Ajker Patrika

আগাম বর্ষায় স্বপ্ন নষ্ট চাষির

নুরুল আমীন রবীন, শরীয়তপুর
আপডেট : ২২ জুন ২০২২, ১৩: ৩৭
Thumbnail image

চলতি বছর নিচু জমিতে আগাম বর্ষার পানি চলে আসায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন শরীয়তপুরের পাটচাষিরা। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পরিপক্ব হওয়ার আগেই নিচু জমি থেকে পাট কাটতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। ফলে পাটের স্বাভাবিক ফলন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন জেলার চাষিরা। এতে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ২৭ হাজার ৬২৮ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে এটি ছাড়িয়ে ২৯ হাজার ৫৬০ হেক্টরে আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে দেশি ২ হাজার ৯৮০, তোষা ২০ হাজার ৫১০, মেস্তা ১ হাজার ৯৫০ ও ৪ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে কেনাফ জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে দেশি ছাড়া সব জাতের পাটই তলিয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পদ্মার সুরেশ্বর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পাটের স্বাভাবিক ফলন পেতে হলে পাট বপনের পর ১০০ থেকে ১১০ দিন প্রয়োজন। তবে আগাম বন্যার পানি চলে আসায় ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে নিচু জমিতে আবাদ করা পাট কাটতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। জেলায় আবাদ করা জমিতে পাটের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৬ হাজার ৫০৮ মেট্রিক টন। বিঘাপ্রতি পাট চাষে খরচ হয় ১৮-২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় গড়ে ৮-১০ মণ পাটের ফলন হয়। স্থানীয় বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হয় ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা। এ বছর আগাম বর্ষার পানি চলে আসায় নিচু জমিতে আবাদ করা পাট ক্ষতির মুখে পড়েছে।

শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীর পার্শ্ববর্তী নিচু জমিতে বর্ষার পানি ঢুকেছে। এর মধ্যেই পাট কাটছেন কৃষক। পানির নিচে তলিয়ে থাকায় সময় বেশি লাগছে। তাই জমিতে পানি প্রবেশের আগেই আগাম পাট কাটার চেষ্টা করছেন অনেক চাষি। অসময়ে পাট কাটতে গিয়ে অনেক এলাকার চাষি পড়েছেন শ্রমিক-সংকটে। অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে পাট কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।

জাজিরা উপজেলার বড় গোপালপুর এলাকায় পাটচাষি মো. সেরাজুল মাদবর বলেন, ‘বিঘাপ্রতি প্রায় ১৮ হাজার টাকা খরচ করে ৪ বিঘা জমিতে পাট লাগাইছি। অহন পানি আইয়া সব পাট তলাইয়া যাইতাছে। কয় দিন পর এই পাট আর কাটতে পারমু না। পাট কাডোনের সময় হয় নাই, তারপরও পাট কাইটটা হালাইতাছি। অহন না কাটলে বেবাক পাটই নষ্ট হইয়া যাইব। পাট লাগানোর সময়ও বৃষ্টি কম হইছিল, তাই ফলনও কিছুটা খারাপ হইছে।’

নড়িয়া এলাকার কৃষক দবির খালাসী জানান, বর্তমানে পাট লম্বায় খুবই ছোট। পাটগুলো পরিপক্ব ও লম্বা হতে কমপক্ষে আরও ২০ দিন সময় লাগত। এরপর কোষ গঠনে সময় লাগত আরও ১৫ দিন। কিন্তু খেতে পানি চলে আসায় কেটে ফেলতে হচ্ছে। শ্রমিক-সংকট থাকায় খরচও হচ্ছে বেশি। যে পাট কেটে ঘরে তোলা হচ্ছে, তা বিক্রি করে খরচের টাকাও উঠবে না। বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।

জাজিরার বড়কান্দি ইউনিয়নের রাসেল জমাদ্দার বলেন, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে পাট চাষে খরচ হয়েছে বেশি। তারপর আবার আগাম বর্ষার পানি চলে আসছে খেতে। তাই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক গোলাম রাসুল বলেন, ‘আমাদের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র রয়েছে। মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এ সময় মাঠে থেকে কৃষককে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতির মাধ্যমে তাঁদের আপডেট তথ্য দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষকদের নিচু জমির পাট কেটে ফেলতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমনের বীজতলা কিছুটা বিলম্বে তৈরি করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

গোলাম রাসুল আরও বলেন, সাধারণত পাটের স্বাভাবিক বৃদ্ধি পেতে যে সময় লাগে, এ বছর বৃষ্টি দেরিতে হওয়ায় এবং আগাম বর্ষার পানি চলে আসায় সমস্যা হয়েছে। তবে উঁচু জমি এবং যাঁরা জমিতে সেচ দিয়েছেন, তাঁদের মোটামুটি ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত