Ajker Patrika

শব্দদূষণে অতিষ্ঠ পৌরবাসী

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ২৬
শব্দদূষণে অতিষ্ঠ পৌরবাসী

শব্দদূষণে অতিষ্ঠ আমতলী পৌরবাসী। প্রতিদিন সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালানো হয়। একই সঙ্গে সারা দিন ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হয়।

প্রতিকারের জন্য আইন থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নীরব ঘাতক ভয়ানক ক্ষতিকর শব্দদূষণ থেকে মানুষকে রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান সচেতন নাগরিকের।

জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ডিজেল ও পেট্রলচালিত ইঞ্জিন বাস, ট্রাক, লরি, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, টেম্পো, অটোরিকশা, টমটম–মাহেন্দ্র ও থ্রিহুইলারের হাইড্রোলিক হর্ন ও ডিজেল চালিত জেনারেটরের মাধ্যমে শব্দদূষণ করা হয়। এ ছাড়া রোগীদের আকৃষ্ট করতে চিকিৎসকের নামে প্রচার, ওয়াজ মাহফিলের প্রচার, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বয়লার মুরগি, মাছ–মাংস বিক্রিসহ মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালানো হয়।

এতে পৌর শহরে শব্দদূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাইড্রোলিক হর্ন ও মাইকের শব্দ মানুষের কানের জন্য যন্ত্রণাদায়ক। শব্দদূষণ মানুষের মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত শব্দ উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, মাথা ধরা, বদহজম, পেপটিক আলসার এবং অনিদ্রার কারণ বলে জানান চিকিৎসকেরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে উল্লেখ আছে, সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা ৫৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। একইভাবে নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ও রাতে ৭০ ডেসিবেল সর্বোচ্চ শব্দসীমা নির্ধারণ করা হয়। এর ওপরে শব্দ সৃষ্টি করাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।

বিধিমালায় আরও উল্লেখ আছে, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব জায়গায় মোটর গাড়ির হর্ন বাজানো বা মাইকিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।

এ সকল নিয়ম–নীতি ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন আমতলী পৌর শহরে মাইকে প্রচার ও বিভিন্ন গাড়ির হাইড্রোলিক হর্ন অহরহ বেজে যাচ্ছে।

বরগুনা জেলা পরিষদের সদস্য আরিফ উল–হাসান আরিফ বলেন, ‘পৌর শহরে অহরহ মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালানো হচ্ছে, এর মধ্যে বসবাস করা খুবই দুরূহ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দূষণরোধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে দাবি শব্দদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুল মুনয়েম সাদ বলেন, ‘শব্দদূষণের কারণে শ্রবণ শক্তি ও মেমোরির ক্ষতি হয়। শিশুদের মধ্যে মানসিক ভীতির সৃষ্টি হয়। মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণের কারণে মানুষের করোনারি হার্ট ডিজিজ, কণ্ঠনালির প্রদাহ, উচ্চ রক্তচাপ, নিদ্রাহীনতা, আলসার ও মস্তিষ্কের রোগ হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতাল এলাকায় মাইকিং ও হর্ন নিষিদ্ধ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিদিন যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হচ্ছে এবং মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার করা হচ্ছে। ক্ষতিকর শব্দদূষণ থেকে মানুষকে রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’

আমতলীর পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান শব্দদূষণে পৌরবাসীর অসুবিধার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘পৌরবাসীকে শব্দদূষণের হাত থেকে রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি, কিন্তু রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। শব্দদূষণ রোধে সচেতন নাগরিক ও সংশ্লিষ্টদের ডেকে সভা করা হবে। তারপরও শব্দদূষণ রোধ করা সম্ভব না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশে যা আছে

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকায়, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

সন্ধ্যা থেকে বন্ধ থাকবে নির্বাচন ভবনের আশপাশের ব্যবসা কার্যক্রম

কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জরুরি অবতরণও করা যাবে না

এলাকার খবর
Loading...