Ajker Patrika

ঢলের পর ভাইরাসের আক্রমণ

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া ও শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ১৫
Thumbnail image

চলতি মৌসুমে দেড় লাখ টাকা খরচ করে তিস্তার চরে মিষ্টিকুমড়া চাষ করেছিলেন গঙ্গাচড়া উপজেলার ছালাপাক গ্রামের বর্গাচাষি আবুল হোসেন। নদীতে হঠাৎ এক দিনের ঢল সেই কুমড়াগাছ ধুয়েমুছে নিয়ে যায়। পানি নেমে গেলে আবার স্ত্রীর গয়না আর পোষা গরু বিক্রি করে একই সবজির চাষ করেন। চরের জমি ভরে ওঠে সবুজে। খেত দেখে ফিরে স্বস্তির হাসি। কিন্তু ফলন আসার সময় মোজাইক ভাইরাসের আক্রমণ সেই হাসি মলিন করে দেয়। তারপরও যে কুমড়া পাওয়া গেছে, তা এখন বাজারে নিয়ে খরচই উঠছে না।
মহিপুরে তিস্তার চরে গিয়ে গত রোববার কথা হয় চাষি আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এক দফা খাইছে বন্যা, আরেক দফা মোজাইক ভাইরাস আর এক দফা খাওছে বাজারদর। বন্যার লস কিসের পোষামো, উল্টা আবাদের খরচে উঠোছে না। কুমড়া নিবার লোক পাওছি না। বাজারে পাইকারেরা যে দাম কয়, তাতে আবাদের অর্ধেক খরচও উঠবে না।’
শুধু আবুল হোসেন নয়, তিস্তার চরে মিষ্টিকুমড়া ফলানো অধিকাংশ চাষির অবস্থাই এখন এমন করুণ। বাজার দর কম থাকায় তাঁরা লোকসানের আশঙ্কা করছেন। 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গঙ্গাচড়ায় চরসহ বিভিন্ন এলাকায় ১১৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ হয়েছে। তিস্তায় আকস্মিক ঢলে চরের আগাম কুমড়াসহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার কুমড়া খেতে মোজাইক ভাইরাসের আক্রমণের ফলে ফলন কম হয়েছে। এ ছাড়া আগাম চাষ করা কুমড়া শুরু দিকে ১৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন তা পাঁচ থেকে ছয় টাকায় নেমে এসেছে। চাষিরা মাঠে এই দরে বিক্রি করলেও রংপুর সদরসহ বিভিন্ন বাজারে তা প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
হতাশা প্রকাশ করে গন্নারপার চরের চাষি ইউসুফ আলী বলেন, ‘বানোত ঘরবাড়ি তলে যায়, কষ্টের ফসল ভাসি যায়। অ্যালা যেকনা ফলাওছি তাঁর বাজারোত দাম নাই। বাজারোত তেল-চাউলের দাম ঠিকই আছে। ফসল চাষে লোকসান দিতে দিতে দেনাত পড়ি গেছি। সংসার চালার পাওছি না। এমনটা কয় তিস্তার জলোত ভাসি যাই।’

অনেক আশা নিয়ে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে এবার ফকির হতে হবে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ছালাপাক চরের চাষি শহিদার রহমান। তিনি জানান, আড়াই একর জমিতে কুমড়া লাগিয়েছেন। ভাইরাসের কারণে ফলন কম হয়েছে। সেই কুমড়ার এখন বাজারে দাম নেই। পাইকার তাঁদের কাছ থেকে পাঁচ টাকা কেজিতে কিনে হাটে ২০ টাকা বিক্রি করছেন।
আরেক চাষি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বেচপার গেইলে হামার জিনিসের বাজারোত ন্যায্য দাম নাই। কিন্তুক কিনার গেইলে তো ঠিকে দাম। এমতোন চললে দুনিয়াত কয়দিন বাচমো? হামার কৃষকের জীবনোত শান্তি নাই।’

কৃষকদের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করেন গঙ্গাচড়ার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, এ চক্র সব ফায়দা লুটে নিচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে জানানো হবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবার ১১৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। বাজার দর ভালো পেলে কৃষকেরা লাভবান হবে। আমাদের কাজ উৎপাদন বাড়ানো। বাজার মনিটরিংয়ের জন্য আলাদা লোক আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত