Ajker Patrika

শালগ্রামের নবান্ন

আরমান হোসেন, বগুড়া থেকে ফিরে
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১০: ০৩
শালগ্রামের নবান্ন

নবান্ন উৎসবের সঙ্গে আমাদের পরিচয় সেই আবহমানকাল ধরে। বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ কি আর এমনিতেই বলা হয়? নবান্ন থেকে পয়লা বৈশাখ—বাংলার উৎসবের যেন শেষ নেই। গ্রামবাংলার সেই পুরোনো উৎসব দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার একটি গ্রাম—শালগ্রাম। অগ্রহায়ণের প্রথম দিনকে ঘিরে এই গ্রামে এত সব আয়োজন হয়, যা দেখলে চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যাবে যে কারও। ঘরে ঘরে আমন ধান ওঠার পর থেকেই শালগ্রামে শুরু হয় নবান্নের প্রস্তুতি। এখানকার এই উৎসব আজকালের নয়, রীতিমতো শতাব্দীপ্রাচীন।

প্রায় সাত হাজার মানুষের বাস গ্রামটিতে। মানুষে-মানুষে এখনো আত্মিক সম্পর্ক টিকে আছে। নবান্ন এলে যেন উৎসব শুরু হয় ঘরে ঘরে। আত্মীয়স্বজনের আগমনে উৎসব হয়ে ওঠে মিলনমেলায়। কোনো কোনো বাড়িতে তো আত্মীয়দের আসা শুরু হয় আরও দিন দুয়েক আগে থেকে। সব মিলিয়ে নবান্নের দিন এই গ্রামের পুরো ছবি বদলে যায়। বাড়ি বাড়ি উৎসবের আমেজ। পাড়া-মহল্লার মোড়ে মোড়ে বসে বিভিন্ন খাবারের দোকান। দিনব্যাপী চলে নানা আয়োজন।

নবান্নের দিন নতুন চালের ভাত আর মহিষের মাংস খাওয়া শালগ্রামের পুরোনো রীতি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবান্ন উপলক্ষে শালগ্রামে এবার শুধু মহিষই জবাই হয়েছে ৮টি। বিশালাকৃতির এই মহিষগুলোর দাম গড়ে ২ লাখ টাকারও বেশি। পাশাপাশি জবাই হয়েছে ১২টি গরু। গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায় এবার গত সপ্তাহের সোমবার রাত থেকে নবান্নের আয়োজন শুরু হয়ে যায়। গত বুধবার পর্যন্ত চলে এ আয়োজন।

মহিষের মাংসের সঙ্গে নবান্নের দিনে এই গ্রামের আরেকটি বিশেষায়িত খাবার আটাগোলা শিরনি। কলা, গুড় আর আটার সমন্বয়ে তৈরি হয় এ খাবার। সঙ্গে পিঠা-পুলি, ক্ষীর পায়েস আর নাড়ুর আয়োজন তো আছেই। শুধুই কি খাবারের এলাহি আয়োজন? মোটেও নয়।

নবান্ন উপলক্ষে খুব সকাল থেকে গ্রামের প্রতিটি পাড়ায় শিশু-কিশোরদের নিয়ে গ্রাম্য বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন হয়। আর রাতে কোথাও বাউল গান, কোথাও যাত্রাপালা, কোথাও-বা লোকজ সংস্কৃতির আসর বসে। কোনো প্রান্তে আবার আধুনিক বাংলা গানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়ে এসব অনুষ্ঠান চলে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত।

স্থানীয় তরুণ সাজিদ হাসান বলেন, ‘দুই ঈদ মিলিয়ে যে আয়োজন হয় না, এক নবান্নে সেই আয়োজন হয় শালগ্রামে।’

শালগ্রামে এ উৎসব দিন দিন যেন আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠছে। তবে এর শুরুটা কীভাবে? গ্রামের প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরাও ঠিক নিশ্চিত নন, ঠিক কবে থেকে এখানে এমন উৎসবমুখর আয়োজনের মধ্য দিয়ে নবান্ন উৎসব হচ্ছে। তাঁরা বলেছেন, তাঁদের বাবা-দাদারাও এমন আয়োজন করেছেন।

৭০ বছর বয়সী একরামুল হক বলেন, ‘আমি সেই ছোট থেকে দেখে আসছি, এমন উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই এ গ্রামে নবান্ন হয়। তবে আগে আয়োজনের ধরনটা এমন ছিল না। তখন বাড়ি বাড়ি আত্মীয়স্বজনের বেড়াতে আসা আর নতুন চালের ভাতের সঙ্গে মাংসের ভোজ দিয়েই নবান্ন পালন করা হতো। ধীরে ধীরে আয়োজনে বৈচিত্র্য বেড়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ৪ বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর যা বলল ইইউ

আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না, বিস্ফোরক তামিম

কাগজে-কলমে মেয়র হওয়ায় দায়িত্ব পালন করলাম: জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শন শেষে ইশরাক

এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণায় বিএনপি ও জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত