Ajker Patrika

উন্নয়নের নামে বৃক্ষ নিধন

রাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫: ৫৯
Thumbnail image

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ১৫টি গাছ কাটা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি অর্ধশতাব্দীর বেশি পুরোনো। আরও বেশকিছু গাছ কাটার তোড়জোড় চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নতুন প্রশাসনিক এবং অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের জায়গা তৈরি করতে এসব গাছ কাটা হয়েছে। এদিকে গাছ কেটে অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। তাঁরা বলছেন, গাছ কেটে উন্নয়ন চান না তাঁরা।

রুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে ক্যাম্পাসে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। সম্প্রতি সরকার ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর আওতায় আছে ১৪টি ভবন নির্মাণ। ইতিমধ্যে দুটি ভবন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১২টি নির্মাণ করা হবে। এ জন্য ১৫টি গাছ কাটার লিজ দেওয়া হয়েছে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উত্তর পাশে বেশ কয়েকটি পুরোনো গাছ কাটা পড়ে আছে। সেখানে কেউ গাছ কেটে ছোট করছেন, কেউ কেউ গাছের ডালপালা কেটে ভ্যানে বোঝাই করছেন। কেউবা গুটি কাটছেন। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে তড়িঘড়ি সবাই কেটে পড়েন। চলে যাওয়ার সময় কথা হয় করাতমিস্ত্রি মিনারুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁরা টাকার বিনিময়ে কাজ করেন। মিডিয়া আসছে, তাই ঝামেলা এড়াতে চলে যাচ্ছেন।

জানানো হয়নি বন বিভাগকে : সরকারি গাছ কাটার জন্য বন বিভাগের অনুমোদন নেওয়ার বিধান থাকলেও তা না করে গাছ কেটেছে রুয়েট কর্তৃপক্ষ। রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহমেদ নিয়ামুর রহমান বলেন, সরকারি গাছ কাটার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া উচিত এবং বন বিভাগের উচিত গাছের দাম মূল্যায়ন করা। রুয়েট কর্তৃপক্ষ গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগকে জানায়নি।

এ বিষয়ে রুয়েট রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘আমরা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ২০২০ সালে অনুমতি নিয়েছি। কিন্তু বন বিভাগ থেকে নেওয়া হয়নি।’

নামমাত্র মূল্যে বিক্রি

অর্ধশতাব্দী পুরোনো গাছগুলো নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোলাম মোস্তফা নামের রুয়েটের এক কর্মচারীর কাছে ১৫টি গাছ বিক্রি করা হয়েছে। ইজারাদার কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বড় ছয়টি গাছের মূল্য কম করে হলেও আড়াই লাখ টাকা হবে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে ১৫টি গাছ মাত্র ১ লাখ ২৭ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।

প্রতিবাদে মানববন্ধন: রুয়েট বৃক্ষনিধনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রুয়েটের প্রধান ফটকের সামনে পরিবেশ আন্দোলনের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ‘পরিবেশ ধ্বংস করে আমরা উন্নয়ন চাই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক পরিত্যক্ত জায়গা রয়েছে। সেখানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হোক।’

মানববন্ধনে পর্যটক তানভীর অপু বলেন, ‘লজ্জার বিষয় যে, আজ দেশের একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের সামনে দাঁড়িয়েছি গাছ কাটার প্রতিবাদ করতে। রাজশাহী বিশ্বের কাছে গ্রিন সিটি হিসেবে পরিচিত। এই গাছগুলো কাটায় পাখিগুলো তাদের বাসা হারাল। এখানে অনেক পরিত্যক্ত ভবন আছে, অনেক খালি জায়গা আছে, সেখানে ভবনগুলো করতে পারত। বাংলাদেশের সবচেয়ে উষ্ণ শহর রাজশাহী। গাছগুলো যদি কেটে দেওয়া হয়, তাহলে রাজশাহীর কী হবে।’

পরিবেশ আন্দোলনের সদস্যসচিব নাজমুল হোসেন রাজু বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের পক্ষে তবে যেখানে অপরিত্যক্ত ভবন আছে, শ্রেণিকক্ষ আছে, সেগুলো সচল না করে শতবর্ষী গাছ কেটে শত শত পাখির আবাস নষ্ট করা গ্রিন সিটিতে মানায় না’।

কর্মসূচিতে পরিবেশ আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ের ২০-২৫ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘আমাদের ভবন নির্মাণের জন্য অনেক আগেই সয়েল টেস্ট নেওয়া হয়েছে। ফলে এখন চাইলেও নতুন করে জায়গা পরিবর্তন করা সম্ভব না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত