
হাসান আজিজুল হকের প্রবন্ধ অবলম্বনে ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’ সিনেমায় অভিনয় করছেন। এ সম্পর্কে বলুন।
সিনেমাটি তৈরি হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের প্রেক্ষাপটে। সে সময়ের পরিবেশ পরিস্থিতি, পাকিস্তানিদের অত্যাচার উঠে আসবে। অভিনয়টা আর আগের মতো করা হয় না। অন্য কাজে বেশি ব্যস্ত থাকি। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা বলেই আগ্রহটা তৈরি হয়েছে। এ সিনেমায় হাসান আজিজুল হকের রূপক চরিত্রে দেখা যাবে আমাকে। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলাম। তাঁকে খুব ভালো করে জানতাম। তাই সিনেমাটি নিয়ে আমার আবেগটা অনেক বেশি।
প্রবন্ধ বা সাহিত্য অবলম্বনে কি আরও বেশি সিনেমা হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
এটা তো আগে থেকে নির্ধারণ করা যাবে না যে কোনটা কম হওয়া উচিত আর কোনটা বেশি। ভালো সিনেমা নির্মাণ করার চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে, বিশেষ করে নতুন নির্মাতাদের। নতুন ভাবনা, দর্শন বা চিন্তা পর্দায় তুলে আনতে হবে।
গত বছরও মুক্তিযুদ্ধের একটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। সেই সিনেমার কী খবর?
‘জয় বাংলা ধ্বনি’ নামের সিনেমাটি করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন আমার দলের একজন রাজনৈতিক নেতা। আমি তাঁকে বারবার বলার চেষ্টা করেছি এই স্ক্রিপ্টটা কোনোভাবেই চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট হয়নি। কোনো গল্প দাঁড়ায়নি। কিন্তু কিছুতেই তাঁকে বোঝাতে পারছিলাম না। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে জানিয়ে দিলাম, সিনেমাটি আমি করতে পারব না। শুনেছি পরিচালককেও বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন অন্য আরেকজনকে নিয়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু স্ক্রিপ্টটা যদি আগের মতোই থাকে সেটা থেকে কোনো সিনেমা নির্মাণ করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
বাণিজ্যিক সিনেমায় অনুদানের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন অনেকেই। এই দাবি কতটা যৌক্তিক?
আমি এটা যৌক্তিক দাবি মনে করি না। যাঁরা বাণিজ্যিক সিনেমা নির্মাণ করেন তাঁদের জন্য বিনিয়োগকারী থাকে। কিন্তু ভিন্নধারার বা বিকল্পধারার সিনেমার প্রযোজক পাওয়া কঠিন। তাই তাঁদেরকেই অনুদান দেওয়া উচিত। অনুদানের টাকা দিয়ে তো সিনেমা শেষ করা যায় না। অনেকেই নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে। একজন আমাকে বলল, আমার বাবার কিছু ফিক্সড ডিপোজিট ছিল, কাজটি শেষ করার জন্য সেটি ভাঙিয়েছে। এভাবেই তারা সিনেমা বানায়। তাই সাহায্যটা এখানেই বেশি দরকার।
১৯৭২ সাল থেকে মঞ্চনাটকের সঙ্গে জড়িত আছেন। প্রায় ৫১ বছরের থিয়েটার জীবনে সম্প্রতি ‘রিমান্ড’ নাটকে অভিনয় করে প্রথমবার পারিশ্রমিক পেয়েছেন। কেমন ছিল অনুভূতি?
খুব মজা লেগেছে। আমরা যখন দল তৈরি করি, মঞ্চকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলাম। সেখান থেকে পয়সা পাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না, উপায়ও ছিল না, কারণও ছিল না। এখন দেখছি যে রেপার্টরি থিয়েটার হচ্ছে। বিভিন্ন দল থেকে শিল্পীরা এসে একত্রে নাটক করছেন। সেখানে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা থাকছে। সেই টিকিট বিক্রির টাকা সবার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। সে হিসেবে এবার আমিও পেলাম। ভালোই লাগছে।
এত বছরেও মঞ্চনাটকে কেন পেশাদারত্ব সৃষ্টি হলো না বলে মনে করেন?
এটা অনেক কঠিন কাজ। আমাদের দেশে কেন, ভারতেও কি মঞ্চকে পুরোপুরি পেশা হিসেবে নিতে পেরেছে? দুই-চারজন হয়তো পেরেছেন। আমরা যদি পাশ্চাত্যেও দেখি সেখানে যাঁরা খুব বড় মাপের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী তাঁরা হয়তো পেশা হিসেবে নিতে পেরেছেন। কিন্তু যাঁরা ছোটখাটো চরিত্র করেন তাঁরা কিন্তু এখনো মঞ্চকে পেশা হিসেবে নিতে পারছেন না। যদিও ওইসব দেশে মঞ্চনাটকের জন্য স্পনসর পাওয়া যায়। সরকারিভাবেও অনেক সহযোগিতা করা হয়। আমাদের দেশে তো এসবের বড় অভাব। সরকার থেকে মঞ্চনাটকের জন্য যে সহায়তা দেওয়া হয় সেটা আমার কাছে জোড়াতালির সহায়তা মনে হয়। কারণ যে দলগুলো নিয়মিত নাটক করছে না, মফস্বলের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাদেরকে যে পরিমাণ টাকা দেওয়া হচ্ছে, সেই পরিমাণ টাকা যারা নিয়মিত মঞ্চনাটক করছে তাদেরকেও দেওয়া হচ্ছে। এটা তো সুবিচার হলো না। আমরা নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় থেকে আলী যাকেরের নামে একটি উৎসব শুরু করেছি। নতুনের উৎসব। সেটা আমরাই ফান্ডিং করি। সেখানে আমরা নতুন নাটক করার জন্য উৎসাহ দিই। এই উৎসবে শুধু নতুন নাটকই মঞ্চস্থ হয়। আমরা তো ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান। আমাদের চেয়েও বড় প্রতিষ্ঠান আছে। যারা বড় উদ্যোগ নিতে পারে, নেওয়া উচিত।
এত বছর অভিনয়ের পরেও সব সময় দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে মঞ্চ বা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। আজকাল এমনটা দেখা যায় না।আমি খুব নার্ভাস অভিনেতা। এখনো মঞ্চে উঠলে প্রথম ১০-১৫ মিনিট খুব নার্ভাস থাকি। এরপর আস্তে আস্তে নিজের আয়ত্তে চলে আসে। ডায়ালগ মুখস্থও অভিনয়ের ওপর একটা প্রভাব ফেলে। ডায়ালগ মুখস্থ থাকলে নিজের মধ্যে একধরনের নিয়ন্ত্রণ থাকে। এখন অবশ্য রিহার্সেলের অতটা সুযোগ পাই না। তবে, যতটুকু পারি চেষ্টা করি সহশিল্পীর সঙ্গে রিহার্সেল করার। অভিনয় যখন করবই একটু প্রস্তুতি তো থাকা দরকার।
অভিজ্ঞ অভিনেতা হয়েও এখনো সেটে পরিচালকের নির্দেশনা মেনেই কাজ করেন।
আসলে ডিরেক্টর তো প্রতিটি পদক্ষেপ বলে দেন না। উনি ধারণা দেন, নির্দেশনা দেন। সেই ধারণাগুলো মাথায় রেখে কাজ করার চেষ্টা করি। তবে এটাও সত্যি, আমি অবশ্যই ডিরেক্টর আর্টিস্ট।
নতুনদের কী পরামর্শ দেবেন?
প্রথমেই বাংলাটা ভালো করে শিখতে হবে। অনেকে মনে করে বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। সুতরাং এটা খুবই সহজ। এটা ঠিক নয়। উচ্চারণগুলো ভালো করে আয়ত্তে আনতে হবে। ইংরেজির কথা যদি বলি, লন্ডনের কিছু জায়গায় এমনভাবে ইংরেজি বলে সেগুলো ঠিকমতো বোঝাই যায় না। তাদেরকেও কাজ করার বেলায় প্রমিত ইংরেজি ভাষাটা আয়ত্ত করতে হয়। আমি রংপুরের মানুষ। সেখানকার ভাষা বলে বড় হয়েছি। একজন নোয়াখালীর মানুষ সেখানকার ভাষা বলে বড় হয়েছে। কিন্তু অভিনয় করতে এলে প্রমিত ভাষাটা আয়ত্ত করতে হবে। এটা হচ্ছে না বলেই নাটকগুলোতে একটা জোড়াতালির ভাষা ব্যবহার হচ্ছে। একেবারে আঞ্চলিক ভাষাটাই ব্যবহার হোক, তাতে কোনো দোষ নেই। রংপুর, নোয়াখালীর ভাষায় নাটক হোক আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা আঞ্চলিক ভাষাগুলোও ঠিকভাবে বলছি না। এমন ভাষা ব্যবহার হলে নতুনরা নাটক দেখে কোন ভাষা শিখবে? তারা যে ভাষাটা শিখছে সেটা কোনো চর্চিত ভাষা নয়।
‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। সাম্প্রতিক ধারাবাহিকগুলো আগের মতো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। এর কী কারণ?
একটি নাটকের জন্য লেখাটা খুব জরুরি। লেখাটা কেমন হচ্ছে এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। লেখার ওপর ভর করেই আমরা অভিনয়শিল্পীরা অভিনয় করি। চিত্রনাট্য ভালো না হলে ভালো নাটকও নির্মাণ সম্ভব নয়।
তাহলে কি মূল সমস্যা চিত্রনাট্যে?
স্ক্রিপটের সংকট তো বটেই। এতগুলো চ্যানেল। প্রতিদিন এত নাটক দেখাচ্ছে। এত নাট্যকার কোথা থেকে আসবে। টেলিভিশন থেকেও বাজেট দেওয়া হচ্ছে কম। এই কম বাজেটে ভালো নাটক বানানো প্রায় অসম্ভব। তাই জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকম একটা কিছু দাঁড় করিয়ে দেয়। দিন শেষে দর্শকের প্লেটে যা দিচ্ছে তারা তাই খেতে বাধ্য হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে আমরা যারা কাজ করি তাদের দায়িত্বটা বেশি। দর্শকদের ভালো নাটক, সিনেমা দেখানোর অভ্যাসটা গড়ে তোলার দায়িত্বটা আমাদেরই নিতে হবে। এটা অবশ্য রাতারাতি হয়ে যাবে না, সময় দিতে হবে।
আপনার অভিনয়জীবনের একটা বড় অংশজুড়ে আছে হুমায়ূন আহমেদের নাটক-সিনেমা। তাঁকে নিয়ে কিছু বলবেন?
টেলিভিশনে আমার সফলতার পেছনে হুমায়ূন আহমেদকে অনেক বড় করে দেখি। হুমায়ূন আহমেদের মতো লেখক আমাদের দেশে বিরল। নেই বললেই চলে। আমার সুযোগ হয়েছিল তাঁর মতো লেখকের নাটকে কাজ করার।
কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
যখন নিয়মিত অভিনয় করতাম তখন সব ধরনের চরিত্রই ভালো লাগত। বিশেষ করে বিটিভিতে অভিনয়ের শুরুর প্রথম দিক থেকেই নানামাত্রিক চরিত্রে আগ্রহ ছিল। কখনো চোর, কখনো মাস্তান কখনো আবার জমিদার। তবে প্রেমের নাটকে অর্থাৎ রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করার আগ্রহ তেমন ছিল না।
স্বাধীনতার আগে আমাদের দেশে উপমহাদেশীয় ভাষার সিনেমা প্রদর্শিত হতো। এখন আবার এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিষয়টি আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে কী প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে হয়?
এটার পেছনে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, সিনেমাকে জনপ্রিয় করার জন্য বা হলে দর্শক ফিরিয়ে আনার জন্য এই নীতিমালা করা হয়েছে। কিন্তু দেশে তো আগের মতো হলই নেই। ধীরে ধীরে সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে মানুষের। সিনেপ্লেক্সের বাইরে তো নতুন করে হল তৈরি হচ্ছে না। সিনেপ্লেক্সের সংখ্যাও কম। ভারতের প্রায় সব বড় শহরে নতুন সিনেপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে। যেখানে সিনেপ্লেক্স নেই সেখানকার সিঙ্গেল স্ক্রিনের মানও ভালো। আমাদের এখানে হলের সংখ্যা যেমন কমে গেছে, তেমনিভাবে সিনেমা হলের পরিবেশও নষ্ট হয়েছে। ঢাকার বাইরের হলগুলোর পরিবেশ আরও ভয়াবহ। আমাদের দেশে মহিলা দর্শকের সংখ্যা ব্যাপক। অথচ, নারীরা সব জায়গায় সিনেমা দেখার মতো পরিবেশ পান না। সেটাও এক সমস্যা। চলচ্চিত্রের উন্নয়ন করতে হলে ভালো হল দিতে হবে। সরকার একটা পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা যদি ঠিকমতো বাস্তবায়িত হয় তাহলে বড় একটা সম্ভাবনা আছে। শুধু জওয়ান বা পাঠানের ওপর নির্ভর করলে হবে না। আমাদের নিজেদের শক্তির ওপরও আস্থাটা রাখতে হবে। যুদ্ধের আগে লাহোর, কলকাতা, বোম্বের সিনেমা মুক্তি পেলেও আমাদের বাংলা সিনেমা কিন্তু ভালোভাবে চলেছে। সুপারহিট হয়েছে। আমরা নিজেদের শক্তি দিয়েই তাদের সঙ্গে লড়াই করতে পেরেছি। প্রতিযোগিতার জায়গাটা থাকুক কিন্তু বিদেশি সিনেমার ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে না।
দেশে ওটিটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক নির্মাতা বলছেন এ মাধ্যমে স্বাধীনভাবে গল্প বলা যায়। কেউ আবার ওটিটি মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ চাচ্ছেন। আপনার পরামর্শ কী?
শিল্পের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা উচিত নয়। কিন্তু নির্মাতাদের মধ্যেও একটা দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। তাঁরা তো সমাজের বাইরের কেউ নন। শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য অশালীন, বিকৃত আর নেতিবাচক কনটেন্ট নির্মাণ ঠিক নয়। এসব হলেই নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটা ওঠে। ওটিটির কিছু কাজ নিয়ে আমার নিজেরও কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। সেগুলো দেখে মনে হয়েছে এ ধরনের কাজ সমাজের জন্য ইতিবাচক কিছু বয়ে আনতে পারবে না।
জীবনের এই সময়ে এসে নিজেকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আমি যে আসলে কী আমি নিজেই জানি না। অভিনয়শিল্পী নাকি রাজনীতিবিদ? সমাজকর্মী নাকি ব্যবসায়ী? আমি নিজেকেই সঠিকভাবে আইডেন্টিফাই করতে পারি না। যখন যে কাজটি প্রয়োজন মনে হয়েছে, সেই কাজটিতেই সময় দিয়েছি। ছাত্রজীবনে রাজনীতি করেছি, মুক্তিযুদ্ধে গেছি। অভিনয় করেছি। আবার রাজনীতিতে ফিরেছি। আন্দোলন করেছি, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, এখনো নানা আন্দোলনের সঙ্গেই আছি। চাকরি করেছি। একেবারে ছোট্ট একটা চাকরি দিয়ে শুরু করেছি, আবার ব্যবসা করেছি। জীবদ্দশায় নানা ভূমিকায় নানা ধরনের কাজ করেছি। আমি অসাধারণ কেউ নই। অন্য সবার মতোই সাধারণ একজন।

হাসান আজিজুল হকের প্রবন্ধ অবলম্বনে ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’ সিনেমায় অভিনয় করছেন। এ সম্পর্কে বলুন।
সিনেমাটি তৈরি হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের প্রেক্ষাপটে। সে সময়ের পরিবেশ পরিস্থিতি, পাকিস্তানিদের অত্যাচার উঠে আসবে। অভিনয়টা আর আগের মতো করা হয় না। অন্য কাজে বেশি ব্যস্ত থাকি। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা বলেই আগ্রহটা তৈরি হয়েছে। এ সিনেমায় হাসান আজিজুল হকের রূপক চরিত্রে দেখা যাবে আমাকে। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলাম। তাঁকে খুব ভালো করে জানতাম। তাই সিনেমাটি নিয়ে আমার আবেগটা অনেক বেশি।
প্রবন্ধ বা সাহিত্য অবলম্বনে কি আরও বেশি সিনেমা হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
এটা তো আগে থেকে নির্ধারণ করা যাবে না যে কোনটা কম হওয়া উচিত আর কোনটা বেশি। ভালো সিনেমা নির্মাণ করার চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে, বিশেষ করে নতুন নির্মাতাদের। নতুন ভাবনা, দর্শন বা চিন্তা পর্দায় তুলে আনতে হবে।
গত বছরও মুক্তিযুদ্ধের একটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। সেই সিনেমার কী খবর?
‘জয় বাংলা ধ্বনি’ নামের সিনেমাটি করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন আমার দলের একজন রাজনৈতিক নেতা। আমি তাঁকে বারবার বলার চেষ্টা করেছি এই স্ক্রিপ্টটা কোনোভাবেই চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট হয়নি। কোনো গল্প দাঁড়ায়নি। কিন্তু কিছুতেই তাঁকে বোঝাতে পারছিলাম না। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে জানিয়ে দিলাম, সিনেমাটি আমি করতে পারব না। শুনেছি পরিচালককেও বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন অন্য আরেকজনকে নিয়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু স্ক্রিপ্টটা যদি আগের মতোই থাকে সেটা থেকে কোনো সিনেমা নির্মাণ করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
বাণিজ্যিক সিনেমায় অনুদানের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন অনেকেই। এই দাবি কতটা যৌক্তিক?
আমি এটা যৌক্তিক দাবি মনে করি না। যাঁরা বাণিজ্যিক সিনেমা নির্মাণ করেন তাঁদের জন্য বিনিয়োগকারী থাকে। কিন্তু ভিন্নধারার বা বিকল্পধারার সিনেমার প্রযোজক পাওয়া কঠিন। তাই তাঁদেরকেই অনুদান দেওয়া উচিত। অনুদানের টাকা দিয়ে তো সিনেমা শেষ করা যায় না। অনেকেই নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে। একজন আমাকে বলল, আমার বাবার কিছু ফিক্সড ডিপোজিট ছিল, কাজটি শেষ করার জন্য সেটি ভাঙিয়েছে। এভাবেই তারা সিনেমা বানায়। তাই সাহায্যটা এখানেই বেশি দরকার।
১৯৭২ সাল থেকে মঞ্চনাটকের সঙ্গে জড়িত আছেন। প্রায় ৫১ বছরের থিয়েটার জীবনে সম্প্রতি ‘রিমান্ড’ নাটকে অভিনয় করে প্রথমবার পারিশ্রমিক পেয়েছেন। কেমন ছিল অনুভূতি?
খুব মজা লেগেছে। আমরা যখন দল তৈরি করি, মঞ্চকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলাম। সেখান থেকে পয়সা পাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না, উপায়ও ছিল না, কারণও ছিল না। এখন দেখছি যে রেপার্টরি থিয়েটার হচ্ছে। বিভিন্ন দল থেকে শিল্পীরা এসে একত্রে নাটক করছেন। সেখানে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা থাকছে। সেই টিকিট বিক্রির টাকা সবার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। সে হিসেবে এবার আমিও পেলাম। ভালোই লাগছে।
এত বছরেও মঞ্চনাটকে কেন পেশাদারত্ব সৃষ্টি হলো না বলে মনে করেন?
এটা অনেক কঠিন কাজ। আমাদের দেশে কেন, ভারতেও কি মঞ্চকে পুরোপুরি পেশা হিসেবে নিতে পেরেছে? দুই-চারজন হয়তো পেরেছেন। আমরা যদি পাশ্চাত্যেও দেখি সেখানে যাঁরা খুব বড় মাপের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী তাঁরা হয়তো পেশা হিসেবে নিতে পেরেছেন। কিন্তু যাঁরা ছোটখাটো চরিত্র করেন তাঁরা কিন্তু এখনো মঞ্চকে পেশা হিসেবে নিতে পারছেন না। যদিও ওইসব দেশে মঞ্চনাটকের জন্য স্পনসর পাওয়া যায়। সরকারিভাবেও অনেক সহযোগিতা করা হয়। আমাদের দেশে তো এসবের বড় অভাব। সরকার থেকে মঞ্চনাটকের জন্য যে সহায়তা দেওয়া হয় সেটা আমার কাছে জোড়াতালির সহায়তা মনে হয়। কারণ যে দলগুলো নিয়মিত নাটক করছে না, মফস্বলের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাদেরকে যে পরিমাণ টাকা দেওয়া হচ্ছে, সেই পরিমাণ টাকা যারা নিয়মিত মঞ্চনাটক করছে তাদেরকেও দেওয়া হচ্ছে। এটা তো সুবিচার হলো না। আমরা নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় থেকে আলী যাকেরের নামে একটি উৎসব শুরু করেছি। নতুনের উৎসব। সেটা আমরাই ফান্ডিং করি। সেখানে আমরা নতুন নাটক করার জন্য উৎসাহ দিই। এই উৎসবে শুধু নতুন নাটকই মঞ্চস্থ হয়। আমরা তো ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান। আমাদের চেয়েও বড় প্রতিষ্ঠান আছে। যারা বড় উদ্যোগ নিতে পারে, নেওয়া উচিত।
এত বছর অভিনয়ের পরেও সব সময় দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে মঞ্চ বা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। আজকাল এমনটা দেখা যায় না।আমি খুব নার্ভাস অভিনেতা। এখনো মঞ্চে উঠলে প্রথম ১০-১৫ মিনিট খুব নার্ভাস থাকি। এরপর আস্তে আস্তে নিজের আয়ত্তে চলে আসে। ডায়ালগ মুখস্থও অভিনয়ের ওপর একটা প্রভাব ফেলে। ডায়ালগ মুখস্থ থাকলে নিজের মধ্যে একধরনের নিয়ন্ত্রণ থাকে। এখন অবশ্য রিহার্সেলের অতটা সুযোগ পাই না। তবে, যতটুকু পারি চেষ্টা করি সহশিল্পীর সঙ্গে রিহার্সেল করার। অভিনয় যখন করবই একটু প্রস্তুতি তো থাকা দরকার।
অভিজ্ঞ অভিনেতা হয়েও এখনো সেটে পরিচালকের নির্দেশনা মেনেই কাজ করেন।
আসলে ডিরেক্টর তো প্রতিটি পদক্ষেপ বলে দেন না। উনি ধারণা দেন, নির্দেশনা দেন। সেই ধারণাগুলো মাথায় রেখে কাজ করার চেষ্টা করি। তবে এটাও সত্যি, আমি অবশ্যই ডিরেক্টর আর্টিস্ট।
নতুনদের কী পরামর্শ দেবেন?
প্রথমেই বাংলাটা ভালো করে শিখতে হবে। অনেকে মনে করে বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। সুতরাং এটা খুবই সহজ। এটা ঠিক নয়। উচ্চারণগুলো ভালো করে আয়ত্তে আনতে হবে। ইংরেজির কথা যদি বলি, লন্ডনের কিছু জায়গায় এমনভাবে ইংরেজি বলে সেগুলো ঠিকমতো বোঝাই যায় না। তাদেরকেও কাজ করার বেলায় প্রমিত ইংরেজি ভাষাটা আয়ত্ত করতে হয়। আমি রংপুরের মানুষ। সেখানকার ভাষা বলে বড় হয়েছি। একজন নোয়াখালীর মানুষ সেখানকার ভাষা বলে বড় হয়েছে। কিন্তু অভিনয় করতে এলে প্রমিত ভাষাটা আয়ত্ত করতে হবে। এটা হচ্ছে না বলেই নাটকগুলোতে একটা জোড়াতালির ভাষা ব্যবহার হচ্ছে। একেবারে আঞ্চলিক ভাষাটাই ব্যবহার হোক, তাতে কোনো দোষ নেই। রংপুর, নোয়াখালীর ভাষায় নাটক হোক আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা আঞ্চলিক ভাষাগুলোও ঠিকভাবে বলছি না। এমন ভাষা ব্যবহার হলে নতুনরা নাটক দেখে কোন ভাষা শিখবে? তারা যে ভাষাটা শিখছে সেটা কোনো চর্চিত ভাষা নয়।
‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। সাম্প্রতিক ধারাবাহিকগুলো আগের মতো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। এর কী কারণ?
একটি নাটকের জন্য লেখাটা খুব জরুরি। লেখাটা কেমন হচ্ছে এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। লেখার ওপর ভর করেই আমরা অভিনয়শিল্পীরা অভিনয় করি। চিত্রনাট্য ভালো না হলে ভালো নাটকও নির্মাণ সম্ভব নয়।
তাহলে কি মূল সমস্যা চিত্রনাট্যে?
স্ক্রিপটের সংকট তো বটেই। এতগুলো চ্যানেল। প্রতিদিন এত নাটক দেখাচ্ছে। এত নাট্যকার কোথা থেকে আসবে। টেলিভিশন থেকেও বাজেট দেওয়া হচ্ছে কম। এই কম বাজেটে ভালো নাটক বানানো প্রায় অসম্ভব। তাই জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকম একটা কিছু দাঁড় করিয়ে দেয়। দিন শেষে দর্শকের প্লেটে যা দিচ্ছে তারা তাই খেতে বাধ্য হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে আমরা যারা কাজ করি তাদের দায়িত্বটা বেশি। দর্শকদের ভালো নাটক, সিনেমা দেখানোর অভ্যাসটা গড়ে তোলার দায়িত্বটা আমাদেরই নিতে হবে। এটা অবশ্য রাতারাতি হয়ে যাবে না, সময় দিতে হবে।
আপনার অভিনয়জীবনের একটা বড় অংশজুড়ে আছে হুমায়ূন আহমেদের নাটক-সিনেমা। তাঁকে নিয়ে কিছু বলবেন?
টেলিভিশনে আমার সফলতার পেছনে হুমায়ূন আহমেদকে অনেক বড় করে দেখি। হুমায়ূন আহমেদের মতো লেখক আমাদের দেশে বিরল। নেই বললেই চলে। আমার সুযোগ হয়েছিল তাঁর মতো লেখকের নাটকে কাজ করার।
কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
যখন নিয়মিত অভিনয় করতাম তখন সব ধরনের চরিত্রই ভালো লাগত। বিশেষ করে বিটিভিতে অভিনয়ের শুরুর প্রথম দিক থেকেই নানামাত্রিক চরিত্রে আগ্রহ ছিল। কখনো চোর, কখনো মাস্তান কখনো আবার জমিদার। তবে প্রেমের নাটকে অর্থাৎ রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করার আগ্রহ তেমন ছিল না।
স্বাধীনতার আগে আমাদের দেশে উপমহাদেশীয় ভাষার সিনেমা প্রদর্শিত হতো। এখন আবার এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিষয়টি আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে কী প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে হয়?
এটার পেছনে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, সিনেমাকে জনপ্রিয় করার জন্য বা হলে দর্শক ফিরিয়ে আনার জন্য এই নীতিমালা করা হয়েছে। কিন্তু দেশে তো আগের মতো হলই নেই। ধীরে ধীরে সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে মানুষের। সিনেপ্লেক্সের বাইরে তো নতুন করে হল তৈরি হচ্ছে না। সিনেপ্লেক্সের সংখ্যাও কম। ভারতের প্রায় সব বড় শহরে নতুন সিনেপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে। যেখানে সিনেপ্লেক্স নেই সেখানকার সিঙ্গেল স্ক্রিনের মানও ভালো। আমাদের এখানে হলের সংখ্যা যেমন কমে গেছে, তেমনিভাবে সিনেমা হলের পরিবেশও নষ্ট হয়েছে। ঢাকার বাইরের হলগুলোর পরিবেশ আরও ভয়াবহ। আমাদের দেশে মহিলা দর্শকের সংখ্যা ব্যাপক। অথচ, নারীরা সব জায়গায় সিনেমা দেখার মতো পরিবেশ পান না। সেটাও এক সমস্যা। চলচ্চিত্রের উন্নয়ন করতে হলে ভালো হল দিতে হবে। সরকার একটা পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা যদি ঠিকমতো বাস্তবায়িত হয় তাহলে বড় একটা সম্ভাবনা আছে। শুধু জওয়ান বা পাঠানের ওপর নির্ভর করলে হবে না। আমাদের নিজেদের শক্তির ওপরও আস্থাটা রাখতে হবে। যুদ্ধের আগে লাহোর, কলকাতা, বোম্বের সিনেমা মুক্তি পেলেও আমাদের বাংলা সিনেমা কিন্তু ভালোভাবে চলেছে। সুপারহিট হয়েছে। আমরা নিজেদের শক্তি দিয়েই তাদের সঙ্গে লড়াই করতে পেরেছি। প্রতিযোগিতার জায়গাটা থাকুক কিন্তু বিদেশি সিনেমার ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে না।
দেশে ওটিটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক নির্মাতা বলছেন এ মাধ্যমে স্বাধীনভাবে গল্প বলা যায়। কেউ আবার ওটিটি মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ চাচ্ছেন। আপনার পরামর্শ কী?
শিল্পের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা উচিত নয়। কিন্তু নির্মাতাদের মধ্যেও একটা দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। তাঁরা তো সমাজের বাইরের কেউ নন। শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য অশালীন, বিকৃত আর নেতিবাচক কনটেন্ট নির্মাণ ঠিক নয়। এসব হলেই নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটা ওঠে। ওটিটির কিছু কাজ নিয়ে আমার নিজেরও কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। সেগুলো দেখে মনে হয়েছে এ ধরনের কাজ সমাজের জন্য ইতিবাচক কিছু বয়ে আনতে পারবে না।
জীবনের এই সময়ে এসে নিজেকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আমি যে আসলে কী আমি নিজেই জানি না। অভিনয়শিল্পী নাকি রাজনীতিবিদ? সমাজকর্মী নাকি ব্যবসায়ী? আমি নিজেকেই সঠিকভাবে আইডেন্টিফাই করতে পারি না। যখন যে কাজটি প্রয়োজন মনে হয়েছে, সেই কাজটিতেই সময় দিয়েছি। ছাত্রজীবনে রাজনীতি করেছি, মুক্তিযুদ্ধে গেছি। অভিনয় করেছি। আবার রাজনীতিতে ফিরেছি। আন্দোলন করেছি, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, এখনো নানা আন্দোলনের সঙ্গেই আছি। চাকরি করেছি। একেবারে ছোট্ট একটা চাকরি দিয়ে শুরু করেছি, আবার ব্যবসা করেছি। জীবদ্দশায় নানা ভূমিকায় নানা ধরনের কাজ করেছি। আমি অসাধারণ কেউ নই। অন্য সবার মতোই সাধারণ একজন।

হাসান আজিজুল হকের প্রবন্ধ অবলম্বনে ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’ সিনেমায় অভিনয় করছেন। এ সম্পর্কে বলুন।
সিনেমাটি তৈরি হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের প্রেক্ষাপটে। সে সময়ের পরিবেশ পরিস্থিতি, পাকিস্তানিদের অত্যাচার উঠে আসবে। অভিনয়টা আর আগের মতো করা হয় না। অন্য কাজে বেশি ব্যস্ত থাকি। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা বলেই আগ্রহটা তৈরি হয়েছে। এ সিনেমায় হাসান আজিজুল হকের রূপক চরিত্রে দেখা যাবে আমাকে। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলাম। তাঁকে খুব ভালো করে জানতাম। তাই সিনেমাটি নিয়ে আমার আবেগটা অনেক বেশি।
প্রবন্ধ বা সাহিত্য অবলম্বনে কি আরও বেশি সিনেমা হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
এটা তো আগে থেকে নির্ধারণ করা যাবে না যে কোনটা কম হওয়া উচিত আর কোনটা বেশি। ভালো সিনেমা নির্মাণ করার চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে, বিশেষ করে নতুন নির্মাতাদের। নতুন ভাবনা, দর্শন বা চিন্তা পর্দায় তুলে আনতে হবে।
গত বছরও মুক্তিযুদ্ধের একটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। সেই সিনেমার কী খবর?
‘জয় বাংলা ধ্বনি’ নামের সিনেমাটি করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন আমার দলের একজন রাজনৈতিক নেতা। আমি তাঁকে বারবার বলার চেষ্টা করেছি এই স্ক্রিপ্টটা কোনোভাবেই চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট হয়নি। কোনো গল্প দাঁড়ায়নি। কিন্তু কিছুতেই তাঁকে বোঝাতে পারছিলাম না। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে জানিয়ে দিলাম, সিনেমাটি আমি করতে পারব না। শুনেছি পরিচালককেও বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন অন্য আরেকজনকে নিয়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু স্ক্রিপ্টটা যদি আগের মতোই থাকে সেটা থেকে কোনো সিনেমা নির্মাণ করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
বাণিজ্যিক সিনেমায় অনুদানের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন অনেকেই। এই দাবি কতটা যৌক্তিক?
আমি এটা যৌক্তিক দাবি মনে করি না। যাঁরা বাণিজ্যিক সিনেমা নির্মাণ করেন তাঁদের জন্য বিনিয়োগকারী থাকে। কিন্তু ভিন্নধারার বা বিকল্পধারার সিনেমার প্রযোজক পাওয়া কঠিন। তাই তাঁদেরকেই অনুদান দেওয়া উচিত। অনুদানের টাকা দিয়ে তো সিনেমা শেষ করা যায় না। অনেকেই নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে। একজন আমাকে বলল, আমার বাবার কিছু ফিক্সড ডিপোজিট ছিল, কাজটি শেষ করার জন্য সেটি ভাঙিয়েছে। এভাবেই তারা সিনেমা বানায়। তাই সাহায্যটা এখানেই বেশি দরকার।
১৯৭২ সাল থেকে মঞ্চনাটকের সঙ্গে জড়িত আছেন। প্রায় ৫১ বছরের থিয়েটার জীবনে সম্প্রতি ‘রিমান্ড’ নাটকে অভিনয় করে প্রথমবার পারিশ্রমিক পেয়েছেন। কেমন ছিল অনুভূতি?
খুব মজা লেগেছে। আমরা যখন দল তৈরি করি, মঞ্চকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলাম। সেখান থেকে পয়সা পাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না, উপায়ও ছিল না, কারণও ছিল না। এখন দেখছি যে রেপার্টরি থিয়েটার হচ্ছে। বিভিন্ন দল থেকে শিল্পীরা এসে একত্রে নাটক করছেন। সেখানে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা থাকছে। সেই টিকিট বিক্রির টাকা সবার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। সে হিসেবে এবার আমিও পেলাম। ভালোই লাগছে।
এত বছরেও মঞ্চনাটকে কেন পেশাদারত্ব সৃষ্টি হলো না বলে মনে করেন?
এটা অনেক কঠিন কাজ। আমাদের দেশে কেন, ভারতেও কি মঞ্চকে পুরোপুরি পেশা হিসেবে নিতে পেরেছে? দুই-চারজন হয়তো পেরেছেন। আমরা যদি পাশ্চাত্যেও দেখি সেখানে যাঁরা খুব বড় মাপের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী তাঁরা হয়তো পেশা হিসেবে নিতে পেরেছেন। কিন্তু যাঁরা ছোটখাটো চরিত্র করেন তাঁরা কিন্তু এখনো মঞ্চকে পেশা হিসেবে নিতে পারছেন না। যদিও ওইসব দেশে মঞ্চনাটকের জন্য স্পনসর পাওয়া যায়। সরকারিভাবেও অনেক সহযোগিতা করা হয়। আমাদের দেশে তো এসবের বড় অভাব। সরকার থেকে মঞ্চনাটকের জন্য যে সহায়তা দেওয়া হয় সেটা আমার কাছে জোড়াতালির সহায়তা মনে হয়। কারণ যে দলগুলো নিয়মিত নাটক করছে না, মফস্বলের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাদেরকে যে পরিমাণ টাকা দেওয়া হচ্ছে, সেই পরিমাণ টাকা যারা নিয়মিত মঞ্চনাটক করছে তাদেরকেও দেওয়া হচ্ছে। এটা তো সুবিচার হলো না। আমরা নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় থেকে আলী যাকেরের নামে একটি উৎসব শুরু করেছি। নতুনের উৎসব। সেটা আমরাই ফান্ডিং করি। সেখানে আমরা নতুন নাটক করার জন্য উৎসাহ দিই। এই উৎসবে শুধু নতুন নাটকই মঞ্চস্থ হয়। আমরা তো ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান। আমাদের চেয়েও বড় প্রতিষ্ঠান আছে। যারা বড় উদ্যোগ নিতে পারে, নেওয়া উচিত।
এত বছর অভিনয়ের পরেও সব সময় দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে মঞ্চ বা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। আজকাল এমনটা দেখা যায় না।আমি খুব নার্ভাস অভিনেতা। এখনো মঞ্চে উঠলে প্রথম ১০-১৫ মিনিট খুব নার্ভাস থাকি। এরপর আস্তে আস্তে নিজের আয়ত্তে চলে আসে। ডায়ালগ মুখস্থও অভিনয়ের ওপর একটা প্রভাব ফেলে। ডায়ালগ মুখস্থ থাকলে নিজের মধ্যে একধরনের নিয়ন্ত্রণ থাকে। এখন অবশ্য রিহার্সেলের অতটা সুযোগ পাই না। তবে, যতটুকু পারি চেষ্টা করি সহশিল্পীর সঙ্গে রিহার্সেল করার। অভিনয় যখন করবই একটু প্রস্তুতি তো থাকা দরকার।
অভিজ্ঞ অভিনেতা হয়েও এখনো সেটে পরিচালকের নির্দেশনা মেনেই কাজ করেন।
আসলে ডিরেক্টর তো প্রতিটি পদক্ষেপ বলে দেন না। উনি ধারণা দেন, নির্দেশনা দেন। সেই ধারণাগুলো মাথায় রেখে কাজ করার চেষ্টা করি। তবে এটাও সত্যি, আমি অবশ্যই ডিরেক্টর আর্টিস্ট।
নতুনদের কী পরামর্শ দেবেন?
প্রথমেই বাংলাটা ভালো করে শিখতে হবে। অনেকে মনে করে বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। সুতরাং এটা খুবই সহজ। এটা ঠিক নয়। উচ্চারণগুলো ভালো করে আয়ত্তে আনতে হবে। ইংরেজির কথা যদি বলি, লন্ডনের কিছু জায়গায় এমনভাবে ইংরেজি বলে সেগুলো ঠিকমতো বোঝাই যায় না। তাদেরকেও কাজ করার বেলায় প্রমিত ইংরেজি ভাষাটা আয়ত্ত করতে হয়। আমি রংপুরের মানুষ। সেখানকার ভাষা বলে বড় হয়েছি। একজন নোয়াখালীর মানুষ সেখানকার ভাষা বলে বড় হয়েছে। কিন্তু অভিনয় করতে এলে প্রমিত ভাষাটা আয়ত্ত করতে হবে। এটা হচ্ছে না বলেই নাটকগুলোতে একটা জোড়াতালির ভাষা ব্যবহার হচ্ছে। একেবারে আঞ্চলিক ভাষাটাই ব্যবহার হোক, তাতে কোনো দোষ নেই। রংপুর, নোয়াখালীর ভাষায় নাটক হোক আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা আঞ্চলিক ভাষাগুলোও ঠিকভাবে বলছি না। এমন ভাষা ব্যবহার হলে নতুনরা নাটক দেখে কোন ভাষা শিখবে? তারা যে ভাষাটা শিখছে সেটা কোনো চর্চিত ভাষা নয়।
‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। সাম্প্রতিক ধারাবাহিকগুলো আগের মতো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। এর কী কারণ?
একটি নাটকের জন্য লেখাটা খুব জরুরি। লেখাটা কেমন হচ্ছে এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। লেখার ওপর ভর করেই আমরা অভিনয়শিল্পীরা অভিনয় করি। চিত্রনাট্য ভালো না হলে ভালো নাটকও নির্মাণ সম্ভব নয়।
তাহলে কি মূল সমস্যা চিত্রনাট্যে?
স্ক্রিপটের সংকট তো বটেই। এতগুলো চ্যানেল। প্রতিদিন এত নাটক দেখাচ্ছে। এত নাট্যকার কোথা থেকে আসবে। টেলিভিশন থেকেও বাজেট দেওয়া হচ্ছে কম। এই কম বাজেটে ভালো নাটক বানানো প্রায় অসম্ভব। তাই জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকম একটা কিছু দাঁড় করিয়ে দেয়। দিন শেষে দর্শকের প্লেটে যা দিচ্ছে তারা তাই খেতে বাধ্য হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে আমরা যারা কাজ করি তাদের দায়িত্বটা বেশি। দর্শকদের ভালো নাটক, সিনেমা দেখানোর অভ্যাসটা গড়ে তোলার দায়িত্বটা আমাদেরই নিতে হবে। এটা অবশ্য রাতারাতি হয়ে যাবে না, সময় দিতে হবে।
আপনার অভিনয়জীবনের একটা বড় অংশজুড়ে আছে হুমায়ূন আহমেদের নাটক-সিনেমা। তাঁকে নিয়ে কিছু বলবেন?
টেলিভিশনে আমার সফলতার পেছনে হুমায়ূন আহমেদকে অনেক বড় করে দেখি। হুমায়ূন আহমেদের মতো লেখক আমাদের দেশে বিরল। নেই বললেই চলে। আমার সুযোগ হয়েছিল তাঁর মতো লেখকের নাটকে কাজ করার।
কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
যখন নিয়মিত অভিনয় করতাম তখন সব ধরনের চরিত্রই ভালো লাগত। বিশেষ করে বিটিভিতে অভিনয়ের শুরুর প্রথম দিক থেকেই নানামাত্রিক চরিত্রে আগ্রহ ছিল। কখনো চোর, কখনো মাস্তান কখনো আবার জমিদার। তবে প্রেমের নাটকে অর্থাৎ রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করার আগ্রহ তেমন ছিল না।
স্বাধীনতার আগে আমাদের দেশে উপমহাদেশীয় ভাষার সিনেমা প্রদর্শিত হতো। এখন আবার এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিষয়টি আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে কী প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে হয়?
এটার পেছনে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, সিনেমাকে জনপ্রিয় করার জন্য বা হলে দর্শক ফিরিয়ে আনার জন্য এই নীতিমালা করা হয়েছে। কিন্তু দেশে তো আগের মতো হলই নেই। ধীরে ধীরে সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে মানুষের। সিনেপ্লেক্সের বাইরে তো নতুন করে হল তৈরি হচ্ছে না। সিনেপ্লেক্সের সংখ্যাও কম। ভারতের প্রায় সব বড় শহরে নতুন সিনেপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে। যেখানে সিনেপ্লেক্স নেই সেখানকার সিঙ্গেল স্ক্রিনের মানও ভালো। আমাদের এখানে হলের সংখ্যা যেমন কমে গেছে, তেমনিভাবে সিনেমা হলের পরিবেশও নষ্ট হয়েছে। ঢাকার বাইরের হলগুলোর পরিবেশ আরও ভয়াবহ। আমাদের দেশে মহিলা দর্শকের সংখ্যা ব্যাপক। অথচ, নারীরা সব জায়গায় সিনেমা দেখার মতো পরিবেশ পান না। সেটাও এক সমস্যা। চলচ্চিত্রের উন্নয়ন করতে হলে ভালো হল দিতে হবে। সরকার একটা পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা যদি ঠিকমতো বাস্তবায়িত হয় তাহলে বড় একটা সম্ভাবনা আছে। শুধু জওয়ান বা পাঠানের ওপর নির্ভর করলে হবে না। আমাদের নিজেদের শক্তির ওপরও আস্থাটা রাখতে হবে। যুদ্ধের আগে লাহোর, কলকাতা, বোম্বের সিনেমা মুক্তি পেলেও আমাদের বাংলা সিনেমা কিন্তু ভালোভাবে চলেছে। সুপারহিট হয়েছে। আমরা নিজেদের শক্তি দিয়েই তাদের সঙ্গে লড়াই করতে পেরেছি। প্রতিযোগিতার জায়গাটা থাকুক কিন্তু বিদেশি সিনেমার ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে না।
দেশে ওটিটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক নির্মাতা বলছেন এ মাধ্যমে স্বাধীনভাবে গল্প বলা যায়। কেউ আবার ওটিটি মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ চাচ্ছেন। আপনার পরামর্শ কী?
শিল্পের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা উচিত নয়। কিন্তু নির্মাতাদের মধ্যেও একটা দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। তাঁরা তো সমাজের বাইরের কেউ নন। শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য অশালীন, বিকৃত আর নেতিবাচক কনটেন্ট নির্মাণ ঠিক নয়। এসব হলেই নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটা ওঠে। ওটিটির কিছু কাজ নিয়ে আমার নিজেরও কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। সেগুলো দেখে মনে হয়েছে এ ধরনের কাজ সমাজের জন্য ইতিবাচক কিছু বয়ে আনতে পারবে না।
জীবনের এই সময়ে এসে নিজেকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আমি যে আসলে কী আমি নিজেই জানি না। অভিনয়শিল্পী নাকি রাজনীতিবিদ? সমাজকর্মী নাকি ব্যবসায়ী? আমি নিজেকেই সঠিকভাবে আইডেন্টিফাই করতে পারি না। যখন যে কাজটি প্রয়োজন মনে হয়েছে, সেই কাজটিতেই সময় দিয়েছি। ছাত্রজীবনে রাজনীতি করেছি, মুক্তিযুদ্ধে গেছি। অভিনয় করেছি। আবার রাজনীতিতে ফিরেছি। আন্দোলন করেছি, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, এখনো নানা আন্দোলনের সঙ্গেই আছি। চাকরি করেছি। একেবারে ছোট্ট একটা চাকরি দিয়ে শুরু করেছি, আবার ব্যবসা করেছি। জীবদ্দশায় নানা ভূমিকায় নানা ধরনের কাজ করেছি। আমি অসাধারণ কেউ নই। অন্য সবার মতোই সাধারণ একজন।

হাসান আজিজুল হকের প্রবন্ধ অবলম্বনে ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’ সিনেমায় অভিনয় করছেন। এ সম্পর্কে বলুন।
সিনেমাটি তৈরি হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের প্রেক্ষাপটে। সে সময়ের পরিবেশ পরিস্থিতি, পাকিস্তানিদের অত্যাচার উঠে আসবে। অভিনয়টা আর আগের মতো করা হয় না। অন্য কাজে বেশি ব্যস্ত থাকি। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা বলেই আগ্রহটা তৈরি হয়েছে। এ সিনেমায় হাসান আজিজুল হকের রূপক চরিত্রে দেখা যাবে আমাকে। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলাম। তাঁকে খুব ভালো করে জানতাম। তাই সিনেমাটি নিয়ে আমার আবেগটা অনেক বেশি।
প্রবন্ধ বা সাহিত্য অবলম্বনে কি আরও বেশি সিনেমা হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
এটা তো আগে থেকে নির্ধারণ করা যাবে না যে কোনটা কম হওয়া উচিত আর কোনটা বেশি। ভালো সিনেমা নির্মাণ করার চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে, বিশেষ করে নতুন নির্মাতাদের। নতুন ভাবনা, দর্শন বা চিন্তা পর্দায় তুলে আনতে হবে।
গত বছরও মুক্তিযুদ্ধের একটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। সেই সিনেমার কী খবর?
‘জয় বাংলা ধ্বনি’ নামের সিনেমাটি করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন আমার দলের একজন রাজনৈতিক নেতা। আমি তাঁকে বারবার বলার চেষ্টা করেছি এই স্ক্রিপ্টটা কোনোভাবেই চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট হয়নি। কোনো গল্প দাঁড়ায়নি। কিন্তু কিছুতেই তাঁকে বোঝাতে পারছিলাম না। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে জানিয়ে দিলাম, সিনেমাটি আমি করতে পারব না। শুনেছি পরিচালককেও বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন অন্য আরেকজনকে নিয়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু স্ক্রিপ্টটা যদি আগের মতোই থাকে সেটা থেকে কোনো সিনেমা নির্মাণ করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
বাণিজ্যিক সিনেমায় অনুদানের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন অনেকেই। এই দাবি কতটা যৌক্তিক?
আমি এটা যৌক্তিক দাবি মনে করি না। যাঁরা বাণিজ্যিক সিনেমা নির্মাণ করেন তাঁদের জন্য বিনিয়োগকারী থাকে। কিন্তু ভিন্নধারার বা বিকল্পধারার সিনেমার প্রযোজক পাওয়া কঠিন। তাই তাঁদেরকেই অনুদান দেওয়া উচিত। অনুদানের টাকা দিয়ে তো সিনেমা শেষ করা যায় না। অনেকেই নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে। একজন আমাকে বলল, আমার বাবার কিছু ফিক্সড ডিপোজিট ছিল, কাজটি শেষ করার জন্য সেটি ভাঙিয়েছে। এভাবেই তারা সিনেমা বানায়। তাই সাহায্যটা এখানেই বেশি দরকার।
১৯৭২ সাল থেকে মঞ্চনাটকের সঙ্গে জড়িত আছেন। প্রায় ৫১ বছরের থিয়েটার জীবনে সম্প্রতি ‘রিমান্ড’ নাটকে অভিনয় করে প্রথমবার পারিশ্রমিক পেয়েছেন। কেমন ছিল অনুভূতি?
খুব মজা লেগেছে। আমরা যখন দল তৈরি করি, মঞ্চকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলাম। সেখান থেকে পয়সা পাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না, উপায়ও ছিল না, কারণও ছিল না। এখন দেখছি যে রেপার্টরি থিয়েটার হচ্ছে। বিভিন্ন দল থেকে শিল্পীরা এসে একত্রে নাটক করছেন। সেখানে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা থাকছে। সেই টিকিট বিক্রির টাকা সবার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। সে হিসেবে এবার আমিও পেলাম। ভালোই লাগছে।
এত বছরেও মঞ্চনাটকে কেন পেশাদারত্ব সৃষ্টি হলো না বলে মনে করেন?
এটা অনেক কঠিন কাজ। আমাদের দেশে কেন, ভারতেও কি মঞ্চকে পুরোপুরি পেশা হিসেবে নিতে পেরেছে? দুই-চারজন হয়তো পেরেছেন। আমরা যদি পাশ্চাত্যেও দেখি সেখানে যাঁরা খুব বড় মাপের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী তাঁরা হয়তো পেশা হিসেবে নিতে পেরেছেন। কিন্তু যাঁরা ছোটখাটো চরিত্র করেন তাঁরা কিন্তু এখনো মঞ্চকে পেশা হিসেবে নিতে পারছেন না। যদিও ওইসব দেশে মঞ্চনাটকের জন্য স্পনসর পাওয়া যায়। সরকারিভাবেও অনেক সহযোগিতা করা হয়। আমাদের দেশে তো এসবের বড় অভাব। সরকার থেকে মঞ্চনাটকের জন্য যে সহায়তা দেওয়া হয় সেটা আমার কাছে জোড়াতালির সহায়তা মনে হয়। কারণ যে দলগুলো নিয়মিত নাটক করছে না, মফস্বলের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাদেরকে যে পরিমাণ টাকা দেওয়া হচ্ছে, সেই পরিমাণ টাকা যারা নিয়মিত মঞ্চনাটক করছে তাদেরকেও দেওয়া হচ্ছে। এটা তো সুবিচার হলো না। আমরা নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় থেকে আলী যাকেরের নামে একটি উৎসব শুরু করেছি। নতুনের উৎসব। সেটা আমরাই ফান্ডিং করি। সেখানে আমরা নতুন নাটক করার জন্য উৎসাহ দিই। এই উৎসবে শুধু নতুন নাটকই মঞ্চস্থ হয়। আমরা তো ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান। আমাদের চেয়েও বড় প্রতিষ্ঠান আছে। যারা বড় উদ্যোগ নিতে পারে, নেওয়া উচিত।
এত বছর অভিনয়ের পরেও সব সময় দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে মঞ্চ বা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। আজকাল এমনটা দেখা যায় না।আমি খুব নার্ভাস অভিনেতা। এখনো মঞ্চে উঠলে প্রথম ১০-১৫ মিনিট খুব নার্ভাস থাকি। এরপর আস্তে আস্তে নিজের আয়ত্তে চলে আসে। ডায়ালগ মুখস্থও অভিনয়ের ওপর একটা প্রভাব ফেলে। ডায়ালগ মুখস্থ থাকলে নিজের মধ্যে একধরনের নিয়ন্ত্রণ থাকে। এখন অবশ্য রিহার্সেলের অতটা সুযোগ পাই না। তবে, যতটুকু পারি চেষ্টা করি সহশিল্পীর সঙ্গে রিহার্সেল করার। অভিনয় যখন করবই একটু প্রস্তুতি তো থাকা দরকার।
অভিজ্ঞ অভিনেতা হয়েও এখনো সেটে পরিচালকের নির্দেশনা মেনেই কাজ করেন।
আসলে ডিরেক্টর তো প্রতিটি পদক্ষেপ বলে দেন না। উনি ধারণা দেন, নির্দেশনা দেন। সেই ধারণাগুলো মাথায় রেখে কাজ করার চেষ্টা করি। তবে এটাও সত্যি, আমি অবশ্যই ডিরেক্টর আর্টিস্ট।
নতুনদের কী পরামর্শ দেবেন?
প্রথমেই বাংলাটা ভালো করে শিখতে হবে। অনেকে মনে করে বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। সুতরাং এটা খুবই সহজ। এটা ঠিক নয়। উচ্চারণগুলো ভালো করে আয়ত্তে আনতে হবে। ইংরেজির কথা যদি বলি, লন্ডনের কিছু জায়গায় এমনভাবে ইংরেজি বলে সেগুলো ঠিকমতো বোঝাই যায় না। তাদেরকেও কাজ করার বেলায় প্রমিত ইংরেজি ভাষাটা আয়ত্ত করতে হয়। আমি রংপুরের মানুষ। সেখানকার ভাষা বলে বড় হয়েছি। একজন নোয়াখালীর মানুষ সেখানকার ভাষা বলে বড় হয়েছে। কিন্তু অভিনয় করতে এলে প্রমিত ভাষাটা আয়ত্ত করতে হবে। এটা হচ্ছে না বলেই নাটকগুলোতে একটা জোড়াতালির ভাষা ব্যবহার হচ্ছে। একেবারে আঞ্চলিক ভাষাটাই ব্যবহার হোক, তাতে কোনো দোষ নেই। রংপুর, নোয়াখালীর ভাষায় নাটক হোক আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা আঞ্চলিক ভাষাগুলোও ঠিকভাবে বলছি না। এমন ভাষা ব্যবহার হলে নতুনরা নাটক দেখে কোন ভাষা শিখবে? তারা যে ভাষাটা শিখছে সেটা কোনো চর্চিত ভাষা নয়।
‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। সাম্প্রতিক ধারাবাহিকগুলো আগের মতো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। এর কী কারণ?
একটি নাটকের জন্য লেখাটা খুব জরুরি। লেখাটা কেমন হচ্ছে এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। লেখার ওপর ভর করেই আমরা অভিনয়শিল্পীরা অভিনয় করি। চিত্রনাট্য ভালো না হলে ভালো নাটকও নির্মাণ সম্ভব নয়।
তাহলে কি মূল সমস্যা চিত্রনাট্যে?
স্ক্রিপটের সংকট তো বটেই। এতগুলো চ্যানেল। প্রতিদিন এত নাটক দেখাচ্ছে। এত নাট্যকার কোথা থেকে আসবে। টেলিভিশন থেকেও বাজেট দেওয়া হচ্ছে কম। এই কম বাজেটে ভালো নাটক বানানো প্রায় অসম্ভব। তাই জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকম একটা কিছু দাঁড় করিয়ে দেয়। দিন শেষে দর্শকের প্লেটে যা দিচ্ছে তারা তাই খেতে বাধ্য হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে আমরা যারা কাজ করি তাদের দায়িত্বটা বেশি। দর্শকদের ভালো নাটক, সিনেমা দেখানোর অভ্যাসটা গড়ে তোলার দায়িত্বটা আমাদেরই নিতে হবে। এটা অবশ্য রাতারাতি হয়ে যাবে না, সময় দিতে হবে।
আপনার অভিনয়জীবনের একটা বড় অংশজুড়ে আছে হুমায়ূন আহমেদের নাটক-সিনেমা। তাঁকে নিয়ে কিছু বলবেন?
টেলিভিশনে আমার সফলতার পেছনে হুমায়ূন আহমেদকে অনেক বড় করে দেখি। হুমায়ূন আহমেদের মতো লেখক আমাদের দেশে বিরল। নেই বললেই চলে। আমার সুযোগ হয়েছিল তাঁর মতো লেখকের নাটকে কাজ করার।
কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
যখন নিয়মিত অভিনয় করতাম তখন সব ধরনের চরিত্রই ভালো লাগত। বিশেষ করে বিটিভিতে অভিনয়ের শুরুর প্রথম দিক থেকেই নানামাত্রিক চরিত্রে আগ্রহ ছিল। কখনো চোর, কখনো মাস্তান কখনো আবার জমিদার। তবে প্রেমের নাটকে অর্থাৎ রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করার আগ্রহ তেমন ছিল না।
স্বাধীনতার আগে আমাদের দেশে উপমহাদেশীয় ভাষার সিনেমা প্রদর্শিত হতো। এখন আবার এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিষয়টি আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে কী প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে হয়?
এটার পেছনে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, সিনেমাকে জনপ্রিয় করার জন্য বা হলে দর্শক ফিরিয়ে আনার জন্য এই নীতিমালা করা হয়েছে। কিন্তু দেশে তো আগের মতো হলই নেই। ধীরে ধীরে সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে মানুষের। সিনেপ্লেক্সের বাইরে তো নতুন করে হল তৈরি হচ্ছে না। সিনেপ্লেক্সের সংখ্যাও কম। ভারতের প্রায় সব বড় শহরে নতুন সিনেপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে। যেখানে সিনেপ্লেক্স নেই সেখানকার সিঙ্গেল স্ক্রিনের মানও ভালো। আমাদের এখানে হলের সংখ্যা যেমন কমে গেছে, তেমনিভাবে সিনেমা হলের পরিবেশও নষ্ট হয়েছে। ঢাকার বাইরের হলগুলোর পরিবেশ আরও ভয়াবহ। আমাদের দেশে মহিলা দর্শকের সংখ্যা ব্যাপক। অথচ, নারীরা সব জায়গায় সিনেমা দেখার মতো পরিবেশ পান না। সেটাও এক সমস্যা। চলচ্চিত্রের উন্নয়ন করতে হলে ভালো হল দিতে হবে। সরকার একটা পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা যদি ঠিকমতো বাস্তবায়িত হয় তাহলে বড় একটা সম্ভাবনা আছে। শুধু জওয়ান বা পাঠানের ওপর নির্ভর করলে হবে না। আমাদের নিজেদের শক্তির ওপরও আস্থাটা রাখতে হবে। যুদ্ধের আগে লাহোর, কলকাতা, বোম্বের সিনেমা মুক্তি পেলেও আমাদের বাংলা সিনেমা কিন্তু ভালোভাবে চলেছে। সুপারহিট হয়েছে। আমরা নিজেদের শক্তি দিয়েই তাদের সঙ্গে লড়াই করতে পেরেছি। প্রতিযোগিতার জায়গাটা থাকুক কিন্তু বিদেশি সিনেমার ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে না।
দেশে ওটিটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক নির্মাতা বলছেন এ মাধ্যমে স্বাধীনভাবে গল্প বলা যায়। কেউ আবার ওটিটি মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ চাচ্ছেন। আপনার পরামর্শ কী?
শিল্পের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা উচিত নয়। কিন্তু নির্মাতাদের মধ্যেও একটা দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। তাঁরা তো সমাজের বাইরের কেউ নন। শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য অশালীন, বিকৃত আর নেতিবাচক কনটেন্ট নির্মাণ ঠিক নয়। এসব হলেই নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটা ওঠে। ওটিটির কিছু কাজ নিয়ে আমার নিজেরও কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। সেগুলো দেখে মনে হয়েছে এ ধরনের কাজ সমাজের জন্য ইতিবাচক কিছু বয়ে আনতে পারবে না।
জীবনের এই সময়ে এসে নিজেকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আমি যে আসলে কী আমি নিজেই জানি না। অভিনয়শিল্পী নাকি রাজনীতিবিদ? সমাজকর্মী নাকি ব্যবসায়ী? আমি নিজেকেই সঠিকভাবে আইডেন্টিফাই করতে পারি না। যখন যে কাজটি প্রয়োজন মনে হয়েছে, সেই কাজটিতেই সময় দিয়েছি। ছাত্রজীবনে রাজনীতি করেছি, মুক্তিযুদ্ধে গেছি। অভিনয় করেছি। আবার রাজনীতিতে ফিরেছি। আন্দোলন করেছি, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, এখনো নানা আন্দোলনের সঙ্গেই আছি। চাকরি করেছি। একেবারে ছোট্ট একটা চাকরি দিয়ে শুরু করেছি, আবার ব্যবসা করেছি। জীবদ্দশায় নানা ভূমিকায় নানা ধরনের কাজ করেছি। আমি অসাধারণ কেউ নই। অন্য সবার মতোই সাধারণ একজন।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

দীর্ঘদিন পর নতুন সিনেমায় অভিনয় করছেন আসাদুজ্জামান নূর। নাম ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’। হাসান আজিজুল হকের প্রবন্ধ অবলম্বনে সরকারি অনুদানের সিনেমাটি বানাচ্ছেন রফিকুল আনোয়ার রাসেল। নতুন সিনেমা ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে...
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

দীর্ঘদিন পর নতুন সিনেমায় অভিনয় করছেন আসাদুজ্জামান নূর। নাম ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’। হাসান আজিজুল হকের প্রবন্ধ অবলম্বনে সরকারি অনুদানের সিনেমাটি বানাচ্ছেন রফিকুল আনোয়ার রাসেল। নতুন সিনেমা ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে...
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

দীর্ঘদিন পর নতুন সিনেমায় অভিনয় করছেন আসাদুজ্জামান নূর। নাম ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’। হাসান আজিজুল হকের প্রবন্ধ অবলম্বনে সরকারি অনুদানের সিনেমাটি বানাচ্ছেন রফিকুল আনোয়ার রাসেল। নতুন সিনেমা ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে...
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

দীর্ঘদিন পর নতুন সিনেমায় অভিনয় করছেন আসাদুজ্জামান নূর। নাম ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’। হাসান আজিজুল হকের প্রবন্ধ অবলম্বনে সরকারি অনুদানের সিনেমাটি বানাচ্ছেন রফিকুল আনোয়ার রাসেল। নতুন সিনেমা ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে...
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫