জমির উদ্দিন, কক্সবাজার থেকে
৩৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, একটি কক্ষের এক কোনায় মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে চোখ বাঁধা এক ব্যক্তি। পাশেই জবুথবু হয়ে বসে আছেন আরও দুজন। তাঁদের চোখও কাপড়ে বাঁধা, হাতকড়া পরানো। যে কক্ষের কথা বলা হচ্ছে, সেটি কোনো টর্চার সেল নয়, টেকনাফ থানার ওসি ওসমান গনির অফিসকক্ষ।
২০২০ সালের জুলাই মাসে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর দেশব্যাপী তুমুল আলোচনায় উঠে আসে টেকনাফ থানা-পুলিশের কার্যক্রম। মাঝে কিছুদিন সেখানে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড কমে এলেও এখন আবার পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, টেকনাফ থানায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওর চোখ বাঁধা ওই তিন ব্যক্তিকে গত ২২ এপ্রিল সোমবার রাত ২টায় থানায় ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেন। পরদিন সকালে ওসির কক্ষে এনে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চোখ বেঁধে ফেলে রাখা হয়। পরে এক মাস আগের একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয় তাঁদের। ওই তিন ব্যক্তির দুজন হলেন মো. আব্দুর রহিম (১৯) ও আব্দুল আমিন (১৬)। সম্পর্কে তাঁরা আপন ভাই। অন্যজন ওমর ফারুক (২৪)। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। গত বুধবার তাঁদের কক্সবাজার আদালতে তোলা হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় কারাগারে।
ওমর ফারুকের বাড়ি টেকনাফের অলিয়াবাদ এলাকায়। গ্রেপ্তারের আগে তিনি কক্সবাজার সদরের নাজিরারটেক এলাকায় থাকতেন। তিনিসহ তিনজনকে মোস্তাক আহমেদ নামের এক টমটম-চালককে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে টেকনাফ থানা-পুলিশ। গত ৬ মার্চ টেকনাফের অলিয়াবাদে খুন হয়েছিলেন মোস্তাক।
তবে ওমর ফারুকের স্ত্রী নুসরাত বেগম আজকের পত্রিকার কাছে দাবি করেন, তাঁর স্বামী কাউকে খুন করতে পারেন না। আব্দুল আমিনের স্ত্রী শারমিন আক্তারের দাবি, টমটমচালক নিখোঁজের দিন আব্দুল আমিন বাড়ি থেকে বের হননি। কারণ, তিনি অসুস্থ ছিলেন।
গ্রেপ্তার হওয়া ওই তিনজনের পরিবারের সদস্যরা জানান, সোমবার রাতে হঠাৎ পুলিশ এসে তাঁদের ধরে নিয়ে যায়। পরে রাতে ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। টাকা না দেওয়ায় বেধড়ক মারধর করা হয়। রাতভর চোখ, হাত-পা বেঁধে ওসির কক্ষেই ফেলে রাখা হয়।
থানার পাশে টর্চার সেল
টেকনাফ থানার পাশে ডিএসবি অফিস। এর পাশে একতলা একটি ভবন। সেখানে একটি কক্ষে থাকেন থানার উপপরিদর্শক মো. সোহেল। তাঁর কক্ষের পাশে আছে একটি টর্চাল সেল। অভিযোগ আছে, ওসির নির্দেশে সেখানে আটক ব্যক্তিদের নির্যাতন করেন উপপরিদর্শক সোহেলসহ আরও কয়েকজন। নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে নিরপরাধ ব্যক্তি যেমন আছেন, তেমনি ইয়াবা ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। ওসি ওসমান গনি এই থানায় যোগ দেওয়ার পর থেকে ৫ মাসে ২৫ জনকে এই টর্চার সেলে নির্যাতনের তথ্য পাওয়া গেছে।
নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উপপরিদর্শক মো. সোহেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি কক্ষ আছে। আসামিদের ধরে এনে এখানে জিজ্ঞাসাবাদ করি। যাঁরা মারধর বা নির্যাতন করেছি বলেছেন, তাঁরা আমাকে বিপদে ফেলার জন্য বলেছেন। আর আমি পুলিশ। সবাইকে তো সন্তুষ্ট করতে পারব না।’
একই প্রশ্নের জবাবে ওসি ওসমান গণিও সবকিছু অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার কক্ষে নির্যাতনের বিষয়টি জানা নেই।’ এই প্রতিবেদকের কাছে ছবি ও ভিডিও আছে মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমার খোঁজ নিতে হবে।’ থানার উপপরিদর্শক সোহেলের টর্চার সেলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে তথ্য দেন। ব্যবস্থা নেব। ওইখানে ওই রকম টর্চার সেল নেই।’
ওসি ওসমান গণি ও উপপরিদর্শক সোহেল থানায় নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও নির্যাতনের শিকার এমন একজনের সঙ্গে কথা হয়েছে আজকের পত্রিকার। তাঁর বাড়ি টেকনাফের সাবরাংয়ে। ওই ব্যক্তি বলেন, থানায় একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়। বলা হয়, টাকা না দিলে অপহরণসহ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করবেন। পরে নিয়মিত টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে ছেড়ে দেয়।
টেকনাফের শাপলা চত্বর এলাকার এক মুদিদোকানি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে থানার পুলিশ এসে হুমকি দিয়ে গেছে মাসিক চাঁদা দিতে। আমি নাকি ইয়াবা ব্যবসা করি।’
অপরাধের স্বর্গরাজ্য টেকনাফ
মিয়ানমার সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় আগে থেকেই অপরাধপ্রবণ এলাকা টেকনাফ। মাদক ও পণ্য চোরাচালান এখানকার অপরাধীদের মূল কারবার। তবে এখন যুক্ত হয়েছে অপহরণ ও মুক্তিপণ-বাণিজ্য। রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে খুন-অপহরণ চরম আকার ধারণ করেছে সেখানে। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২০ জনকে অপহরণ করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৬২ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। ভুক্তভোগী পরিবারের তথ্যমতে, অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫৩ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার উখিয়া উপজেলার পল্লিচিকিৎসক মো. জহির উদ্দিন (৫১) ও মোহাম্মদ রফিক (৩২) অপহৃত হন। যদিও মুক্তিপণ ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা ছাড়া পেয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত বছর অপহরণের পর মুক্তিপণ দিতে না পারায় টমটম ও সিএনজিচালক এবং কক্সবাজার থেকে টেকনাফে বেড়াতে আসা তিন যুবকসহ মোট পাঁচজনকে দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।
অপহরণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শাকিল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অপহরণের বেশির ভাগই মাদকসংক্রান্ত। কিছু হয় জেনুইন অপহরণ। আমরা এই বিষয়ে কাজ করছি। আমাদের কাছে গত বছরের মার্চ থেকে এই বছরের মার্চ পর্যন্ত ৬২ জন অপহরণের তথ্য আছে।’
পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া টর্চার সেলসহ অন্যান্য অভিযোগ আমরা তদন্ত করব। ইতিমধ্যে এসপি স্যারকে বলেছি। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। দেশবিরোধী কাজ করলে সে যে-ই হোক, আমরা ব্যবস্থা নেব।’
৬ পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে নিত্যপণ্য পাচার
টেকনাফ দিয়ে মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, চিনি ও শুঁটকি। আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে পাওয়া খাদ্য সহায়তা (রেশন) রোহিঙ্গারা সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সেনা ও আরাকান আর্মির সদস্যদের কাছে পাচার করছে। বিনিময়ে তারা মাদকদ্রব্য আনছে বলে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়।
আজকের পত্রিকার সরেজমিন অনুসন্ধানে টেকনাফের ৬টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে পণ্য পাচারের তথ্য মিলেছে। পয়েন্টগুলো হলো শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া ঘাট, পশ্চিম পাড়া ঘাট, সাবরাং জিরো পয়েন্ট, মহেশখালিয়া পাড়া, বাহারছড়া ঘাট ও কচ্চিপ পাড়া ঘাট। গত বুধবার বিকেলে সরেজমিন সাবরাং জিরো পয়েন্ট দিয়ে পণ্য পাচার করতে দেখা গেছে।
সেখানে দেখা যায়, শ্রমিকেরা সারিবদ্ধভাবে কাঁধে করে পণ্য বোটে তুলছেন; বিশেষ করে রাতে ১২টার পর এসব ঘাট দিয়ে পণ্য পাচার করা হয়। এটির সঙ্গে থানা-পুলিশের হাত আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
৩৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, একটি কক্ষের এক কোনায় মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে চোখ বাঁধা এক ব্যক্তি। পাশেই জবুথবু হয়ে বসে আছেন আরও দুজন। তাঁদের চোখও কাপড়ে বাঁধা, হাতকড়া পরানো। যে কক্ষের কথা বলা হচ্ছে, সেটি কোনো টর্চার সেল নয়, টেকনাফ থানার ওসি ওসমান গনির অফিসকক্ষ।
২০২০ সালের জুলাই মাসে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর দেশব্যাপী তুমুল আলোচনায় উঠে আসে টেকনাফ থানা-পুলিশের কার্যক্রম। মাঝে কিছুদিন সেখানে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড কমে এলেও এখন আবার পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, টেকনাফ থানায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওর চোখ বাঁধা ওই তিন ব্যক্তিকে গত ২২ এপ্রিল সোমবার রাত ২টায় থানায় ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেন। পরদিন সকালে ওসির কক্ষে এনে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চোখ বেঁধে ফেলে রাখা হয়। পরে এক মাস আগের একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয় তাঁদের। ওই তিন ব্যক্তির দুজন হলেন মো. আব্দুর রহিম (১৯) ও আব্দুল আমিন (১৬)। সম্পর্কে তাঁরা আপন ভাই। অন্যজন ওমর ফারুক (২৪)। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। গত বুধবার তাঁদের কক্সবাজার আদালতে তোলা হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় কারাগারে।
ওমর ফারুকের বাড়ি টেকনাফের অলিয়াবাদ এলাকায়। গ্রেপ্তারের আগে তিনি কক্সবাজার সদরের নাজিরারটেক এলাকায় থাকতেন। তিনিসহ তিনজনকে মোস্তাক আহমেদ নামের এক টমটম-চালককে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে টেকনাফ থানা-পুলিশ। গত ৬ মার্চ টেকনাফের অলিয়াবাদে খুন হয়েছিলেন মোস্তাক।
তবে ওমর ফারুকের স্ত্রী নুসরাত বেগম আজকের পত্রিকার কাছে দাবি করেন, তাঁর স্বামী কাউকে খুন করতে পারেন না। আব্দুল আমিনের স্ত্রী শারমিন আক্তারের দাবি, টমটমচালক নিখোঁজের দিন আব্দুল আমিন বাড়ি থেকে বের হননি। কারণ, তিনি অসুস্থ ছিলেন।
গ্রেপ্তার হওয়া ওই তিনজনের পরিবারের সদস্যরা জানান, সোমবার রাতে হঠাৎ পুলিশ এসে তাঁদের ধরে নিয়ে যায়। পরে রাতে ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। টাকা না দেওয়ায় বেধড়ক মারধর করা হয়। রাতভর চোখ, হাত-পা বেঁধে ওসির কক্ষেই ফেলে রাখা হয়।
থানার পাশে টর্চার সেল
টেকনাফ থানার পাশে ডিএসবি অফিস। এর পাশে একতলা একটি ভবন। সেখানে একটি কক্ষে থাকেন থানার উপপরিদর্শক মো. সোহেল। তাঁর কক্ষের পাশে আছে একটি টর্চাল সেল। অভিযোগ আছে, ওসির নির্দেশে সেখানে আটক ব্যক্তিদের নির্যাতন করেন উপপরিদর্শক সোহেলসহ আরও কয়েকজন। নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে নিরপরাধ ব্যক্তি যেমন আছেন, তেমনি ইয়াবা ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। ওসি ওসমান গনি এই থানায় যোগ দেওয়ার পর থেকে ৫ মাসে ২৫ জনকে এই টর্চার সেলে নির্যাতনের তথ্য পাওয়া গেছে।
নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উপপরিদর্শক মো. সোহেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি কক্ষ আছে। আসামিদের ধরে এনে এখানে জিজ্ঞাসাবাদ করি। যাঁরা মারধর বা নির্যাতন করেছি বলেছেন, তাঁরা আমাকে বিপদে ফেলার জন্য বলেছেন। আর আমি পুলিশ। সবাইকে তো সন্তুষ্ট করতে পারব না।’
একই প্রশ্নের জবাবে ওসি ওসমান গণিও সবকিছু অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার কক্ষে নির্যাতনের বিষয়টি জানা নেই।’ এই প্রতিবেদকের কাছে ছবি ও ভিডিও আছে মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমার খোঁজ নিতে হবে।’ থানার উপপরিদর্শক সোহেলের টর্চার সেলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে তথ্য দেন। ব্যবস্থা নেব। ওইখানে ওই রকম টর্চার সেল নেই।’
ওসি ওসমান গণি ও উপপরিদর্শক সোহেল থানায় নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও নির্যাতনের শিকার এমন একজনের সঙ্গে কথা হয়েছে আজকের পত্রিকার। তাঁর বাড়ি টেকনাফের সাবরাংয়ে। ওই ব্যক্তি বলেন, থানায় একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়। বলা হয়, টাকা না দিলে অপহরণসহ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করবেন। পরে নিয়মিত টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে ছেড়ে দেয়।
টেকনাফের শাপলা চত্বর এলাকার এক মুদিদোকানি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে থানার পুলিশ এসে হুমকি দিয়ে গেছে মাসিক চাঁদা দিতে। আমি নাকি ইয়াবা ব্যবসা করি।’
অপরাধের স্বর্গরাজ্য টেকনাফ
মিয়ানমার সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় আগে থেকেই অপরাধপ্রবণ এলাকা টেকনাফ। মাদক ও পণ্য চোরাচালান এখানকার অপরাধীদের মূল কারবার। তবে এখন যুক্ত হয়েছে অপহরণ ও মুক্তিপণ-বাণিজ্য। রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে খুন-অপহরণ চরম আকার ধারণ করেছে সেখানে। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২০ জনকে অপহরণ করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৬২ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। ভুক্তভোগী পরিবারের তথ্যমতে, অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫৩ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার উখিয়া উপজেলার পল্লিচিকিৎসক মো. জহির উদ্দিন (৫১) ও মোহাম্মদ রফিক (৩২) অপহৃত হন। যদিও মুক্তিপণ ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা ছাড়া পেয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত বছর অপহরণের পর মুক্তিপণ দিতে না পারায় টমটম ও সিএনজিচালক এবং কক্সবাজার থেকে টেকনাফে বেড়াতে আসা তিন যুবকসহ মোট পাঁচজনকে দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।
অপহরণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শাকিল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অপহরণের বেশির ভাগই মাদকসংক্রান্ত। কিছু হয় জেনুইন অপহরণ। আমরা এই বিষয়ে কাজ করছি। আমাদের কাছে গত বছরের মার্চ থেকে এই বছরের মার্চ পর্যন্ত ৬২ জন অপহরণের তথ্য আছে।’
পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া টর্চার সেলসহ অন্যান্য অভিযোগ আমরা তদন্ত করব। ইতিমধ্যে এসপি স্যারকে বলেছি। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। দেশবিরোধী কাজ করলে সে যে-ই হোক, আমরা ব্যবস্থা নেব।’
৬ পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে নিত্যপণ্য পাচার
টেকনাফ দিয়ে মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, চিনি ও শুঁটকি। আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে পাওয়া খাদ্য সহায়তা (রেশন) রোহিঙ্গারা সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সেনা ও আরাকান আর্মির সদস্যদের কাছে পাচার করছে। বিনিময়ে তারা মাদকদ্রব্য আনছে বলে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়।
আজকের পত্রিকার সরেজমিন অনুসন্ধানে টেকনাফের ৬টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে পণ্য পাচারের তথ্য মিলেছে। পয়েন্টগুলো হলো শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া ঘাট, পশ্চিম পাড়া ঘাট, সাবরাং জিরো পয়েন্ট, মহেশখালিয়া পাড়া, বাহারছড়া ঘাট ও কচ্চিপ পাড়া ঘাট। গত বুধবার বিকেলে সরেজমিন সাবরাং জিরো পয়েন্ট দিয়ে পণ্য পাচার করতে দেখা গেছে।
সেখানে দেখা যায়, শ্রমিকেরা সারিবদ্ধভাবে কাঁধে করে পণ্য বোটে তুলছেন; বিশেষ করে রাতে ১২টার পর এসব ঘাট দিয়ে পণ্য পাচার করা হয়। এটির সঙ্গে থানা-পুলিশের হাত আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জমির উদ্দিন, কক্সবাজার থেকে
৩৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, একটি কক্ষের এক কোনায় মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে চোখ বাঁধা এক ব্যক্তি। পাশেই জবুথবু হয়ে বসে আছেন আরও দুজন। তাঁদের চোখও কাপড়ে বাঁধা, হাতকড়া পরানো। যে কক্ষের কথা বলা হচ্ছে, সেটি কোনো টর্চার সেল নয়, টেকনাফ থানার ওসি ওসমান গনির অফিসকক্ষ।
২০২০ সালের জুলাই মাসে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর দেশব্যাপী তুমুল আলোচনায় উঠে আসে টেকনাফ থানা-পুলিশের কার্যক্রম। মাঝে কিছুদিন সেখানে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড কমে এলেও এখন আবার পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, টেকনাফ থানায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওর চোখ বাঁধা ওই তিন ব্যক্তিকে গত ২২ এপ্রিল সোমবার রাত ২টায় থানায় ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেন। পরদিন সকালে ওসির কক্ষে এনে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চোখ বেঁধে ফেলে রাখা হয়। পরে এক মাস আগের একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয় তাঁদের। ওই তিন ব্যক্তির দুজন হলেন মো. আব্দুর রহিম (১৯) ও আব্দুল আমিন (১৬)। সম্পর্কে তাঁরা আপন ভাই। অন্যজন ওমর ফারুক (২৪)। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। গত বুধবার তাঁদের কক্সবাজার আদালতে তোলা হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় কারাগারে।
ওমর ফারুকের বাড়ি টেকনাফের অলিয়াবাদ এলাকায়। গ্রেপ্তারের আগে তিনি কক্সবাজার সদরের নাজিরারটেক এলাকায় থাকতেন। তিনিসহ তিনজনকে মোস্তাক আহমেদ নামের এক টমটম-চালককে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে টেকনাফ থানা-পুলিশ। গত ৬ মার্চ টেকনাফের অলিয়াবাদে খুন হয়েছিলেন মোস্তাক।
তবে ওমর ফারুকের স্ত্রী নুসরাত বেগম আজকের পত্রিকার কাছে দাবি করেন, তাঁর স্বামী কাউকে খুন করতে পারেন না। আব্দুল আমিনের স্ত্রী শারমিন আক্তারের দাবি, টমটমচালক নিখোঁজের দিন আব্দুল আমিন বাড়ি থেকে বের হননি। কারণ, তিনি অসুস্থ ছিলেন।
গ্রেপ্তার হওয়া ওই তিনজনের পরিবারের সদস্যরা জানান, সোমবার রাতে হঠাৎ পুলিশ এসে তাঁদের ধরে নিয়ে যায়। পরে রাতে ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। টাকা না দেওয়ায় বেধড়ক মারধর করা হয়। রাতভর চোখ, হাত-পা বেঁধে ওসির কক্ষেই ফেলে রাখা হয়।
থানার পাশে টর্চার সেল
টেকনাফ থানার পাশে ডিএসবি অফিস। এর পাশে একতলা একটি ভবন। সেখানে একটি কক্ষে থাকেন থানার উপপরিদর্শক মো. সোহেল। তাঁর কক্ষের পাশে আছে একটি টর্চাল সেল। অভিযোগ আছে, ওসির নির্দেশে সেখানে আটক ব্যক্তিদের নির্যাতন করেন উপপরিদর্শক সোহেলসহ আরও কয়েকজন। নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে নিরপরাধ ব্যক্তি যেমন আছেন, তেমনি ইয়াবা ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। ওসি ওসমান গনি এই থানায় যোগ দেওয়ার পর থেকে ৫ মাসে ২৫ জনকে এই টর্চার সেলে নির্যাতনের তথ্য পাওয়া গেছে।
নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উপপরিদর্শক মো. সোহেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি কক্ষ আছে। আসামিদের ধরে এনে এখানে জিজ্ঞাসাবাদ করি। যাঁরা মারধর বা নির্যাতন করেছি বলেছেন, তাঁরা আমাকে বিপদে ফেলার জন্য বলেছেন। আর আমি পুলিশ। সবাইকে তো সন্তুষ্ট করতে পারব না।’
একই প্রশ্নের জবাবে ওসি ওসমান গণিও সবকিছু অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার কক্ষে নির্যাতনের বিষয়টি জানা নেই।’ এই প্রতিবেদকের কাছে ছবি ও ভিডিও আছে মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমার খোঁজ নিতে হবে।’ থানার উপপরিদর্শক সোহেলের টর্চার সেলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে তথ্য দেন। ব্যবস্থা নেব। ওইখানে ওই রকম টর্চার সেল নেই।’
ওসি ওসমান গণি ও উপপরিদর্শক সোহেল থানায় নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও নির্যাতনের শিকার এমন একজনের সঙ্গে কথা হয়েছে আজকের পত্রিকার। তাঁর বাড়ি টেকনাফের সাবরাংয়ে। ওই ব্যক্তি বলেন, থানায় একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়। বলা হয়, টাকা না দিলে অপহরণসহ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করবেন। পরে নিয়মিত টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে ছেড়ে দেয়।
টেকনাফের শাপলা চত্বর এলাকার এক মুদিদোকানি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে থানার পুলিশ এসে হুমকি দিয়ে গেছে মাসিক চাঁদা দিতে। আমি নাকি ইয়াবা ব্যবসা করি।’
অপরাধের স্বর্গরাজ্য টেকনাফ
মিয়ানমার সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় আগে থেকেই অপরাধপ্রবণ এলাকা টেকনাফ। মাদক ও পণ্য চোরাচালান এখানকার অপরাধীদের মূল কারবার। তবে এখন যুক্ত হয়েছে অপহরণ ও মুক্তিপণ-বাণিজ্য। রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে খুন-অপহরণ চরম আকার ধারণ করেছে সেখানে। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২০ জনকে অপহরণ করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৬২ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। ভুক্তভোগী পরিবারের তথ্যমতে, অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫৩ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার উখিয়া উপজেলার পল্লিচিকিৎসক মো. জহির উদ্দিন (৫১) ও মোহাম্মদ রফিক (৩২) অপহৃত হন। যদিও মুক্তিপণ ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা ছাড়া পেয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত বছর অপহরণের পর মুক্তিপণ দিতে না পারায় টমটম ও সিএনজিচালক এবং কক্সবাজার থেকে টেকনাফে বেড়াতে আসা তিন যুবকসহ মোট পাঁচজনকে দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।
অপহরণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শাকিল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অপহরণের বেশির ভাগই মাদকসংক্রান্ত। কিছু হয় জেনুইন অপহরণ। আমরা এই বিষয়ে কাজ করছি। আমাদের কাছে গত বছরের মার্চ থেকে এই বছরের মার্চ পর্যন্ত ৬২ জন অপহরণের তথ্য আছে।’
পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া টর্চার সেলসহ অন্যান্য অভিযোগ আমরা তদন্ত করব। ইতিমধ্যে এসপি স্যারকে বলেছি। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। দেশবিরোধী কাজ করলে সে যে-ই হোক, আমরা ব্যবস্থা নেব।’
৬ পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে নিত্যপণ্য পাচার
টেকনাফ দিয়ে মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, চিনি ও শুঁটকি। আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে পাওয়া খাদ্য সহায়তা (রেশন) রোহিঙ্গারা সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সেনা ও আরাকান আর্মির সদস্যদের কাছে পাচার করছে। বিনিময়ে তারা মাদকদ্রব্য আনছে বলে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়।
আজকের পত্রিকার সরেজমিন অনুসন্ধানে টেকনাফের ৬টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে পণ্য পাচারের তথ্য মিলেছে। পয়েন্টগুলো হলো শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া ঘাট, পশ্চিম পাড়া ঘাট, সাবরাং জিরো পয়েন্ট, মহেশখালিয়া পাড়া, বাহারছড়া ঘাট ও কচ্চিপ পাড়া ঘাট। গত বুধবার বিকেলে সরেজমিন সাবরাং জিরো পয়েন্ট দিয়ে পণ্য পাচার করতে দেখা গেছে।
সেখানে দেখা যায়, শ্রমিকেরা সারিবদ্ধভাবে কাঁধে করে পণ্য বোটে তুলছেন; বিশেষ করে রাতে ১২টার পর এসব ঘাট দিয়ে পণ্য পাচার করা হয়। এটির সঙ্গে থানা-পুলিশের হাত আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
৩৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, একটি কক্ষের এক কোনায় মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে চোখ বাঁধা এক ব্যক্তি। পাশেই জবুথবু হয়ে বসে আছেন আরও দুজন। তাঁদের চোখও কাপড়ে বাঁধা, হাতকড়া পরানো। যে কক্ষের কথা বলা হচ্ছে, সেটি কোনো টর্চার সেল নয়, টেকনাফ থানার ওসি ওসমান গনির অফিসকক্ষ।
২০২০ সালের জুলাই মাসে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর দেশব্যাপী তুমুল আলোচনায় উঠে আসে টেকনাফ থানা-পুলিশের কার্যক্রম। মাঝে কিছুদিন সেখানে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড কমে এলেও এখন আবার পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, টেকনাফ থানায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওর চোখ বাঁধা ওই তিন ব্যক্তিকে গত ২২ এপ্রিল সোমবার রাত ২টায় থানায় ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেন। পরদিন সকালে ওসির কক্ষে এনে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চোখ বেঁধে ফেলে রাখা হয়। পরে এক মাস আগের একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয় তাঁদের। ওই তিন ব্যক্তির দুজন হলেন মো. আব্দুর রহিম (১৯) ও আব্দুল আমিন (১৬)। সম্পর্কে তাঁরা আপন ভাই। অন্যজন ওমর ফারুক (২৪)। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। গত বুধবার তাঁদের কক্সবাজার আদালতে তোলা হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় কারাগারে।
ওমর ফারুকের বাড়ি টেকনাফের অলিয়াবাদ এলাকায়। গ্রেপ্তারের আগে তিনি কক্সবাজার সদরের নাজিরারটেক এলাকায় থাকতেন। তিনিসহ তিনজনকে মোস্তাক আহমেদ নামের এক টমটম-চালককে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে টেকনাফ থানা-পুলিশ। গত ৬ মার্চ টেকনাফের অলিয়াবাদে খুন হয়েছিলেন মোস্তাক।
তবে ওমর ফারুকের স্ত্রী নুসরাত বেগম আজকের পত্রিকার কাছে দাবি করেন, তাঁর স্বামী কাউকে খুন করতে পারেন না। আব্দুল আমিনের স্ত্রী শারমিন আক্তারের দাবি, টমটমচালক নিখোঁজের দিন আব্দুল আমিন বাড়ি থেকে বের হননি। কারণ, তিনি অসুস্থ ছিলেন।
গ্রেপ্তার হওয়া ওই তিনজনের পরিবারের সদস্যরা জানান, সোমবার রাতে হঠাৎ পুলিশ এসে তাঁদের ধরে নিয়ে যায়। পরে রাতে ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। টাকা না দেওয়ায় বেধড়ক মারধর করা হয়। রাতভর চোখ, হাত-পা বেঁধে ওসির কক্ষেই ফেলে রাখা হয়।
থানার পাশে টর্চার সেল
টেকনাফ থানার পাশে ডিএসবি অফিস। এর পাশে একতলা একটি ভবন। সেখানে একটি কক্ষে থাকেন থানার উপপরিদর্শক মো. সোহেল। তাঁর কক্ষের পাশে আছে একটি টর্চাল সেল। অভিযোগ আছে, ওসির নির্দেশে সেখানে আটক ব্যক্তিদের নির্যাতন করেন উপপরিদর্শক সোহেলসহ আরও কয়েকজন। নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে নিরপরাধ ব্যক্তি যেমন আছেন, তেমনি ইয়াবা ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। ওসি ওসমান গনি এই থানায় যোগ দেওয়ার পর থেকে ৫ মাসে ২৫ জনকে এই টর্চার সেলে নির্যাতনের তথ্য পাওয়া গেছে।
নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উপপরিদর্শক মো. সোহেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি কক্ষ আছে। আসামিদের ধরে এনে এখানে জিজ্ঞাসাবাদ করি। যাঁরা মারধর বা নির্যাতন করেছি বলেছেন, তাঁরা আমাকে বিপদে ফেলার জন্য বলেছেন। আর আমি পুলিশ। সবাইকে তো সন্তুষ্ট করতে পারব না।’
একই প্রশ্নের জবাবে ওসি ওসমান গণিও সবকিছু অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার কক্ষে নির্যাতনের বিষয়টি জানা নেই।’ এই প্রতিবেদকের কাছে ছবি ও ভিডিও আছে মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমার খোঁজ নিতে হবে।’ থানার উপপরিদর্শক সোহেলের টর্চার সেলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে তথ্য দেন। ব্যবস্থা নেব। ওইখানে ওই রকম টর্চার সেল নেই।’
ওসি ওসমান গণি ও উপপরিদর্শক সোহেল থানায় নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও নির্যাতনের শিকার এমন একজনের সঙ্গে কথা হয়েছে আজকের পত্রিকার। তাঁর বাড়ি টেকনাফের সাবরাংয়ে। ওই ব্যক্তি বলেন, থানায় একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়। বলা হয়, টাকা না দিলে অপহরণসহ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করবেন। পরে নিয়মিত টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে ছেড়ে দেয়।
টেকনাফের শাপলা চত্বর এলাকার এক মুদিদোকানি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে থানার পুলিশ এসে হুমকি দিয়ে গেছে মাসিক চাঁদা দিতে। আমি নাকি ইয়াবা ব্যবসা করি।’
অপরাধের স্বর্গরাজ্য টেকনাফ
মিয়ানমার সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় আগে থেকেই অপরাধপ্রবণ এলাকা টেকনাফ। মাদক ও পণ্য চোরাচালান এখানকার অপরাধীদের মূল কারবার। তবে এখন যুক্ত হয়েছে অপহরণ ও মুক্তিপণ-বাণিজ্য। রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে খুন-অপহরণ চরম আকার ধারণ করেছে সেখানে। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২০ জনকে অপহরণ করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৬২ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। ভুক্তভোগী পরিবারের তথ্যমতে, অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫৩ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার উখিয়া উপজেলার পল্লিচিকিৎসক মো. জহির উদ্দিন (৫১) ও মোহাম্মদ রফিক (৩২) অপহৃত হন। যদিও মুক্তিপণ ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা ছাড়া পেয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত বছর অপহরণের পর মুক্তিপণ দিতে না পারায় টমটম ও সিএনজিচালক এবং কক্সবাজার থেকে টেকনাফে বেড়াতে আসা তিন যুবকসহ মোট পাঁচজনকে দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।
অপহরণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শাকিল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অপহরণের বেশির ভাগই মাদকসংক্রান্ত। কিছু হয় জেনুইন অপহরণ। আমরা এই বিষয়ে কাজ করছি। আমাদের কাছে গত বছরের মার্চ থেকে এই বছরের মার্চ পর্যন্ত ৬২ জন অপহরণের তথ্য আছে।’
পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া টর্চার সেলসহ অন্যান্য অভিযোগ আমরা তদন্ত করব। ইতিমধ্যে এসপি স্যারকে বলেছি। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। দেশবিরোধী কাজ করলে সে যে-ই হোক, আমরা ব্যবস্থা নেব।’
৬ পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে নিত্যপণ্য পাচার
টেকনাফ দিয়ে মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, চিনি ও শুঁটকি। আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে পাওয়া খাদ্য সহায়তা (রেশন) রোহিঙ্গারা সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সেনা ও আরাকান আর্মির সদস্যদের কাছে পাচার করছে। বিনিময়ে তারা মাদকদ্রব্য আনছে বলে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়।
আজকের পত্রিকার সরেজমিন অনুসন্ধানে টেকনাফের ৬টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে পণ্য পাচারের তথ্য মিলেছে। পয়েন্টগুলো হলো শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া ঘাট, পশ্চিম পাড়া ঘাট, সাবরাং জিরো পয়েন্ট, মহেশখালিয়া পাড়া, বাহারছড়া ঘাট ও কচ্চিপ পাড়া ঘাট। গত বুধবার বিকেলে সরেজমিন সাবরাং জিরো পয়েন্ট দিয়ে পণ্য পাচার করতে দেখা গেছে।
সেখানে দেখা যায়, শ্রমিকেরা সারিবদ্ধভাবে কাঁধে করে পণ্য বোটে তুলছেন; বিশেষ করে রাতে ১২টার পর এসব ঘাট দিয়ে পণ্য পাচার করা হয়। এটির সঙ্গে থানা-পুলিশের হাত আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
৩৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, একটি কক্ষের এক কোনায় মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে চোখ বাঁধা এক ব্যক্তি। পাশেই জবুথবু হয়ে বসে আছেন আরও দুজন। তাঁদের চোখও কাপড়ে বাঁধা, হাতকড়া পরানো। যে কক্ষের কথা বলা হচ্ছে, সেটি কোনো টর্চার সেল নয়, টেকনাফ থানার ওসি ওসমান গনির অফিসকক্ষ।
০১ মে ২০২৪‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
৩৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, একটি কক্ষের এক কোনায় মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে চোখ বাঁধা এক ব্যক্তি। পাশেই জবুথবু হয়ে বসে আছেন আরও দুজন। তাঁদের চোখও কাপড়ে বাঁধা, হাতকড়া পরানো। যে কক্ষের কথা বলা হচ্ছে, সেটি কোনো টর্চার সেল নয়, টেকনাফ থানার ওসি ওসমান গনির অফিসকক্ষ।
০১ মে ২০২৪গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
৩৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, একটি কক্ষের এক কোনায় মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে চোখ বাঁধা এক ব্যক্তি। পাশেই জবুথবু হয়ে বসে আছেন আরও দুজন। তাঁদের চোখও কাপড়ে বাঁধা, হাতকড়া পরানো। যে কক্ষের কথা বলা হচ্ছে, সেটি কোনো টর্চার সেল নয়, টেকনাফ থানার ওসি ওসমান গনির অফিসকক্ষ।
০১ মে ২০২৪গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
৩৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, একটি কক্ষের এক কোনায় মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে চোখ বাঁধা এক ব্যক্তি। পাশেই জবুথবু হয়ে বসে আছেন আরও দুজন। তাঁদের চোখও কাপড়ে বাঁধা, হাতকড়া পরানো। যে কক্ষের কথা বলা হচ্ছে, সেটি কোনো টর্চার সেল নয়, টেকনাফ থানার ওসি ওসমান গনির অফিসকক্ষ।
০১ মে ২০২৪গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫