
আজকের পত্রিকা: নতুন মন্ত্রিসভা সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
আনু মুহাম্মদ: মন্ত্রিসভা নিয়ে আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
আজকের পত্রিকা: কারণটা কী?
আনু মুহাম্মদ: এই সরকার যে ধরনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করেছে, তাতে নাগরিকদের গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান—মানে বাছাইয়ের কোনো সুযোগ ছিল না। ফলে আগের সরকার তার ইচ্ছামতো লোকজন ঠিক করেছে। নির্বাচন নয়, মনোনয়ন-প্রক্রিয়ায় যেভাবে এসেছে তাতে নাগরিকদের ভূমিকা ছিল ‘মৃত সৈনিকের’! এর মধ্যে তাই কোনো পরিবর্তন নেই। পরিবর্তন না থাকার কারণে আমার আশঙ্কা হচ্ছে, আগের ধারাবাহিকতাতেই দেশ পরিচালিত হবে। যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহির কোনো স্থান নেই। সবকিছুতে জোরজবরদস্তি আর দুর্নীতি। নাগরিকদের মতামত নয়, দেশি-বিদেশি কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থই প্রধান। তাতে দেশ ও মানুষের বড় ক্ষতি হলেও কোনো প্রতিকার নেই। সেই ধারাবাহিকতায় নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। কয়েকজন মন্ত্রী পরিবর্তিত হয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু তাতে কী আসে-যায়? বাংলাদেশে তো আলাদাভাবে মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা নেই। আবার মন্ত্রীদেরও আলাদা কোনো ভূমিকা বা কার্যকারিতা নেই।
বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থাটা এ রকম দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রীদের আপেক্ষিক ক্ষমতা, স্বাধীনতা ও সক্রিয়তাও দুর্লভ। এখন সব মন্ত্রী, মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বের ওপর নির্ভরশীল এবং তাঁর দ্বারা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত। কাজেই বেশি দক্ষ, অদক্ষ, বেশি দুর্নীতিবাজ, কম দুর্নীতিবাজ, বেশি চাপাবাজ, কম চাপাবাজ, ভদ্র বা অভদ্র এ ধরনের পার্থক্য এখন আর কোনো কাজ করে না। মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বেই হয়। মন্ত্রীরা সারাক্ষণ ওপরের নির্দেশের দিকেই তাকিয়ে থাকেন, আর প্রধানমন্ত্রীর বন্দনা করেন। শুধু হয়তো কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম, স্বজনতোষণ বা দুর্নীতির ক্ষেত্রে নিজের আলাদা সক্রিয়তা থাকে।
একটি দেশকে যদি ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলতে হয়, তাহলে সেখানে প্রতিষ্ঠান কার্যকর থাকা জরুরি। শুধু সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর থাকতে হয়। আদালত, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার সংস্থা, নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান যদি প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় কাজ করতে পারে, তাহলে সরকার যদি কোনো ভুল করে বা কোনো ধরনের বিচ্যুতি ঘটে, তাহলে সংশোধন করার সুযোগ থাকে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রক্রিয়া তৈরি হয়।
আমাদের দেশের পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলো আর স্বতন্ত্রভাবে সক্রিয় থাকতে পারছে না। একক কর্তৃত্বের ওপর সবাই নির্ভরশীল। এসব আমরা পত্রিকা এবং মন্ত্রীদের বক্তব্যের মধ্য দিয়েও বুঝতে পারি। যেমন কোথাও অপরাধ বা দুর্নীতি বা কেউ খুন হোক বা কোনো বড় ঘটনা, তখন আমরা শুনি মন্ত্রী বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন’, ‘প্রধানমন্ত্রী নজর রাখছেন’ ইত্যাদি। যেন প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ না দিলে মন্ত্রীদের কোনো চলনশক্তি নেই। এভাবে যদি প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্ব দিয়েই সবকিছু চলে তাহলে মন্ত্রী পরিবর্তন হলে চেহারা ছাড়া কী পরিবর্তন হবে? কোনো দেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক সরকারে এ রকম কোনো উদাহরণ নেই যে প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বে সবকিছু চলে। এত মন্ত্রী আসলে কেন জনগণের টাকায় রাখা হয়, সেটাই প্রশ্ন।
আজকের পত্রিকা: নতুন সরকারের সামনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কী?
আনু মুহাম্মদ: তারা কোনটাকে চ্যালেঞ্জ মনে করে, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। এই সরকার নতুন করে নির্বাচিত হওয়ার পর যেসব কথাবার্তা বলছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, জনগণের সব ধরনের সমস্যাকে অস্বীকার করার প্রবণতা তাদের একই রকম আছে।
জনগণের কাছে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, নিরাপত্তার সমস্যা, শিক্ষা, চিকিৎসা ভালোভাবে পাচ্ছে না। দিন দিন এসবের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। জনগণের জন্য বিপজ্জনক হচ্ছে, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বাড়ছে, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। সরকার এগুলোকে তো গুরুত্ব দিচ্ছে না কখনোই। যদি জাতীয়ভাবে চিন্তা করি, তাহলে আমাদের দেশে দুর্নীতি হলো একটা বড় সমস্যা।
প্রধানমন্ত্রী এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স, এখনো বলছেন। অতীতে তাঁর মুখে যতই আমরা এ কথা শুনেছি, ততই দুর্নীতি কিন্তু বেড়েছে। দুর্নীতিবাজ হিসেবে নানা রকম বাধাবিপত্তি থাকার পরেও পত্রিকায় যেসব রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি। আরেকটা হচ্ছে, দুর্নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিদেশে অর্থ পাচার। এ ছাড়া ঋণ ও আমদানিনির্ভর, দুর্নীতি, অপরিকল্পিত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর মেগা প্রকল্পের কারণে দেশের ওপর বড় আর্থিক বোঝা তৈরি হয়েছে। প্রধানত, এসব কারণেই ডলার ও রিজার্ভের সংকট তৈরি হচ্ছে।
এখন সরকার যদি এসব সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়, এর সমাধান করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে তো তার পুরো উন্নয়ন যাত্রারই মৌলিক পরিবর্তন করতে হবে। কীভাবে এত ঋণ ও আমদানিনির্ভর হয়ে গেল অর্থনীতি? এত ঋণ ও আমদানিনির্ভর তো হওয়ার দরকার ছিল না। শুধু দুর্নীতি কমিশন আর কতিপয় গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে এ অবস্থা হয়েছে। এগুলোই অর্থনীতিকে বিপদ ও সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সরকার যদি এসব সংকট হিসেবে স্বীকার করে তাহলে তো তার ঘাড় ঘোরাতে হবে জনগণের দিকে।
কিন্তু এখনো সরকারের মধ্যে প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি—আগের মতোই সংকটের দায়কে অস্বীকার করা। যে কারণে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোকে আগে তো স্বীকার করতে হবে। এবারের নির্বাচনের পরও তো সেটা দেখতে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে, সরকারের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হওয়ার পথ নিশ্চিত করা, একদলীয় নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা আর তার জন্য সব ধরনের সমালোচনা, ভিন্নমত দমন করার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা।
আজকের পত্রিকা: এরপরও বাজার নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রীরা কথা বলছেন। আপনি তাঁদের বিষয়ে কতটুকু আশাবাদী?
আনু মুহাম্মদ: এসব কথায় আমি কীভাবে আশাবাদী হব? আশাবাদী হতে পারি না এ কারণে, আগের মন্ত্রীরাও একই কথা বলেছেন, তাঁদের কথায় সততা ও গুরুত্ব কি দেখা গেছে? আর মন্ত্রীর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নিয়েই তো আমার সন্দেহ আছে। সেই পরিস্থিতির যদি পরিবর্তন না হয়, প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বে যদি সবকিছু পরিচালিত হয় আর সেটাই যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তো সমাধান হবে না। কারণ এর আগে তো জিনিসপত্রের দাম কমেনি, দুর্নীতিও কমেনি; বরং বেড়েছে।
আজকের পত্রিকা: দিন দিন রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণ কী?
আনু মুহাম্মদ: আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দুটি পথ। এক. রপ্তানি থেকে আয়; দুই. রেমিট্যান্স থেকে আয়। এর সঙ্গে আছে বিদেশি বিনিয়োগ এবং ঋণ। এগুলো হলো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উৎস। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকারি ও বাজারের দামের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। এই পার্থক্যের কারণে প্রবাসীদের একটা বড় অংশ বেসরকারি উপায়ে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। সরাসরি না পাঠানোর কারণে এটা মজুত হিসেবে আসছে না। বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে—সরকার যদি প্রতি ডলারে ১০০ টাকা দেয় আর তাঁরা যদি বাইরে ১২০ টাকা পান। তাহলে তো তাঁরা সেই উপায়টাকে গ্রহণ করবেন।
আরেকটা হলো, আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে নানা কায়দাকানুন করে বিপুল পরিমাণ ডলার পাচার হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। যারা সম্পদ পাচার করছে, তারা ক্ষমতাবান, কাজেই তা বন্ধ হওয়ার পথও দেখা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। এই চাপটা সামনের দিকে আরও বাড়তে থাকবে।
আজকের পত্রিকা: এই সংকট থেকে আমরা কীভাবে মুক্তি পেতে পারি?
আনু মুহাম্মদ: সরকার যে ঋণ ও আমদানিনির্ভর অতিব্যয়বহুল অস্বচ্ছ উন্নয়নের ধারা তৈরি করেছে, পরিপূর্ণ পরিবর্তন ছাড়া এর কোনো সমাধান হবে না। আশু জরুরি তিনটি কাজ—এক. ঋণ ও আমদানিনির্ভর ধারা অব্যাহত রাখা যাবে না। দুই. বিপুল পরিমাণ অর্থ যারা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছে, তাদের থামাতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। তিন. বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে কাজ করতে দিতে হবে। অর্থকরী খাতে যে বিষাক্ত বৃত্ত তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে কমপক্ষে এই তিন জায়গায় নজর দিতেই হবে। এ ছাড়া জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী অনিয়ন্ত্রিতভাবে সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগে যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই জিনিসপত্রের দাম যখন-তখন বৃদ্ধি করছে। তাদের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে হবে। এ কাজগুলো ত্বরিত গতিতে না করতে পারলে জনগণের জীবন-সংকট আরও বাড়বে। সরকার কি এগুলো করবে?
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আনু মুহাম্মদ: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

আজকের পত্রিকা: নতুন মন্ত্রিসভা সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
আনু মুহাম্মদ: মন্ত্রিসভা নিয়ে আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
আজকের পত্রিকা: কারণটা কী?
আনু মুহাম্মদ: এই সরকার যে ধরনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করেছে, তাতে নাগরিকদের গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান—মানে বাছাইয়ের কোনো সুযোগ ছিল না। ফলে আগের সরকার তার ইচ্ছামতো লোকজন ঠিক করেছে। নির্বাচন নয়, মনোনয়ন-প্রক্রিয়ায় যেভাবে এসেছে তাতে নাগরিকদের ভূমিকা ছিল ‘মৃত সৈনিকের’! এর মধ্যে তাই কোনো পরিবর্তন নেই। পরিবর্তন না থাকার কারণে আমার আশঙ্কা হচ্ছে, আগের ধারাবাহিকতাতেই দেশ পরিচালিত হবে। যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহির কোনো স্থান নেই। সবকিছুতে জোরজবরদস্তি আর দুর্নীতি। নাগরিকদের মতামত নয়, দেশি-বিদেশি কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থই প্রধান। তাতে দেশ ও মানুষের বড় ক্ষতি হলেও কোনো প্রতিকার নেই। সেই ধারাবাহিকতায় নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। কয়েকজন মন্ত্রী পরিবর্তিত হয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু তাতে কী আসে-যায়? বাংলাদেশে তো আলাদাভাবে মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা নেই। আবার মন্ত্রীদেরও আলাদা কোনো ভূমিকা বা কার্যকারিতা নেই।
বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থাটা এ রকম দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রীদের আপেক্ষিক ক্ষমতা, স্বাধীনতা ও সক্রিয়তাও দুর্লভ। এখন সব মন্ত্রী, মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বের ওপর নির্ভরশীল এবং তাঁর দ্বারা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত। কাজেই বেশি দক্ষ, অদক্ষ, বেশি দুর্নীতিবাজ, কম দুর্নীতিবাজ, বেশি চাপাবাজ, কম চাপাবাজ, ভদ্র বা অভদ্র এ ধরনের পার্থক্য এখন আর কোনো কাজ করে না। মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বেই হয়। মন্ত্রীরা সারাক্ষণ ওপরের নির্দেশের দিকেই তাকিয়ে থাকেন, আর প্রধানমন্ত্রীর বন্দনা করেন। শুধু হয়তো কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম, স্বজনতোষণ বা দুর্নীতির ক্ষেত্রে নিজের আলাদা সক্রিয়তা থাকে।
একটি দেশকে যদি ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলতে হয়, তাহলে সেখানে প্রতিষ্ঠান কার্যকর থাকা জরুরি। শুধু সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর থাকতে হয়। আদালত, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার সংস্থা, নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান যদি প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় কাজ করতে পারে, তাহলে সরকার যদি কোনো ভুল করে বা কোনো ধরনের বিচ্যুতি ঘটে, তাহলে সংশোধন করার সুযোগ থাকে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রক্রিয়া তৈরি হয়।
আমাদের দেশের পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলো আর স্বতন্ত্রভাবে সক্রিয় থাকতে পারছে না। একক কর্তৃত্বের ওপর সবাই নির্ভরশীল। এসব আমরা পত্রিকা এবং মন্ত্রীদের বক্তব্যের মধ্য দিয়েও বুঝতে পারি। যেমন কোথাও অপরাধ বা দুর্নীতি বা কেউ খুন হোক বা কোনো বড় ঘটনা, তখন আমরা শুনি মন্ত্রী বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন’, ‘প্রধানমন্ত্রী নজর রাখছেন’ ইত্যাদি। যেন প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ না দিলে মন্ত্রীদের কোনো চলনশক্তি নেই। এভাবে যদি প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্ব দিয়েই সবকিছু চলে তাহলে মন্ত্রী পরিবর্তন হলে চেহারা ছাড়া কী পরিবর্তন হবে? কোনো দেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক সরকারে এ রকম কোনো উদাহরণ নেই যে প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বে সবকিছু চলে। এত মন্ত্রী আসলে কেন জনগণের টাকায় রাখা হয়, সেটাই প্রশ্ন।
আজকের পত্রিকা: নতুন সরকারের সামনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কী?
আনু মুহাম্মদ: তারা কোনটাকে চ্যালেঞ্জ মনে করে, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। এই সরকার নতুন করে নির্বাচিত হওয়ার পর যেসব কথাবার্তা বলছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, জনগণের সব ধরনের সমস্যাকে অস্বীকার করার প্রবণতা তাদের একই রকম আছে।
জনগণের কাছে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, নিরাপত্তার সমস্যা, শিক্ষা, চিকিৎসা ভালোভাবে পাচ্ছে না। দিন দিন এসবের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। জনগণের জন্য বিপজ্জনক হচ্ছে, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বাড়ছে, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। সরকার এগুলোকে তো গুরুত্ব দিচ্ছে না কখনোই। যদি জাতীয়ভাবে চিন্তা করি, তাহলে আমাদের দেশে দুর্নীতি হলো একটা বড় সমস্যা।
প্রধানমন্ত্রী এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স, এখনো বলছেন। অতীতে তাঁর মুখে যতই আমরা এ কথা শুনেছি, ততই দুর্নীতি কিন্তু বেড়েছে। দুর্নীতিবাজ হিসেবে নানা রকম বাধাবিপত্তি থাকার পরেও পত্রিকায় যেসব রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি। আরেকটা হচ্ছে, দুর্নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিদেশে অর্থ পাচার। এ ছাড়া ঋণ ও আমদানিনির্ভর, দুর্নীতি, অপরিকল্পিত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর মেগা প্রকল্পের কারণে দেশের ওপর বড় আর্থিক বোঝা তৈরি হয়েছে। প্রধানত, এসব কারণেই ডলার ও রিজার্ভের সংকট তৈরি হচ্ছে।
এখন সরকার যদি এসব সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়, এর সমাধান করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে তো তার পুরো উন্নয়ন যাত্রারই মৌলিক পরিবর্তন করতে হবে। কীভাবে এত ঋণ ও আমদানিনির্ভর হয়ে গেল অর্থনীতি? এত ঋণ ও আমদানিনির্ভর তো হওয়ার দরকার ছিল না। শুধু দুর্নীতি কমিশন আর কতিপয় গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে এ অবস্থা হয়েছে। এগুলোই অর্থনীতিকে বিপদ ও সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সরকার যদি এসব সংকট হিসেবে স্বীকার করে তাহলে তো তার ঘাড় ঘোরাতে হবে জনগণের দিকে।
কিন্তু এখনো সরকারের মধ্যে প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি—আগের মতোই সংকটের দায়কে অস্বীকার করা। যে কারণে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোকে আগে তো স্বীকার করতে হবে। এবারের নির্বাচনের পরও তো সেটা দেখতে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে, সরকারের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হওয়ার পথ নিশ্চিত করা, একদলীয় নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা আর তার জন্য সব ধরনের সমালোচনা, ভিন্নমত দমন করার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা।
আজকের পত্রিকা: এরপরও বাজার নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রীরা কথা বলছেন। আপনি তাঁদের বিষয়ে কতটুকু আশাবাদী?
আনু মুহাম্মদ: এসব কথায় আমি কীভাবে আশাবাদী হব? আশাবাদী হতে পারি না এ কারণে, আগের মন্ত্রীরাও একই কথা বলেছেন, তাঁদের কথায় সততা ও গুরুত্ব কি দেখা গেছে? আর মন্ত্রীর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নিয়েই তো আমার সন্দেহ আছে। সেই পরিস্থিতির যদি পরিবর্তন না হয়, প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বে যদি সবকিছু পরিচালিত হয় আর সেটাই যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তো সমাধান হবে না। কারণ এর আগে তো জিনিসপত্রের দাম কমেনি, দুর্নীতিও কমেনি; বরং বেড়েছে।
আজকের পত্রিকা: দিন দিন রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণ কী?
আনু মুহাম্মদ: আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দুটি পথ। এক. রপ্তানি থেকে আয়; দুই. রেমিট্যান্স থেকে আয়। এর সঙ্গে আছে বিদেশি বিনিয়োগ এবং ঋণ। এগুলো হলো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উৎস। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকারি ও বাজারের দামের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। এই পার্থক্যের কারণে প্রবাসীদের একটা বড় অংশ বেসরকারি উপায়ে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। সরাসরি না পাঠানোর কারণে এটা মজুত হিসেবে আসছে না। বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে—সরকার যদি প্রতি ডলারে ১০০ টাকা দেয় আর তাঁরা যদি বাইরে ১২০ টাকা পান। তাহলে তো তাঁরা সেই উপায়টাকে গ্রহণ করবেন।
আরেকটা হলো, আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে নানা কায়দাকানুন করে বিপুল পরিমাণ ডলার পাচার হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। যারা সম্পদ পাচার করছে, তারা ক্ষমতাবান, কাজেই তা বন্ধ হওয়ার পথও দেখা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। এই চাপটা সামনের দিকে আরও বাড়তে থাকবে।
আজকের পত্রিকা: এই সংকট থেকে আমরা কীভাবে মুক্তি পেতে পারি?
আনু মুহাম্মদ: সরকার যে ঋণ ও আমদানিনির্ভর অতিব্যয়বহুল অস্বচ্ছ উন্নয়নের ধারা তৈরি করেছে, পরিপূর্ণ পরিবর্তন ছাড়া এর কোনো সমাধান হবে না। আশু জরুরি তিনটি কাজ—এক. ঋণ ও আমদানিনির্ভর ধারা অব্যাহত রাখা যাবে না। দুই. বিপুল পরিমাণ অর্থ যারা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছে, তাদের থামাতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। তিন. বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে কাজ করতে দিতে হবে। অর্থকরী খাতে যে বিষাক্ত বৃত্ত তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে কমপক্ষে এই তিন জায়গায় নজর দিতেই হবে। এ ছাড়া জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী অনিয়ন্ত্রিতভাবে সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগে যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই জিনিসপত্রের দাম যখন-তখন বৃদ্ধি করছে। তাদের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে হবে। এ কাজগুলো ত্বরিত গতিতে না করতে পারলে জনগণের জীবন-সংকট আরও বাড়বে। সরকার কি এগুলো করবে?
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আনু মুহাম্মদ: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

আজকের পত্রিকা: নতুন মন্ত্রিসভা সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
আনু মুহাম্মদ: মন্ত্রিসভা নিয়ে আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
আজকের পত্রিকা: কারণটা কী?
আনু মুহাম্মদ: এই সরকার যে ধরনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করেছে, তাতে নাগরিকদের গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান—মানে বাছাইয়ের কোনো সুযোগ ছিল না। ফলে আগের সরকার তার ইচ্ছামতো লোকজন ঠিক করেছে। নির্বাচন নয়, মনোনয়ন-প্রক্রিয়ায় যেভাবে এসেছে তাতে নাগরিকদের ভূমিকা ছিল ‘মৃত সৈনিকের’! এর মধ্যে তাই কোনো পরিবর্তন নেই। পরিবর্তন না থাকার কারণে আমার আশঙ্কা হচ্ছে, আগের ধারাবাহিকতাতেই দেশ পরিচালিত হবে। যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহির কোনো স্থান নেই। সবকিছুতে জোরজবরদস্তি আর দুর্নীতি। নাগরিকদের মতামত নয়, দেশি-বিদেশি কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থই প্রধান। তাতে দেশ ও মানুষের বড় ক্ষতি হলেও কোনো প্রতিকার নেই। সেই ধারাবাহিকতায় নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। কয়েকজন মন্ত্রী পরিবর্তিত হয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু তাতে কী আসে-যায়? বাংলাদেশে তো আলাদাভাবে মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা নেই। আবার মন্ত্রীদেরও আলাদা কোনো ভূমিকা বা কার্যকারিতা নেই।
বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থাটা এ রকম দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রীদের আপেক্ষিক ক্ষমতা, স্বাধীনতা ও সক্রিয়তাও দুর্লভ। এখন সব মন্ত্রী, মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বের ওপর নির্ভরশীল এবং তাঁর দ্বারা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত। কাজেই বেশি দক্ষ, অদক্ষ, বেশি দুর্নীতিবাজ, কম দুর্নীতিবাজ, বেশি চাপাবাজ, কম চাপাবাজ, ভদ্র বা অভদ্র এ ধরনের পার্থক্য এখন আর কোনো কাজ করে না। মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বেই হয়। মন্ত্রীরা সারাক্ষণ ওপরের নির্দেশের দিকেই তাকিয়ে থাকেন, আর প্রধানমন্ত্রীর বন্দনা করেন। শুধু হয়তো কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম, স্বজনতোষণ বা দুর্নীতির ক্ষেত্রে নিজের আলাদা সক্রিয়তা থাকে।
একটি দেশকে যদি ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলতে হয়, তাহলে সেখানে প্রতিষ্ঠান কার্যকর থাকা জরুরি। শুধু সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর থাকতে হয়। আদালত, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার সংস্থা, নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান যদি প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় কাজ করতে পারে, তাহলে সরকার যদি কোনো ভুল করে বা কোনো ধরনের বিচ্যুতি ঘটে, তাহলে সংশোধন করার সুযোগ থাকে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রক্রিয়া তৈরি হয়।
আমাদের দেশের পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলো আর স্বতন্ত্রভাবে সক্রিয় থাকতে পারছে না। একক কর্তৃত্বের ওপর সবাই নির্ভরশীল। এসব আমরা পত্রিকা এবং মন্ত্রীদের বক্তব্যের মধ্য দিয়েও বুঝতে পারি। যেমন কোথাও অপরাধ বা দুর্নীতি বা কেউ খুন হোক বা কোনো বড় ঘটনা, তখন আমরা শুনি মন্ত্রী বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন’, ‘প্রধানমন্ত্রী নজর রাখছেন’ ইত্যাদি। যেন প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ না দিলে মন্ত্রীদের কোনো চলনশক্তি নেই। এভাবে যদি প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্ব দিয়েই সবকিছু চলে তাহলে মন্ত্রী পরিবর্তন হলে চেহারা ছাড়া কী পরিবর্তন হবে? কোনো দেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক সরকারে এ রকম কোনো উদাহরণ নেই যে প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বে সবকিছু চলে। এত মন্ত্রী আসলে কেন জনগণের টাকায় রাখা হয়, সেটাই প্রশ্ন।
আজকের পত্রিকা: নতুন সরকারের সামনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কী?
আনু মুহাম্মদ: তারা কোনটাকে চ্যালেঞ্জ মনে করে, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। এই সরকার নতুন করে নির্বাচিত হওয়ার পর যেসব কথাবার্তা বলছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, জনগণের সব ধরনের সমস্যাকে অস্বীকার করার প্রবণতা তাদের একই রকম আছে।
জনগণের কাছে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, নিরাপত্তার সমস্যা, শিক্ষা, চিকিৎসা ভালোভাবে পাচ্ছে না। দিন দিন এসবের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। জনগণের জন্য বিপজ্জনক হচ্ছে, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বাড়ছে, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। সরকার এগুলোকে তো গুরুত্ব দিচ্ছে না কখনোই। যদি জাতীয়ভাবে চিন্তা করি, তাহলে আমাদের দেশে দুর্নীতি হলো একটা বড় সমস্যা।
প্রধানমন্ত্রী এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স, এখনো বলছেন। অতীতে তাঁর মুখে যতই আমরা এ কথা শুনেছি, ততই দুর্নীতি কিন্তু বেড়েছে। দুর্নীতিবাজ হিসেবে নানা রকম বাধাবিপত্তি থাকার পরেও পত্রিকায় যেসব রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি। আরেকটা হচ্ছে, দুর্নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিদেশে অর্থ পাচার। এ ছাড়া ঋণ ও আমদানিনির্ভর, দুর্নীতি, অপরিকল্পিত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর মেগা প্রকল্পের কারণে দেশের ওপর বড় আর্থিক বোঝা তৈরি হয়েছে। প্রধানত, এসব কারণেই ডলার ও রিজার্ভের সংকট তৈরি হচ্ছে।
এখন সরকার যদি এসব সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়, এর সমাধান করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে তো তার পুরো উন্নয়ন যাত্রারই মৌলিক পরিবর্তন করতে হবে। কীভাবে এত ঋণ ও আমদানিনির্ভর হয়ে গেল অর্থনীতি? এত ঋণ ও আমদানিনির্ভর তো হওয়ার দরকার ছিল না। শুধু দুর্নীতি কমিশন আর কতিপয় গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে এ অবস্থা হয়েছে। এগুলোই অর্থনীতিকে বিপদ ও সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সরকার যদি এসব সংকট হিসেবে স্বীকার করে তাহলে তো তার ঘাড় ঘোরাতে হবে জনগণের দিকে।
কিন্তু এখনো সরকারের মধ্যে প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি—আগের মতোই সংকটের দায়কে অস্বীকার করা। যে কারণে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোকে আগে তো স্বীকার করতে হবে। এবারের নির্বাচনের পরও তো সেটা দেখতে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে, সরকারের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হওয়ার পথ নিশ্চিত করা, একদলীয় নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা আর তার জন্য সব ধরনের সমালোচনা, ভিন্নমত দমন করার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা।
আজকের পত্রিকা: এরপরও বাজার নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রীরা কথা বলছেন। আপনি তাঁদের বিষয়ে কতটুকু আশাবাদী?
আনু মুহাম্মদ: এসব কথায় আমি কীভাবে আশাবাদী হব? আশাবাদী হতে পারি না এ কারণে, আগের মন্ত্রীরাও একই কথা বলেছেন, তাঁদের কথায় সততা ও গুরুত্ব কি দেখা গেছে? আর মন্ত্রীর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নিয়েই তো আমার সন্দেহ আছে। সেই পরিস্থিতির যদি পরিবর্তন না হয়, প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বে যদি সবকিছু পরিচালিত হয় আর সেটাই যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তো সমাধান হবে না। কারণ এর আগে তো জিনিসপত্রের দাম কমেনি, দুর্নীতিও কমেনি; বরং বেড়েছে।
আজকের পত্রিকা: দিন দিন রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণ কী?
আনু মুহাম্মদ: আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দুটি পথ। এক. রপ্তানি থেকে আয়; দুই. রেমিট্যান্স থেকে আয়। এর সঙ্গে আছে বিদেশি বিনিয়োগ এবং ঋণ। এগুলো হলো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উৎস। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকারি ও বাজারের দামের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। এই পার্থক্যের কারণে প্রবাসীদের একটা বড় অংশ বেসরকারি উপায়ে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। সরাসরি না পাঠানোর কারণে এটা মজুত হিসেবে আসছে না। বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে—সরকার যদি প্রতি ডলারে ১০০ টাকা দেয় আর তাঁরা যদি বাইরে ১২০ টাকা পান। তাহলে তো তাঁরা সেই উপায়টাকে গ্রহণ করবেন।
আরেকটা হলো, আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে নানা কায়দাকানুন করে বিপুল পরিমাণ ডলার পাচার হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। যারা সম্পদ পাচার করছে, তারা ক্ষমতাবান, কাজেই তা বন্ধ হওয়ার পথও দেখা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। এই চাপটা সামনের দিকে আরও বাড়তে থাকবে।
আজকের পত্রিকা: এই সংকট থেকে আমরা কীভাবে মুক্তি পেতে পারি?
আনু মুহাম্মদ: সরকার যে ঋণ ও আমদানিনির্ভর অতিব্যয়বহুল অস্বচ্ছ উন্নয়নের ধারা তৈরি করেছে, পরিপূর্ণ পরিবর্তন ছাড়া এর কোনো সমাধান হবে না। আশু জরুরি তিনটি কাজ—এক. ঋণ ও আমদানিনির্ভর ধারা অব্যাহত রাখা যাবে না। দুই. বিপুল পরিমাণ অর্থ যারা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছে, তাদের থামাতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। তিন. বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে কাজ করতে দিতে হবে। অর্থকরী খাতে যে বিষাক্ত বৃত্ত তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে কমপক্ষে এই তিন জায়গায় নজর দিতেই হবে। এ ছাড়া জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী অনিয়ন্ত্রিতভাবে সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগে যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই জিনিসপত্রের দাম যখন-তখন বৃদ্ধি করছে। তাদের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে হবে। এ কাজগুলো ত্বরিত গতিতে না করতে পারলে জনগণের জীবন-সংকট আরও বাড়বে। সরকার কি এগুলো করবে?
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আনু মুহাম্মদ: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

আজকের পত্রিকা: নতুন মন্ত্রিসভা সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
আনু মুহাম্মদ: মন্ত্রিসভা নিয়ে আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
আজকের পত্রিকা: কারণটা কী?
আনু মুহাম্মদ: এই সরকার যে ধরনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করেছে, তাতে নাগরিকদের গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান—মানে বাছাইয়ের কোনো সুযোগ ছিল না। ফলে আগের সরকার তার ইচ্ছামতো লোকজন ঠিক করেছে। নির্বাচন নয়, মনোনয়ন-প্রক্রিয়ায় যেভাবে এসেছে তাতে নাগরিকদের ভূমিকা ছিল ‘মৃত সৈনিকের’! এর মধ্যে তাই কোনো পরিবর্তন নেই। পরিবর্তন না থাকার কারণে আমার আশঙ্কা হচ্ছে, আগের ধারাবাহিকতাতেই দেশ পরিচালিত হবে। যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহির কোনো স্থান নেই। সবকিছুতে জোরজবরদস্তি আর দুর্নীতি। নাগরিকদের মতামত নয়, দেশি-বিদেশি কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থই প্রধান। তাতে দেশ ও মানুষের বড় ক্ষতি হলেও কোনো প্রতিকার নেই। সেই ধারাবাহিকতায় নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। কয়েকজন মন্ত্রী পরিবর্তিত হয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু তাতে কী আসে-যায়? বাংলাদেশে তো আলাদাভাবে মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা নেই। আবার মন্ত্রীদেরও আলাদা কোনো ভূমিকা বা কার্যকারিতা নেই।
বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থাটা এ রকম দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রীদের আপেক্ষিক ক্ষমতা, স্বাধীনতা ও সক্রিয়তাও দুর্লভ। এখন সব মন্ত্রী, মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বের ওপর নির্ভরশীল এবং তাঁর দ্বারা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত। কাজেই বেশি দক্ষ, অদক্ষ, বেশি দুর্নীতিবাজ, কম দুর্নীতিবাজ, বেশি চাপাবাজ, কম চাপাবাজ, ভদ্র বা অভদ্র এ ধরনের পার্থক্য এখন আর কোনো কাজ করে না। মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বেই হয়। মন্ত্রীরা সারাক্ষণ ওপরের নির্দেশের দিকেই তাকিয়ে থাকেন, আর প্রধানমন্ত্রীর বন্দনা করেন। শুধু হয়তো কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম, স্বজনতোষণ বা দুর্নীতির ক্ষেত্রে নিজের আলাদা সক্রিয়তা থাকে।
একটি দেশকে যদি ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলতে হয়, তাহলে সেখানে প্রতিষ্ঠান কার্যকর থাকা জরুরি। শুধু সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর থাকতে হয়। আদালত, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার সংস্থা, নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান যদি প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় কাজ করতে পারে, তাহলে সরকার যদি কোনো ভুল করে বা কোনো ধরনের বিচ্যুতি ঘটে, তাহলে সংশোধন করার সুযোগ থাকে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রক্রিয়া তৈরি হয়।
আমাদের দেশের পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলো আর স্বতন্ত্রভাবে সক্রিয় থাকতে পারছে না। একক কর্তৃত্বের ওপর সবাই নির্ভরশীল। এসব আমরা পত্রিকা এবং মন্ত্রীদের বক্তব্যের মধ্য দিয়েও বুঝতে পারি। যেমন কোথাও অপরাধ বা দুর্নীতি বা কেউ খুন হোক বা কোনো বড় ঘটনা, তখন আমরা শুনি মন্ত্রী বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন’, ‘প্রধানমন্ত্রী নজর রাখছেন’ ইত্যাদি। যেন প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ না দিলে মন্ত্রীদের কোনো চলনশক্তি নেই। এভাবে যদি প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্ব দিয়েই সবকিছু চলে তাহলে মন্ত্রী পরিবর্তন হলে চেহারা ছাড়া কী পরিবর্তন হবে? কোনো দেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক সরকারে এ রকম কোনো উদাহরণ নেই যে প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বে সবকিছু চলে। এত মন্ত্রী আসলে কেন জনগণের টাকায় রাখা হয়, সেটাই প্রশ্ন।
আজকের পত্রিকা: নতুন সরকারের সামনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কী?
আনু মুহাম্মদ: তারা কোনটাকে চ্যালেঞ্জ মনে করে, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। এই সরকার নতুন করে নির্বাচিত হওয়ার পর যেসব কথাবার্তা বলছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, জনগণের সব ধরনের সমস্যাকে অস্বীকার করার প্রবণতা তাদের একই রকম আছে।
জনগণের কাছে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, নিরাপত্তার সমস্যা, শিক্ষা, চিকিৎসা ভালোভাবে পাচ্ছে না। দিন দিন এসবের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। জনগণের জন্য বিপজ্জনক হচ্ছে, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বাড়ছে, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। সরকার এগুলোকে তো গুরুত্ব দিচ্ছে না কখনোই। যদি জাতীয়ভাবে চিন্তা করি, তাহলে আমাদের দেশে দুর্নীতি হলো একটা বড় সমস্যা।
প্রধানমন্ত্রী এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স, এখনো বলছেন। অতীতে তাঁর মুখে যতই আমরা এ কথা শুনেছি, ততই দুর্নীতি কিন্তু বেড়েছে। দুর্নীতিবাজ হিসেবে নানা রকম বাধাবিপত্তি থাকার পরেও পত্রিকায় যেসব রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি। আরেকটা হচ্ছে, দুর্নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিদেশে অর্থ পাচার। এ ছাড়া ঋণ ও আমদানিনির্ভর, দুর্নীতি, অপরিকল্পিত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর মেগা প্রকল্পের কারণে দেশের ওপর বড় আর্থিক বোঝা তৈরি হয়েছে। প্রধানত, এসব কারণেই ডলার ও রিজার্ভের সংকট তৈরি হচ্ছে।
এখন সরকার যদি এসব সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়, এর সমাধান করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে তো তার পুরো উন্নয়ন যাত্রারই মৌলিক পরিবর্তন করতে হবে। কীভাবে এত ঋণ ও আমদানিনির্ভর হয়ে গেল অর্থনীতি? এত ঋণ ও আমদানিনির্ভর তো হওয়ার দরকার ছিল না। শুধু দুর্নীতি কমিশন আর কতিপয় গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে এ অবস্থা হয়েছে। এগুলোই অর্থনীতিকে বিপদ ও সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সরকার যদি এসব সংকট হিসেবে স্বীকার করে তাহলে তো তার ঘাড় ঘোরাতে হবে জনগণের দিকে।
কিন্তু এখনো সরকারের মধ্যে প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি—আগের মতোই সংকটের দায়কে অস্বীকার করা। যে কারণে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোকে আগে তো স্বীকার করতে হবে। এবারের নির্বাচনের পরও তো সেটা দেখতে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে, সরকারের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হওয়ার পথ নিশ্চিত করা, একদলীয় নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা আর তার জন্য সব ধরনের সমালোচনা, ভিন্নমত দমন করার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা।
আজকের পত্রিকা: এরপরও বাজার নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রীরা কথা বলছেন। আপনি তাঁদের বিষয়ে কতটুকু আশাবাদী?
আনু মুহাম্মদ: এসব কথায় আমি কীভাবে আশাবাদী হব? আশাবাদী হতে পারি না এ কারণে, আগের মন্ত্রীরাও একই কথা বলেছেন, তাঁদের কথায় সততা ও গুরুত্ব কি দেখা গেছে? আর মন্ত্রীর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নিয়েই তো আমার সন্দেহ আছে। সেই পরিস্থিতির যদি পরিবর্তন না হয়, প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বে যদি সবকিছু পরিচালিত হয় আর সেটাই যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তো সমাধান হবে না। কারণ এর আগে তো জিনিসপত্রের দাম কমেনি, দুর্নীতিও কমেনি; বরং বেড়েছে।
আজকের পত্রিকা: দিন দিন রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণ কী?
আনু মুহাম্মদ: আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দুটি পথ। এক. রপ্তানি থেকে আয়; দুই. রেমিট্যান্স থেকে আয়। এর সঙ্গে আছে বিদেশি বিনিয়োগ এবং ঋণ। এগুলো হলো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উৎস। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকারি ও বাজারের দামের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। এই পার্থক্যের কারণে প্রবাসীদের একটা বড় অংশ বেসরকারি উপায়ে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। সরাসরি না পাঠানোর কারণে এটা মজুত হিসেবে আসছে না। বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে—সরকার যদি প্রতি ডলারে ১০০ টাকা দেয় আর তাঁরা যদি বাইরে ১২০ টাকা পান। তাহলে তো তাঁরা সেই উপায়টাকে গ্রহণ করবেন।
আরেকটা হলো, আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে নানা কায়দাকানুন করে বিপুল পরিমাণ ডলার পাচার হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। যারা সম্পদ পাচার করছে, তারা ক্ষমতাবান, কাজেই তা বন্ধ হওয়ার পথও দেখা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। এই চাপটা সামনের দিকে আরও বাড়তে থাকবে।
আজকের পত্রিকা: এই সংকট থেকে আমরা কীভাবে মুক্তি পেতে পারি?
আনু মুহাম্মদ: সরকার যে ঋণ ও আমদানিনির্ভর অতিব্যয়বহুল অস্বচ্ছ উন্নয়নের ধারা তৈরি করেছে, পরিপূর্ণ পরিবর্তন ছাড়া এর কোনো সমাধান হবে না। আশু জরুরি তিনটি কাজ—এক. ঋণ ও আমদানিনির্ভর ধারা অব্যাহত রাখা যাবে না। দুই. বিপুল পরিমাণ অর্থ যারা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছে, তাদের থামাতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। তিন. বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে কাজ করতে দিতে হবে। অর্থকরী খাতে যে বিষাক্ত বৃত্ত তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে কমপক্ষে এই তিন জায়গায় নজর দিতেই হবে। এ ছাড়া জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী অনিয়ন্ত্রিতভাবে সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগে যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই জিনিসপত্রের দাম যখন-তখন বৃদ্ধি করছে। তাদের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে হবে। এ কাজগুলো ত্বরিত গতিতে না করতে পারলে জনগণের জীবন-সংকট আরও বাড়বে। সরকার কি এগুলো করবে?
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আনু মুহাম্মদ: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৪ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আনু মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। তিনি ‘সর্বজনকথা’ পত্রিকার সম্পাদক। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
২১ জানুয়ারি ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আনু মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। তিনি ‘সর্বজনকথা’ পত্রিকার সম্পাদক। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
২১ জানুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৪ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আনু মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। তিনি ‘সর্বজনকথা’ পত্রিকার সম্পাদক। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
২১ জানুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৪ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আনু মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। তিনি ‘সর্বজনকথা’ পত্রিকার সম্পাদক। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
২১ জানুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৪ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫