Ajker Patrika

কুল চাষে সচ্ছল শরিফুল

এস এস শোহান, বাগেরহাট
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ০৬
কুল চাষে সচ্ছল শরিফুল

বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার ছোট খাচনা গ্রামের বাসিন্দা শিকদার শরিফুল ইসলাম (৫০)। পাঁচ বছর আগেও নিজের জমিজমা দেখাশোনা ছাড়া কোনো কাজ ছিল না তাঁর। কিন্তু পরিত্যক্ত জমিতে আপেল কুলের বাগান করে এখন তাঁর বাৎসরিক আয় পাঁচ লাখ টাকা। কুল বিক্রির টাকায় সচ্ছলতা ফিরেছে তাঁর সংসারে।

শরিফুলের প্রতিবেশী শেখ এনছান উদ্দিনও বছরে কয়েক লাখ টাকা আয় করেন কুল বিক্রি করে। শুধু শরিফুল ও এনছান উদ্দিন নন, বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলায় শতাধিক চাষি বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ করছেন। স্বল্প সময় অল্প যত্নে অধিক লাভ হওয়ায় কুল চাষে ঝুঁকছেন জেলার চাষিরা।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর বাগেরহাটে ৩২৭ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৯৬ মেট্রিকটন। ভবিষ্যতে উৎপাদন ও কুল আবাদের জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।

সফল কুলচাষি শিকদার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবেশী শেখ এনছান উদ্দিনের বাগান দেখে সখের বশে ২০১৭ সালে ৫২ শতক জমিতে আপেল কুলের বাগান করি। ৭০ হাজার টাকা বিনিয়োগের কুলবাগানে মাত্র দুই বছরেই কয়েক লাখ টাকা লাভ হয়। এর পর থেকে চাষ সম্প্রসারণ শুরু করি। মাত্র তিন বছর পরে ২০২০ সালে চার একর জমিতে কুল চাষ করি। ওই বছরই দুই লাখ টাকা লাভ হয় আমার। এরপরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।’

শরিফুল আরও বলেন, ‘গত বছর চার একর বাগানের ৩০০ গাছ থেকে ৬ লক্ষাধিক টাকার কুল বিক্রি করি। এ বছরও ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার কুল বিক্রি হবে আমার। ইতিমধ্যে প্রায় চার লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছি। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কুল বিক্রি করা যায়।’

শরিফুল আরও বলেন, ‘গাছ থেকে কুল তোলা, বাছা ও বাজারজাতকরণের জন্য আমার সঙ্গে নিয়মিত আরও তিনজন শ্রমিক কাজ করে। এই কুল চাষ করে যে শুধু আমার সচ্ছলতা এসেছে তা নয়, আমার খেতে কাজ করে তিন শ্রমিকের জীবনে সচ্ছলতা এসেছে।’

শরিফুলের প্রতিবেশী নুর আলম, যাবের শিকদার, রুহুল আমিনসহ কয়েকজন বলেন, ‘শরিফুলের বাগানটি দেখে আমাদের খুব ভালো লাগে। অন্যান্য জায়গা থেকেও বাগান দেখতে আসে বিভিন্ন লোকজন।’

নতুন চাষিদের উদ্দেশে শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন চাষিদের জন্য সব থেকে প্রথম যে বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেটা হচ্ছে কুলের জাত বিবেচনা। বাণিজ্যিকভাবে অনেক কুলের চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে তাঁর নিজ এলাকার বাজারে যে জাতের কুলের সর্বাধিক চাহিদা রয়েছে এবং ফলন বেশি সেই কুল চাষ করা ভালো। তবে আমার ধারণা আপেল কুলে লাভ বেশি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপপরিচালক কৃষিবিদ আজিজুর রহমান বলেন, মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এসব কুলের চাহিদা অনেক বেশি। বর্তমানে জেলায় অনেক চাষি কুল চাষ শুরু করেছেন। আমরাও কুল চাষিদের সবধরণের কারিগরি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি ভবিষ্যতে আরও বেশি চাষিরা কুল চাষ শুরু করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত