Ajker Patrika

ব্যাংক কর্মকর্তার জালিয়াতি

সম্পাদকীয়
ব্যাংক কর্মকর্তার জালিয়াতি

জালিয়াতি করা, প্রতারণা করা কিংবা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অন্যকে ঠকিয়ে নিজে লাভবান হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। দিনে দিনে এসব প্রবণতা বাড়ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা শোনা গেলেও এর লাগাম টেনে ধরার খবর খুব একটা চোখে পড়ে না। কত উপায়ে যে একজনকে ঠকিয়ে অন্যজন আখের গুছিয়ে নিচ্ছে, তার সব বৃত্তান্তও সবার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে যে সৃজনশীলতার পরিচয় কেউ কেউ দিয়ে থাকেন, তা প্রশংসা করার মতো হলেও আমাদের নিন্দা করতে হচ্ছে, কারণ কাজটি খারাপ।

বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকায় ‘গ্রাহকের ৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ’ শিরোনামে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, জালিয়াতির মাধ্যমে চার প্রতিষ্ঠান ও দুই ব্যক্তি গ্রাহকের প্রায় ৬ কোটি টাকা অন্য একটি হিসাবে (অ্যাকাউন্ট) সরিয়ে আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা। অভিনব এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে অগ্রণী ব্যাংকের আগ্রাবাদ করপোরেট শাখায়। এ ঘটনায় সম্প্রতি চট্টগ্রাম আদালতে একটি মামলা হয়েছে। 

অভিযুক্ত ওই ব্যাংক কর্মকর্তার নাম মো. রফিক উদ্দিন কোরাইশী। তিনি অগ্রণী ব্যাংকের আগ্রাবাদ করপোরেট শাখার জুনিয়র অফিসার ছিলেন। জুনিয়র অফিসার হলেও ছিলেন বেশ প্রভাবশালী। ঊর্ধ্বতনদের সুনজরে থাকা কোরাইশী বসতেন ডিজিএমের কাছের চেয়ারে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁকে লালদীঘি করপোরেট শাখায় বদলি করা হলেও সেই শাখায় যাননি এক দিনও। উল্টো প্রভাব খাটিয়ে পাঁচ দিনের মাথায় বদলির আদেশ বাতিল করিয়েছেন। 

অগ্রণী ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকের গ্রাহকদের চেক ক্লিয়ারিংয়ের দায়িত্ব পালন করতেন কোরাইশী। এ সময় তিনি ভাউচার পরিবর্তন করে মো. সুমন মিয়া নামে ভুয়া একটি হিসাব খোলেন। সুযোগ বুঝে সেই হিসাবে জমা করতেন গ্রাহকের টাকা। পরে তা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করতেন। এই প্রক্রিয়ায় চার প্রতিষ্ঠান ও দুই ব্যক্তির ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা ‘সুমন মিয়া’ নামের ভুয়া অ্যাকাউন্টে সরিয়েছেন তিনি। 

অগ্রণী ব্যাংকের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ করপোরেট শাখার ব্যবস্থাপক ও ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কে এম সাহেদ আমিন হোসাইন বলেন, ব্যাংকের টাকা উদ্ধারে আত্মসাৎকারী মো. রফিক উদ্দিন কোরাইশীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম দ্বিতীয় যুগ্ম জজ আদালতে একটি মানি স্যুট মামলা আছে। এ ছাড়া দুদকও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। 

রক্ষক যদি ভক্ষক হয়, তাহলে এর চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারে! মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে। ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা না থাকলে কেউ টাকা জমা রাখার কথা ভাবত না। একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার অভিযোগ এখন পুরোনো হয়ে গেছে। এখন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও উঠছে জালিয়াতির অভিযোগ। এ ধরনের কর্মকর্তাদের সংখ্যাও যদি ঋণখেলাপিদের মতো বাড়তে থাকে, তাহলে মানুষ ব্যাংকের ওপর আস্থা রাখবে কোন ভরসায়?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত