Ajker Patrika

১৬২ ইটভাটা, বৈধ মাত্র ২৬

মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ২০
১৬২ ইটভাটা, বৈধ মাত্র ২৬

কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। তবে সরকারি হিসাব মতে, জেলায় এ সংখ্যা ১৬২টি। যার মধ্যে অনুমোদন আছে মাত্র ২৬টির। বাকি ১৩৬টি ইটভাটাই অবৈধ। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কোনো অনুমোদন নেই, নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র; তবুও কৃষিজমি দখল করে জেলায় একের পর এক ইটভাটা গড়ে উঠছে।

সূত্রমতে, জেলার এসব ইটভাটায় প্রতি মৌসুমে প্রায় ৩ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন কাঠ পোড়ানো হয়। কৃষি জমিতে গড়ে ওঠা অধিকাংশ ইটভাটার মালিকই নিয়ম না মেনে ভাটা স্থাপন করেন। ভূমি জোনিং অ্যাক্ট-২০১০, কৃষি জমি সুরক্ষা আইন-২০১৫, পরিবেশ সুরক্ষা আইন-১৯৯৫ সহ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপনে আইনগত নীতিমালা-২০১৩ সবই লঙ্ঘিত হয়েছে জেলার সব ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব ইটভাটা স্থাপনের কথা থাকলেও সনাতন পদ্ধতিতেই সেগুলো চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইটভাটা মালিক জানান, জেলায় সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১৬২ টিসহ প্রায় দুই শতাধিক ইটভাটায় এক মৌসুমে গড়ে ৫ ধাপে ১৩০ দিন ইট পোড়ানো হয়। প্রতিটি ভাটায় দিনে ১৬ মেট্রিক টন কাঠ পুড়লে এক মৌসুমে কাঠ পুড়ছে ২০৮০ মেট্রিক টন। এ হিসাব অনুযায়ী বছরে জেলার সবগুলো ইটভাটায় প্রায় ৩ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন কাঠ পুড়ছে। গত বছর থেকে অনেক ভাটা মালিক অভিনব এক কৌশল যোগ করেছেন। ইটভাটাতেই তাঁরা ভ্রাম্যমাণ স’ মিল বসিয়েছেন। ইট পোড়াতে বড় বড় গাছের গুঁড়ি চিরে ভাটায় ফেলা হচ্ছে।

ইটভাটার মালিকেরা দাবি করেন, জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করলে ইটের উৎপাদন ভালো হয়। কয়লা পোড়ালে মোট ইটের তিন ভাগের মধ্যে এক ভাগ নষ্ট হয়ে যায়। কয়লা ব্যবহারে সমানতালে ইট পোড়ে না। সে কারণেই কাঠ পোড়ানো হয়।

মিরপুর উপজেলার এমআরবি ইটভাটা মালিক শরিফুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘এক গাড়ি কয়লা কিনতে বিশাল পরিমাণ টাকা খরচ হয়। একসঙ্গে নগদ এত টাকা দিয়ে কয়লা কিনে ভাটা চালানোর ক্ষমতা কারও নেই। তা ছাড়া বেশি দামের কয়লা পুড়িয়ে এক রাউন্ডে যে উৎপাদন পাওয়া যায় তার চেয়ে সহজে কম দামের কাঠ পুড়িয়ে উৎপাদন বেশি পাওয়া যায়। তাই বেআইনি জেনেও তাঁরা কাঠ পোড়াচ্ছেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, গত এক দশকে জেলার তিন ফসলি ৭৫ হাজার ৮৮০ হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে ২৮৮ হেক্টর জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাটা তৈরি করতে কমপক্ষে ৬ একর জমির প্রয়োজন হয়। নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন ভাটার মালিকেরা। এতে ফসলি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। কমে যাচ্ছে উৎপাদন ক্ষমতা।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল মোমেন জানান, কাঠ পোড়ানোর ফলে ভাটার নির্গত কালো ধোঁয়ায় মানুষের হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্যানসারসহ নানা রোগের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইডের কারণে ফসল ও এলাকার পরিবেশ দূষণ হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানান, জেলার বেশির ভাগ ইটভাটারই পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই। এসব ইটভাটার চিমনির উচ্চতাও সঠিক নেই। অবৈধ এসব ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য ইতিমধ্যেই তাঁরা অভিযান পরিচালনা শুরু করেছেন। বেশ কয়েকটি ইটভাটাকে জরিমানা করা হয়েছে। এ মৌসুমে জেলায় কোনো অবৈধ ইটভাটা চলতে দেওয়া হবে না।

জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম জানান, অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা শুরু হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ অবৈধ কোনো ইটভাটা এ জেলায় চলতে দেওয়া হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত