অরুণ কর্মকার

জ্বালানি নিরাপত্তা টেকসই উন্নয়নের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বাংলাদেশ এখন একটি উচ্চমাত্রার জ্বালানি চাহিদাসম্পন্ন দেশ। দেড় দশকের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বড় বড় অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং হচ্ছে। ফলে জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে এবং ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। কিন্তু এই চাহিদা মেটানোর মতো সরবরাহ সক্ষমতা তৈরি হয়নি।
কিন্তু বাংলাদেশ জ্বালানি সম্পদহীন কোনো দেশ নয়। সমৃদ্ধ দেশের কাতারে না পড়লেও উল্লেখযোগ্য জ্বালানি সম্পদ এ দেশে রয়েছে।পৃথিবী বিখ্যাত বিদেশি ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীরা বারবার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সমীক্ষার ভিত্তিতে এ কথা বলেছেন এবং বলে চলেছেন।
তা সত্ত্বেও দেশীয় জ্বালানি সম্পদের অনুসন্ধান, আহরণ ও ব্যবহার সীমিতই রয়ে গেছে। বাড়ছে আমদানিনির্ভরতা। ফলে জ্বালানি নিরাপত্তা পরিস্থিতি যথেষ্ট নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছে। উন্নয়নের গতি-প্রকৃতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।
জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লা আমাদের দেশের প্রধান তিনটি বাণিজ্যিক জ্বালানি। চাহিদার তুলনায় এই তিন ধরনের জ্বালানি পণ্যেরই ঘাটতি ও সংকটের কথা সবার জানা। চলমান এই সংকট ইতিমধ্যে দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে বড় ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। উন্নয়নের ধারাকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। জ্বালানি তেল আমাদের দেশে নেই। পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। এ ক্ষেত্রে আমরা সব সময়ই আমদানিনির্ভর। কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার বিষয়টি ভিন্ন।
অনেক আগে থেকেই দেশে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ-ঘাটতি চলে এসেছে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের সময় দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট, যার সবটুকুই ছিল দেশের। তবে তখনকার চাহিদার তুলনায় তা ছিল কম। সরকার তখন গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়। ফলে ২০১২-১৩ সালনাগাদ গ্যাস উত্তোলন দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে ওঠে। কিন্তু তত দিনে দেশে গ্যাসের চাহিদা দাঁড়ায় দৈনিক ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।
এরপর আর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন বাড়েনি। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তেমন কোনো উদ্যোগও বাস্তবায়িত হয়নি। পাশাপাশি দেশের ক্ষেত্রগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে আসা (রিজার্ভার প্রেশার) এবং আরও কিছু কারিগরি কারণে উৎপাদন কমেছে এবং কমছে। ফলে গ্যাসের সরবরাহ-ঘাটতি ক্রমাগতভাবে বেড়েছে।
এই ঘাটতি পূরণে সরকার দেশের গ্যাস আহরণ বৃদ্ধির পথে না গিয়ে ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে। ফলে গ্যাসের দাম বাড়তে থাকে, যা উৎপাদন খাতের জন্য বাড়তি ব্যয়ের বোঝা সৃষ্টি করে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না; বরং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিঘ্নিত করার পথ তৈরি হয়ে যায়।
দেশে এখন গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ ২৯০ কোটি ঘনফুটের মতো। এই ঘাটতির একটা কারণ রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন-ন্যাটো জোটের যুদ্ধজনিত বিশ্ববাজারে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। তবে আমাদের জ্বালানি ঘাটতির সবচেয়ে বড় কারণ এটি নয়। ওই যুদ্ধ না হলেও আমাদের গ্যাসের চাহিদা এমনই হতো। কিন্তু দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুটের বেশি এলএনজি আমদানির সক্ষমতা হতো না। আর দেশের ক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন কমার হারও এমনই থাকত।
আমাদের গ্যাস-সংকটের প্রধান কারণ ধারাবাহিকভাবে দেশের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে মনোযোগ না দেওয়া। সরকার খাদের কিনারা থেকে বিদ্যুৎ খাতকে যেভাবে তুলে এনেছে, গ্যাস খাতের উন্নয়নে তেমনটি করা হয়নি। সংকট তীব্র হওয়ার পর ২০২২ সালের শেষভাগে সরকার দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দৈনিক প্রায় ৬২ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করে।
যদি ধরে নিই যে এর পুরোটাই পাওয়া যাবে, বিশ্ববাজার স্বাভাবিক হবে এবং আমরা দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট করে এলএনজি আনব, তাহলেও ঘাটতি পূরণ হবে না। কারণ এই সময় বিদ্যমান কূপগুলোর উৎপাদন কমবে। ২০২৫ সালে আমাদের মোট গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা হতে পারে ৪০০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু তখন দৈনিক চাহিদা হবে অন্তত ৪৫০ কোটি ঘনফুট। এই ঘাটতি পূরণে আরও সময় লাগবে এবং ঘাটতি পূরণ হতে হতে আরও চাহিদা বাড়বে। ঘাটতিও চলতে থাকবে। এই দুষ্টচক্র থেকে শিগগিরই পরিত্রাণের সম্ভাবনা নেই।
নীতিনির্ধারকেরা বলে থাকেন যে দেশে আর বেশি গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ ক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি অ্যাসেসমেন্টের কথা উল্লেখ করতে পারি। যেমন ইউএসজিএস এবং পেট্রোবাংলার যৌথ উদ্যোগে ২০০০ সালে করা সমীক্ষা; নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডিরেক্টরেট এবং হাইড্রোকার্বন ইউনিটের ২০০১ সালের যৌথ সমীক্ষা এবং ২০১৭ সালে গুস্তাভসন অ্যাসোসিয়েটসের সমীক্ষা; ইউরোপীয় তেল-গ্যাস পরামর্শক প্রতিষ্ঠান-র্যাম্বলের সমীক্ষা।
এর প্রতিটিতে অনেক গ্যাস পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সরকার বিদ্যুৎ খাত মহাপরিকল্পনায় (২০১৭) উল্লেখ করেছে, ইউএসজিএস-পেট্রোবাংলা সমীক্ষা (২০০১) হলো পদ্ধতিগত বিস্তৃত একটি অধ্যয়ন, যা বাংলাদেশের অনাবিষ্কৃত গ্যাস সম্পদের সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের জন্য প্রথম দিকের এবং সর্বোত্তম অধ্যয়নের প্রতিনিধিত্ব করে। (The USGS-Petrobangla study (2001) is a systematic extensive study that represents the earlyest and best study to assess the Bangladesh’s undiscovered gas resource potential.) ফরাসি প্রতিষ্ঠান স্লামবার্জার একটি সমীক্ষায় বলেছে, বিদ্যমান ক্ষেত্রগুলোর পুরোনো কূপগুলোয় কিছু সংস্কারকাজ করে সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে দৈনিক ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো যায়। সর্বশেষ নরওয়েভিত্তিক বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি ইকুইনরের (সাবেক স্টেট অয়েল) সঙ্গে বাংলাদেশ মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি একটি গবেষণা করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর গবেষণা তহবিলের অর্থায়নে করা এই গবেষণা বলছে, উত্তোলন বন্ধ করে রাখা ৩০টি কূপ থেকে সেকেন্ডারি রিকভারি প্রযুক্তির মাধ্যমে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস তোলা সম্ভব।
দেশের বেঙ্গল বেসিনে গ্যাস পাওয়ার অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। সুরমা বেসিনে অনেক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র পড়ে আছে। বিদ্যমান একাধিক ক্ষেত্রে গভীরতর কূপ খনন করে (ডিপার জোন এক্সপ্লোরেশন, ৫ হাজার মিটার+) বিপুল গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্রবক্ষ ছাড়াই এতগুলো বিকল্প উৎস বিদ্যমান। দরকার অনুসন্ধান ও আহরণ বাড়ানো।
গ্যাস অনুসন্ধানে টাকার অভাবের কথা বলা হয়। প্রশ্ন হলো, জ্বালানি আমদানির ব্যয় মেটানোর মতো অঢেল টাকা (বৈদেশিক মুদ্রা) কি আমাদের আছে? তা ছাড়া, গ্যাস অনুসন্ধানে অর্থ সংস্থানের জন্য ২০০৮-০৯ সালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নামে পৃথক একটি তহবিল গঠন করে রেখেছে। সেই তহবিল অন্যত্র ব্যবহার করা হচ্ছে কেন?
প্রাকৃতিক গ্যাসের আরেকটি রূপ এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস)। এর চাহিদাও এখন দেশে বছরে ৩০ লাখ টন ছাড়িয়েছে। এর শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি আমদানি করতে হয়। ফলে এর সঙ্গেও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
কয়লার বিষয়টিও চমকপ্রদ। দেশে আবিষ্কৃত ৫টি কয়লাখনিতে ৭০০ কোটি (৭ হাজার মিলিয়ন) টন উন্নত মানের কয়লার মজুত রয়েছে।অথচ আমরা কয়লাভিত্তিক সবগুলো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র করছি আমদানি করা কয়লায়। কয়লা উত্তোলনের সঙ্গে পরিবেশ এবং অতি উর্বর ফসলি জমি রক্ষার বিষয়টি জড়িত ঠিকই। কিন্তু এর গ্রহণযোগ্য সমাধান খতিয়ে দেখা সম্ভব।
টেকসই উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য নবায়নযোগ্য খাতও এখন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের এ খাতটিও স্থবির। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থাপিত ক্ষমতার ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। ২০২২ সাল পর্যন্ত হয়েছে ৪ শতাংশের মতো।
টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশের জ্বালানি খাতের বর্তমান অবস্থা এবং আমদানিনির্ভরতার প্রবণতা মোটেই সহায়ক নয়। উন্নয়ন স্থিতিশীল করতে হলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে দেশের জ্বালানি সম্পদ আহরণ বাড়ানোর বিকল্প নেই।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

জ্বালানি নিরাপত্তা টেকসই উন্নয়নের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বাংলাদেশ এখন একটি উচ্চমাত্রার জ্বালানি চাহিদাসম্পন্ন দেশ। দেড় দশকের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বড় বড় অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং হচ্ছে। ফলে জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে এবং ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। কিন্তু এই চাহিদা মেটানোর মতো সরবরাহ সক্ষমতা তৈরি হয়নি।
কিন্তু বাংলাদেশ জ্বালানি সম্পদহীন কোনো দেশ নয়। সমৃদ্ধ দেশের কাতারে না পড়লেও উল্লেখযোগ্য জ্বালানি সম্পদ এ দেশে রয়েছে।পৃথিবী বিখ্যাত বিদেশি ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীরা বারবার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সমীক্ষার ভিত্তিতে এ কথা বলেছেন এবং বলে চলেছেন।
তা সত্ত্বেও দেশীয় জ্বালানি সম্পদের অনুসন্ধান, আহরণ ও ব্যবহার সীমিতই রয়ে গেছে। বাড়ছে আমদানিনির্ভরতা। ফলে জ্বালানি নিরাপত্তা পরিস্থিতি যথেষ্ট নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছে। উন্নয়নের গতি-প্রকৃতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।
জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লা আমাদের দেশের প্রধান তিনটি বাণিজ্যিক জ্বালানি। চাহিদার তুলনায় এই তিন ধরনের জ্বালানি পণ্যেরই ঘাটতি ও সংকটের কথা সবার জানা। চলমান এই সংকট ইতিমধ্যে দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে বড় ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। উন্নয়নের ধারাকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। জ্বালানি তেল আমাদের দেশে নেই। পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। এ ক্ষেত্রে আমরা সব সময়ই আমদানিনির্ভর। কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার বিষয়টি ভিন্ন।
অনেক আগে থেকেই দেশে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ-ঘাটতি চলে এসেছে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের সময় দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট, যার সবটুকুই ছিল দেশের। তবে তখনকার চাহিদার তুলনায় তা ছিল কম। সরকার তখন গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়। ফলে ২০১২-১৩ সালনাগাদ গ্যাস উত্তোলন দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে ওঠে। কিন্তু তত দিনে দেশে গ্যাসের চাহিদা দাঁড়ায় দৈনিক ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।
এরপর আর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন বাড়েনি। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তেমন কোনো উদ্যোগও বাস্তবায়িত হয়নি। পাশাপাশি দেশের ক্ষেত্রগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে আসা (রিজার্ভার প্রেশার) এবং আরও কিছু কারিগরি কারণে উৎপাদন কমেছে এবং কমছে। ফলে গ্যাসের সরবরাহ-ঘাটতি ক্রমাগতভাবে বেড়েছে।
এই ঘাটতি পূরণে সরকার দেশের গ্যাস আহরণ বৃদ্ধির পথে না গিয়ে ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে। ফলে গ্যাসের দাম বাড়তে থাকে, যা উৎপাদন খাতের জন্য বাড়তি ব্যয়ের বোঝা সৃষ্টি করে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না; বরং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিঘ্নিত করার পথ তৈরি হয়ে যায়।
দেশে এখন গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ ২৯০ কোটি ঘনফুটের মতো। এই ঘাটতির একটা কারণ রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন-ন্যাটো জোটের যুদ্ধজনিত বিশ্ববাজারে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। তবে আমাদের জ্বালানি ঘাটতির সবচেয়ে বড় কারণ এটি নয়। ওই যুদ্ধ না হলেও আমাদের গ্যাসের চাহিদা এমনই হতো। কিন্তু দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুটের বেশি এলএনজি আমদানির সক্ষমতা হতো না। আর দেশের ক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন কমার হারও এমনই থাকত।
আমাদের গ্যাস-সংকটের প্রধান কারণ ধারাবাহিকভাবে দেশের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে মনোযোগ না দেওয়া। সরকার খাদের কিনারা থেকে বিদ্যুৎ খাতকে যেভাবে তুলে এনেছে, গ্যাস খাতের উন্নয়নে তেমনটি করা হয়নি। সংকট তীব্র হওয়ার পর ২০২২ সালের শেষভাগে সরকার দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দৈনিক প্রায় ৬২ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করে।
যদি ধরে নিই যে এর পুরোটাই পাওয়া যাবে, বিশ্ববাজার স্বাভাবিক হবে এবং আমরা দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট করে এলএনজি আনব, তাহলেও ঘাটতি পূরণ হবে না। কারণ এই সময় বিদ্যমান কূপগুলোর উৎপাদন কমবে। ২০২৫ সালে আমাদের মোট গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা হতে পারে ৪০০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু তখন দৈনিক চাহিদা হবে অন্তত ৪৫০ কোটি ঘনফুট। এই ঘাটতি পূরণে আরও সময় লাগবে এবং ঘাটতি পূরণ হতে হতে আরও চাহিদা বাড়বে। ঘাটতিও চলতে থাকবে। এই দুষ্টচক্র থেকে শিগগিরই পরিত্রাণের সম্ভাবনা নেই।
নীতিনির্ধারকেরা বলে থাকেন যে দেশে আর বেশি গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ ক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি অ্যাসেসমেন্টের কথা উল্লেখ করতে পারি। যেমন ইউএসজিএস এবং পেট্রোবাংলার যৌথ উদ্যোগে ২০০০ সালে করা সমীক্ষা; নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডিরেক্টরেট এবং হাইড্রোকার্বন ইউনিটের ২০০১ সালের যৌথ সমীক্ষা এবং ২০১৭ সালে গুস্তাভসন অ্যাসোসিয়েটসের সমীক্ষা; ইউরোপীয় তেল-গ্যাস পরামর্শক প্রতিষ্ঠান-র্যাম্বলের সমীক্ষা।
এর প্রতিটিতে অনেক গ্যাস পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সরকার বিদ্যুৎ খাত মহাপরিকল্পনায় (২০১৭) উল্লেখ করেছে, ইউএসজিএস-পেট্রোবাংলা সমীক্ষা (২০০১) হলো পদ্ধতিগত বিস্তৃত একটি অধ্যয়ন, যা বাংলাদেশের অনাবিষ্কৃত গ্যাস সম্পদের সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের জন্য প্রথম দিকের এবং সর্বোত্তম অধ্যয়নের প্রতিনিধিত্ব করে। (The USGS-Petrobangla study (2001) is a systematic extensive study that represents the earlyest and best study to assess the Bangladesh’s undiscovered gas resource potential.) ফরাসি প্রতিষ্ঠান স্লামবার্জার একটি সমীক্ষায় বলেছে, বিদ্যমান ক্ষেত্রগুলোর পুরোনো কূপগুলোয় কিছু সংস্কারকাজ করে সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে দৈনিক ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো যায়। সর্বশেষ নরওয়েভিত্তিক বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি ইকুইনরের (সাবেক স্টেট অয়েল) সঙ্গে বাংলাদেশ মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি একটি গবেষণা করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর গবেষণা তহবিলের অর্থায়নে করা এই গবেষণা বলছে, উত্তোলন বন্ধ করে রাখা ৩০টি কূপ থেকে সেকেন্ডারি রিকভারি প্রযুক্তির মাধ্যমে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস তোলা সম্ভব।
দেশের বেঙ্গল বেসিনে গ্যাস পাওয়ার অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। সুরমা বেসিনে অনেক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র পড়ে আছে। বিদ্যমান একাধিক ক্ষেত্রে গভীরতর কূপ খনন করে (ডিপার জোন এক্সপ্লোরেশন, ৫ হাজার মিটার+) বিপুল গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্রবক্ষ ছাড়াই এতগুলো বিকল্প উৎস বিদ্যমান। দরকার অনুসন্ধান ও আহরণ বাড়ানো।
গ্যাস অনুসন্ধানে টাকার অভাবের কথা বলা হয়। প্রশ্ন হলো, জ্বালানি আমদানির ব্যয় মেটানোর মতো অঢেল টাকা (বৈদেশিক মুদ্রা) কি আমাদের আছে? তা ছাড়া, গ্যাস অনুসন্ধানে অর্থ সংস্থানের জন্য ২০০৮-০৯ সালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নামে পৃথক একটি তহবিল গঠন করে রেখেছে। সেই তহবিল অন্যত্র ব্যবহার করা হচ্ছে কেন?
প্রাকৃতিক গ্যাসের আরেকটি রূপ এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস)। এর চাহিদাও এখন দেশে বছরে ৩০ লাখ টন ছাড়িয়েছে। এর শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি আমদানি করতে হয়। ফলে এর সঙ্গেও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
কয়লার বিষয়টিও চমকপ্রদ। দেশে আবিষ্কৃত ৫টি কয়লাখনিতে ৭০০ কোটি (৭ হাজার মিলিয়ন) টন উন্নত মানের কয়লার মজুত রয়েছে।অথচ আমরা কয়লাভিত্তিক সবগুলো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র করছি আমদানি করা কয়লায়। কয়লা উত্তোলনের সঙ্গে পরিবেশ এবং অতি উর্বর ফসলি জমি রক্ষার বিষয়টি জড়িত ঠিকই। কিন্তু এর গ্রহণযোগ্য সমাধান খতিয়ে দেখা সম্ভব।
টেকসই উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য নবায়নযোগ্য খাতও এখন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের এ খাতটিও স্থবির। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থাপিত ক্ষমতার ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। ২০২২ সাল পর্যন্ত হয়েছে ৪ শতাংশের মতো।
টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশের জ্বালানি খাতের বর্তমান অবস্থা এবং আমদানিনির্ভরতার প্রবণতা মোটেই সহায়ক নয়। উন্নয়ন স্থিতিশীল করতে হলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে দেশের জ্বালানি সম্পদ আহরণ বাড়ানোর বিকল্প নেই।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
অরুণ কর্মকার

জ্বালানি নিরাপত্তা টেকসই উন্নয়নের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বাংলাদেশ এখন একটি উচ্চমাত্রার জ্বালানি চাহিদাসম্পন্ন দেশ। দেড় দশকের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বড় বড় অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং হচ্ছে। ফলে জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে এবং ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। কিন্তু এই চাহিদা মেটানোর মতো সরবরাহ সক্ষমতা তৈরি হয়নি।
কিন্তু বাংলাদেশ জ্বালানি সম্পদহীন কোনো দেশ নয়। সমৃদ্ধ দেশের কাতারে না পড়লেও উল্লেখযোগ্য জ্বালানি সম্পদ এ দেশে রয়েছে।পৃথিবী বিখ্যাত বিদেশি ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীরা বারবার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সমীক্ষার ভিত্তিতে এ কথা বলেছেন এবং বলে চলেছেন।
তা সত্ত্বেও দেশীয় জ্বালানি সম্পদের অনুসন্ধান, আহরণ ও ব্যবহার সীমিতই রয়ে গেছে। বাড়ছে আমদানিনির্ভরতা। ফলে জ্বালানি নিরাপত্তা পরিস্থিতি যথেষ্ট নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছে। উন্নয়নের গতি-প্রকৃতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।
জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লা আমাদের দেশের প্রধান তিনটি বাণিজ্যিক জ্বালানি। চাহিদার তুলনায় এই তিন ধরনের জ্বালানি পণ্যেরই ঘাটতি ও সংকটের কথা সবার জানা। চলমান এই সংকট ইতিমধ্যে দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে বড় ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। উন্নয়নের ধারাকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। জ্বালানি তেল আমাদের দেশে নেই। পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। এ ক্ষেত্রে আমরা সব সময়ই আমদানিনির্ভর। কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার বিষয়টি ভিন্ন।
অনেক আগে থেকেই দেশে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ-ঘাটতি চলে এসেছে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের সময় দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট, যার সবটুকুই ছিল দেশের। তবে তখনকার চাহিদার তুলনায় তা ছিল কম। সরকার তখন গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়। ফলে ২০১২-১৩ সালনাগাদ গ্যাস উত্তোলন দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে ওঠে। কিন্তু তত দিনে দেশে গ্যাসের চাহিদা দাঁড়ায় দৈনিক ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।
এরপর আর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন বাড়েনি। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তেমন কোনো উদ্যোগও বাস্তবায়িত হয়নি। পাশাপাশি দেশের ক্ষেত্রগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে আসা (রিজার্ভার প্রেশার) এবং আরও কিছু কারিগরি কারণে উৎপাদন কমেছে এবং কমছে। ফলে গ্যাসের সরবরাহ-ঘাটতি ক্রমাগতভাবে বেড়েছে।
এই ঘাটতি পূরণে সরকার দেশের গ্যাস আহরণ বৃদ্ধির পথে না গিয়ে ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে। ফলে গ্যাসের দাম বাড়তে থাকে, যা উৎপাদন খাতের জন্য বাড়তি ব্যয়ের বোঝা সৃষ্টি করে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না; বরং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিঘ্নিত করার পথ তৈরি হয়ে যায়।
দেশে এখন গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ ২৯০ কোটি ঘনফুটের মতো। এই ঘাটতির একটা কারণ রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন-ন্যাটো জোটের যুদ্ধজনিত বিশ্ববাজারে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। তবে আমাদের জ্বালানি ঘাটতির সবচেয়ে বড় কারণ এটি নয়। ওই যুদ্ধ না হলেও আমাদের গ্যাসের চাহিদা এমনই হতো। কিন্তু দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুটের বেশি এলএনজি আমদানির সক্ষমতা হতো না। আর দেশের ক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন কমার হারও এমনই থাকত।
আমাদের গ্যাস-সংকটের প্রধান কারণ ধারাবাহিকভাবে দেশের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে মনোযোগ না দেওয়া। সরকার খাদের কিনারা থেকে বিদ্যুৎ খাতকে যেভাবে তুলে এনেছে, গ্যাস খাতের উন্নয়নে তেমনটি করা হয়নি। সংকট তীব্র হওয়ার পর ২০২২ সালের শেষভাগে সরকার দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দৈনিক প্রায় ৬২ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করে।
যদি ধরে নিই যে এর পুরোটাই পাওয়া যাবে, বিশ্ববাজার স্বাভাবিক হবে এবং আমরা দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট করে এলএনজি আনব, তাহলেও ঘাটতি পূরণ হবে না। কারণ এই সময় বিদ্যমান কূপগুলোর উৎপাদন কমবে। ২০২৫ সালে আমাদের মোট গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা হতে পারে ৪০০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু তখন দৈনিক চাহিদা হবে অন্তত ৪৫০ কোটি ঘনফুট। এই ঘাটতি পূরণে আরও সময় লাগবে এবং ঘাটতি পূরণ হতে হতে আরও চাহিদা বাড়বে। ঘাটতিও চলতে থাকবে। এই দুষ্টচক্র থেকে শিগগিরই পরিত্রাণের সম্ভাবনা নেই।
নীতিনির্ধারকেরা বলে থাকেন যে দেশে আর বেশি গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ ক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি অ্যাসেসমেন্টের কথা উল্লেখ করতে পারি। যেমন ইউএসজিএস এবং পেট্রোবাংলার যৌথ উদ্যোগে ২০০০ সালে করা সমীক্ষা; নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডিরেক্টরেট এবং হাইড্রোকার্বন ইউনিটের ২০০১ সালের যৌথ সমীক্ষা এবং ২০১৭ সালে গুস্তাভসন অ্যাসোসিয়েটসের সমীক্ষা; ইউরোপীয় তেল-গ্যাস পরামর্শক প্রতিষ্ঠান-র্যাম্বলের সমীক্ষা।
এর প্রতিটিতে অনেক গ্যাস পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সরকার বিদ্যুৎ খাত মহাপরিকল্পনায় (২০১৭) উল্লেখ করেছে, ইউএসজিএস-পেট্রোবাংলা সমীক্ষা (২০০১) হলো পদ্ধতিগত বিস্তৃত একটি অধ্যয়ন, যা বাংলাদেশের অনাবিষ্কৃত গ্যাস সম্পদের সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের জন্য প্রথম দিকের এবং সর্বোত্তম অধ্যয়নের প্রতিনিধিত্ব করে। (The USGS-Petrobangla study (2001) is a systematic extensive study that represents the earlyest and best study to assess the Bangladesh’s undiscovered gas resource potential.) ফরাসি প্রতিষ্ঠান স্লামবার্জার একটি সমীক্ষায় বলেছে, বিদ্যমান ক্ষেত্রগুলোর পুরোনো কূপগুলোয় কিছু সংস্কারকাজ করে সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে দৈনিক ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো যায়। সর্বশেষ নরওয়েভিত্তিক বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি ইকুইনরের (সাবেক স্টেট অয়েল) সঙ্গে বাংলাদেশ মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি একটি গবেষণা করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর গবেষণা তহবিলের অর্থায়নে করা এই গবেষণা বলছে, উত্তোলন বন্ধ করে রাখা ৩০টি কূপ থেকে সেকেন্ডারি রিকভারি প্রযুক্তির মাধ্যমে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস তোলা সম্ভব।
দেশের বেঙ্গল বেসিনে গ্যাস পাওয়ার অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। সুরমা বেসিনে অনেক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র পড়ে আছে। বিদ্যমান একাধিক ক্ষেত্রে গভীরতর কূপ খনন করে (ডিপার জোন এক্সপ্লোরেশন, ৫ হাজার মিটার+) বিপুল গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্রবক্ষ ছাড়াই এতগুলো বিকল্প উৎস বিদ্যমান। দরকার অনুসন্ধান ও আহরণ বাড়ানো।
গ্যাস অনুসন্ধানে টাকার অভাবের কথা বলা হয়। প্রশ্ন হলো, জ্বালানি আমদানির ব্যয় মেটানোর মতো অঢেল টাকা (বৈদেশিক মুদ্রা) কি আমাদের আছে? তা ছাড়া, গ্যাস অনুসন্ধানে অর্থ সংস্থানের জন্য ২০০৮-০৯ সালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নামে পৃথক একটি তহবিল গঠন করে রেখেছে। সেই তহবিল অন্যত্র ব্যবহার করা হচ্ছে কেন?
প্রাকৃতিক গ্যাসের আরেকটি রূপ এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস)। এর চাহিদাও এখন দেশে বছরে ৩০ লাখ টন ছাড়িয়েছে। এর শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি আমদানি করতে হয়। ফলে এর সঙ্গেও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
কয়লার বিষয়টিও চমকপ্রদ। দেশে আবিষ্কৃত ৫টি কয়লাখনিতে ৭০০ কোটি (৭ হাজার মিলিয়ন) টন উন্নত মানের কয়লার মজুত রয়েছে।অথচ আমরা কয়লাভিত্তিক সবগুলো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র করছি আমদানি করা কয়লায়। কয়লা উত্তোলনের সঙ্গে পরিবেশ এবং অতি উর্বর ফসলি জমি রক্ষার বিষয়টি জড়িত ঠিকই। কিন্তু এর গ্রহণযোগ্য সমাধান খতিয়ে দেখা সম্ভব।
টেকসই উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য নবায়নযোগ্য খাতও এখন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের এ খাতটিও স্থবির। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থাপিত ক্ষমতার ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। ২০২২ সাল পর্যন্ত হয়েছে ৪ শতাংশের মতো।
টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশের জ্বালানি খাতের বর্তমান অবস্থা এবং আমদানিনির্ভরতার প্রবণতা মোটেই সহায়ক নয়। উন্নয়ন স্থিতিশীল করতে হলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে দেশের জ্বালানি সম্পদ আহরণ বাড়ানোর বিকল্প নেই।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

জ্বালানি নিরাপত্তা টেকসই উন্নয়নের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বাংলাদেশ এখন একটি উচ্চমাত্রার জ্বালানি চাহিদাসম্পন্ন দেশ। দেড় দশকের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বড় বড় অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং হচ্ছে। ফলে জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে এবং ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। কিন্তু এই চাহিদা মেটানোর মতো সরবরাহ সক্ষমতা তৈরি হয়নি।
কিন্তু বাংলাদেশ জ্বালানি সম্পদহীন কোনো দেশ নয়। সমৃদ্ধ দেশের কাতারে না পড়লেও উল্লেখযোগ্য জ্বালানি সম্পদ এ দেশে রয়েছে।পৃথিবী বিখ্যাত বিদেশি ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীরা বারবার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সমীক্ষার ভিত্তিতে এ কথা বলেছেন এবং বলে চলেছেন।
তা সত্ত্বেও দেশীয় জ্বালানি সম্পদের অনুসন্ধান, আহরণ ও ব্যবহার সীমিতই রয়ে গেছে। বাড়ছে আমদানিনির্ভরতা। ফলে জ্বালানি নিরাপত্তা পরিস্থিতি যথেষ্ট নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছে। উন্নয়নের গতি-প্রকৃতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।
জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লা আমাদের দেশের প্রধান তিনটি বাণিজ্যিক জ্বালানি। চাহিদার তুলনায় এই তিন ধরনের জ্বালানি পণ্যেরই ঘাটতি ও সংকটের কথা সবার জানা। চলমান এই সংকট ইতিমধ্যে দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে বড় ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। উন্নয়নের ধারাকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। জ্বালানি তেল আমাদের দেশে নেই। পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। এ ক্ষেত্রে আমরা সব সময়ই আমদানিনির্ভর। কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার বিষয়টি ভিন্ন।
অনেক আগে থেকেই দেশে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ-ঘাটতি চলে এসেছে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের সময় দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট, যার সবটুকুই ছিল দেশের। তবে তখনকার চাহিদার তুলনায় তা ছিল কম। সরকার তখন গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়। ফলে ২০১২-১৩ সালনাগাদ গ্যাস উত্তোলন দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে ওঠে। কিন্তু তত দিনে দেশে গ্যাসের চাহিদা দাঁড়ায় দৈনিক ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।
এরপর আর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন বাড়েনি। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তেমন কোনো উদ্যোগও বাস্তবায়িত হয়নি। পাশাপাশি দেশের ক্ষেত্রগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে আসা (রিজার্ভার প্রেশার) এবং আরও কিছু কারিগরি কারণে উৎপাদন কমেছে এবং কমছে। ফলে গ্যাসের সরবরাহ-ঘাটতি ক্রমাগতভাবে বেড়েছে।
এই ঘাটতি পূরণে সরকার দেশের গ্যাস আহরণ বৃদ্ধির পথে না গিয়ে ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে। ফলে গ্যাসের দাম বাড়তে থাকে, যা উৎপাদন খাতের জন্য বাড়তি ব্যয়ের বোঝা সৃষ্টি করে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না; বরং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিঘ্নিত করার পথ তৈরি হয়ে যায়।
দেশে এখন গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ ২৯০ কোটি ঘনফুটের মতো। এই ঘাটতির একটা কারণ রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন-ন্যাটো জোটের যুদ্ধজনিত বিশ্ববাজারে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। তবে আমাদের জ্বালানি ঘাটতির সবচেয়ে বড় কারণ এটি নয়। ওই যুদ্ধ না হলেও আমাদের গ্যাসের চাহিদা এমনই হতো। কিন্তু দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুটের বেশি এলএনজি আমদানির সক্ষমতা হতো না। আর দেশের ক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন কমার হারও এমনই থাকত।
আমাদের গ্যাস-সংকটের প্রধান কারণ ধারাবাহিকভাবে দেশের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে মনোযোগ না দেওয়া। সরকার খাদের কিনারা থেকে বিদ্যুৎ খাতকে যেভাবে তুলে এনেছে, গ্যাস খাতের উন্নয়নে তেমনটি করা হয়নি। সংকট তীব্র হওয়ার পর ২০২২ সালের শেষভাগে সরকার দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দৈনিক প্রায় ৬২ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করে।
যদি ধরে নিই যে এর পুরোটাই পাওয়া যাবে, বিশ্ববাজার স্বাভাবিক হবে এবং আমরা দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট করে এলএনজি আনব, তাহলেও ঘাটতি পূরণ হবে না। কারণ এই সময় বিদ্যমান কূপগুলোর উৎপাদন কমবে। ২০২৫ সালে আমাদের মোট গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা হতে পারে ৪০০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু তখন দৈনিক চাহিদা হবে অন্তত ৪৫০ কোটি ঘনফুট। এই ঘাটতি পূরণে আরও সময় লাগবে এবং ঘাটতি পূরণ হতে হতে আরও চাহিদা বাড়বে। ঘাটতিও চলতে থাকবে। এই দুষ্টচক্র থেকে শিগগিরই পরিত্রাণের সম্ভাবনা নেই।
নীতিনির্ধারকেরা বলে থাকেন যে দেশে আর বেশি গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ ক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি অ্যাসেসমেন্টের কথা উল্লেখ করতে পারি। যেমন ইউএসজিএস এবং পেট্রোবাংলার যৌথ উদ্যোগে ২০০০ সালে করা সমীক্ষা; নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডিরেক্টরেট এবং হাইড্রোকার্বন ইউনিটের ২০০১ সালের যৌথ সমীক্ষা এবং ২০১৭ সালে গুস্তাভসন অ্যাসোসিয়েটসের সমীক্ষা; ইউরোপীয় তেল-গ্যাস পরামর্শক প্রতিষ্ঠান-র্যাম্বলের সমীক্ষা।
এর প্রতিটিতে অনেক গ্যাস পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সরকার বিদ্যুৎ খাত মহাপরিকল্পনায় (২০১৭) উল্লেখ করেছে, ইউএসজিএস-পেট্রোবাংলা সমীক্ষা (২০০১) হলো পদ্ধতিগত বিস্তৃত একটি অধ্যয়ন, যা বাংলাদেশের অনাবিষ্কৃত গ্যাস সম্পদের সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের জন্য প্রথম দিকের এবং সর্বোত্তম অধ্যয়নের প্রতিনিধিত্ব করে। (The USGS-Petrobangla study (2001) is a systematic extensive study that represents the earlyest and best study to assess the Bangladesh’s undiscovered gas resource potential.) ফরাসি প্রতিষ্ঠান স্লামবার্জার একটি সমীক্ষায় বলেছে, বিদ্যমান ক্ষেত্রগুলোর পুরোনো কূপগুলোয় কিছু সংস্কারকাজ করে সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে দৈনিক ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো যায়। সর্বশেষ নরওয়েভিত্তিক বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি ইকুইনরের (সাবেক স্টেট অয়েল) সঙ্গে বাংলাদেশ মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি একটি গবেষণা করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর গবেষণা তহবিলের অর্থায়নে করা এই গবেষণা বলছে, উত্তোলন বন্ধ করে রাখা ৩০টি কূপ থেকে সেকেন্ডারি রিকভারি প্রযুক্তির মাধ্যমে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস তোলা সম্ভব।
দেশের বেঙ্গল বেসিনে গ্যাস পাওয়ার অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। সুরমা বেসিনে অনেক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র পড়ে আছে। বিদ্যমান একাধিক ক্ষেত্রে গভীরতর কূপ খনন করে (ডিপার জোন এক্সপ্লোরেশন, ৫ হাজার মিটার+) বিপুল গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্রবক্ষ ছাড়াই এতগুলো বিকল্প উৎস বিদ্যমান। দরকার অনুসন্ধান ও আহরণ বাড়ানো।
গ্যাস অনুসন্ধানে টাকার অভাবের কথা বলা হয়। প্রশ্ন হলো, জ্বালানি আমদানির ব্যয় মেটানোর মতো অঢেল টাকা (বৈদেশিক মুদ্রা) কি আমাদের আছে? তা ছাড়া, গ্যাস অনুসন্ধানে অর্থ সংস্থানের জন্য ২০০৮-০৯ সালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নামে পৃথক একটি তহবিল গঠন করে রেখেছে। সেই তহবিল অন্যত্র ব্যবহার করা হচ্ছে কেন?
প্রাকৃতিক গ্যাসের আরেকটি রূপ এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস)। এর চাহিদাও এখন দেশে বছরে ৩০ লাখ টন ছাড়িয়েছে। এর শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি আমদানি করতে হয়। ফলে এর সঙ্গেও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
কয়লার বিষয়টিও চমকপ্রদ। দেশে আবিষ্কৃত ৫টি কয়লাখনিতে ৭০০ কোটি (৭ হাজার মিলিয়ন) টন উন্নত মানের কয়লার মজুত রয়েছে।অথচ আমরা কয়লাভিত্তিক সবগুলো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র করছি আমদানি করা কয়লায়। কয়লা উত্তোলনের সঙ্গে পরিবেশ এবং অতি উর্বর ফসলি জমি রক্ষার বিষয়টি জড়িত ঠিকই। কিন্তু এর গ্রহণযোগ্য সমাধান খতিয়ে দেখা সম্ভব।
টেকসই উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য নবায়নযোগ্য খাতও এখন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের এ খাতটিও স্থবির। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থাপিত ক্ষমতার ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। ২০২২ সাল পর্যন্ত হয়েছে ৪ শতাংশের মতো।
টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশের জ্বালানি খাতের বর্তমান অবস্থা এবং আমদানিনির্ভরতার প্রবণতা মোটেই সহায়ক নয়। উন্নয়ন স্থিতিশীল করতে হলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে দেশের জ্বালানি সম্পদ আহরণ বাড়ানোর বিকল্প নেই।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

জ্বালানি নিরাপত্তা টেকসই উন্নয়নের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বাংলাদেশ এখন একটি উচ্চমাত্রার জ্বালানি চাহিদাসম্পন্ন দেশ। দেড় দশকের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

জ্বালানি নিরাপত্তা টেকসই উন্নয়নের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বাংলাদেশ এখন একটি উচ্চমাত্রার জ্বালানি চাহিদাসম্পন্ন দেশ। দেড় দশকের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

জ্বালানি নিরাপত্তা টেকসই উন্নয়নের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বাংলাদেশ এখন একটি উচ্চমাত্রার জ্বালানি চাহিদাসম্পন্ন দেশ। দেড় দশকের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

জ্বালানি নিরাপত্তা টেকসই উন্নয়নের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বাংলাদেশ এখন একটি উচ্চমাত্রার জ্বালানি চাহিদাসম্পন্ন দেশ। দেড় দশকের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫