Ajker Patrika

পথই যাঁদের আপন ঠিকানা

মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ১১
পথই যাঁদের আপন ঠিকানা

মাথা গোঁজার নির্দিষ্ট কোনো ঠাঁই নেই তাঁদের। তাই পথই তাঁদের আপন ঠিকানা। যেখানে রাত, সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন তাঁরা। হোক সেটা সড়ক বিভাজন, ফুটপাত কিংবা রেলস্টেশন। চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে ছিন্নমূল এমন মানুষের দেখা মেলে হরহামেশাই। গরমের সঙ্গে মানিয়ে এমনভাবে থাকতে পারলেও শীতের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে মানুষগুলো। কুয়াশা, হিম বাতাস কাবু করে ফেলে সহজেই।

জানা গেছে, চাঁদপুর জেলায় সরকারিভাবে এসব ভবঘুরে মানুষের আশ্রয়ের জন্য কোনো ঘর নেই। শুধু চাঁদপুর শহরেই নয়। মতলব দক্ষিণ উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে বহু ভবঘুরে মানুষ। এদের কোনো ঠিকানা নেই, পরিবার নেই। নিঃস্ব, কর্মহীনভাবে রাস্তাঘাটেই পার করে দিচ্ছে জীবন। এদের দেখার কেউ নেই।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা স্থানীয় বাসিন্দারা খাবার দিলে খায়, না হলে-না খেয়েই দিন কাটিয়ে দেন। অনেকে আবার ডাস্টবিন থেকে উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধ করছে।

সরেজমিন চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনে দেখা গেছে, এক বৃদ্ধ কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকেন সারা দিন। হাজারো মানুষ এই স্টেশনে আসা-যাওয়া করে। দেখে বৃদ্ধ লোকটির শুয়ে থাকার এ দৃশ্য। পাশেই কুকুর ঘেঁষে রয়েছে। মাঝেমধ্যে তাঁর পাশে খাবার দেখা যায়। হয়তো কেউ মায়া করে খাবার দিয়ে যায়। তা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এখানেই ঘুম, এখানেই ত্যাগ।

চাঁদপুর সদর মডেল থানায় ঢুকতে এক বৃদ্ধ নারী সারা দিন শুয়ে-বসে থাকেন। আর কী যেন বিলাপ করেন। এই রাস্তা দিয়ে রেজিস্ট্রি অফিস ও থানায় হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। সামনেই রয়েছে হাসপাতাল ও স্কুল। বহু রোগী ও স্কুলগামী ছাত্রীরা যাতায়াত করছে। বিলাপ করতে থাকা নারীটি স্কুল ঘেঁষে যেখানে থাকে, সেখানে খায় আবার সেখানে মল ত্যাগ করে। ফলে পরিবেশ হয়ে উঠছে ভারী, নোংরা, বিপজ্জনক। পথচারীরা নাকে হাত দিয়ে চলাফেরা করছে।

অথচ এই নারীকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। কারণ চাঁদপুর জেলায় যে এমন কোনো আশ্রম নেই, যেখানে তাঁকে পুনর্বাসন করা যায়। মাঝেমধ্যে মানুষ খাবার দিয়ে যায়—এটুকুই।

এদিকে মতলব দক্ষিণ উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমন ভাসমান বৃদ্ধ, মহিলা-পুরুষ দেখা যায়। যারা পুরোই নিঃস্ব, পরিবারহীন একেকটি জীবন। তাদের নিয়ে পুনর্বাসন করা যেতে পারে। তাহলে পরিবেশ নোংরা হবে না। নিঃস্ব এই ব্যক্তিরাও বাকিটা জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারবে। কিন্তু সরকারি বা বেসরকারিভাবে এমন কোনো উদ্যোগ নেই।

করিম হোসেন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, শহর সৌন্দর্যকরণের যে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন জনপ্রতিনিধিরা, অন্তত সে জন্য হলেও একটি পুনর্বাসন বা বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করে এমন ভবঘুরে নিঃস্ব মানুষদের একত্র করে সেবা দেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়ছে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, হতদরিদ্র মানুষের পাশে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। মতলব দক্ষিণে কোনো বৃদ্ধাশ্রম নেই। বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য একটি বৃদ্ধাশ্রম জরুরি। তাহলেই ভবঘুরের মতো এরা ঘোরাফেরা করবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান—৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

১৫৮ বছর আগে হারানো আলাস্কাতেই কি ইউক্রেনের জমি লিখে নেবে রাশিয়া

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

ডিটারজেন্ট, তেল ও সোডা দিয়ে ভেজাল দুধ তৈরি, সরবরাহ মিল্ক ভিটায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত