফিরতে হবে। সেখানে বাধা আছে, ঝড় আছে, নিরন্তর দ্বন্দ্ব-সংঘাত আছে, আছে মায়া। এসবকে অতিক্রম করে, আপনার নিজের সুখ, নিজের দুঃখকে মিথ্যা জ্ঞান করে চলতে পারলে সত্যিকারের বাঁচা হয় বলে তিনি জানান। কবিতার ভাষায়, ‘এবার ফিরাও মোরে, লয়ে যাও সংসারের তীরে/ হে কল্পনে, রঙ্গময়ী! দুলায়ো না সমীরে সমীরে/ তরঙ্গে তরঙ্গে আর, ভুলায়োনা মোহিনী মায়ায়।...স্বার্থমগ্ন যেজন বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে/ সে কখনো শেখেনি বাঁচিতে।’ বৃহৎ জগতের বৃহৎ মানুষ হয়ে উঠতে হলে মানুষের নিজের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিসীমাকে পেরিয়ে যেতে হয়। এই অনিবার্যতার কথাই এখানে ধ্বনিত হয়েছে।
ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতবর্ষের মুক্তির প্রতীকী বার্তাও এখানে আমরা পেয়ে যাই। পাশাপাশি জনগণের কল্যাণের বার্তাও।
আদর্শ হারিয়ে যাচ্ছে। অস্থিরতা প্রতিক্ষণে অনিবার্য হয়ে উঠছে। প্রাণচঞ্চলতা অপসৃত হতে চলেছে। কেন এমন হবে! জীবন তো চলমান! সেখানে আনন্দ চাই। মুক্ত বায়ু চাই। কলহ নয়, নেতিবাচকতা নয়, জগদ্দল অচলায়তনকে ভেঙে ফেলে সামনে চলা প্রয়োজন। নতুন পথের সন্ধান করা প্রয়োজন। পরাধীনতা বা নৈরাজ্য নয়, সতর্কতার সঙ্গে ইতিবাচকতার চর্চা করা প্রয়োজন।
এই কবিতায় কবি সত্য ও সুন্দরকে খোঁজার চেষ্টা করেছেন। বিশ্ব মানবতার বাণী শুনিয়েছেন। বাস্তবধর্মিতাকে আলিঙ্গন করতে বলেছেন। চেয়েছেন আমাদের জীবন চলা ছন্দময় হোক। জ্ঞানের পরিচর্যা প্রধান হয়ে উঠুক। গানহীন, প্রাণহীন, ছন্দহীন জীবন কোনো জীবন নয়।
রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি কর্মের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। এ দেশে কর্মঠ মানুষ আছে, কর্মহীন বা বেকার মানুষও আছে। পাশাপাশি স্বার্থপর, কর্মবিমুখ এমনকি জনস্বার্থপরিপন্থী মানুষেরও অভাব নেই। আপন স্বার্থকে ক্ষুদ্র করে দেখে সৎ সাহস নিয়ে বৃহৎ পরিসরের মানুষের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার কবির এই আহ্বান অনুধাবন করা আজ বিশেষ প্রয়োজন। আর সেই অনুধাবনকে কার্যে রূপ দিতে পারলে তা দেশ তথা বিশ্বকে ভীষণভাবে বদলে দিতে পারে।
কোনো মহৎ শিল্প কালের ঘেরাটোপের মধ্যে আটকে থাকে না। এ কবিতাটিও তাই সর্বকালের।
তাপস মজুমদার
রবীন্দ্র কবিতার মূল সুর, যাঁরা তাঁর কাব্য পড়েছেন, তাঁরা হয়তো অনেকেই ধরতে পারেন। প্রকৃতি, প্রেম, আন্তর্জাতিকতা আর প্রধানত মানুষ এবং জীবনজিজ্ঞাসা সেখানে ভীষণভাবে প্রশ্রয় পেয়েছে।
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় শ্রেষ্ঠত্বের সন্ধান করা হয়তো বোকামি। সঞ্চয়িতা প্রকাশের সময় তিনি পরোক্ষভাবে বলেছেন, তাঁর সব কবিতাকে তিনি কবিতা বলে স্বীকার করেন না। কিন্তু তাঁর অজস্র কবিতা যে কবিতা হয়ে উঠেছে এবং বাংলা সাহিত্যের সভায় যে তা মহামূল্যবান, তিনি নিজে না বললেও বিদ্বজ্জনের কাছে সে কথা আজ অবধি অনিবার্যভাবে স্বীকৃতি লাভ করে আসছে। তাঁরই একটি কবিতা ‘এবার ফিরাও মোরে’। চিত্রা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। আমার দৃষ্টিতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। কবিতাটি রাজশাহীতে লেখা। ‘আপন হতে বাহির হয়ে’ বাইরে দাঁড়ানোর তাগিদ।
‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতাটি শুরু হয়েছে এ রকম বক্তব্য নিয়ে—সংসারে অন্য সবাই যখন সারাক্ষণ তাদের নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত, তখন ‘তুই’ পলাতক বালকের মতো, মাঝদুপুরে মাঠের মাঝে, তরুর বিষণ্ন ছায়ায়, ক্লান্ত উত্তপ্ত বাতাসে, যে বাতাস আবার দূরের বনের গন্ধ বয়ে নিয়ে আসছে—সারা দিন বাঁশি বাজিয়ে কাটিয়ে দিলি! কেন, তুই কি কোনো আর্তনাদ শুনতে পাস না! দূরে কোথাও আগুন জ্বলছে, তুই কি তা দেখতে পাস না! অন্ধত্বের মধ্যে মা অথবা মাতৃভূমি আটকে পড়েছে বুঝতে পারিস না! অক্ষমের বুক থেকে রক্ত শুষে নিচ্ছে সক্ষমেরা, তুই কি তা অনুভব করতে পারিস না! হীন স্বার্থের কাছে অসহায়ের বেদনা যে পরিহাসে পরিণত হচ্ছে, দুর্বল দীন মানুষগুলো যে ভয়ে সংকুচিত হয়ে লুকিয়ে পড়ছে, সে ঘটনা কি লক্ষ করতে পারিস না!
অতঃপর আহ্বান—তুই উঠে পড়! শোন কোন মহা আহ্বানধ্বনি তোকে উচ্চকণ্ঠে ডেকে চলেছে জনতাকে জাগানোর জন্য। যার উদ্দেশ্যে বলা সেই জনই প্রকৃতপক্ষে অন্তরের গভীর থেকে এই ডাক শুনতে পাচ্ছে।
এর পরবর্তী অংশে রবীন্দ্রনাথ দরিদ্র ও অসহায় মানুষের একটি চিত্র এঁকেছেন: শত শতাব্দীর অত্যাচার, নিপীড়ন, অনাহার, আর অসহায়ত্ব নিয়ে করুণ-মূর্তি মানুষগুলো কেমন বোবা ও বোকা হয়ে আছে। তারা কোনো প্রতিবাদ করতে জানে না (হয়তো বলার মতো উপযুক্ত জায়গাও তাদের নেই)। সৃষ্টিকর্তা বা মানুষকে দোষও দেয় না। জীবনটাকে কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখে। এই দারিদ্র্য ও অসহায়ত্ব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলতেই থাকে। এমন অবস্থায় কেউ যদি তার মুখের সামান্য অন্নটুকুও কেড়ে নেয়, তবু তারা শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দিয়ে তাঁর ওপরেই ভার ছেড়ে দেয়।
এই সব বোবা, অবুঝ ও অসহায় মানুষের দল তো রয়েছেই চারদিকে। কিন্তু করণীয় কী?
খুব সহজ ভাষায় রবীন্দ্রনাথ তার জবাব দিয়ে বলেছেন, ‘এই সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে দিতে হবে ভাষা/এই সব শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা!’
কী করে দিতে হবে এই ভাষা, কী করে জাগিয়ে তুলতে হবে এই আশা! এ জায়গাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং খুব পরিষ্কার; যেকোনো সমস্যার সমাধানে মানুষের একত্র হওয়া অত্যাবশ্যক। আমাদের সমস্যাগুলো সমস্যাই থেকে যায়, যদি আমরা পরস্পরের মধ্যে আন্তযোগাযোগ প্রসারিত না করি। বিচ্ছিন্নতা কখনো সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখে না। একত্র হওয়ার শক্তিই প্রখর। অপ্রতিরোধ্য। আমরা তখনই পরাজিত হই, যখন সম্মিলিত শক্তির ক্ষমতাকে অস্বীকার করি এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি।
কবির ভাষায়:
‘মুহূর্ত তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে/ যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে/ যখনই জাগিবে তুমি তখনই সে পলাইবে ধেয়ে।’
কবি জানাচ্ছেন, অশুভ শক্তি তার হীনতা জানে বলেই মানুষ যখন একত্র হয় এবং সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ায়, তখন সে পথের কুকুরের মতো ভয় পেয়ে পালায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঠিক এ বিষয়টিই আমরা লক্ষ করেছি। আপাতদৃষ্টিতে তাদের, অর্থাৎ পাকিস্তানিদের শক্তির প্রচণ্ডতা প্রকাণ্ড মনে হলেও বাঙালির সম্মিলিত শক্তির কাছে পাকিস্তানি অপশক্তি পরাভূত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ‘আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব’ কথাটি সফল করে তুলেছিল গ্রামের কোটি মানুষ। রবীন্দ্রনাথ এই কবিতায় যে আহ্বান জানিয়েছিলেন ‘যদি থাকে প্রাণ/তবে তাই লহ সাথে, তবে তাই করো আজি দান’ এই ধ্বনির প্রতিফলনই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ঘটে গিয়েছিল। একতার শক্তির আর কিছুর আবশ্যক নেই। শুধু দেহে প্রাণ থাকলেই চলবে।
পরেই আছে—
‘অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু/ চাই বল, চাই স্বাস্থ্য আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু/ সাহসবিস্তৃত বক্ষপট।’
কবিতার এই পঙ্ক্তিতেই কবি সম্পূর্ণ জীবনের কথা বলে দিয়েছেন। মানুষের সম্পূর্ণতা অর্জনে যেমন খাদ্য চাই, তেমনি একইভাবে চাই আলো-বাতাস-বল-আয়ু-আনন্দ। আর চাই সাহসী বুকের পাটা। সাহস ছাড়া কোনো কাজই করা সম্ভব নয়।
রবীন্দ্রনাথ সংসারসীমা ছাড়িয়ে দূরে চলে যাওয়াকে প্রশ্রয় দেন না। কল্পনাবিলাস বর্জন করে নিত্যদিনের বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলাই তাঁর চাওয়া। কল্পনার কুঞ্জ থেকে কর্মচঞ্চল মানুষের কাছে ফিরতে হবে। সেখানে বাধা আছে, ঝড় আছে, নিরন্তর দ্বন্দ্ব-সংঘাত আছে, আছে মায়া। এসবকে অতিক্রম করে, আপনার নিজের সুখ, নিজের দুঃখকে মিথ্যা জ্ঞান করে চলতে পারলে সত্যিকারের বাঁচা হয় বলে তিনি জানান। কবিতার ভাষায়, ‘এবার ফিরাও মোরে, লয়ে যাও সংসারের তীরে/ হে কল্পনে, রঙ্গময়ী! দুলায়ো না সমীরে সমীরে/ তরঙ্গে তরঙ্গে আর, ভুলায়োনা মোহিনী মায়ায়।...স্বার্থমগ্ন যেজন বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে/ সে কখনো শেখেনি বাঁচিতে।’ বৃহৎ জগতের বৃহৎ মানুষ হয়ে উঠতে হলে মানুষের নিজের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিসীমাকে পেরিয়ে যেতে হয়। এই অনিবার্যতার কথাই এখানে ধ্বনিত হয়েছে।
ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতবর্ষের মুক্তির প্রতীকী বার্তাও এখানে আমরা পেয়ে যাই। পাশাপাশি জনগণের কল্যাণের বার্তাও।
আদর্শ হারিয়ে যাচ্ছে। অস্থিরতা প্রতিক্ষণে অনিবার্য হয়ে উঠছে। প্রাণচঞ্চলতা অপসৃত হতে চলেছে। কেন এমন হবে! জীবন তো চলমান! সেখানে আনন্দ চাই। মুক্ত বায়ু চাই। কলহ নয়, নেতিবাচকতা নয়, জগদ্দল অচলায়তনকে ভেঙে ফেলে সামনে চলা প্রয়োজন। নতুন পথের সন্ধান করা প্রয়োজন। পরাধীনতা বা নৈরাজ্য নয়, সতর্কতার সঙ্গে ইতিবাচকতার চর্চা করা প্রয়োজন।
এই কবিতায় কবি সত্য ও সুন্দরকে খোঁজার চেষ্টা করেছেন। বিশ্ব মানবতার বাণী শুনিয়েছেন। বাস্তবধর্মিতাকে আলিঙ্গন করতে বলেছেন। চেয়েছেন আমাদের জীবন চলা ছন্দময় হোক। জ্ঞানের পরিচর্যা প্রধান হয়ে উঠুক। গানহীন, প্রাণহীন, ছন্দহীন জীবন কোনো জীবন নয়।
রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি কর্মের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। এ দেশে কর্মঠ মানুষ আছে, কর্মহীন বা বেকার মানুষও আছে। পাশাপাশি স্বার্থপর, কর্মবিমুখ এমনকি জনস্বার্থপরিপন্থী মানুষেরও অভাব নেই। আপন স্বার্থকে ক্ষুদ্র করে দেখে সৎ সাহস নিয়ে বৃহৎ পরিসরের মানুষের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার কবির এই আহ্বান অনুধাবন করা আজ বিশেষ প্রয়োজন। আর সেই অনুধাবনকে কার্যে রূপ দিতে পারলে তা দেশ তথা বিশ্বকে ভীষণভাবে বদলে দিতে পারে।
কোনো মহৎ শিল্প কালের ঘেরাটোপের মধ্যে আটকে থাকে না। এ কবিতাটিও তাই সর্বকালের।
রবীন্দ্র কবিতার মূল সুর, যাঁরা তাঁর কাব্য পড়েছেন, তাঁরা হয়তো অনেকেই ধরতে পারেন। প্রকৃতি, প্রেম, আন্তর্জাতিকতা আর প্রধানত মানুষ এবং জীবনজিজ্ঞাসা সেখানে ভীষণভাবে প্রশ্রয় পেয়েছে।
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় শ্রেষ্ঠত্বের সন্ধান করা হয়তো বোকামি। সঞ্চয়িতা প্রকাশের সময় তিনি পরোক্ষভাবে বলেছেন, তাঁর সব কবিতাকে তিনি কবিতা বলে স্বীকার করেন না। কিন্তু তাঁর অজস্র কবিতা যে কবিতা হয়ে উঠেছে এবং বাংলা সাহিত্যের সভায় যে তা মহামূল্যবান, তিনি নিজে না বললেও বিদ্বজ্জনের কাছে সে কথা আজ অবধি অনিবার্যভাবে স্বীকৃতি লাভ করে আসছে। তাঁরই একটি কবিতা ‘এবার ফিরাও মোরে’। চিত্রা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। আমার দৃষ্টিতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। কবিতাটি রাজশাহীতে লেখা। ‘আপন হতে বাহির হয়ে’ বাইরে দাঁড়ানোর তাগিদ।
‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতাটি শুরু হয়েছে এ রকম বক্তব্য নিয়ে—সংসারে অন্য সবাই যখন সারাক্ষণ তাদের নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত, তখন ‘তুই’ পলাতক বালকের মতো, মাঝদুপুরে মাঠের মাঝে, তরুর বিষণ্ন ছায়ায়, ক্লান্ত উত্তপ্ত বাতাসে, যে বাতাস আবার দূরের বনের গন্ধ বয়ে নিয়ে আসছে—সারা দিন বাঁশি বাজিয়ে কাটিয়ে দিলি! কেন, তুই কি কোনো আর্তনাদ শুনতে পাস না! দূরে কোথাও আগুন জ্বলছে, তুই কি তা দেখতে পাস না! অন্ধত্বের মধ্যে মা অথবা মাতৃভূমি আটকে পড়েছে বুঝতে পারিস না! অক্ষমের বুক থেকে রক্ত শুষে নিচ্ছে সক্ষমেরা, তুই কি তা অনুভব করতে পারিস না! হীন স্বার্থের কাছে অসহায়ের বেদনা যে পরিহাসে পরিণত হচ্ছে, দুর্বল দীন মানুষগুলো যে ভয়ে সংকুচিত হয়ে লুকিয়ে পড়ছে, সে ঘটনা কি লক্ষ করতে পারিস না!
অতঃপর আহ্বান—তুই উঠে পড়! শোন কোন মহা আহ্বানধ্বনি তোকে উচ্চকণ্ঠে ডেকে চলেছে জনতাকে জাগানোর জন্য। যার উদ্দেশ্যে বলা সেই জনই প্রকৃতপক্ষে অন্তরের গভীর থেকে এই ডাক শুনতে পাচ্ছে।
এর পরবর্তী অংশে রবীন্দ্রনাথ দরিদ্র ও অসহায় মানুষের একটি চিত্র এঁকেছেন: শত শতাব্দীর অত্যাচার, নিপীড়ন, অনাহার, আর অসহায়ত্ব নিয়ে করুণ-মূর্তি মানুষগুলো কেমন বোবা ও বোকা হয়ে আছে। তারা কোনো প্রতিবাদ করতে জানে না (হয়তো বলার মতো উপযুক্ত জায়গাও তাদের নেই)। সৃষ্টিকর্তা বা মানুষকে দোষও দেয় না। জীবনটাকে কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখে। এই দারিদ্র্য ও অসহায়ত্ব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলতেই থাকে। এমন অবস্থায় কেউ যদি তার মুখের সামান্য অন্নটুকুও কেড়ে নেয়, তবু তারা শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দিয়ে তাঁর ওপরেই ভার ছেড়ে দেয়।
এই সব বোবা, অবুঝ ও অসহায় মানুষের দল তো রয়েছেই চারদিকে। কিন্তু করণীয় কী?
খুব সহজ ভাষায় রবীন্দ্রনাথ তার জবাব দিয়ে বলেছেন, ‘এই সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে দিতে হবে ভাষা/এই সব শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা!’
কী করে দিতে হবে এই ভাষা, কী করে জাগিয়ে তুলতে হবে এই আশা! এ জায়গাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং খুব পরিষ্কার; যেকোনো সমস্যার সমাধানে মানুষের একত্র হওয়া অত্যাবশ্যক। আমাদের সমস্যাগুলো সমস্যাই থেকে যায়, যদি আমরা পরস্পরের মধ্যে আন্তযোগাযোগ প্রসারিত না করি। বিচ্ছিন্নতা কখনো সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখে না। একত্র হওয়ার শক্তিই প্রখর। অপ্রতিরোধ্য। আমরা তখনই পরাজিত হই, যখন সম্মিলিত শক্তির ক্ষমতাকে অস্বীকার করি এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি।
কবির ভাষায়:
‘মুহূর্ত তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে/ যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে/ যখনই জাগিবে তুমি তখনই সে পলাইবে ধেয়ে।’
কবি জানাচ্ছেন, অশুভ শক্তি তার হীনতা জানে বলেই মানুষ যখন একত্র হয় এবং সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ায়, তখন সে পথের কুকুরের মতো ভয় পেয়ে পালায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঠিক এ বিষয়টিই আমরা লক্ষ করেছি। আপাতদৃষ্টিতে তাদের, অর্থাৎ পাকিস্তানিদের শক্তির প্রচণ্ডতা প্রকাণ্ড মনে হলেও বাঙালির সম্মিলিত শক্তির কাছে পাকিস্তানি অপশক্তি পরাভূত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ‘আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব’ কথাটি সফল করে তুলেছিল গ্রামের কোটি মানুষ। রবীন্দ্রনাথ এই কবিতায় যে আহ্বান জানিয়েছিলেন ‘যদি থাকে প্রাণ/তবে তাই লহ সাথে, তবে তাই করো আজি দান’ এই ধ্বনির প্রতিফলনই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ঘটে গিয়েছিল। একতার শক্তির আর কিছুর আবশ্যক নেই। শুধু দেহে প্রাণ থাকলেই চলবে।
পরেই আছে—
‘অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু/ চাই বল, চাই স্বাস্থ্য আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু/ সাহসবিস্তৃত বক্ষপট।’
কবিতার এই পঙ্ক্তিতেই কবি সম্পূর্ণ জীবনের কথা বলে দিয়েছেন। মানুষের সম্পূর্ণতা অর্জনে যেমন খাদ্য চাই, তেমনি একইভাবে চাই আলো-বাতাস-বল-আয়ু-আনন্দ। আর চাই সাহসী বুকের পাটা। সাহস ছাড়া কোনো কাজই করা সম্ভব নয়।
রবীন্দ্রনাথ সংসারসীমা ছাড়িয়ে দূরে চলে যাওয়াকে প্রশ্রয় দেন না। কল্পনাবিলাস বর্জন করে নিত্যদিনের বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলাই তাঁর চাওয়া। কল্পনার কুঞ্জ থেকে কর্মচঞ্চল মানুষের কাছে ফিরতে হবে। সেখানে বাধা আছে, ঝড় আছে, নিরন্তর দ্বন্দ্ব-সংঘাত আছে, আছে মায়া। এসবকে অতিক্রম করে, আপনার নিজের সুখ, নিজের দুঃখকে মিথ্যা জ্ঞান করে চলতে পারলে সত্যিকারের বাঁচা হয় বলে তিনি জানান। কবিতার ভাষায়, ‘এবার ফিরাও মোরে, লয়ে যাও সংসারের তীরে/ হে কল্পনে, রঙ্গময়ী! দুলায়ো না সমীরে সমীরে/ তরঙ্গে তরঙ্গে আর, ভুলায়োনা মোহিনী মায়ায়।...স্বার্থমগ্ন যেজন বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে/ সে কখনো শেখেনি বাঁচিতে।’ বৃহৎ জগতের বৃহৎ মানুষ হয়ে উঠতে হলে মানুষের নিজের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিসীমাকে পেরিয়ে যেতে হয়। এই অনিবার্যতার কথাই এখানে ধ্বনিত হয়েছে।
ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতবর্ষের মুক্তির প্রতীকী বার্তাও এখানে আমরা পেয়ে যাই। পাশাপাশি জনগণের কল্যাণের বার্তাও।
আদর্শ হারিয়ে যাচ্ছে। অস্থিরতা প্রতিক্ষণে অনিবার্য হয়ে উঠছে। প্রাণচঞ্চলতা অপসৃত হতে চলেছে। কেন এমন হবে! জীবন তো চলমান! সেখানে আনন্দ চাই। মুক্ত বায়ু চাই। কলহ নয়, নেতিবাচকতা নয়, জগদ্দল অচলায়তনকে ভেঙে ফেলে সামনে চলা প্রয়োজন। নতুন পথের সন্ধান করা প্রয়োজন। পরাধীনতা বা নৈরাজ্য নয়, সতর্কতার সঙ্গে ইতিবাচকতার চর্চা করা প্রয়োজন।
এই কবিতায় কবি সত্য ও সুন্দরকে খোঁজার চেষ্টা করেছেন। বিশ্ব মানবতার বাণী শুনিয়েছেন। বাস্তবধর্মিতাকে আলিঙ্গন করতে বলেছেন। চেয়েছেন আমাদের জীবন চলা ছন্দময় হোক। জ্ঞানের পরিচর্যা প্রধান হয়ে উঠুক। গানহীন, প্রাণহীন, ছন্দহীন জীবন কোনো জীবন নয়।
রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি কর্মের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। এ দেশে কর্মঠ মানুষ আছে, কর্মহীন বা বেকার মানুষও আছে। পাশাপাশি স্বার্থপর, কর্মবিমুখ এমনকি জনস্বার্থপরিপন্থী মানুষেরও অভাব নেই। আপন স্বার্থকে ক্ষুদ্র করে দেখে সৎ সাহস নিয়ে বৃহৎ পরিসরের মানুষের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার কবির এই আহ্বান অনুধাবন করা আজ বিশেষ প্রয়োজন। আর সেই অনুধাবনকে কার্যে রূপ দিতে পারলে তা দেশ তথা বিশ্বকে ভীষণভাবে বদলে দিতে পারে।
কোনো মহৎ শিল্প কালের ঘেরাটোপের মধ্যে আটকে থাকে না। এ কবিতাটিও তাই সর্বকালের।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৬ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
রবীন্দ্র কবিতার মূল সুর, যাঁরা তাঁর কাব্য পড়েছেন, তাঁরা হয়তো অনেকেই ধরতে পারেন। প্রকৃতি, প্রেম, আন্তর্জাতিকতা আর প্রধানত মানুষ এবং জীবনজিজ্ঞাসা সেখানে ভীষণভাবে প্রশ্রয় পেয়েছে।
০৮ মে ২০২৩‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
রবীন্দ্র কবিতার মূল সুর, যাঁরা তাঁর কাব্য পড়েছেন, তাঁরা হয়তো অনেকেই ধরতে পারেন। প্রকৃতি, প্রেম, আন্তর্জাতিকতা আর প্রধানত মানুষ এবং জীবনজিজ্ঞাসা সেখানে ভীষণভাবে প্রশ্রয় পেয়েছে।
০৮ মে ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৬ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
রবীন্দ্র কবিতার মূল সুর, যাঁরা তাঁর কাব্য পড়েছেন, তাঁরা হয়তো অনেকেই ধরতে পারেন। প্রকৃতি, প্রেম, আন্তর্জাতিকতা আর প্রধানত মানুষ এবং জীবনজিজ্ঞাসা সেখানে ভীষণভাবে প্রশ্রয় পেয়েছে।
০৮ মে ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৬ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
রবীন্দ্র কবিতার মূল সুর, যাঁরা তাঁর কাব্য পড়েছেন, তাঁরা হয়তো অনেকেই ধরতে পারেন। প্রকৃতি, প্রেম, আন্তর্জাতিকতা আর প্রধানত মানুষ এবং জীবনজিজ্ঞাসা সেখানে ভীষণভাবে প্রশ্রয় পেয়েছে।
০৮ মে ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৬ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫