Ajker Patrika

নতুন ঠিকানার খোঁজে মানুষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ২১ জুন ২০২২, ১৫: ০৩
Thumbnail image

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে নদীভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে যমুনা চরের মানুষ। পানি বাড়তে থাকায় উপজেলার চালুয়াবাড়ী এবং বোহাইল ইউনিয়নের প্রায় ২৯৬টি বাড়িঘর ভাঙনের শিকার হয়েছে। ঘর ভেঙে ও গৃহপালিত পশু এবং পরিজনদের নিয়ে অনেকে নৌকায় অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। যাঁদের নিজেদের জায়গা জমি নেই তাঁরা ভাঙা বাড়িঘর নিয়ে উঠছেন অন্যের বাড়ির উঠানে।

এদিকে, সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলছে। পাশাপাশি বাড়ছে তীব্র নদীভাঙন। গত ২৪ ঘণ্টায় (গত রোববার বেলা ৩টা থেকে গতকাল সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত) সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছিল; যা বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া জেলার কাজীপুর পয়েন্টে গত ১২ ঘণ্টায় ৯ সেন্টিমিটার যমুনার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক হাসানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সারিয়াকান্দিতে দায়িত্বে থাকা গেজ রিডার পরশুরাম জানান, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যমুনা নদীর সারিয়াকান্দির মথুরাপাড়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার; যা বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অপরদিকে বাঙ্গালী নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার; যা বিপৎসীমার মাত্র ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউপির সুজাতপুর গ্রামে দেখা যায়, সেখানে কেউ সিমেন্টের খাম তুলছেন, কেউ টিন খুলছেন, আবার দলবদ্ধভাবে কেউ ঘরের টিনের চালা তুলছেন নৌকায়।

কথা হয় শহিদুলের স্ত্রী অজিবা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁরা ছিলেন চকরথিনাথ চরে। সেখানে নদীভাঙনের পর এসেছিলেন বিরামের পাঁচগাছি চরে। তারপর এসেছেন এই সুজাতপুরে। এখন তিনি নৌকায় তাঁর বাড়িঘরসহ সংসারের যাবতীয় জিনিসপত্র তুলেছেন, অন্য মানুষের জায়গায় বাড়ি করার উদ্দেশ্যে।

চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শওকত আলী জানান, এ ইউনিয়নে প্রায় ২৫০ বাড়িঘর নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে মানিকদাইড় গ্রামের ১৫০টি ও সুজাতপুর গ্রামের ১০০টি বাড়ি।

বোহাইল ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘গত দুই দিনে আমার ইউনিয়নের বোহাইল এবং কাজলা গ্রামের ৪৬টি বাড়িঘর যমুনার ভাঙনের শিকার হয়েছে। যে হারে নদী ভাঙতে শুরু করেছে, তাতে কয়েক দিনে কয়েক শ বাড়িঘর ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, চরাঞ্চলে ভাঙন ঠেকাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ইতিমধ্যে জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ইউএনও মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, নদীভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে চালুয়াবাড়ী ইউপির মানিকদাইড় গ্রামে জিও ব্যাগ ফেলা হবে। বন্যার্তদের সহযোগিতায় আজকালের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।

এদিকে, সিরাজগঞ্জে বন্যাকবলিত মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

যমুনার পানি বাড়ার ফলে অভ্যন্তরীণ নদীতেও পানি বেড়েছে। এর ফলে জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন ফসল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছে।

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে ধারাবাহিকভাবে পানি বাড়ার কারণে যমুনার চরাঞ্চলের নিচু জমিগুলো তলিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে যমুনার পাশাপাশি ফুলজোড়, করতোয়া, বড়াল, হুড়াসাগর, ইছামতীসহ চলনবিলের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

এলাকাবাসী জানান, গত শুক্রবার ভোর থেকে হঠাৎ করে চৌহালী উপজেলাধীন খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণে ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, কৈজুরী এলাকার পাচিলে যমুনা নদীতে তীব্র নদীভাঙন শুরু হয়।

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ জানান, ভাঙন এলাকা রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধের কাজ দ্রুত করা হোক। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ভাঙন এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এতে আতঙ্কের কিছু নেই।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর তলদেশে প্রতিনিয়ত জরিপ করা হচ্ছে। কোথাও কোনো ত্রুটি আছে কি না তা দেখা হচ্ছে। যেসব এলাকায় ভাঙন রয়েছে, তা রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ী কাজ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত