Ajker Patrika

ভবন নির্মাণে ভেজালের প্রমাণ পেল কমিটি

চৌগাছা প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২২, ১২: ৪৬
Thumbnail image

২১ কোটি ৫৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যয়ে যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার তথ্য গত রোববার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির মাসিক সভায় উপস্থাপন করা হয়।

অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করতে নতুন ভবন নির্মাণের কাজটি পায় এমসিএল-এসএইই কনসোর্টিয়াম নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর নানা জটিলতা শেষে প্রথমে ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল এবং পরে একই বছরের ২৯ আগস্ট ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এর বরাদ্দ ধরা হয় ২১ কোটি ৫৭ লাখ ২৯ হাজার ৮০৪ টাকা।

নির্মাণকাজের শুরু থেকে নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। এর মধ্যে রয়েছে নিম্ন মানের ইট, নিম্ন মানের বালু, স্বল্প গ্রেডের রড, নিম্ন মানের পাথর ব্যবহার এবং ইটের গাঁথুনি ও ঢালাইয়ের পর পানি দিয়ে না ভেজানো, ঢালাইয়ের পরও ঢালাইয়ের মধ্যের রড, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাঠ বের হয়ে থাকাসহ নানা অভিযোগ ওঠে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের যোগসাজশ রয়েছে বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ তোলেন।

ওই অভিযোগের সূত্র ধরে গত ৩০ জুন অনুষ্ঠিত চৌগাছা উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন সিংহঝুলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মল্লিক। সভায় বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা শেষে চৌগাছা উপজেলা প্রকৌশলী রিয়াসাত ইমতিয়াজকে আহ্বায়ক করে সিংহঝুলী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মল্লিক এবং ধুলিয়ানী ইউপি চেয়ারম্যান এস এম মোমিনুর রহমানকে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ঘটনাস্থলে গিয়ে ভবন নির্মাণে অনিয়মের সত্যতা পায়।

কমিটির সদস্যরা গত রোববার অনুষ্ঠিত উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন বলে তথ্য উপস্থাপন করেন।

অনিয়মের খবর পেয়ে ওই দিনই আজকের পত্রিকা প্রতিনিধিসহ কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থালে যান। এ সময় স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর যশোরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো আরিফ এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি প্রকৌশলী ইমরানকে সেখানে উপস্থিত পাওয়া যায়।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ইমরান প্রথমে বলেন, ‘আমরা ভালো ইট দিয়েই গাঁথুনি করছি।’ পরে খারাপ ইট দেখিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আমরা দেড় নম্বর ইট দিয়ে গাঁথুনি করছি।’

ঘটনাস্থলে থাকা স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফ বলেন, ‘আগে যে খারাপ ইট আনা হয়েছিল, সেগুলো গাঁথা হয়ে গেছে। ওগুলো তো কিছু করার নেই। নতুন করে তাঁদের ভালো ইট আনার জন্য বলা হয়েছে।’

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোছা. লুৎফুন্নাহার বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার ভালো মানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার জন্য তাগাদা দিয়েছি, কিন্তু তারা আমলে নিচ্ছেন না। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিংহঝুলী ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি উত্থাপন করেন। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি নিম্নমানের মালামাল দিয়ে কাজ করার সত্যতা পেয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার রেজুলেশন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত