Ajker Patrika

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি কি সম্ভব

এ কে এম শামসুদ্দিন
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি কি সম্ভব

ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার পর অনেকেই অনুমান করছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার পথ বোধ হয় খুলে গেল। এমন অনুমান করার কারণও আছে। কিছুদিন ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে যে ইতিবাচক কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে মানুষের মনে এমন অনুমান হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সর্বশেষ যে খবর পাওয়া গেছে, তাতে এ বিষয়ে আমাদের কিছুটা আশান্বিত করে বৈকি! আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন।

তিনি হংকংভিত্তিক সংবাদপত্র মর্নিং পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। জেলেনস্কি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের আশাও ব্যক্ত করেছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার চেষ্টাও নাকি করেছেন। দুর্ভাগ্যক্রমে সেটি নাকি আর হয়ে ওঠেনি। জেলেনস্কি মনে করেন, চীন খুব শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র। একই সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবেও চীন শক্তিশালী। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের গভীর সম্পর্কও আছে। অতএব চলমান যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার ওপর তাদের অতিমাত্রায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব কাজে লাগানোর জন্য চীনের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। অপরদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডার গত সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে দেখা করে এসে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ক্রেমলিন সমঝোতার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান চায়, এটা একটা সুখবর। এ ক্ষেত্রে শস্য রপ্তানি চুক্তি প্রাথমিক সফলতা হয়তো শিগগিরই এটি যুদ্ধবিরতিতে গড়াতে পারে।’

প্রশ্ন হচ্ছে দীর্ঘ পাঁচ মাস যুদ্ধ পার হওয়ার পর জেলেনস্কির এই উপলব্ধি কেন হলো? যুদ্ধ শুরুর পর ‘তিনি চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করে সুযোগ পাননি’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁর এ বক্তব্য নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ জাগতেই পারে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জেলেনস্কি ইউরোপ-আমেরিকার বহু দেশের পার্লামেন্টে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়েছেন, সে খবর যদি পশ্চিমা প্রভাবিত বহু সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হতে পারে; তাহলে তিনি এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন—সে খবর বিশ্ব মিডিয়ায় একবারের জন্যও প্রকাশিত হলো না; তা বিশ্বাস করতে খটকা লাগে কি? জেলেনস্কির প্রকাশ্যে দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য ও মনোভাব বিশ্লেষণ করলে এবং যুদ্ধের পরপর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের সঙ্গে ইউক্রেনের যে গভীর যোগাযোগ চলছিল, সে কথা বিবেচনা করলে সহজে উপসংহারে আসা যায় যে ওই মুহূর্তে জেলেনস্কি পশ্চিমাদের খেপিয়ে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, সে অবস্থানে তিনি তখন ছিলেন না।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বিভিন্ন মিডিয়ার এযাবৎ যেসব বক্তব্য রেখেছেন, তা নিয়েও কিন্তু বিভ্রান্তি আছে। গত ২২ জুলাই মার্কিন গণমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে যে কয়টি অঞ্চল হারিয়েছে, সেসব অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগে কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতির প্রশ্নই আসে না। তিনি যোগ করেন, ‘হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার না করে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কেবল যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করবে। আমরা বিশ্বাস করি, আগে রাশিয়ার কাছে হারানো অঞ্চল মুক্ত করতে হবে। তারপর ঠিক করব কীভাবে আগামী দিনে আমরা বাঁচতে পারি।’ এখানে আরও একটি প্রশ্ন থেকে যায়। জেলেনস্কি যে যুদ্ধবিরতি বন্ধে চীনের কাছে সাহায্য চেয়েছেন, তা কি কোনো শর্তযুক্ত? রাশিয়াকে কি দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে? চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যদি জেলেনস্কির সরাসরি কথা বলার সুযোগ হয়, তাহলে তিনি কি তাঁর এই দাবির কথা উল্লেখ করেই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার জন্য অনুরোধ করবেন? মর্নিং পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি অবশ্য তা স্পষ্ট করেননি।

এ কে এম শামসুদ্দিনবাস্তব চিত্র হলো, পাঁচ মাসেরও অধিক সময় রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে ইউক্রেন বর্তমানে এমন এক অবস্থানে চলে এসেছে যে আগামী দিনগুলোতে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে আরও কঠিন হয়ে পড়বে। রাশিয়া এযাবৎ ইউক্রেনের ২ হাজার ৬১০টি শহর দখল করে নিয়েছে। তারা দনবাসে তাদের অবস্থান সুসংহত করে ফেলেছে। শুধু তা-ই নয়, সেখানকার শহরগুলোর পুনর্গঠনের সুবিধার্থে রাশিয়ার বিভিন্ন স্থানীয় সরকারকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে পাঁচ মাসের যুদ্ধে ইউক্রেন বাহিনীর সামনের সারির প্রায় ৮০ শতাংশ যোদ্ধা নিহত ও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইউক্রেন বাহিনীর অবস্থা এমন হয়ে পড়েছে যে নতুন করে সৈনিক রিক্রুট করে তাদের জনবল বৃদ্ধি করার সুযোগও কমে এসেছে। শুরুর দিকে ইউক্রেনের যুবকেরা অস্ত্র হাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন বলে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখিয়েছিলেন, সেই উৎসাহে এখন ভাটা পড়েছে।

বর্তমানে ওই সব যুবকের মধ্যে সামরিক বাহিনীতে যোগদানের উৎসাহ কম দেখা যাচ্ছে। তাঁদের অনেকেই দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। নতুন কিছু সৈনিক রিক্রুট করা হলেও তাদের স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে মূল যোদ্ধাদের মতো দক্ষ করে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। অতএব যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দেওয়া ভারী অস্ত্রের যতই সাহায্য আসুক না কেন, এসব অস্ত্র পরিচালনা করার মতো দক্ষ জনবলের ঘাটতি সম্ভবত রয়েই যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম বা ‘হিমার্স’ ব্যবহার করে এত দিন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল ইউক্রেন; সম্প্রতি রাশিয়া সেসব উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র বোমা মেরে ধ্বংস করে দিয়েছে। হিমার্স ছিল ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী অস্ত্র। যদিও পেন্টগন রাশিয়ার এ দাবি সত্য নয় বলে বিবৃতি দিয়েছে, তবে ইউক্রেন এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। এত দিন রাশিয়ার যুদ্ধের সাফল্যের অনেক দাবিই ইউক্রেন সরাসরি অস্বীকার করলেও হিমার্স ধ্বংসের ব্যাপারে নীরব থাকায় বোঝা যাচ্ছে, রাশিয়ার দাবিটি অমূলক নয়। হিমার্স যে গুদামে রাখা হয়েছিল, সেই গুদাম বোমা মেরে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে রাশিয়া দাবি করেছে।

রাশিয়া ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ায় পুতিনের ঘনিষ্ঠ শ্রোয়েডার পাঁচ মাসের অধিক সময় ধরে চলা সংঘর্ষকে যুদ্ধবিরতির দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন। ৩ আগস্ট লুক্সেমবার্গভিত্তিক আরটিএল টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ আশা ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি তিনি যখন পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখন উপলব্ধি করেছেন যে মস্কো সমঝোতার মাধ্যমে চলমান সমস্যার সমাধান চায়। এখানে বলে রাখা ভালো, গত ২২ জুলাই তুরস্কের মধ্যস্থতায় জাতিসংঘের উপস্থিতিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে খাদ্যশস্য পরিবহনের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির পর ইউক্রেনের ওদেসাবন্দর থেকে ২৬ হাজার টনের বেশি ভুট্টা নিয়ে প্রথম জাহাজ ১ আগস্ট লেবাননের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এখন থেকে ইউক্রেনের চেকনোমোরস্ক, ওদেসা ও পিভদেন্নি বন্দর থেকে প্রতিদিন খাদ্যশস্যবাহী তিনটি করে জাহাজ ছেড়ে যাবে। ভালো খবর হলো, চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই বিশ্ববাজারে গমের দাম কমতে শুরু করেছে। বিশ্বে মোট গম রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশই রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে হয়ে থাকে।

যুদ্ধবিরতির বিষয়ে শ্রোয়েডারের পর্যবেক্ষণ একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তিনি বলেছেন, মস্কো ‘সমঝোতা’র মাধ্যমে চলমান সমস্যার সমাধান চায়। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে রাশিয়ার জনবল ও সামরিক সরঞ্জামাদিও কম খরচ হয়নি। রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো আছে, তা বলা যাবে না। কাজেই রাশিয়া যুদ্ধবিরতির পক্ষে মত দেবে, সেটা অস্বাভাবিক নয়। প্রশ্ন উঠতেই পারে, মস্কো এখানে সমঝোতা বলতে কী বুঝিয়েছে? ইউক্রেনের ব্যাপারে রাশিয়ার আগে যে কতগুলো শর্ত ছিল, সেগুলো থেকে কি তারা সরে আসবে? শর্তগুলো ছিল: এক. ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য হওয়া থেকে সরে আসতে হবে। দুই. দোনেস্ক ও লুহানস্কর স্বাধীনতাকে স্বীকার করে নিতে হবে। তিন. ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ করা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো চার. ইউক্রেন সরকারের পরিবর্তন।

এখানে বলা ভালো, গত ২৪ জুলাই মিসরে এক কূটনৈতিক সফরে গিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এক বক্তব্যে আবারও বলেছেন, ‘ইউক্রেনের ইতিহাসবিরোধী সরকারের হাত থেকে নিজেদের মুক্ত করতে দেশটির জনগণকে আমরা অবশ্যই সহায়তা করব। এ জন্য ইউক্রেনে সরকার পরিবর্তন চায় মস্কো। রাশিয়া ও ইউক্রেনের জনগণ ভবিষ্যতে “একসঙ্গে” বসবাস করবে।’ প্রশ্ন হচ্ছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির পক্ষে কি ৪ নম্বর শর্ত মানা সম্ভব? তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, রাশিয়া ২ ও ৪ নম্বর শর্ত ছেড়ে দিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে আপস-মীমাংসায় গেল। ইউক্রেনও তা মেনে নিল। তারপরও কি জেলেনস্কির পক্ষে সম্ভব হবে মস্কোর সঙ্গে আপস করে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়া? তিনি কি পারবেন এত দিন যে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা আনুমানিক প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার সামরিক সাহায্য দিয়ে রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে এসেছে, তাদের উপেক্ষা করতে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বিশ্বরাজনীতি ও যুদ্ধের বর্তমান বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলা যায়, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শিগগিরই যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত