Ajker Patrika

অকূলপাথারে নয়ার পরিবার

গঙ্গাচড়া প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২১, ১৪: ০৭
Thumbnail image

গঙ্গাচড়ায় গত মাসে তিস্তার আকস্মিক ঢলে দিনমজুর নয়া মিয়াকে হারিয়ে অকূলপাথারে পড়েছে তাঁর পরিবার। ছোট দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন তাঁর স্ত্রী বেগম বানু।

উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের তিস্তা চরের পশ্চিম ইচলী গ্রামের নয়া মিয়া (৬০) গত ২০ অক্টোবর স্মরণকালের ভয়াবহ ঢলে ভেসে যান। তাঁর সন্ধান আজও মেলেনি।

ঢল পরবর্তী অবস্থা দেখতে সম্প্রতি পশ্চিম ইচলী গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বেগম বানুর দুরবস্থা। তাঁর অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেয়ে আকলিমা বেগমের লেখাপড়া টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ছেলের লেখাপড়াও বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

বেগম বানু বলেন, ‘স্বামী ভাসি যাওয়ার পর ছাওয়া দুইটাক নিয়া মুই বিপদোত পরচুও। টারির (পাড়ার) মানুষ চান্দা করি মোর স্বামীর কলমাখানি (কুলখানি) করচে। তাতে কিছু চউল বাচিচে। সেই চাউল খাইচি কয়দিন। অ্যালা হামার খাবার কোনো উপায় নাই। কী খামো আল্লায় জানে।’

বেগম বানু জানান, তাঁর মেয়ে আকলিমা চরের উম্মে কুলসুম স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ত। ৩০০ টাকা না দিতে পারায় তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন শুধু ছেলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র জিয়ারুল ইসলাম স্কুল যায়।

নয়া মিয়াদের প্রতিবেশী সাইদুল ইসলাম জানান, এককালে নয়া মিয়ার চাষাবাদের অনেক জায়গাজমি ছিল। তাঁর এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে মারা যান প্রথম স্ত্রী। পরে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এই পরিবারে জন্ম নেয় তিন মেয়ে ও এক ছেলে। দ্বিতীয় বিয়ের কয়েক বছর পরই তিস্তার ভাঙনে বসতবাড়িসহ জায়গাজমি হারিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েন। পরের খেতে মজুরি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। এভাবেই চার মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।

সাইদুল ইসলাম বলেন, ঢলের দিন নয়া মিয়ার ঘরে পানি চলে আসলে তিনি দুটি গরু নিয়ে বড় মেয়ে রহিমা বেগমের বাড়িতে রওনা দেন। কিন্তু পথে প্রবল স্রোতে তিনি গরুসহ ভেসে যান। তাঁকে আর পাওয়া যায়নি। ওই ঢলে রহিমার বাড়িঘরও ভেসে গেছে। বর্তমানে তিনি স্বামী-সন্তানসহ অন্যের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

নয়া মিয়ার আগের পরিবারের বড় ছেলে রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘এলাকাত কোনো কাম নাই। খাবার ভাতও জোটে না। সেই জন্যে দুই মুটো ভাতের জন্য বউ-বাচ্চা নিয়ে ঢাকা শহর যাওচি।’

স্থানীয় লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সামাদ জানান, ঢলে পশ্চিম ইচলী গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চরাঞ্চলে ধানসহ সব ফসলের ভীষণ ক্ষতি হয়েছে। এলাকায় কাজ নেই বললেই চলে। চরের দিনমজুরদের দুরবস্থা বাড়ছে।

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লা আল হাদী বলেন, বন্যার্ত ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ১০ কেজি করে ত্রাণের চালসহ কিছু শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এলাকায় কাজ না থাকায় মজুর ও শ্রমিক শ্রেণির লোকেরা ভীষণ কষ্টে আছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত