রুমায় গাছ কাটল প্রতিপক্ষ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা

বান্দরবানের রুমায় জেলা দায়রা জজ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রতিপক্ষের বাগান থেকে গাছ কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা সদর ইউনিয়নের রুমাচড়পাড়ায় গত রোববার দুপুরে গাছ কাটার ঘটনা ঘটেছে।

গাছ কাটায় লক্ষাধিক টাকার সম্পদ ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাগান মালিক শৈমংউ মারমা। ঘটনার পর থেকে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রতিপক্ষের হুমকির মুখে দিনযাপন করছেন বলে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, দীর্ঘ দিন শৈমংউ মারমার চাষ করা জমির মালিকানা নিয়ে মেদুসে মারমার সঙ্গে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে একটি মামলায় বান্দরবান জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায় শৈমংউ মারমা বিপক্ষে যায়। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে জেলা দায়রা জজ আদালতে স্থগিতাদেশ চেয়ে ফৌজদারি রিভিশন আনেন তিনি। এতে রিভিশন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশের কার্যকারিতা স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।

গত বুধবার রুমাচড়পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, পাড়া থেকে ১০০ গজ দূরের জমিতে কেটে ফেলা কয়েকটি সেগুনগাছ পড়ে আছে। তিনটি জায়গায় কাটা গাছগুলো পড়ে থাকলেও ডালপালাগুলো কাটা হয়নি।

জমিতে পড়ে থাকা গাছগুলো দেখিয়ে শৈমংউ মারমা বলেন, ‘আদালতের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে প্রভাবশালী মেদুসে মারমা লোকজন দিয়ে ১৬ জানুয়ারি আমার বাগান থেকে গাছগুলো কেটে নিয়ে যায়। গাছ না কাটতে অনুরোধ করলে তাঁর লোকজন আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তা ছাড়া বাগানে সব গাছ কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়ে গেছে।’

একটি স্থানের দিকে হাত দেখিয়ে শৈমংউ অভিযোগ করেন, ‘গাছগুলো কাটার সময় মেদুসে মারমার লোকজনের সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও ছিলেন। তাঁরাও মেদুসে মারমার পক্ষ নিয়ে আমাকে কথা বলতে সুযোগ দেননি। প্রায় ২৫ বছর আগে সেগুনগাছগুলো লাগিয়ে ছিলাম। গাছ কেটে নেওয়ায় লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।’

এদিকে জমিটি নিজের দাবি করে অভিযুক্ত মেদুসে মারমা বলেন, ‘এই জমির বৈধ দলিল আমার আছে। সম্প্রতি এ নিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের একটি মামলার রায় আমার পক্ষে হয়েছে। তাই নিজ জমি থেকে সেগুন গাছগুলো বিক্রির জন্য লোক লাগিয়ে কেটেছি।’

তবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে জেলা দায়রা জজ আদালতে স্থগিতাদেশ প্রসঙ্গে মেদুসে মারমা বলেন, তাঁর কাছে আদালত থেকে স্থগিতাদেশের কোনো কাগজ আসেনি। তাই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের রায়ই তিনি ন্যায়সংগত মনে করেন।

শৈমং উ মারমার আইনজীবী জিয়াউল মোবাইল ফোনে বলেন, গত বছরের ২৫ নভেম্বর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রায়ের আদেশের বিপরীতে চলতি বছরে জেলা দায়রা জজ আদালতে করা রিভিশন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় আগের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত আদেশ দেওয়া হয়েছে। তাই বিবদমান জমি থেকে গাছগুলো কেটে নিয়ে অন্যায় করেছে বিবাদী মেদুসে মারমা।

গাছ কাটার সময় পুলিশের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেদুসে মারমা রুমা থানা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে খোঁজ নিতে সেখানে গিয়েছিলাম, যাতে কেউ আইন নিজের হাতে না নেন।’

এসআই আতিকুল দাবি করেন, ঘটনার সময় রিভিশনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের স্থগিতাদেশের কোনো ধরনের কাগজ দেখাতে পারেননি শৈমংউ মারমা। তবে ওই আদেশ সংক্রান্ত কাগজপত্র এই প্রতিবেদকের কাছে পাঠিয়েছেন শৈমংউর আইনজীবী।