হিলাল ফয়েজী
বাবা, বলছি তুমি আমার সন্তানের বয়সী এই ভরসায়। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন-আনন্দে যখন আমরা দেশের প্রায় সবাই প্রবাহিত, ভেতরে কোথায় যেন উদ্বেগ কাজ করছিল, এ দেশে আনন্দের আয়ু বড় স্বল্প। তোমাকে পছন্দ করি তুমি দেশজননীর সাহসী সন্তান। কত আঘাত সামলে বারবার তুমি মাঠে ফিরে এসেছ। অধিনায়ক হিসেবে মাঠযুদ্ধে তুমি জয়-পরাজয়ে লড়েছ প্রাণপণ। তোমার একটি কথা অসীম তৃপ্তিময় ছিল আমার কাছে। বলেছিলে, দেশের আসল তারকা ওই মুক্তিযোদ্ধারা। যাঁদের অসীম সাহসে, আত্মদানের জন্য সদা প্রস্তুতিতে, কুশলীসমরে বাংলাদেশ মানচিত্রের সৃজন।
খেলার মাঠের অঙ্গন থেকে এমন করে জাতিসত্তার গৌরবের কথা কাউকে বলতে শুনিনি। এমন ঋজু, সরল এবং দৃপ্তকণ্ঠে। তোমার মাঝে কোনো ঘোরপ্যাঁচ, অপকৌশল কিংবা লোভাতুর বৈশিষ্ট্য আছে, দূর থেকে কখনো শুনতে পাইনি। সংসদ সদস্য হিসেবে যখন তারকামুখ তোমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলো, তখন একটু শঙ্কিতবোধ করেছি। কেননা, রাজনীতির মাঠে তোমার সরলতা অপব্যবহার করার চতুর শৃগালে ভরা চারপাশ। সমাজে কত কিছুর ঘাটতি। কত অব্যবস্থা। নড়াইলসহ সব জেলা-উপজেলায় সক্রিয় অধিকাংশ অগ্রণীরাই আদর্শ ভুলে ভোগ, লুটপাট, পেশিপ্রযুক্তিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। এই দঙ্গলজঙ্গলে শুধু জনপ্রিয়তায় বৈরী বাস্তবতা সামলাবে কী করে!
জানি না, সংসদ সদস্যের সাড়ে তিন বছরের এই পর্যায়ে কেমন আছ, কী তোমার জননায়কীয় অবস্থান, চতুরেরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে তোমার কতটুকু ব্যবধান ঘটাতে সক্ষম হয়েছে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে কতটুকু স্বস্তি-অস্বস্তি তোমার! এ সমাজে সহজিয়াদের বোকার হদ্দ ভেবে চতুরেরা দাবার চালে সহজেই তাদের কুপোকাত করে দেয়। দূর থেকে সন্তানসম তোমার কথা তাই মাঝেমধ্যেই ভাবি কিছু না জেনেই। স্বীয় বেলাশেষে যখন আঙিনায় দাঁড়িয়ে সারা দেশের সমাজ-মানচিত্র পরখ করি, কখনো দারুণ উজ্জীবিত হই, কখনো মন ভেঙে যায়।
পদ্মা সেতু নিয়ে দুটো চ্যালেঞ্জ ছিল। এক. তহবিল। দুই. নির্মাণজ্ঞান। একসময় ভাবতাম, মালয়েশিয়ায় সম্পদ আছে, মাহাথিরের মতো ধীর প্রাজ্ঞ বিনির্মাণ নেতা আছেন। সবার কাছে হাত জোড় করে মাফ চাইছি, জাতির পিতার কন্যা, বিশাল ট্র্যাজেডির ভার বয়ে চলতে হচ্ছে যাঁকে, বিনির্মাণে নেতৃত্ব তিনি দেবেন কেমন করে—এমনটাই ভাবতাম।
আমাদের তথাকথিত এলিট সুশীলদের অনেকে ভীরুতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশী হতে পারেনি। আবার অজপাড়াগাঁও টুঙ্গিপাড়া থেকে এক অভাবনীয় সাহসী মহানায়কের উত্থানও মেনে নিতে পারছে না তারা। জাতিসত্তার প্রধান বর্শাফলক ব্যক্তিত্বকে নির্মূল করার ষড়যন্ত্রে এদের অনেকেরই হয়তো যোগ ছিল না, কিন্তু এরা খুশি হয়েছিল। সুতরাং দেশি-বিদেশি হত্যাকারীদের বৃহত্তর জোটে ঘোটে এরা স্বাভাবিক মিত্রপক্ষে পরিণত হয়ে গেল। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্ব এদের কাছে একমুহূর্তের জন্যও সহনীয় ছিল না এবং নেই। সুতরাং যতভাবে সম্ভব, যত পথে সম্ভব কাঁটা বিছাও পথে পথে। ক্ষমতা থেকে সরাও। আদি মুসলিম লীগজাত এলিট এবং সাধারণের মধ্যকার সেই সামাজিক লড়াই, মানসিক লড়াই বিএনপি আর আওয়ামী লীগরূপে অব্যাহত। পদ্মা সেতু করবে বাংলায় লেখাপড়া করা রাজনীতির জন্য প্রস্তুতি না নেওয়া ওই সাধারণ ননএলিট মেয়ে? ওয়াশিংটনে আমাদের প্রভাব। আমাদের ইংরেজির তুবড়িতে মোসাহেবির লেটেস্ট কেতাকানুনে পটিয়ে ফেলব বিশ্বব্যাংকের আসল ঘোড়েলদের।
অবশেষে তহবিল-মিসাইল ছুড়ল ওরা আমাদের মর্যাদা চূর্ণবিচূর্ণ করে। ওরা বোঝেনি বাংলার পটরপটর মটরমটর ইংরেজি না জানা সাধারণ মেয়েটির গভীরে হার না মানা মণিহারের দ্যুতি আর জেদের কী অনন্য ঝলক! বিশ্বকে চমকে দিয়ে বিশ্বব্যাংকের ছুড়ে দেওয়া মিসাইলকে নজিরবিহীনভাবে অগ্রাহ্য করে চারপাশকে চমকে দিয়ে মাথা উঁচু করা এক গর্বিত ঘোষণা এল মহাকালের গর্ভ থেকে: আমাদের অর্থেই হবে আমাদের অর্থনীতির সঞ্জীবনী পদ্মা সেতু।
না, ওই তথাকথিত জ্ঞানী আর আদি মালদার এলিট মহলের অধিকাংশের মুখ চুন হলেও বিবেকের স্বাক্ষর দেখা গেল খুব কমই। যে বামশক্তি বিশ্বব্যাংকের জন্ম থেকেই এর বিরুদ্ধে বুলন্দ আওয়াজ তুলে আসছিল, তারা মানবেতিহাসে বিশ্বব্যাংকবিরোধী প্রধান বিদ্রোহে আজও একটি অনুকূল মন্তব্য উৎপাদনের ‘অবিপ্লবী’ কর্মসাধন করেনি।
তবে নির্মাণজ্ঞানের এমন যোগ্য ভান্ডার যে এই বাংলাদেশেই বিশ্বমানের প্রকৌশলী জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ করে তুললেন ওই সাধারণ মেয়েটি, ফলত পৃথিবীর বুকে অন্যতম জটিল সেতু স্থাপনার গৌরবে অভিষিক্ত হলো রক্তসমুদ্র থেকে জেগে ওঠা প্রিয় বাংলাদেশ। আমাদের দেশভান্ডারে এখন কয়েক শ সেতু নির্মাণদক্ষ মানবকে এই পদ্মা সেতু সৃজন করে দিয়েছে, যাঁরা পৃথিবীর যেকোনো সেতু বিনির্মাণে নিয়োজিত হতে পারেন।
এতকাল এ দেশে জেনারেল আইয়ুব আর এরশাদকেই নির্মাণনায়ক মনে করত সাধারণ মানুষ। এখন মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বেসামরিক রাজনৈতিক দলটি অবকাঠামো নির্মাণে যে রেকর্ড গড়েছে, তা অতিক্রম করা দুঃসাধ্য। যদিও এটিকে তুচ্ছজ্ঞানে অবজ্ঞা করার মতো নানা প্রকারের পণ্ডিত দেশে-প্রবাসে কম নেই। আর এমন ভাব করা হচ্ছে যেন পৃথিবীর সব দুর্নীতি এ দেশেই হচ্ছে। অর্থ পাচারের দেশ আমরা, সেই অর্থগ্রহীতা দেশ কারা? তাদের সুধা ভক্ষণ করে হাজার সালাম ঠুকি নিত্য। এসব কথা বলে অবশ্য পাচারের অপরাধকে লঘু করার বিন্দুমাত্র প্রশ্ন নেই। পাচার একটি বিশ্ব দুর্নীতিব্যবস্থা, যার কথা ট্রান্সপারেন্সি বার্ষিক সূচক নাটকে পাবেন না।
শুধু অবকাঠামো নয়, গ্রামীণ অর্থনীতি, শিল্প, কৃষি, জিডিপি, জেন্ডার, স্বাস্থ্য সবকিছুতেই অগ্রগতির আলোকরশ্মি। তবে সমালোচনার অবকাশ আছে, যথাযথ সমালোচনা প্রয়োজনীয় উন্নয়ন উপাদানও বটে। অর্জনেরও যথাযথ স্বীকৃতি প্রয়োজন। রাজনৈতিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে মূল সংকট ১৯৭৫ এবং ২০০১ সাল। বিরোধীপক্ষ ক্ষমতায় এলেই মহাবিপদ। অতএব সংসদের চেয়ে প্রাধান্য বেশি রাষ্ট্রশক্তির। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার অনুকূল বাতাবরণ ধ্বংস করেছে দুই জেনারেল। দেশের প্রধান দুটি দল যদি মুক্তিযুদ্ধপন্থী হতো তাহলে সংসদীয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ক্রমেই সবল হতে পারত। তদুপরি সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় গোষ্ঠীসমূহের ব্যাপক উত্থান অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির সামাজিক ভিত্তি ক্রমেই দুর্বল করে তুলছে।
অর্থনৈতিক অবকাঠামো সবল হতে থাকলেও ফলত সাম্প্রদায়িক ও সাংস্কৃতিক বিচারে নৈতিক অবকাঠামো দুর্বলতর হয়ে চলছে। জামায়াত ও কওমি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে একত্র করে ২০১৩ সালে যে ভয়ংকর ঘটনা সংগঠিত ও সংঘটিত করা হয়েছিল, তা দমন করা হয়েছিল বটে। তবে অনেক মূল্যে। এই বাস্তবতায় চলছে বাংলাদেশ।
পারমাণবিক শক্তিতে বিদ্যুৎ হয়, বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের বোমাও হয়। এ দেশে ডিজিটাল বিপ্লবের অগ্রগতি, আমাদের কিশোর-তরুণ সমাজের লজিক্যাল মেধার সুনাম বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ছে। পাটের জেনোম বিশ্লেষণ করেছেন বাঙালি বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশারদেরা। পৃথিবীজুড়ে বাংলাদেশের প্রতিভাবান ব্যক্তিদের বিস্তার। এই ডিজিটাল বিপ্লবের মোবাইল ফোনের পোস্ট থেকে হায়রে বিস্ফোরিত হয় ভয়ংকর ঘৃণা, বেশ কয়েক বছর ধরে। সর্বশেষ নড়াইলে।
এখানটিতেই শাবাশ বাবা মাশরাফি তোমাকে। আরও কত জায়গায় এমন মোবাইল পোস্টিং, মসজিদে মাইকিং, হামলা, হনন, কত-কী ঘটল। কই, কোথাও তো জনপ্রতিনিধিকে এমন স্পষ্ট ভাষণে চিৎকার করে উঠতে দেখিনি: এমন নড়াইল আমি দেখিনি। দেখতে চাই না।
মাঠের নড়াইল এক্সপ্রেস, তুমি সমাজবিকাশের নড়াইল এক্সপ্রেস। বাংলাদেশের এক্সপ্রেস। জাগাও তরুণ প্রজন্মকে মানবিক আহ্বানে। আমরা প্রবীণেরা সর্বশক্তি নিয়ে আছি।
বাবা, বলছি তুমি আমার সন্তানের বয়সী এই ভরসায়। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন-আনন্দে যখন আমরা দেশের প্রায় সবাই প্রবাহিত, ভেতরে কোথায় যেন উদ্বেগ কাজ করছিল, এ দেশে আনন্দের আয়ু বড় স্বল্প। তোমাকে পছন্দ করি তুমি দেশজননীর সাহসী সন্তান। কত আঘাত সামলে বারবার তুমি মাঠে ফিরে এসেছ। অধিনায়ক হিসেবে মাঠযুদ্ধে তুমি জয়-পরাজয়ে লড়েছ প্রাণপণ। তোমার একটি কথা অসীম তৃপ্তিময় ছিল আমার কাছে। বলেছিলে, দেশের আসল তারকা ওই মুক্তিযোদ্ধারা। যাঁদের অসীম সাহসে, আত্মদানের জন্য সদা প্রস্তুতিতে, কুশলীসমরে বাংলাদেশ মানচিত্রের সৃজন।
খেলার মাঠের অঙ্গন থেকে এমন করে জাতিসত্তার গৌরবের কথা কাউকে বলতে শুনিনি। এমন ঋজু, সরল এবং দৃপ্তকণ্ঠে। তোমার মাঝে কোনো ঘোরপ্যাঁচ, অপকৌশল কিংবা লোভাতুর বৈশিষ্ট্য আছে, দূর থেকে কখনো শুনতে পাইনি। সংসদ সদস্য হিসেবে যখন তারকামুখ তোমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলো, তখন একটু শঙ্কিতবোধ করেছি। কেননা, রাজনীতির মাঠে তোমার সরলতা অপব্যবহার করার চতুর শৃগালে ভরা চারপাশ। সমাজে কত কিছুর ঘাটতি। কত অব্যবস্থা। নড়াইলসহ সব জেলা-উপজেলায় সক্রিয় অধিকাংশ অগ্রণীরাই আদর্শ ভুলে ভোগ, লুটপাট, পেশিপ্রযুক্তিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। এই দঙ্গলজঙ্গলে শুধু জনপ্রিয়তায় বৈরী বাস্তবতা সামলাবে কী করে!
জানি না, সংসদ সদস্যের সাড়ে তিন বছরের এই পর্যায়ে কেমন আছ, কী তোমার জননায়কীয় অবস্থান, চতুরেরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে তোমার কতটুকু ব্যবধান ঘটাতে সক্ষম হয়েছে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে কতটুকু স্বস্তি-অস্বস্তি তোমার! এ সমাজে সহজিয়াদের বোকার হদ্দ ভেবে চতুরেরা দাবার চালে সহজেই তাদের কুপোকাত করে দেয়। দূর থেকে সন্তানসম তোমার কথা তাই মাঝেমধ্যেই ভাবি কিছু না জেনেই। স্বীয় বেলাশেষে যখন আঙিনায় দাঁড়িয়ে সারা দেশের সমাজ-মানচিত্র পরখ করি, কখনো দারুণ উজ্জীবিত হই, কখনো মন ভেঙে যায়।
পদ্মা সেতু নিয়ে দুটো চ্যালেঞ্জ ছিল। এক. তহবিল। দুই. নির্মাণজ্ঞান। একসময় ভাবতাম, মালয়েশিয়ায় সম্পদ আছে, মাহাথিরের মতো ধীর প্রাজ্ঞ বিনির্মাণ নেতা আছেন। সবার কাছে হাত জোড় করে মাফ চাইছি, জাতির পিতার কন্যা, বিশাল ট্র্যাজেডির ভার বয়ে চলতে হচ্ছে যাঁকে, বিনির্মাণে নেতৃত্ব তিনি দেবেন কেমন করে—এমনটাই ভাবতাম।
আমাদের তথাকথিত এলিট সুশীলদের অনেকে ভীরুতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশী হতে পারেনি। আবার অজপাড়াগাঁও টুঙ্গিপাড়া থেকে এক অভাবনীয় সাহসী মহানায়কের উত্থানও মেনে নিতে পারছে না তারা। জাতিসত্তার প্রধান বর্শাফলক ব্যক্তিত্বকে নির্মূল করার ষড়যন্ত্রে এদের অনেকেরই হয়তো যোগ ছিল না, কিন্তু এরা খুশি হয়েছিল। সুতরাং দেশি-বিদেশি হত্যাকারীদের বৃহত্তর জোটে ঘোটে এরা স্বাভাবিক মিত্রপক্ষে পরিণত হয়ে গেল। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্ব এদের কাছে একমুহূর্তের জন্যও সহনীয় ছিল না এবং নেই। সুতরাং যতভাবে সম্ভব, যত পথে সম্ভব কাঁটা বিছাও পথে পথে। ক্ষমতা থেকে সরাও। আদি মুসলিম লীগজাত এলিট এবং সাধারণের মধ্যকার সেই সামাজিক লড়াই, মানসিক লড়াই বিএনপি আর আওয়ামী লীগরূপে অব্যাহত। পদ্মা সেতু করবে বাংলায় লেখাপড়া করা রাজনীতির জন্য প্রস্তুতি না নেওয়া ওই সাধারণ ননএলিট মেয়ে? ওয়াশিংটনে আমাদের প্রভাব। আমাদের ইংরেজির তুবড়িতে মোসাহেবির লেটেস্ট কেতাকানুনে পটিয়ে ফেলব বিশ্বব্যাংকের আসল ঘোড়েলদের।
অবশেষে তহবিল-মিসাইল ছুড়ল ওরা আমাদের মর্যাদা চূর্ণবিচূর্ণ করে। ওরা বোঝেনি বাংলার পটরপটর মটরমটর ইংরেজি না জানা সাধারণ মেয়েটির গভীরে হার না মানা মণিহারের দ্যুতি আর জেদের কী অনন্য ঝলক! বিশ্বকে চমকে দিয়ে বিশ্বব্যাংকের ছুড়ে দেওয়া মিসাইলকে নজিরবিহীনভাবে অগ্রাহ্য করে চারপাশকে চমকে দিয়ে মাথা উঁচু করা এক গর্বিত ঘোষণা এল মহাকালের গর্ভ থেকে: আমাদের অর্থেই হবে আমাদের অর্থনীতির সঞ্জীবনী পদ্মা সেতু।
না, ওই তথাকথিত জ্ঞানী আর আদি মালদার এলিট মহলের অধিকাংশের মুখ চুন হলেও বিবেকের স্বাক্ষর দেখা গেল খুব কমই। যে বামশক্তি বিশ্বব্যাংকের জন্ম থেকেই এর বিরুদ্ধে বুলন্দ আওয়াজ তুলে আসছিল, তারা মানবেতিহাসে বিশ্বব্যাংকবিরোধী প্রধান বিদ্রোহে আজও একটি অনুকূল মন্তব্য উৎপাদনের ‘অবিপ্লবী’ কর্মসাধন করেনি।
তবে নির্মাণজ্ঞানের এমন যোগ্য ভান্ডার যে এই বাংলাদেশেই বিশ্বমানের প্রকৌশলী জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ করে তুললেন ওই সাধারণ মেয়েটি, ফলত পৃথিবীর বুকে অন্যতম জটিল সেতু স্থাপনার গৌরবে অভিষিক্ত হলো রক্তসমুদ্র থেকে জেগে ওঠা প্রিয় বাংলাদেশ। আমাদের দেশভান্ডারে এখন কয়েক শ সেতু নির্মাণদক্ষ মানবকে এই পদ্মা সেতু সৃজন করে দিয়েছে, যাঁরা পৃথিবীর যেকোনো সেতু বিনির্মাণে নিয়োজিত হতে পারেন।
এতকাল এ দেশে জেনারেল আইয়ুব আর এরশাদকেই নির্মাণনায়ক মনে করত সাধারণ মানুষ। এখন মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বেসামরিক রাজনৈতিক দলটি অবকাঠামো নির্মাণে যে রেকর্ড গড়েছে, তা অতিক্রম করা দুঃসাধ্য। যদিও এটিকে তুচ্ছজ্ঞানে অবজ্ঞা করার মতো নানা প্রকারের পণ্ডিত দেশে-প্রবাসে কম নেই। আর এমন ভাব করা হচ্ছে যেন পৃথিবীর সব দুর্নীতি এ দেশেই হচ্ছে। অর্থ পাচারের দেশ আমরা, সেই অর্থগ্রহীতা দেশ কারা? তাদের সুধা ভক্ষণ করে হাজার সালাম ঠুকি নিত্য। এসব কথা বলে অবশ্য পাচারের অপরাধকে লঘু করার বিন্দুমাত্র প্রশ্ন নেই। পাচার একটি বিশ্ব দুর্নীতিব্যবস্থা, যার কথা ট্রান্সপারেন্সি বার্ষিক সূচক নাটকে পাবেন না।
শুধু অবকাঠামো নয়, গ্রামীণ অর্থনীতি, শিল্প, কৃষি, জিডিপি, জেন্ডার, স্বাস্থ্য সবকিছুতেই অগ্রগতির আলোকরশ্মি। তবে সমালোচনার অবকাশ আছে, যথাযথ সমালোচনা প্রয়োজনীয় উন্নয়ন উপাদানও বটে। অর্জনেরও যথাযথ স্বীকৃতি প্রয়োজন। রাজনৈতিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে মূল সংকট ১৯৭৫ এবং ২০০১ সাল। বিরোধীপক্ষ ক্ষমতায় এলেই মহাবিপদ। অতএব সংসদের চেয়ে প্রাধান্য বেশি রাষ্ট্রশক্তির। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার অনুকূল বাতাবরণ ধ্বংস করেছে দুই জেনারেল। দেশের প্রধান দুটি দল যদি মুক্তিযুদ্ধপন্থী হতো তাহলে সংসদীয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ক্রমেই সবল হতে পারত। তদুপরি সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় গোষ্ঠীসমূহের ব্যাপক উত্থান অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির সামাজিক ভিত্তি ক্রমেই দুর্বল করে তুলছে।
অর্থনৈতিক অবকাঠামো সবল হতে থাকলেও ফলত সাম্প্রদায়িক ও সাংস্কৃতিক বিচারে নৈতিক অবকাঠামো দুর্বলতর হয়ে চলছে। জামায়াত ও কওমি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে একত্র করে ২০১৩ সালে যে ভয়ংকর ঘটনা সংগঠিত ও সংঘটিত করা হয়েছিল, তা দমন করা হয়েছিল বটে। তবে অনেক মূল্যে। এই বাস্তবতায় চলছে বাংলাদেশ।
পারমাণবিক শক্তিতে বিদ্যুৎ হয়, বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের বোমাও হয়। এ দেশে ডিজিটাল বিপ্লবের অগ্রগতি, আমাদের কিশোর-তরুণ সমাজের লজিক্যাল মেধার সুনাম বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ছে। পাটের জেনোম বিশ্লেষণ করেছেন বাঙালি বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশারদেরা। পৃথিবীজুড়ে বাংলাদেশের প্রতিভাবান ব্যক্তিদের বিস্তার। এই ডিজিটাল বিপ্লবের মোবাইল ফোনের পোস্ট থেকে হায়রে বিস্ফোরিত হয় ভয়ংকর ঘৃণা, বেশ কয়েক বছর ধরে। সর্বশেষ নড়াইলে।
এখানটিতেই শাবাশ বাবা মাশরাফি তোমাকে। আরও কত জায়গায় এমন মোবাইল পোস্টিং, মসজিদে মাইকিং, হামলা, হনন, কত-কী ঘটল। কই, কোথাও তো জনপ্রতিনিধিকে এমন স্পষ্ট ভাষণে চিৎকার করে উঠতে দেখিনি: এমন নড়াইল আমি দেখিনি। দেখতে চাই না।
মাঠের নড়াইল এক্সপ্রেস, তুমি সমাজবিকাশের নড়াইল এক্সপ্রেস। বাংলাদেশের এক্সপ্রেস। জাগাও তরুণ প্রজন্মকে মানবিক আহ্বানে। আমরা প্রবীণেরা সর্বশক্তি নিয়ে আছি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
১ দিন আগেবিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪