Ajker Patrika

দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, নেই প্রশাসনের নজরদারি

হিরামন মন্ডল সাগর, বটিয়াঘাটা
আপডেট : ১৫ জুন ২০২২, ১২: ১৭
Thumbnail image

বটিয়াঘাটায় ইটভাটার ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ মানুষ। উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নে ইটভাটার প্রভাবে আশপাশের অন্তত সাত গ্রামের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সর্বক্ষণ ধোঁয়ার দুর্গন্ধ লেগেই থাকে। রাস্তা দিয়ে হাঁটা দায় হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধান, সরিষা, ঘের ও পুকুরের মাছসহ বিভিন্ন সবজিখেত।

নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই চলছে বেশির ভাগ ভাটা। আইনে আছে, জ্বালানি কাঠ ভাটায় পোড়ানো যাবে না। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, কয়লা তো দূরের কথা! বিভিন্ন জাতের জ্বালানি কাঠ ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। বটিয়াঘাটা উপজেলার পার্শ্ববর্তী ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, রূপসা, ফুলতলায় প্রতিনিয়ত অবৈধ ইটভাটার অভিযান চললেও বটিয়াঘাটায় এ নিয়ে প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই।

সুরখালী ইউনিয়নের গজালিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জেবি-১ ব্রিকস ইটভাটার কোনো লাইসেন্স নেই। প্রকাশ্য দিবালোকে কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। চারদিকে বইছে ইট পোড়ানোর ধোঁয়া। হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসী রয়েছে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। জানা যায়, লাইসেন্সবিহীন উক্ত ইটভাটার মালিক শারমীনা পারভিন রুমা। ডুমুরিয়া উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিনি।

এসব ইটভাটায় প্রশাসনের নজরদারি নেই। বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছরে প্রশাসনের অভিযান নেই বললেই চলে। ফলে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ভাটা পরিচালনা করতে দেখা গেছে। ইতিপূর্বে এলাকাবাসী বহুবার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি বলে জানান তাঁরা।

জানা গেছে, একাধিক ভাটার ইট পোড়ানোর লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বেশির ভাগ ভাটামালিকেরা নবায়নের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন। এ ছাড়া বেশির ভাগ ভাটারই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের মেয়াদও শেষ হয়েছে। অনেক ভাটার লাইসেন্স নেই। তার ভেতর জমাদ্দার ভাটার (জেবি) নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। ইটভাটা আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, জ্বালানি কাঠ দিয়ে ভাটায় ইট পোড়ানো যাবে না। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, কয়লা তো দূরের কথা! বিভিন্ন জাতের জ্বালানি কাঠ দিয়ে ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। গজালিয়া এলাকার মোক্তার শেখ, ভাটার পাশেই বসবাস করেন তিনি। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এলাকার হামিদুর রহমান মোল্লা বলেন, ইটভাটার চারদিকে ৭-৮টি গ্রাম। এখানে প্রায় ২০ হাজার লোকের বাস। এলাকার বেশির ভাগ লোকই রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। একাধিকবার বলেছি ইটভাটামালিককে। কোনো কাজ হয় না তাতে।

আব্দুর রহমান নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ধোঁয়ার দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করা যায় না। এমনকি রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্রামের যে রাস্তাটি রয়েছে; সেটি ইটের ট্রাক, গাড়ি যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইটভাটার ম্যানেজার ইকরাম হোসেন বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মাসোয়ারা দিয়ে থাকি। বাকি কথা জানতে হলে আমাদের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। যাঁরা ভাটায় আসেন, তাঁরা সবাই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকেন।

একটি ভাটার মালিক শারমীনা পারভিন রুমা বলেন, আবেদন করেছি। এখনো নিবন্ধন পাইনি। নিবন্ধন ছাড়া কীভাবে ইটভাটা চালাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, সবাই যেভাবে চালাচ্ছে, আমিও সেভাবে চালাচ্ছি। আপনি আমার সঙ্গে অফিসে এসে দেখা করেন। বটিয়াঘাটা ভূমিহীন সংগঠন ও নিজেরা করি ইতিপূর্বে ওই অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিয়াউর রহমান ওই ইটভাটা মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করেন।

বটিয়াঘাটা ইউএনও মো. মমিনুর রহমান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। খুলনা বিভাগীয় অফিসের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবু সাঈদ বলেন, আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না। তবে জমাদ্দার ব্রিকসের কোনো লাইসেন্স বা ছাড়পত্র নেই। এদের বিরুদ্ধে অতি সত্বর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত