Ajker Patrika

নীরবে ভাঙছে গুমানী বিলীন হচ্ছে স্থাপনা

পাবনা ও চাটমোহর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ জুন ২০২২, ১৫: ১৩
Thumbnail image

উজানের ঢলে নদ-নদীতে হঠাৎ করেই বাড়ছে পানি। ইতিমধ্যে পাবনার চাটমোহরের চলনবিল অংশে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন সোনালি ধান। সীমাহীন দুর্ভোগ কাটিয়ে উঠতে রীতিমতো যুদ্ধ করছেন তাঁরা। ঠিক সেই মুহূর্তে শুরু হয়েছে নদীভাঙন।

চাটমোহরের ছাইকোলা, হান্ডিয়াল, নিমাইচড়া ও বিলচলন ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গুমানী নদীর নীরব ভাঙনে বিলীন হচ্ছে শত শত মানুষের বসতভিটা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠসহ অন্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানও বিলীন হচ্ছে গুমানী নদীগর্ভে। বছরের পর বছর ভাঙন অব্যাহত থাকায় বসতভিটা হারিয়ে অনেকেই অন্যত্র গিয়ে নতুন বাড়িঘর নির্মাণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ভিটেমাটি হারিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন অভাবী মানুষেরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খুব ধীর গতিতে হলেও ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোতে প্রতিবছর ৫ থেকে ৭ ফুট করে ভাঙে। পরে একসময় জমি অথবা বসতবাড়ির সবটুকু চলে যায় নদী গর্ভে। বর্ষাকালে ধীর গতিতে ভাঙন হওয়ায় তা চোখে পরে না কারও। এ এলাকায় নদীভাঙন রোধে ছাইকোলা পয়েন্টে আনুমানিক ৫০০ মিটার নদীর পাড় ব্লক দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। তবে ভাঙনকবলিত বাকি প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকায় কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

করকোলা গ্রামের সাগর মাহমুদ বলেন, বওশা সেতু থেকে ভাটির দিকে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা ভাঙনকবলিত। রাস্তা ভেঙে বিলীন হচ্ছে গুমানী নদীতে। ইতিমধ্যে করকোলা কবরস্থান এবং ঈদগাহ মাঠও নদীতে বিলীন হয়েছে। গ্রামের মানুষ চাঁদা তুলে জায়গা কিনে নতুন কবরস্থান তৈরি করেছেন।

ছাইকোলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক হাসিনুর রহমান বলেন, ছাইকোলা পয়েন্টে কিছু এলাকা ব্লক দিয়ে সংরক্ষণ করা হলেও, অন্য কোথাও সংরক্ষণে পদক্ষেপ না নেওয়ায় দীর্ঘদিনে গুমানীপাড়ের শত মানুষের বসত বাড়ি চলে গেছে নদীর পেটে।

বিলচলন ইউনিয়নের নটাবাড়িয়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক মোকতার হোসেন বলেন, নটাবাড়িয়া গ্রামের নদী-সংলগ্ন প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নীরব ভাঙন চলছে। গত পঁচিশ বছরে নটাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। কিছু আবাদি জমিও চলে গেছে গুমানী নদীতে।

বিন্যাবাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও চরসেন গ্রামের রাকিব হোসেন বলেন, এ গ্রামের প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা ভাঙনকবলিত। গত ২০ বছরে ভাঙনকবলিত অংশের প্রায় ৫০ পরিবার অন্যত্র বাড়ি নির্মাণ করেছে। বিন্যাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বাড়িঘর গুমানী নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ধানকুনিয়া হাট, ধানকুনিয়া কবরস্থানসহ অনেক মানুষের বসতভিটা কালক্রমে গুমানী নদীগর্ভে নিশ্চিহ্ন হয়েছে।

বরদানগর গ্রামের রতন হোসেন বলেন, বরদানগর বাজার ও ঈদ মাঠ ক্রমশই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এ গ্রামের শতাধিক বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া গৌড়নগর, লাঙ্গলমোড়া, চরনবীন, কুকরাগাড়ী গ্রামসহ নদীপাড়ের বেশ কিছু গ্রামের মানুষের বসতবাড়ি ও আবাদি জমি নদীতে ভেঙে গেছে।

উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফিরোজা পারভীন বলেন, চাটমোহর অংশে গুমানীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার। এই ১২ কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও এপার, আবার কোথাও অন্য পাড় ভাঙছে। কোনো কোনো অংশে নদী পাড়ে চর জাগছে। রাস্তা, বাড়ির, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের জায়গা নদীতে বিলীন হওয়ায় এ এলাকার মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দীর্ঘদিন। ভাঙনকবলিত এলাকা চিহ্নিত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে ভাঙন রোধ করা যেতে পারে।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেন চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈকত ইসলাম বলেন, নদীভাঙনের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানিয়ে কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে চেষ্টা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত