Ajker Patrika

কেমন আছে প্রিয় বাবুই

মো. ফরিদ রায়হান, অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) 
কেমন আছে প্রিয় বাবুই

সবুজ শ্যামল গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ। সেই পথ মিশে যায় গেরস্থবাড়ির আঙিনায়। পথ আর আঙিনার পাশেই উঁচু নারিকেলগাছ। এক পায়ে দাঁড়িয়ে তালগাছ আর বাঁকা খেজুরগাছ। গাছের ডালে ঝুলছে নলখাগড়া আর হোগলাবনের ঘাস ও লতাপাতা দিয়ে বানানো নান্দনিক ছোট্ট খুপরি। এ যেন হাওয়ায় ভাসতে থাকা ঝুলন্ত বাড়ি। এত উঁচুতে কে বানাল এই বাড়ি?

এই প্রশ্নের উত্তর এখন আর কারও অজানা নয়। গ্রামের ছেলেমেয়েরা এই বাসা নিয়ে প্রতিদিন খেলা করলেও শহুরেদের কাছে হয়তো অজানা। তবে কবি রজনীকান্ত সেন তাঁর ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায় দারুণভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন এই তাঁতি পাখির সঙ্গে। পাখির বয়ানে গেয়েছেন স্বাধীনতার স্তুতি। ‘পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা/ নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।’

নাম তার বাবুই। বুননশিল্পী, কারুশিল্পী কিংবা তাঁতি পাখি নামেও ডাকেন অনেকে। দলবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত এই পাখিরা লোকালয়ের উঁচু গাছে বাস করতে পছন্দ করে। গ্রামীণ জনপদে এদের বেশি দেখা যায়। কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত করে রাখে পরিবেশ। আর এদের বাসার দিকে তাকালে মুগ্ধ না হয়ে থাকার উপায় নেই। জনশ্রুতি আছে, বাবুই পাখিরা এদের বাসায় রাতে আলো জ্বালানোর জন্য জোনাকি পোকাকে কৌশলে আটকে রাখে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, ছোট আকারের এই পাখির ওজন মাত্র ১৮-২২ গ্রাম। দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই নামে তিন প্রজাতির বাবুই রয়েছে বাংলাদেশে। তবে বাংলা বাবুই ও দাগি বাবুই এখন প্রায় বিলুপ্ত।

মে থেকে সেপ্টেম্বর বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। পুরুষ বাবুই বাসা বোনে। বাসার কাজ অর্ধেক হলে স্ত্রী বাবুই তা দেখে, পছন্দ হলে জুটি বাঁধে। দুই থেকে চারটি ডিম দেয় স্ত্রী বাবুই। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে সময় লাগে প্রায় দুই সপ্তাহ। বাচ্চা উড়তে শেখে ৩০ দিনের মধ্যে। এরা বীজ, ধান, ভাত, পোকা ও ঘাসজাতীয় খাবার খুঁটে খুঁটে খায়।

কঠোর পরিশ্রমী বাবুই নিজেই নিজের বাসা নির্মাণ করে। ওল্টানো কলসির মতো দেখতে এই বাসা তৈরিতে ব্যবহার করে নলখাগড়া আর হোগলাবনের ঘাস।

এরপর দেয় পাতার আস্তরণ। ঠোঁটে কেটে ও পেটে ঘষে মসৃণ করা হয় আস্তরণ। প্রথমে নিচের দিকে ছিদ্র রাখা হয়, পরে ডিম দেওয়ার সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিচের দিকে থাকে লম্বালম্বি দরজা। এর মাঝে বেলকনি হিসেবে একটি সুতার মতো জায়গা। এই পথে তারা চলাফেরা করে।

হালকা বাদামি ও কালচে হলদেটে বাবুইয়ের সেই কিচিরমিচির ডাক আজ আর তেমন একটা শোনা যায় না। নানা কারণে বিলুপ্তির পথে শৈল্পিক পাখি বাবুই।

এখন আর আগের মতো বাবুই পাখি ও তার শৈল্পিক বাসার দেখা মেলে না। হোগলা ও নলখাগড়ার বন কমে যাওয়া, জমিতে কীটনাশক ব্যবহার, বাসা ভেঙে ফেলাসহ নানা কারণে বাবুই পাখির সংখ্যা দিনে দিনে কমছে।

অষ্টগ্রাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ওমর খৈয়াম উৎস বলেন, বাবুই পাখির বিলুপ্তি রোধ করতে জনসচেতনতা বাড়ানো দরকার। এর পাশাপাশি নিতে হবে সরকারি উদ্যোগ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

এনআইডির তথ্য ফাঁস করে ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জিয়াউলের বিরুদ্ধে

সাতকানিয়ায় নিহত জামায়াত কর্মীর লাশের পাশে ব্রাজিলের তৈরি অত্যাধুনিক পিস্তল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত