Ajker Patrika

কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা রোধে সক্রিয় পুলিশ

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২২, ১৫: ১৩
Thumbnail image

বিরাট একটা ঘরের মেঝেতে বসে আছে ৫৪ কিশোর-তরুণ। তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে অভিভাবকেরা। মায়েরা ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে। কেউ কেউ একটু পর পর ওড়না দিয়ে চোখের পানি মুছছেন। সামনে চেয়ার-টেবিলে বসে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। বক্তব্য দিচ্ছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানার সামনে নানা বয়সী মানুষের ভিড় দেখে থানার দোতলায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেল। ওসি মাজহারুল ইসলাম বলছিলেন ‘এখন থেকে টিকটক বন্ধ। কেউ টিকটক করবে না। এখানে-ওখানে দল বেঁধে বসে থাকা যাবে না। ইভটিজিং করা যাবে না। কেউ ইভটিজিং করবে?’ কিশোর-তরুণেরা একসঙ্গে উত্তর দিল ‘না’। ওসি বললেন, এখন অভিভাবকেরা মুচলেকা দিয়ে সবাইকে নিয়ে যাবেন। চুল কাটানো হয়েছে কি না তা পরদিন থানায় এসে দেখিয়ে যেতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ওসি মাজহারুল ইসলাম জানালেন, পরদিন বেশির ভাগই থানায় এসে দেখিয়ে গেছে যে তারা সুন্দর করে চুল কাটিয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রম আগেও চলেছে। তবে গত কয়েক দিন টানা চলছে। এভাবে কিশোর-তরুণদের বাগে আনার চেষ্টা চলছে।

হঠাৎ পুলিশ কিশোরদের নিয়ে এমন তৎপরতা শুরু করল কেন? এর নেপথ্যে রয়েছে একটি খুন। গত ৩ জুলাই একদল কিশোর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনে থেকে দুই কিশোরকে তুলে নিয়ে গিয়ে কোপায়। এতে মো. সনি (১৭) নামের এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়। সনি জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম পাখির ছেলে। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিত সে।

সনি হত্যা মামলার ৯ আসামির মধ্যে পাঁচজনই তরুণ। এর মধ্যে তিনজন ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। সবশেষ বুধবার দিবাগত রাতে র‍্যাব দুজনকে গ্রেপ্তার করে। র‍্যাব বলছে, মামলার ১ নম্বর পলাতক আসামি মঈন ওরফে আন্নাফ (২০) হলেন মঈন গ্রুপের প্রধান। এই গ্রুপের সঙ্গে সনি গ্রুপের বিরোধের জেরে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, সনি ও মঈন গ্রুপের মধ্যে বিরোধ পুরোনো। সনি গ্রুপ গত ঈদুল ফিতরের সময় শহরের আরডিএ মার্কেটের ভেতর মঈন গ্রুপের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় একজনকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়। তার শরীরে ১৮টি সেলাই পড়ে। এই ঘটনায় সনির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এর আগে অন্য আরেকটি গ্রুপের সঙ্গে মারামারির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছিল।

এরপর কিছুদিন গা ঢাকা দিয়েছিল সনি। সম্প্রতি মঈন গ্রুপের সঙ্গে মীমাংসা করে এলাকায় ফেরে। কিন্তু তারপরও তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। এরই মধ্যে গত ১৪ জুন সনি তার ফেসবুক আইডিতে টিকটক ভিডিও প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, একটি গলির মধ্যে বিরাট রামদা নিয়ে হেঁটে আসছে সনি। তার সঙ্গে সমবয়সী আরেক কিশোর। এই ভিডিওকে মঈন গ্রুপ নিজেদের জন্য হুমকি মনে করে। এরপরই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, রাজশাহীর সব থানায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের তালিকা আছে। কেন্দ্রীয়ভাবে তাদের একটা ডেটাবেস করা হয়েছে। তাদের দিকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি তাদের মোটিভেশনের কাজটি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত