নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে, আরে লাল লাল নীল নীল বাত্তি দেইখ্যা নয়ন জুড়াইছে…’ ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অশিক্ষিত’ নামের বাংলা সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় গান। ৪৪ বছর আগের জনপ্রিয় সেই গানে গ্রাম থেকে আসা অশিক্ষিত নায়ক রাজ্জাক আর নায়িকা অঞ্জনাকে রঙিন ঢাকার রূপ দেখে বিমোহিত হতে দেখা যায়। তখনকার পথঘাট, দালানকোঠা, ঝাড়বাতি, গাড়িসহ সুন্দর নাগরিক জীবনের হাতছানি ছিল ওই গানে। রাজ্জাক-অঞ্জনা তখনকার ঢাকা শহরে এসে নিজেদের বদলে দেওয়ার মনোবাসনা প্রকাশ করেছিলেন!
সেই ঢাকা এখন আরও রঙিন, আরও উন্নত, বিচিত্র সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধার তিলোত্তমা মহানগরী। বলা যায়, অনেকটাই বদলে গেছে এর সবকিছু। কিন্তু চার দশক পরও গ্রাম থেকে বা দেশের অন্য শহর থেকে ঢাকায় মানুষ আসা থামেনি। বরং বেড়েছে কয়েক গুণ। আর এখানে ওই ‘অশিক্ষিত’ সিনেমার মতো শুধু নিরক্ষর মানুষই আসছে না; ভাগ্য বদলের আশায়, জীবন বদলে দিতে, কাজের সন্ধানে শিক্ষিত মানুষেরও লম্বা মিছিল এই শহরে। আর এভাবে মানুষের ভাগ্য ফেরানোর অন্যতম আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে ঢাকা শহর।
গতকাল বুধবার প্রকাশিত সরকারের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ কার্যক্রমের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে শুধু ঢাকা জেলাতেই বাস ১ কোটি ৪৭ লাখ মানুষের। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ১ কোটি ৩ লাখ। এক দশকে ঢাকায় মানুষ বেড়েছে ৩৩ লাখ ৮ হাজার। ঢাকা ও এর আশপাশের চার জেলায় জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫৮ লাখ। এই শহর এবং আশপাশের ৪টি জেলা যে আসলে ডাল-ভাত সংস্থানের কেন্দ্র, তা বোঝা যায় প্রতি ঈদে বা যেকোনো উৎসবে। লাখ লাখ মানুষের ঢাকা ছাড়া ও ফিরে আসার চিত্রই বলে দেয় এ রঙিন ঢাকা ছাড়া আদতে তাদের কোনো গতি নেই।
প্রশ্ন উঠেছে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশের সব অঞ্চলের মানুষ কেন শুধু ঢাকাতেই আসছে? তথ্য-উপাত্ত বলছে, আসলে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা। সরকারি অফিস-আদালত সবই ঢাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের ২০১৩ সালের সবশেষ অর্থনৈতিক শুমারি বলছে, দেশের মোট অর্থনৈতিক স্থাপনার সংখ্যা ছিল ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৫টি। এর মধ্যে শুধু ঢাকা জেলায় এই সংখ্যা ৩৭ লাখ ১৬ হাজার ৮৪৮ টি। এর মধ্যে শহরে ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪৮টি আর গ্রামে ১২ লাখ ৫৯ হাজার ৯০০টি। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ঢাকার আশপাশের জেলা ধরলে এই সংখ্যা আরও বড় হবে। অর্থনৈতিক স্থাপনার বেশির ভাগই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পাইকারি ব্যবসা, গাড়ির গ্যারেজ, আবাসন, খাদ্য, পরিবহন, বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান অন্যতম।
বোঝাই যাচ্ছে, সারা দেশে যেসব অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম হয়, তার সিংহভাগই হয় শুধু ঢাকা ঘিরে। বিবিএসের গতকালের ঘোষিত জনশুমারির ফলাফলেও সেই চিত্রই ধরা পড়েছে। তথ্য বলছে, ঘনত্বের বিচারে ঢাকা সবার ওপরে। দেশের প্রতি এক শ জনের ৯ জন বাস করে রাজধানী ঢাকায়। ঢাকার মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে বাস করে ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৫ জন। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৯ হাজার ৩৫৩ জন, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ঘনত্ব। উত্তর সিটিতে ৫৯ লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৭ জন মানুষের বাস, ঘনত্ব ৩০ হাজার ৪৭৪ জন। এক দশকে ঢাকায় মানুষ বেড়েছে ৩৩ লাখ ৮ হাজার জন।
রাজধানীমুখী মানুষের এ স্রোত ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকার আশপাশের চার জেলাতেও। গাজীপুরে বাস করে ৫২ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭৪ জন, নারায়ণগঞ্জে ৩৯ লাখ ৯ হাজার ১৩৮ জন, নরসিংদীতে ২৫ লাখ ৮৪ হাজার মানুষের বাস। সব মিলিয়ে ঢাকার চার জেলাতে বাস করে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৯১ হাজার মানুষ। যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশের বেশি। অথচ দেশে মানুষের গড় ঘনত্ব ১ হাজার ১১৯ জন।
গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট ও এশিয়ান ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, সারা দেশের সম্পদের ভাগাভাগি ঢাকা শহরে হয়। গ্রামের মানুষ তাদের ভাগ চায়।
সব ক্ষেত্রে ঢাকা নির্ভরতার নেতিবাচক দিক উঠে আসছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্যেও। গত ডিসেম্বরে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর বার্ষিক সম্মেলনে বলা হয়, দেশের প্রায় ৮ শতাংশ চাকরিই ঢাকাকেন্দ্রিক। আর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বৃহত্তর ঢাকায় রয়েছে দেশের ৪০ শতাংশ চাকরি। রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সার্বিকভাবে নগর উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই ক্ষতির পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ থেকে ১০ শতাংশ।
লন্ডনভিত্তিক ম্যাগাজিন দা ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) গত জুনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বাস অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার স্থান সপ্তম। বাসযোগ্য ১৭২ শহরের তালিকায় রাজধানী ঢাকার অবস্থান ১৬৬ তম।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মানুষকে জীবিকার জন্য কিছু না কিছু করে খেতে হবে। এ জন্য সবাই ঢাকামুখী হচ্ছে। কারণ দেশের সবকিছু দুটি শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে যে সেবাই পাওয়া যায় তার সবই ঢাকা কেন্দ্রিক। এতে বাড়তি মানুষ ম্যানেজ করার জন্য যে সেবা দরকার, অপরিকল্পিতভাবে সেগুলোর ব্যবস্থা করতে গিয়ে ঢাকা আবাস যোগ্যতা হারাচ্ছে। অন্য কোনা শহর বা এলাকা সেভাবে উন্নত হচ্ছে না। কারণ সেখানে সহায়ক অবকাঠামো নেই। শিল্প গড়ে ওঠার জন্য বন্দরের পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা থাকতে হয়। এর একটি চট্টগ্রামে, অপরটি ঢাকায়। ফলে কোনো এলাকায় কেউ শিল্প করতে চাইলেও কর্মীদের সেখানে থাকার মতো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে না। ফলে সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিকই হচ্ছে। এটা একটা চক্রের মতো।
চলতি শুমারির প্রতিবেদন বলছে, গত এক দশকে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২ কোটি ১১ লাখ ১৫ হাজার। বৃদ্ধির হাত ১.২২ শতাংশ, যা গত ৫ দশকের মধ্যের সবচেয়ে কম। দেশের মোট জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪। আর নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬। প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেশে হিজড়া রয়েছেন ১২ হাজার ৬২৯ জন।
জনসংখ্যা অনুপাতে সাক্ষরতার হার বেড়েছে। এক দশকে ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে। যার মধ্যে অঞ্চলভেদে গ্রামাঞ্চলে ৭১ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ৮১ দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে নারী-পুরুষ লিঙ্গভিত্তিক বিবেচনায় পুরুষের সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, নারী শিক্ষার হার ৭২ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং তৃতীয় লিঙ্গের সাক্ষরতার হার ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
শুমারিতে দেখা গেছে, ৫ বছরের বেশি মানুষের ৫৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ মোবাইল ব্যবহার করে। ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৩৭ দশমিক ০১ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। পাঁচ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
বৈবাহিক অবস্থার দিক দিয়ে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে গড়ে অবিবাহিত ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বিবাহিত ৬৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। বিধবা কিংবা বিপত্নীক ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। তালাকপ্রাপ্ত শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। আলাদা থাকেন শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ।
মোট জনসংখ্যার মধ্যে গুটি কয়েক শহরেই বাস করে ৫ কোটি মানুষ। আর গ্রামে বাস করেন ১১ কোটি। দেশে মোট প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৬০৪ জন। যা মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এর মধ্যে ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ১০৫ জন পুরুষ, আর ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৯৯ জন নারী। মোট বস্তিবাসী ১৮ লাখ ৪৮৬ জন, ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১৮৫ জন। দেশে মোট পরিবারের সংখ্যা ৪ কোটি ১০ লাখ। ১.২৩ শতাংশ মানুষ টয়লেট ব্যবহার করে না। দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পায় না।
দেশে জনসংখ্যার ৯১ দশমিক ০৪ শতাংশ মুসলমান, ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ হিন্দু, দশমিক ৬২ শতাংশ বৌদ্ধ, দশমিক ৩০ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য দশমিক ১২ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১১ সালে এই হার ছিল যথাক্রমে ৯০ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, দশমিক ৬২ শতাংশ, দশমিক ৩১ শতাংশ ও দশমিক ১৪ শতাংশ।
গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্মার্ট ট্যাবের মাধ্যমে তথ্য নেওয়া হয় এবং তা মাত্র এক মাসের ব্যবধানে প্রকাশ করা হয়। ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমসহ বিবিএসের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।

‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে, আরে লাল লাল নীল নীল বাত্তি দেইখ্যা নয়ন জুড়াইছে…’ ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অশিক্ষিত’ নামের বাংলা সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় গান। ৪৪ বছর আগের জনপ্রিয় সেই গানে গ্রাম থেকে আসা অশিক্ষিত নায়ক রাজ্জাক আর নায়িকা অঞ্জনাকে রঙিন ঢাকার রূপ দেখে বিমোহিত হতে দেখা যায়। তখনকার পথঘাট, দালানকোঠা, ঝাড়বাতি, গাড়িসহ সুন্দর নাগরিক জীবনের হাতছানি ছিল ওই গানে। রাজ্জাক-অঞ্জনা তখনকার ঢাকা শহরে এসে নিজেদের বদলে দেওয়ার মনোবাসনা প্রকাশ করেছিলেন!
সেই ঢাকা এখন আরও রঙিন, আরও উন্নত, বিচিত্র সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধার তিলোত্তমা মহানগরী। বলা যায়, অনেকটাই বদলে গেছে এর সবকিছু। কিন্তু চার দশক পরও গ্রাম থেকে বা দেশের অন্য শহর থেকে ঢাকায় মানুষ আসা থামেনি। বরং বেড়েছে কয়েক গুণ। আর এখানে ওই ‘অশিক্ষিত’ সিনেমার মতো শুধু নিরক্ষর মানুষই আসছে না; ভাগ্য বদলের আশায়, জীবন বদলে দিতে, কাজের সন্ধানে শিক্ষিত মানুষেরও লম্বা মিছিল এই শহরে। আর এভাবে মানুষের ভাগ্য ফেরানোর অন্যতম আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে ঢাকা শহর।
গতকাল বুধবার প্রকাশিত সরকারের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ কার্যক্রমের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে শুধু ঢাকা জেলাতেই বাস ১ কোটি ৪৭ লাখ মানুষের। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ১ কোটি ৩ লাখ। এক দশকে ঢাকায় মানুষ বেড়েছে ৩৩ লাখ ৮ হাজার। ঢাকা ও এর আশপাশের চার জেলায় জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫৮ লাখ। এই শহর এবং আশপাশের ৪টি জেলা যে আসলে ডাল-ভাত সংস্থানের কেন্দ্র, তা বোঝা যায় প্রতি ঈদে বা যেকোনো উৎসবে। লাখ লাখ মানুষের ঢাকা ছাড়া ও ফিরে আসার চিত্রই বলে দেয় এ রঙিন ঢাকা ছাড়া আদতে তাদের কোনো গতি নেই।
প্রশ্ন উঠেছে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশের সব অঞ্চলের মানুষ কেন শুধু ঢাকাতেই আসছে? তথ্য-উপাত্ত বলছে, আসলে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা। সরকারি অফিস-আদালত সবই ঢাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের ২০১৩ সালের সবশেষ অর্থনৈতিক শুমারি বলছে, দেশের মোট অর্থনৈতিক স্থাপনার সংখ্যা ছিল ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৫টি। এর মধ্যে শুধু ঢাকা জেলায় এই সংখ্যা ৩৭ লাখ ১৬ হাজার ৮৪৮ টি। এর মধ্যে শহরে ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪৮টি আর গ্রামে ১২ লাখ ৫৯ হাজার ৯০০টি। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ঢাকার আশপাশের জেলা ধরলে এই সংখ্যা আরও বড় হবে। অর্থনৈতিক স্থাপনার বেশির ভাগই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পাইকারি ব্যবসা, গাড়ির গ্যারেজ, আবাসন, খাদ্য, পরিবহন, বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান অন্যতম।
বোঝাই যাচ্ছে, সারা দেশে যেসব অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম হয়, তার সিংহভাগই হয় শুধু ঢাকা ঘিরে। বিবিএসের গতকালের ঘোষিত জনশুমারির ফলাফলেও সেই চিত্রই ধরা পড়েছে। তথ্য বলছে, ঘনত্বের বিচারে ঢাকা সবার ওপরে। দেশের প্রতি এক শ জনের ৯ জন বাস করে রাজধানী ঢাকায়। ঢাকার মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে বাস করে ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৫ জন। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৯ হাজার ৩৫৩ জন, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ঘনত্ব। উত্তর সিটিতে ৫৯ লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৭ জন মানুষের বাস, ঘনত্ব ৩০ হাজার ৪৭৪ জন। এক দশকে ঢাকায় মানুষ বেড়েছে ৩৩ লাখ ৮ হাজার জন।
রাজধানীমুখী মানুষের এ স্রোত ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকার আশপাশের চার জেলাতেও। গাজীপুরে বাস করে ৫২ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭৪ জন, নারায়ণগঞ্জে ৩৯ লাখ ৯ হাজার ১৩৮ জন, নরসিংদীতে ২৫ লাখ ৮৪ হাজার মানুষের বাস। সব মিলিয়ে ঢাকার চার জেলাতে বাস করে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৯১ হাজার মানুষ। যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশের বেশি। অথচ দেশে মানুষের গড় ঘনত্ব ১ হাজার ১১৯ জন।
গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট ও এশিয়ান ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, সারা দেশের সম্পদের ভাগাভাগি ঢাকা শহরে হয়। গ্রামের মানুষ তাদের ভাগ চায়।
সব ক্ষেত্রে ঢাকা নির্ভরতার নেতিবাচক দিক উঠে আসছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্যেও। গত ডিসেম্বরে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর বার্ষিক সম্মেলনে বলা হয়, দেশের প্রায় ৮ শতাংশ চাকরিই ঢাকাকেন্দ্রিক। আর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বৃহত্তর ঢাকায় রয়েছে দেশের ৪০ শতাংশ চাকরি। রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সার্বিকভাবে নগর উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই ক্ষতির পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ থেকে ১০ শতাংশ।
লন্ডনভিত্তিক ম্যাগাজিন দা ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) গত জুনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বাস অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার স্থান সপ্তম। বাসযোগ্য ১৭২ শহরের তালিকায় রাজধানী ঢাকার অবস্থান ১৬৬ তম।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মানুষকে জীবিকার জন্য কিছু না কিছু করে খেতে হবে। এ জন্য সবাই ঢাকামুখী হচ্ছে। কারণ দেশের সবকিছু দুটি শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে যে সেবাই পাওয়া যায় তার সবই ঢাকা কেন্দ্রিক। এতে বাড়তি মানুষ ম্যানেজ করার জন্য যে সেবা দরকার, অপরিকল্পিতভাবে সেগুলোর ব্যবস্থা করতে গিয়ে ঢাকা আবাস যোগ্যতা হারাচ্ছে। অন্য কোনা শহর বা এলাকা সেভাবে উন্নত হচ্ছে না। কারণ সেখানে সহায়ক অবকাঠামো নেই। শিল্প গড়ে ওঠার জন্য বন্দরের পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা থাকতে হয়। এর একটি চট্টগ্রামে, অপরটি ঢাকায়। ফলে কোনো এলাকায় কেউ শিল্প করতে চাইলেও কর্মীদের সেখানে থাকার মতো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে না। ফলে সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিকই হচ্ছে। এটা একটা চক্রের মতো।
চলতি শুমারির প্রতিবেদন বলছে, গত এক দশকে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২ কোটি ১১ লাখ ১৫ হাজার। বৃদ্ধির হাত ১.২২ শতাংশ, যা গত ৫ দশকের মধ্যের সবচেয়ে কম। দেশের মোট জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪। আর নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬। প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেশে হিজড়া রয়েছেন ১২ হাজার ৬২৯ জন।
জনসংখ্যা অনুপাতে সাক্ষরতার হার বেড়েছে। এক দশকে ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে। যার মধ্যে অঞ্চলভেদে গ্রামাঞ্চলে ৭১ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ৮১ দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে নারী-পুরুষ লিঙ্গভিত্তিক বিবেচনায় পুরুষের সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, নারী শিক্ষার হার ৭২ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং তৃতীয় লিঙ্গের সাক্ষরতার হার ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
শুমারিতে দেখা গেছে, ৫ বছরের বেশি মানুষের ৫৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ মোবাইল ব্যবহার করে। ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৩৭ দশমিক ০১ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। পাঁচ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
বৈবাহিক অবস্থার দিক দিয়ে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে গড়ে অবিবাহিত ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বিবাহিত ৬৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। বিধবা কিংবা বিপত্নীক ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। তালাকপ্রাপ্ত শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। আলাদা থাকেন শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ।
মোট জনসংখ্যার মধ্যে গুটি কয়েক শহরেই বাস করে ৫ কোটি মানুষ। আর গ্রামে বাস করেন ১১ কোটি। দেশে মোট প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৬০৪ জন। যা মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এর মধ্যে ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ১০৫ জন পুরুষ, আর ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৯৯ জন নারী। মোট বস্তিবাসী ১৮ লাখ ৪৮৬ জন, ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১৮৫ জন। দেশে মোট পরিবারের সংখ্যা ৪ কোটি ১০ লাখ। ১.২৩ শতাংশ মানুষ টয়লেট ব্যবহার করে না। দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পায় না।
দেশে জনসংখ্যার ৯১ দশমিক ০৪ শতাংশ মুসলমান, ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ হিন্দু, দশমিক ৬২ শতাংশ বৌদ্ধ, দশমিক ৩০ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য দশমিক ১২ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১১ সালে এই হার ছিল যথাক্রমে ৯০ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, দশমিক ৬২ শতাংশ, দশমিক ৩১ শতাংশ ও দশমিক ১৪ শতাংশ।
গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্মার্ট ট্যাবের মাধ্যমে তথ্য নেওয়া হয় এবং তা মাত্র এক মাসের ব্যবধানে প্রকাশ করা হয়। ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমসহ বিবিএসের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে, আরে লাল লাল নীল নীল বাত্তি দেইখ্যা নয়ন জুড়াইছে…’ ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অশিক্ষিত’ নামের বাংলা সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় গান। ৪৪ বছর আগের জনপ্রিয় সেই গানে গ্রাম থেকে আসা অশিক্ষিত নায়ক রাজ্জাক আর নায়িকা অঞ্জনাকে রঙিন ঢাকার রূপ দেখে বিমোহিত হতে দেখা যায়। তখনকার পথঘাট, দালানকোঠা, ঝাড়বাতি, গাড়িসহ সুন্দর নাগরিক জীবনের হাতছানি ছিল ওই গানে। রাজ্জাক-অঞ্জনা তখনকার ঢাকা শহরে এসে নিজেদের বদলে দেওয়ার মনোবাসনা প্রকাশ করেছিলেন!
সেই ঢাকা এখন আরও রঙিন, আরও উন্নত, বিচিত্র সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধার তিলোত্তমা মহানগরী। বলা যায়, অনেকটাই বদলে গেছে এর সবকিছু। কিন্তু চার দশক পরও গ্রাম থেকে বা দেশের অন্য শহর থেকে ঢাকায় মানুষ আসা থামেনি। বরং বেড়েছে কয়েক গুণ। আর এখানে ওই ‘অশিক্ষিত’ সিনেমার মতো শুধু নিরক্ষর মানুষই আসছে না; ভাগ্য বদলের আশায়, জীবন বদলে দিতে, কাজের সন্ধানে শিক্ষিত মানুষেরও লম্বা মিছিল এই শহরে। আর এভাবে মানুষের ভাগ্য ফেরানোর অন্যতম আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে ঢাকা শহর।
গতকাল বুধবার প্রকাশিত সরকারের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ কার্যক্রমের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে শুধু ঢাকা জেলাতেই বাস ১ কোটি ৪৭ লাখ মানুষের। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ১ কোটি ৩ লাখ। এক দশকে ঢাকায় মানুষ বেড়েছে ৩৩ লাখ ৮ হাজার। ঢাকা ও এর আশপাশের চার জেলায় জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫৮ লাখ। এই শহর এবং আশপাশের ৪টি জেলা যে আসলে ডাল-ভাত সংস্থানের কেন্দ্র, তা বোঝা যায় প্রতি ঈদে বা যেকোনো উৎসবে। লাখ লাখ মানুষের ঢাকা ছাড়া ও ফিরে আসার চিত্রই বলে দেয় এ রঙিন ঢাকা ছাড়া আদতে তাদের কোনো গতি নেই।
প্রশ্ন উঠেছে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশের সব অঞ্চলের মানুষ কেন শুধু ঢাকাতেই আসছে? তথ্য-উপাত্ত বলছে, আসলে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা। সরকারি অফিস-আদালত সবই ঢাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের ২০১৩ সালের সবশেষ অর্থনৈতিক শুমারি বলছে, দেশের মোট অর্থনৈতিক স্থাপনার সংখ্যা ছিল ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৫টি। এর মধ্যে শুধু ঢাকা জেলায় এই সংখ্যা ৩৭ লাখ ১৬ হাজার ৮৪৮ টি। এর মধ্যে শহরে ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪৮টি আর গ্রামে ১২ লাখ ৫৯ হাজার ৯০০টি। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ঢাকার আশপাশের জেলা ধরলে এই সংখ্যা আরও বড় হবে। অর্থনৈতিক স্থাপনার বেশির ভাগই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পাইকারি ব্যবসা, গাড়ির গ্যারেজ, আবাসন, খাদ্য, পরিবহন, বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান অন্যতম।
বোঝাই যাচ্ছে, সারা দেশে যেসব অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম হয়, তার সিংহভাগই হয় শুধু ঢাকা ঘিরে। বিবিএসের গতকালের ঘোষিত জনশুমারির ফলাফলেও সেই চিত্রই ধরা পড়েছে। তথ্য বলছে, ঘনত্বের বিচারে ঢাকা সবার ওপরে। দেশের প্রতি এক শ জনের ৯ জন বাস করে রাজধানী ঢাকায়। ঢাকার মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে বাস করে ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৫ জন। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৯ হাজার ৩৫৩ জন, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ঘনত্ব। উত্তর সিটিতে ৫৯ লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৭ জন মানুষের বাস, ঘনত্ব ৩০ হাজার ৪৭৪ জন। এক দশকে ঢাকায় মানুষ বেড়েছে ৩৩ লাখ ৮ হাজার জন।
রাজধানীমুখী মানুষের এ স্রোত ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকার আশপাশের চার জেলাতেও। গাজীপুরে বাস করে ৫২ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭৪ জন, নারায়ণগঞ্জে ৩৯ লাখ ৯ হাজার ১৩৮ জন, নরসিংদীতে ২৫ লাখ ৮৪ হাজার মানুষের বাস। সব মিলিয়ে ঢাকার চার জেলাতে বাস করে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৯১ হাজার মানুষ। যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশের বেশি। অথচ দেশে মানুষের গড় ঘনত্ব ১ হাজার ১১৯ জন।
গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট ও এশিয়ান ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, সারা দেশের সম্পদের ভাগাভাগি ঢাকা শহরে হয়। গ্রামের মানুষ তাদের ভাগ চায়।
সব ক্ষেত্রে ঢাকা নির্ভরতার নেতিবাচক দিক উঠে আসছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্যেও। গত ডিসেম্বরে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর বার্ষিক সম্মেলনে বলা হয়, দেশের প্রায় ৮ শতাংশ চাকরিই ঢাকাকেন্দ্রিক। আর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বৃহত্তর ঢাকায় রয়েছে দেশের ৪০ শতাংশ চাকরি। রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সার্বিকভাবে নগর উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই ক্ষতির পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ থেকে ১০ শতাংশ।
লন্ডনভিত্তিক ম্যাগাজিন দা ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) গত জুনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বাস অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার স্থান সপ্তম। বাসযোগ্য ১৭২ শহরের তালিকায় রাজধানী ঢাকার অবস্থান ১৬৬ তম।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মানুষকে জীবিকার জন্য কিছু না কিছু করে খেতে হবে। এ জন্য সবাই ঢাকামুখী হচ্ছে। কারণ দেশের সবকিছু দুটি শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে যে সেবাই পাওয়া যায় তার সবই ঢাকা কেন্দ্রিক। এতে বাড়তি মানুষ ম্যানেজ করার জন্য যে সেবা দরকার, অপরিকল্পিতভাবে সেগুলোর ব্যবস্থা করতে গিয়ে ঢাকা আবাস যোগ্যতা হারাচ্ছে। অন্য কোনা শহর বা এলাকা সেভাবে উন্নত হচ্ছে না। কারণ সেখানে সহায়ক অবকাঠামো নেই। শিল্প গড়ে ওঠার জন্য বন্দরের পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা থাকতে হয়। এর একটি চট্টগ্রামে, অপরটি ঢাকায়। ফলে কোনো এলাকায় কেউ শিল্প করতে চাইলেও কর্মীদের সেখানে থাকার মতো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে না। ফলে সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিকই হচ্ছে। এটা একটা চক্রের মতো।
চলতি শুমারির প্রতিবেদন বলছে, গত এক দশকে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২ কোটি ১১ লাখ ১৫ হাজার। বৃদ্ধির হাত ১.২২ শতাংশ, যা গত ৫ দশকের মধ্যের সবচেয়ে কম। দেশের মোট জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪। আর নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬। প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেশে হিজড়া রয়েছেন ১২ হাজার ৬২৯ জন।
জনসংখ্যা অনুপাতে সাক্ষরতার হার বেড়েছে। এক দশকে ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে। যার মধ্যে অঞ্চলভেদে গ্রামাঞ্চলে ৭১ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ৮১ দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে নারী-পুরুষ লিঙ্গভিত্তিক বিবেচনায় পুরুষের সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, নারী শিক্ষার হার ৭২ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং তৃতীয় লিঙ্গের সাক্ষরতার হার ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
শুমারিতে দেখা গেছে, ৫ বছরের বেশি মানুষের ৫৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ মোবাইল ব্যবহার করে। ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৩৭ দশমিক ০১ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। পাঁচ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
বৈবাহিক অবস্থার দিক দিয়ে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে গড়ে অবিবাহিত ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বিবাহিত ৬৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। বিধবা কিংবা বিপত্নীক ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। তালাকপ্রাপ্ত শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। আলাদা থাকেন শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ।
মোট জনসংখ্যার মধ্যে গুটি কয়েক শহরেই বাস করে ৫ কোটি মানুষ। আর গ্রামে বাস করেন ১১ কোটি। দেশে মোট প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৬০৪ জন। যা মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এর মধ্যে ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ১০৫ জন পুরুষ, আর ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৯৯ জন নারী। মোট বস্তিবাসী ১৮ লাখ ৪৮৬ জন, ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১৮৫ জন। দেশে মোট পরিবারের সংখ্যা ৪ কোটি ১০ লাখ। ১.২৩ শতাংশ মানুষ টয়লেট ব্যবহার করে না। দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পায় না।
দেশে জনসংখ্যার ৯১ দশমিক ০৪ শতাংশ মুসলমান, ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ হিন্দু, দশমিক ৬২ শতাংশ বৌদ্ধ, দশমিক ৩০ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য দশমিক ১২ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১১ সালে এই হার ছিল যথাক্রমে ৯০ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, দশমিক ৬২ শতাংশ, দশমিক ৩১ শতাংশ ও দশমিক ১৪ শতাংশ।
গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্মার্ট ট্যাবের মাধ্যমে তথ্য নেওয়া হয় এবং তা মাত্র এক মাসের ব্যবধানে প্রকাশ করা হয়। ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমসহ বিবিএসের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।

‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে, আরে লাল লাল নীল নীল বাত্তি দেইখ্যা নয়ন জুড়াইছে…’ ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অশিক্ষিত’ নামের বাংলা সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় গান। ৪৪ বছর আগের জনপ্রিয় সেই গানে গ্রাম থেকে আসা অশিক্ষিত নায়ক রাজ্জাক আর নায়িকা অঞ্জনাকে রঙিন ঢাকার রূপ দেখে বিমোহিত হতে দেখা যায়। তখনকার পথঘাট, দালানকোঠা, ঝাড়বাতি, গাড়িসহ সুন্দর নাগরিক জীবনের হাতছানি ছিল ওই গানে। রাজ্জাক-অঞ্জনা তখনকার ঢাকা শহরে এসে নিজেদের বদলে দেওয়ার মনোবাসনা প্রকাশ করেছিলেন!
সেই ঢাকা এখন আরও রঙিন, আরও উন্নত, বিচিত্র সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধার তিলোত্তমা মহানগরী। বলা যায়, অনেকটাই বদলে গেছে এর সবকিছু। কিন্তু চার দশক পরও গ্রাম থেকে বা দেশের অন্য শহর থেকে ঢাকায় মানুষ আসা থামেনি। বরং বেড়েছে কয়েক গুণ। আর এখানে ওই ‘অশিক্ষিত’ সিনেমার মতো শুধু নিরক্ষর মানুষই আসছে না; ভাগ্য বদলের আশায়, জীবন বদলে দিতে, কাজের সন্ধানে শিক্ষিত মানুষেরও লম্বা মিছিল এই শহরে। আর এভাবে মানুষের ভাগ্য ফেরানোর অন্যতম আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে ঢাকা শহর।
গতকাল বুধবার প্রকাশিত সরকারের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ কার্যক্রমের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে শুধু ঢাকা জেলাতেই বাস ১ কোটি ৪৭ লাখ মানুষের। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ১ কোটি ৩ লাখ। এক দশকে ঢাকায় মানুষ বেড়েছে ৩৩ লাখ ৮ হাজার। ঢাকা ও এর আশপাশের চার জেলায় জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫৮ লাখ। এই শহর এবং আশপাশের ৪টি জেলা যে আসলে ডাল-ভাত সংস্থানের কেন্দ্র, তা বোঝা যায় প্রতি ঈদে বা যেকোনো উৎসবে। লাখ লাখ মানুষের ঢাকা ছাড়া ও ফিরে আসার চিত্রই বলে দেয় এ রঙিন ঢাকা ছাড়া আদতে তাদের কোনো গতি নেই।
প্রশ্ন উঠেছে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশের সব অঞ্চলের মানুষ কেন শুধু ঢাকাতেই আসছে? তথ্য-উপাত্ত বলছে, আসলে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা। সরকারি অফিস-আদালত সবই ঢাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের ২০১৩ সালের সবশেষ অর্থনৈতিক শুমারি বলছে, দেশের মোট অর্থনৈতিক স্থাপনার সংখ্যা ছিল ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৫টি। এর মধ্যে শুধু ঢাকা জেলায় এই সংখ্যা ৩৭ লাখ ১৬ হাজার ৮৪৮ টি। এর মধ্যে শহরে ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪৮টি আর গ্রামে ১২ লাখ ৫৯ হাজার ৯০০টি। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ঢাকার আশপাশের জেলা ধরলে এই সংখ্যা আরও বড় হবে। অর্থনৈতিক স্থাপনার বেশির ভাগই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পাইকারি ব্যবসা, গাড়ির গ্যারেজ, আবাসন, খাদ্য, পরিবহন, বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান অন্যতম।
বোঝাই যাচ্ছে, সারা দেশে যেসব অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম হয়, তার সিংহভাগই হয় শুধু ঢাকা ঘিরে। বিবিএসের গতকালের ঘোষিত জনশুমারির ফলাফলেও সেই চিত্রই ধরা পড়েছে। তথ্য বলছে, ঘনত্বের বিচারে ঢাকা সবার ওপরে। দেশের প্রতি এক শ জনের ৯ জন বাস করে রাজধানী ঢাকায়। ঢাকার মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে বাস করে ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৫ জন। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৯ হাজার ৩৫৩ জন, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ঘনত্ব। উত্তর সিটিতে ৫৯ লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৭ জন মানুষের বাস, ঘনত্ব ৩০ হাজার ৪৭৪ জন। এক দশকে ঢাকায় মানুষ বেড়েছে ৩৩ লাখ ৮ হাজার জন।
রাজধানীমুখী মানুষের এ স্রোত ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকার আশপাশের চার জেলাতেও। গাজীপুরে বাস করে ৫২ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭৪ জন, নারায়ণগঞ্জে ৩৯ লাখ ৯ হাজার ১৩৮ জন, নরসিংদীতে ২৫ লাখ ৮৪ হাজার মানুষের বাস। সব মিলিয়ে ঢাকার চার জেলাতে বাস করে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৯১ হাজার মানুষ। যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশের বেশি। অথচ দেশে মানুষের গড় ঘনত্ব ১ হাজার ১১৯ জন।
গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট ও এশিয়ান ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, সারা দেশের সম্পদের ভাগাভাগি ঢাকা শহরে হয়। গ্রামের মানুষ তাদের ভাগ চায়।
সব ক্ষেত্রে ঢাকা নির্ভরতার নেতিবাচক দিক উঠে আসছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্যেও। গত ডিসেম্বরে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর বার্ষিক সম্মেলনে বলা হয়, দেশের প্রায় ৮ শতাংশ চাকরিই ঢাকাকেন্দ্রিক। আর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বৃহত্তর ঢাকায় রয়েছে দেশের ৪০ শতাংশ চাকরি। রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সার্বিকভাবে নগর উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই ক্ষতির পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ থেকে ১০ শতাংশ।
লন্ডনভিত্তিক ম্যাগাজিন দা ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) গত জুনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বাস অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার স্থান সপ্তম। বাসযোগ্য ১৭২ শহরের তালিকায় রাজধানী ঢাকার অবস্থান ১৬৬ তম।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মানুষকে জীবিকার জন্য কিছু না কিছু করে খেতে হবে। এ জন্য সবাই ঢাকামুখী হচ্ছে। কারণ দেশের সবকিছু দুটি শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে যে সেবাই পাওয়া যায় তার সবই ঢাকা কেন্দ্রিক। এতে বাড়তি মানুষ ম্যানেজ করার জন্য যে সেবা দরকার, অপরিকল্পিতভাবে সেগুলোর ব্যবস্থা করতে গিয়ে ঢাকা আবাস যোগ্যতা হারাচ্ছে। অন্য কোনা শহর বা এলাকা সেভাবে উন্নত হচ্ছে না। কারণ সেখানে সহায়ক অবকাঠামো নেই। শিল্প গড়ে ওঠার জন্য বন্দরের পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা থাকতে হয়। এর একটি চট্টগ্রামে, অপরটি ঢাকায়। ফলে কোনো এলাকায় কেউ শিল্প করতে চাইলেও কর্মীদের সেখানে থাকার মতো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে না। ফলে সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিকই হচ্ছে। এটা একটা চক্রের মতো।
চলতি শুমারির প্রতিবেদন বলছে, গত এক দশকে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২ কোটি ১১ লাখ ১৫ হাজার। বৃদ্ধির হাত ১.২২ শতাংশ, যা গত ৫ দশকের মধ্যের সবচেয়ে কম। দেশের মোট জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪। আর নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬। প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেশে হিজড়া রয়েছেন ১২ হাজার ৬২৯ জন।
জনসংখ্যা অনুপাতে সাক্ষরতার হার বেড়েছে। এক দশকে ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে। যার মধ্যে অঞ্চলভেদে গ্রামাঞ্চলে ৭১ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ৮১ দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে নারী-পুরুষ লিঙ্গভিত্তিক বিবেচনায় পুরুষের সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, নারী শিক্ষার হার ৭২ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং তৃতীয় লিঙ্গের সাক্ষরতার হার ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
শুমারিতে দেখা গেছে, ৫ বছরের বেশি মানুষের ৫৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ মোবাইল ব্যবহার করে। ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৩৭ দশমিক ০১ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। পাঁচ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
বৈবাহিক অবস্থার দিক দিয়ে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে গড়ে অবিবাহিত ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বিবাহিত ৬৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। বিধবা কিংবা বিপত্নীক ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। তালাকপ্রাপ্ত শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। আলাদা থাকেন শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ।
মোট জনসংখ্যার মধ্যে গুটি কয়েক শহরেই বাস করে ৫ কোটি মানুষ। আর গ্রামে বাস করেন ১১ কোটি। দেশে মোট প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৬০৪ জন। যা মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এর মধ্যে ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ১০৫ জন পুরুষ, আর ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৯৯ জন নারী। মোট বস্তিবাসী ১৮ লাখ ৪৮৬ জন, ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১৮৫ জন। দেশে মোট পরিবারের সংখ্যা ৪ কোটি ১০ লাখ। ১.২৩ শতাংশ মানুষ টয়লেট ব্যবহার করে না। দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পায় না।
দেশে জনসংখ্যার ৯১ দশমিক ০৪ শতাংশ মুসলমান, ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ হিন্দু, দশমিক ৬২ শতাংশ বৌদ্ধ, দশমিক ৩০ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য দশমিক ১২ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১১ সালে এই হার ছিল যথাক্রমে ৯০ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, দশমিক ৬২ শতাংশ, দশমিক ৩১ শতাংশ ও দশমিক ১৪ শতাংশ।
গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্মার্ট ট্যাবের মাধ্যমে তথ্য নেওয়া হয় এবং তা মাত্র এক মাসের ব্যবধানে প্রকাশ করা হয়। ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমসহ বিবিএসের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে, আরে লাল লাল নীল নীল বাত্তি দেইখ্যা নয়ন জুড়াইছে…’ ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অশিক্ষিত’ নামের বাংলা সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় গান। ৪৪ বছর আগের জনপ্রিয় সেই গানে গ্রাম থেকে আসা অশিক্ষিত নায়ক রাজ্জাক আর নায়িকা অঞ্জনাকে রঙিন ঢাকার রূপ দেখে বিমোহিত হতে দেখা যায়।
২৮ জুলাই ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে, আরে লাল লাল নীল নীল বাত্তি দেইখ্যা নয়ন জুড়াইছে…’ ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অশিক্ষিত’ নামের বাংলা সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় গান। ৪৪ বছর আগের জনপ্রিয় সেই গানে গ্রাম থেকে আসা অশিক্ষিত নায়ক রাজ্জাক আর নায়িকা অঞ্জনাকে রঙিন ঢাকার রূপ দেখে বিমোহিত হতে দেখা যায়।
২৮ জুলাই ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে, আরে লাল লাল নীল নীল বাত্তি দেইখ্যা নয়ন জুড়াইছে…’ ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অশিক্ষিত’ নামের বাংলা সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় গান। ৪৪ বছর আগের জনপ্রিয় সেই গানে গ্রাম থেকে আসা অশিক্ষিত নায়ক রাজ্জাক আর নায়িকা অঞ্জনাকে রঙিন ঢাকার রূপ দেখে বিমোহিত হতে দেখা যায়।
২৮ জুলাই ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে, আরে লাল লাল নীল নীল বাত্তি দেইখ্যা নয়ন জুড়াইছে…’ ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অশিক্ষিত’ নামের বাংলা সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় গান। ৪৪ বছর আগের জনপ্রিয় সেই গানে গ্রাম থেকে আসা অশিক্ষিত নায়ক রাজ্জাক আর নায়িকা অঞ্জনাকে রঙিন ঢাকার রূপ দেখে বিমোহিত হতে দেখা যায়।
২৮ জুলাই ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫