Ajker Patrika

অগ্নিকাণ্ড বেড়ে দ্বিগুণ

আক্তার হোসেন, দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি)
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২২, ১৩: ২৪
Thumbnail image

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় বেড়েছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। গত বছর উপজেলায় অন্তত ৪০টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। শর্টসার্কিট, গ্যাস সিলিন্ডার ও রান্নাঘর থেকে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে চলতি বছরের ৬৫ দিনেই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ৬টি। সর্বশেষ গত শুক্রবার উপজেলার মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমলগীর হোসেনের (৫২) বসতঘর পুড়ে গেছে। পাহাড়ের ওপরের ওই বাড়ির আশপাশে পানির কোনো উৎস না থাকায় সবার চোখের সামনেই পুড়ে যায় ঘরটি, কিন্তু কারও কিছু করার ছিল না।

দীঘিনালার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে উপজেলায় ২০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে শর্টসার্কিটের মাধ্যমে ৬টি, রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার থেকে ১টি ও রান্নাঘরের চুলাসহ অন্যান্য উপায়ে ১৪ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদ। তবে ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতায় রক্ষা পেয়েছে ৬৮ লাখ টাকার সম্পদ।

এদিকে পরের বছর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে দ্বিগুণ আকার ধারণ করেছে। ২০২১ সালে উপজেলায় অগ্নিকাণ্ড হয়েছে ৪০টি। এতে শর্টসার্কিট থেকে ১৪টি, রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার থেকে ২টি এবং অন্যান্য উপায়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ২০টি। এসব অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি হয়েছ ১৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকার সম্পদ। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৯৬ লাখ ১০ হাজার টাকার সম্পদ রক্ষা করেন।

এদিকে চলতি বছরে ৬৫ দিনেই অগ্নিকাণ্ড হয়েছে ৬টি। এর মধ্যে শর্টসার্কিট থেকে ৪ স্থানে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। অন্যান্য উপায়ে ২টি ঘটনা ঘটেছে। হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে যাওয়া উদ্বিগ্ন উপজেলাবাসী। এসব অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলা পূর্ব প্রস্তুতি ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে প্রশাসনের উদ্যোগ আশা করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা রেড ক্রিসেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘আমাদের স্বেচ্ছাসেবক যুব রেড ক্রিসেন্ট সদস্যরা প্রশিক্ষিত। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণ মহড়ায় অংশ নিয়েছেন। তাঁরা মানুষের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণের সতর্কতা উৎসাহ করছেন।’

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কমিয়ে আনার প্রসঙ্গে জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘বসতঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতের উন্নতমানের তার ব্যবহার করে সংযোগ নিতে হবে। তা ছাড়া লাইসেন্সবিহীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রিয় বন্ধ করতে হবে, নয়তো তাদের লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুরক্ষিত স্থানে গ্যাসের সিলিন্ডার সরবরাহ করতে হবে।’

পাহাড়ে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সম্পর্কে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে আইনের মাধ্যমে তা প্রয়োগ করতে হবে। উপজেলার সরু সড়কগুলো প্রশস্ত করতে হবে। যেহেতু পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সড়কগুলো অত্যন্ত সরু, তাই বড় গাড়ির পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের ছোট গাড়ি প্রয়োজন।’

দীঘিনালা ফায়ার স্টেশন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরে নবী জানান, মানুষের অসতর্কতায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটছে। নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করে সংযোগ নেওয়ার ফলে শর্টসার্কিটে অগ্নিকাণ্ড হচ্ছে। গ্যাস সিলিন্ডার যত্রতত্র ব্যবহার হচ্ছে, সুরক্ষিত স্থানে সংরক্ষণও করা হচ্ছে না। এতেও দুর্ঘটনা ঘটছে।

অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ সম্পর্কে ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু পাহাড় এলাকা সব জায়গায় পানির উৎস থাকে না, তাই প্রতিটি বসতঘরের জন্য নিজেদের প্রচেষ্টায় ৫ থেকে ৬ হাজার লিটার পানি সংগ্রহ করতে হবে। উপজেলার প্রতিটি বাজারেও পানি মজুত করে রাখা দরকার।

ফায়ার স্টেশন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরে নবী বলেন, ‘আগুনের সূত্র হলে, প্রায়ই সময়ে ফায়ার স্টেশনকে কল না দিয়ে ৯৯৯-এ কল করা হয়। যাঁরা কল করেন তাঁরা অনেক সময় তথ্য বিভ্রান্তিও করে থাকেন। এর কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সময় বেশি লেগে যায়। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি বেশি হয়। আমাদের প্রতিটি অগ্নিনির্বাপণ মহড়ায় মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি ও ফায়ার স্টেশন নম্বর পৌঁছে দিয়ে থাকি। যেকোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দীঘিনালা ফায়ার স্টেশন সেবা দিয়ে থাকে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত