Ajker Patrika

টাকা ফেরত চান বিনিয়োগকারীরা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫: ০৩
Thumbnail image

কেমিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড নামে এক ওষুধ কোম্পানিতে ‘ডাক্তার বিনিয়োগ স্কিমে’ বিনিয়োগ করে লভ্যাংশ ও টাকা ফেরত না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, মানিকগঞ্জের অন্তত ৭৫ ব্যক্তি অন্তত ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন ওই স্কিমে।

গতকাল বুধবার মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ওই স্কিমে বিনিয়োগকারী শিক্ষক, চিকিৎসক, চিকিৎসক সহকারী ও ফার্মেসি মালিকেরা।

তবে এ বিষয়ে কেমিকো ফার্মাসিউটিক্যালসের পক্ষে এক কর্মকর্মা বলেছেন, করোনার কারণে কিছুটা সসম্যা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ জেলা কার্যালয় থেকে উপপরিচালক হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক রঞ্জিত কুমার মন্ডল। তিনি বলেন, ‘ডাক্তার বিনিয়োগ স্কিমে’ সারা দেশের মতো মানিকগঞ্জের ৭০ থেকে ৭৫ জন চিকিৎসক, চিকিৎসা সহকারী এবং ওষুধ ব্যবসায়ী ২০০৩ সাল থেকে শুরু করে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। শুরুতে ১৭ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে প্রতি লাখে এক হাজার ৬৬৭ টাকা হারে দেওয়া হতো। কিন্তু ২০১৭ সালে এই লভ্যাংশ কমিয়ে ১৩ শতাংশ করা হয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত লভ্যাংশ পেলেও এর পর থেকে কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো লভ্যাংশ দেওয়া হচ্ছে না।

তাঁর দাবি, গত দুই বছর লভ্যাংশ না পেয়ে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে ঘোরাঘুরি করেও কোনো লাভ হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে কয়েকজন বিনিয়োগকারী লভ্যাংশসহ বিনিয়োগকৃত টাকা ফিরে পেতে লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ডা. রঞ্জিত মন্ডল ২০০৩ সালে এক লাখ, ২০০৪ সালে এক লাখ, ২০০৫ সালে এক লাখ এবং ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালে ২৬ লাখ মিলে মোট ৩০ লাখ বিনিয়োগ করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ডাক্তার বিকাশ চন্দ্র তরফদার এবং তাঁর স্ত্রী ডাক্তার কনক প্রভা আদিত্য ৩০ লাখ করে মোট ৬০ লাখ টাকা, ডাক্তার নরেন্দ্র কুমার রায় ৩০ লাখ টাকা, ডাক্তার মো. ওসমান গণি ১৪ লাখ, চিকিৎসা সহকারী কমল কৃষ্ণ সাহা ৭ লাখ, খুকু রানী সান্যাল ৬ লাখ, তোফায়েল হোসেন ৩ লাখ, আব্দুল মোন্নাফ মিয়া ২ লাখ এবং ওষুধ ব্যবসায়ী পংকজ কান্তি সাহা ৭ লাখসহ মানিকগঞ্জের ৭৫ জন প্রায় ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন।

ডা. রঞ্জিত মন্ডল আরও বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানি হিসেবে এই কোম্পানির সুনাম রয়েছে। ওষুধের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী কোম্পানির পক্ষ থেকে বাজারে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া ওই কোম্পানির রয়েছে আরও সাতটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান।’

কেমিকো কোম্পানিতে বিনিয়োগকারী মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার ওসমান গনি জানান, সহকর্মীদের বিনিয়োগ দেখে ওই কোম্পানিতে মোট ১৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়। বিনিয়োগের লভ্যাংশ বন্ধ করে দেওয়ার পর ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি বিনিয়োগের ১৪ লাখ টাকা উত্তোলনের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় তারিখ দিয়ে ঘুরাতে থাকে। পরে বাধ্য হয়ে তিনি চলতি বছর গত ১৪ মার্চ বিনিয়োগের টাকা ফেরতে দাবিতে মানিকগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে মামলা করেছেন। ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মোহাম্মদ এন কে আসাদ, প্রধান হিসাব রক্ষক মো. ইসমাইল হোসেন, মাঠ ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন ও মেডিকেল প্রতিনিধি আ. রশিদকে।

কেমিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কোম্পানির জোনাল ম্যানেজার আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, ‘করোনার সময়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সঠিকভাবে উৎপাদন না হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় চলে এসেছে। কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকের লভ্যাংশ ৬ মাস থেকে ১ বছর বকেয়া রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত