Ajker Patrika

বিধি ভেঙে নৌকায় ভোট চাইলেন ৩ সাংসদ

নাটোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ২২
বিধি ভেঙে নৌকায় ভোট চাইলেন ৩ সাংসদ

নাটোরে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জন্য নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন তিন সাংসদ। তাঁরা হলেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের সাংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ রত্না আহমেদ।

এ সময় তিন সাংসদ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভোটে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

গত শনিবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী উমা চৌধুরী জলির পক্ষে ভোট দিতে এবং নেতা–কর্মীদের ভোটের মাঠে থাকার আহ্বান জানান তিন সংসদ সদস্য।

তবে ভোট চাওয়ায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়নি বলে মনে করছেন সাংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস ও শফিকুল ইসলাম শিমুল। অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস সুষ্ঠু ভোট নিয়ে প্রশাসন ও পুলিশের হুঁশিয়ারিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। শফিকুল ইসলাম শিমুল তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে ‘নৌকা প্রতীকের বিজয়ের লক্ষ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা’ শিরোনামে স্ট্যাটাস পোস্ট করেছেন। তবে অপর সাংসদ রত্না আহমেদ বলেন, তিনি পরিস্থিতিতে পড়ে ভোট চেয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং নাটোর-৪ আসনের সাংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘নৌকাকে অবশ্যই জেতাতে হবে। নৌকা হারলে সকলে হারবে। পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা এবং জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বক্তব্য দিচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের মতো কঠোর ভোট হবে সিংড়া এবং নাটোর পৌরসভাতে। প্রশাসনকেও বলতে চাই, এবার আমরাও কঠোর হব।’

নাটোর-২ আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, ‘নির্বাচন আগের চাইতে অনেক কঠিন হবে। নাটোর পৌরসভায় অবশ্যই নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে হবে। নৌকার বিরোধী যারা থাকবে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’

নাটোর-নওগাঁ আসনের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি রত্না আহমেদ উপস্থিত নেতা-কর্মীদের আশ্বস্ত করে জানান, তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মীদের নিয়ে এবং পৌরসভায় তাঁর নিজ ওয়ার্ডে নেতা-কর্মীদের বাসায় ডেকে এবং অন্য যেকোনো জায়গায় মিটিং করে নৌকার পক্ষে ভোট চাইবেন এবং প্রয়োজনে টাকা পয়সা খরচ করবেন।

পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শেষে আচরণবিধি লঙ্ঘন বিষয়ে জানতে চাইল নাটোর-৪ আসনের সাংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের আগে ভোট চাইতে তাঁদের কোনো বাঁধা নেই।’

নাটোর-২ আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলও বলেন, ‘দলীয় কার্যালয়ে ভোট চাওয়া, মিটিং করার ক্ষেত্রে কোনো বাঁধা নেই।’

নাটোর-নওগাঁ সংরক্ষিত আসনের মহিলা সাংসদ রত্না আহমেদ বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে জানি। কিন্তু যেহেতু দলীয় মিটিং সে কারণে আমাকেও দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে ভোট চাইতে হয়েছে।’

পৌর আওয়ামী লীগের এই বর্ধিত সভায় নাটোর জেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, যেহেতু তফসিল ঘোষিত হয়েছে তাই পৌর এলাকার মধ্যে অবস্থিত দলীয় অফিসে সাংসদরা এমন বক্তব্য দিলে এবং ভোট চাইলে অবশ্যই তা আচরণবিধির লঙ্ঘন হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পরে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হবে। তখন এমন ঘটনা ঘটলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সরাসরি তা আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

নাটোর পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার এবং নাটোরের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আসলাম হোসেন বলেন, কোনো সংসদ সদস্য কোনো প্রকার মিটিং বা সভায় ভোট চাইতে পারবেন না। এটা করে থাকলে তারা নির্বাচনী আচরণ বিধির লঙ্ঘন করবেন। এমন কোনো ঘটনার অভিযোগ বা কোনো প্রকার সংবাদ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট আয়োজক প্রার্থী বা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস ও সংরক্ষিত আসনের সাংসদ রত্না আহমেদের সঙ্গে সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। কয়েক মাস আগে সাংসদ কুদ্দুস ও রত্না শিমুলের বিরুদ্ধে জেলা শহরে রাজনীতি করতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন। এ নিয়ে স্পষ্টত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে জেলা আওয়ামী লীগ। শনিবার রাতের পর থেকে নেতা–কর্মীদের মধ্যে স্বস্তির ভাব লক্ষ্য করা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত