নুসরাত জাহান শুচি
একজন সাধারণ নারীর জীবনচক্র তাঁর চেয়েও বেশি সাধারণ। জন্মের পর বাবার দায়িত্বে, তারপর স্বামী, অতঃপর সন্তান বা বৃদ্ধাশ্রম। এর মধ্যে কোনো ঠিকানাই তাঁর স্থায়ী নয়। দয়া করে যে যত দিন রাখে তত দিনই থাকা, এই আরকি।
তবে এখন সময় পাল্টেছে। এখন নারীরা আর চারদেয়ালে বন্দী নন। তাঁরা উচ্চশিক্ষিত হচ্ছেন। উপার্জন করছেন। পরিবারের হালও ধরছেন অনেকে। তাঁদের জীবনচক্রে কিছুটা ভিন্নতা এসেছে। এই যেমন—একজন কর্মজীবী নারী বাড়ির সব কাজ শেষে অফিসে যাবেন। অফিসে নিজ যোগ্যতায় আগে পদোন্নতি হলে শুনবেন, ‘ওই যে বস আছে তো!’ আবার যখন পদোন্নতি হবে না তখন বলা হবে, ‘আগেই বলেছিলাম পারবে না তুমি।’ যখন সারা দিন অফিস শেষে বাড়ি ফেরার জন্য লোকাল বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকবেন, তখন সিট নেই অজুহাতে তাঁকে বাসে তোলা হবে না। আবার কোনোভাবে কষ্ট করে বাসে উঠে পড়লেও বাসে দাঁড়িয়ে থাকার অপরাধে কেউ যদি তাঁকে পাবলিক সম্পদও মনে করে, তবু তাঁর কিছুই বলার থাকবে না। কেননা, প্রতিবাদ করলে সুশীল সমাজ বলে উঠবে, ‘এত সমস্যা, তাহলে পাবলিক বাসে উঠেছেন কেন? পারসোনাল গাড়িতে যান!’ এরপর যখন বাড়ি ফিরবেন, তখনো কিন্তু তাঁর ছুটি নেই। বাড়ির সব কাজের সব সদস্যের দায়িত্ব তাঁর জন্য শিরোধার্য। এতে কেউ যদি তাঁকে সাহায্য করে, তবে তা উপরি পাওনা। এরপরও নারী হয়ে উঠছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, চাকরিজীবী, সফল উদ্যোক্তা। কোথাও পিছিয়ে নেই তাঁরা। কিন্তু সেই এগিয়ে যাওয়ার পথে কি কোনো ভূমিকা রেখেছে পুরুষ সমাজ?
এখন সুশীল সমাজ বলবে—নারীদের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস আছে, সরকার তাদের কর্মসংস্থান ও শিক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে, পুরুষের সঙ্গে নারীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তবু কেন নারীর অধিকার নিয়ে এত সমালোচনা?
উত্তর খোঁজা যাক। দুই দিন আগেই ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন। দিবসটিতে নারীর অবদান, প্রাপ্তি ও মর্যাদা দেওয়া হয়। সত্যিই কি তাই? টক শো, কোনো নিউজ, ফিচার বা সম্মাননায় এই দিনে নারীকে যে মর্যাদা দেওয়া হয়, বাড়ি ফিরে কি সেই নারীকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়?
সাল ১৯০৯। যখন নারীরা নিজেদের ওপর সব অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছেন, নিজেদের ভোটদানের অধিকারের জন্য লড়াই করে সেই অধিকার ছিনিয়ে এনেছেন, তারপর পেয়েছেন নারী দিবস। এরপরও ৬৬ বছর অপেক্ষায় থেকে পরিপূর্ণ মর্যাদায় আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সম্মান পেয়েছেন তাঁরা।
নারী যে কেবল পরিবার ও সমাজে অবহেলিত তা নয়, ইতিহাসেও অবহেলিত। এ ক্ষেত্রে কেবল মাতৃভাষা আন্দোলনের ইতিহাসই তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ছোটবেলা থেকে পড়ে এসেছি ভাষাশহীদ রফিক, শফিক, বরকত, জব্বারের নাম। ভাষা আন্দোলন কেবল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতেই হয়নি। এর পেছনের পটভূমি ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরেই রচিত হয়েছিল। ভাষার দাবিতে কেবল ছাত্রদের নাম উঠে এসেছে। অথচ ভাষা আন্দোলনের জন্য গ্রেপ্তার হওয়া লিলি চক্রবর্তীর নাম আমরা কয়জনই বা জানি? মিটিং, মিছিল, ব্যানার-ফেস্টুন বানানোতেও এবং এসবের প্রচারেও নারীর ভূমিকা ছিল। কেবল ঢাকায় নয়, বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, যশোরের রহিমা খাতুন, হাজেরা মাহমুদ, যোবেদা খাতুনরা, দেশের সব জায়গায় নারীরা প্রতিবাদ গড়ে তুলেও রয়ে গেছেন আড়ালে। আন্দোলনের অংশীদার হলেও নারীরা ইতিহাসের অংশ হতে পারেননি। বরাবরই থেকে গেছেন অন্তরালে।
যতই পড়ি না কেন, চিরকল্যাণকর সবকিছুতে পুরুষ ও নারীর অধিকার সমান, তা ওই পুঁথিগত বিদ্যাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। তাই সৃষ্টির কল্যাণে নারীর অবদানের স্বীকৃতি কবিতা-উপন্যাসেই সীমাবদ্ধ। ইতিহাসের অংশ হতে পারেনি। তবে এ থেকে নারীরা শিক্ষা নিতে পারেন যে, তাঁদের অধিকার আদায়ের বিষয়টি একটি দেশ স্বাধীনের সমান, যা যুদ্ধ ছাড়া সম্ভব নয়।
লেখক: সাংবাদিক
একজন সাধারণ নারীর জীবনচক্র তাঁর চেয়েও বেশি সাধারণ। জন্মের পর বাবার দায়িত্বে, তারপর স্বামী, অতঃপর সন্তান বা বৃদ্ধাশ্রম। এর মধ্যে কোনো ঠিকানাই তাঁর স্থায়ী নয়। দয়া করে যে যত দিন রাখে তত দিনই থাকা, এই আরকি।
তবে এখন সময় পাল্টেছে। এখন নারীরা আর চারদেয়ালে বন্দী নন। তাঁরা উচ্চশিক্ষিত হচ্ছেন। উপার্জন করছেন। পরিবারের হালও ধরছেন অনেকে। তাঁদের জীবনচক্রে কিছুটা ভিন্নতা এসেছে। এই যেমন—একজন কর্মজীবী নারী বাড়ির সব কাজ শেষে অফিসে যাবেন। অফিসে নিজ যোগ্যতায় আগে পদোন্নতি হলে শুনবেন, ‘ওই যে বস আছে তো!’ আবার যখন পদোন্নতি হবে না তখন বলা হবে, ‘আগেই বলেছিলাম পারবে না তুমি।’ যখন সারা দিন অফিস শেষে বাড়ি ফেরার জন্য লোকাল বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকবেন, তখন সিট নেই অজুহাতে তাঁকে বাসে তোলা হবে না। আবার কোনোভাবে কষ্ট করে বাসে উঠে পড়লেও বাসে দাঁড়িয়ে থাকার অপরাধে কেউ যদি তাঁকে পাবলিক সম্পদও মনে করে, তবু তাঁর কিছুই বলার থাকবে না। কেননা, প্রতিবাদ করলে সুশীল সমাজ বলে উঠবে, ‘এত সমস্যা, তাহলে পাবলিক বাসে উঠেছেন কেন? পারসোনাল গাড়িতে যান!’ এরপর যখন বাড়ি ফিরবেন, তখনো কিন্তু তাঁর ছুটি নেই। বাড়ির সব কাজের সব সদস্যের দায়িত্ব তাঁর জন্য শিরোধার্য। এতে কেউ যদি তাঁকে সাহায্য করে, তবে তা উপরি পাওনা। এরপরও নারী হয়ে উঠছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, চাকরিজীবী, সফল উদ্যোক্তা। কোথাও পিছিয়ে নেই তাঁরা। কিন্তু সেই এগিয়ে যাওয়ার পথে কি কোনো ভূমিকা রেখেছে পুরুষ সমাজ?
এখন সুশীল সমাজ বলবে—নারীদের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস আছে, সরকার তাদের কর্মসংস্থান ও শিক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে, পুরুষের সঙ্গে নারীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তবু কেন নারীর অধিকার নিয়ে এত সমালোচনা?
উত্তর খোঁজা যাক। দুই দিন আগেই ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন। দিবসটিতে নারীর অবদান, প্রাপ্তি ও মর্যাদা দেওয়া হয়। সত্যিই কি তাই? টক শো, কোনো নিউজ, ফিচার বা সম্মাননায় এই দিনে নারীকে যে মর্যাদা দেওয়া হয়, বাড়ি ফিরে কি সেই নারীকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়?
সাল ১৯০৯। যখন নারীরা নিজেদের ওপর সব অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছেন, নিজেদের ভোটদানের অধিকারের জন্য লড়াই করে সেই অধিকার ছিনিয়ে এনেছেন, তারপর পেয়েছেন নারী দিবস। এরপরও ৬৬ বছর অপেক্ষায় থেকে পরিপূর্ণ মর্যাদায় আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সম্মান পেয়েছেন তাঁরা।
নারী যে কেবল পরিবার ও সমাজে অবহেলিত তা নয়, ইতিহাসেও অবহেলিত। এ ক্ষেত্রে কেবল মাতৃভাষা আন্দোলনের ইতিহাসই তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ছোটবেলা থেকে পড়ে এসেছি ভাষাশহীদ রফিক, শফিক, বরকত, জব্বারের নাম। ভাষা আন্দোলন কেবল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতেই হয়নি। এর পেছনের পটভূমি ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরেই রচিত হয়েছিল। ভাষার দাবিতে কেবল ছাত্রদের নাম উঠে এসেছে। অথচ ভাষা আন্দোলনের জন্য গ্রেপ্তার হওয়া লিলি চক্রবর্তীর নাম আমরা কয়জনই বা জানি? মিটিং, মিছিল, ব্যানার-ফেস্টুন বানানোতেও এবং এসবের প্রচারেও নারীর ভূমিকা ছিল। কেবল ঢাকায় নয়, বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, যশোরের রহিমা খাতুন, হাজেরা মাহমুদ, যোবেদা খাতুনরা, দেশের সব জায়গায় নারীরা প্রতিবাদ গড়ে তুলেও রয়ে গেছেন আড়ালে। আন্দোলনের অংশীদার হলেও নারীরা ইতিহাসের অংশ হতে পারেননি। বরাবরই থেকে গেছেন অন্তরালে।
যতই পড়ি না কেন, চিরকল্যাণকর সবকিছুতে পুরুষ ও নারীর অধিকার সমান, তা ওই পুঁথিগত বিদ্যাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। তাই সৃষ্টির কল্যাণে নারীর অবদানের স্বীকৃতি কবিতা-উপন্যাসেই সীমাবদ্ধ। ইতিহাসের অংশ হতে পারেনি। তবে এ থেকে নারীরা শিক্ষা নিতে পারেন যে, তাঁদের অধিকার আদায়ের বিষয়টি একটি দেশ স্বাধীনের সমান, যা যুদ্ধ ছাড়া সম্ভব নয়।
লেখক: সাংবাদিক
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪