Ajker Patrika

নিরাপদ পানিসংকটে ১৫৮ গ্রাম

সেলিম হায়দার, তালা (সাতক্ষীরা)
নিরাপদ পানিসংকটে ১৫৮ গ্রাম

সাতক্ষীরা সদর পৌরসভা ও পাঁচ ইউনিয়নের ১৫৮ গ্রামে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শত শত মানুষ জলাবদ্ধতার কারণে নিরাপদ পানি, শৌচাগার এবং হাইজিন সংকটে ভুগছেন। নিরাপদ পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের অভাবে তাঁরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

এসব গ্রাম হলে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি ও বল্লী ইউনিয়নের ৬১ গ্রাম, তালা উপজেলার খলিশখালি, জালালপুর ও নগরঘাটা ইউনিয়নের ৬৪ গ্রাম এবং সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩৩টি গ্রাম। এসব গ্রামের শত শত পরিবার এখনো নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা এবং হাইজিন সমস্যায় আক্রান্ত।

বলাডাংগা গ্রামের শরবানু বেগমসহ অনেকেই বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ও হাইজিন সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, তাঁদের এলাকা বর্ষাকালসহ ৭ থেকে ৮ মাস জলাবদ্ধ থাকে। এ সময় পানি লবণাক্ত থাকায় খাবার পানি পাওয়া যায় না। প্রায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এক কলস খাবার পানি আনতে হয়। আবার এক ড্রাম পানি ৩০ টাকা দিয়ে কিনে খেতে হয়। বর্ষা মৌসুমে ভিটেবাড়িতে পানি জমে থাকায় ল্যাট্রিন করার মতো জায়গাও থাকে না। আর লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, চুলকানি, পাঁচড়া, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাঁরা।

তাঁরা আরও বলেন, বেতনা নদী ভরাট হওয়ায় এবং এলাকায় শত শত মাছের ঘেরের কারণে পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। এতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় তাঁরা নিরাপদ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

তালার উত্তরণের ওয়াইওয়াশ প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী হাসিনা পারভীন জানান, এলাকার মানুষের নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য আরও বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি এসডিজির ৬ নম্বর গোল অর্জনের জন্য সরকারি পদক্ষেপ জরুরি।

হাসিনা পারভীন আরও বলেন, একটি গবেষণা রিপোর্ট থেকে জানা যায় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ৭৯% নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ ছাড়া নোনা পানিতে চিংড়ি চাষের কারণে এলাকায় লবণাক্ততা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে উপকূলীয় বাঁধের পূর্বে এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ সংরক্ষিত পুকুরের পানি পান করত। কিন্তু চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণের ফলে লবণাক্ততার কারণে ওই সব পুকুরগুলোর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া অত্র অঞ্চলে খাবার পানি সংগ্রহ করা বিশেষ করে মহিলাদের জন্য বড় ধরনের একটি কঠিন কাজ। এক কলস খাবার পানি সংগ্রহের জন্য ২ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে যেতে হয়, দাঁড়াতে হয় দীর্ঘ লাইনে। দিনের একটা বড় অংশের শ্রম ঘণ্টা ব্যয় হয় এ কাজে। তারপরও যে পানি সংগ্রহ করা হয় বা ক্রয় করা হয় সেটা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়।

হাসিনা পারভীন আরও বলেন, খাবার পানির সংকটের সুযোগ নিয়ে অসংখ্য ব্যবসায়ী খাবার পানি বিক্রির সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে। এসব ব্যবসায়ীদের ব্যবহৃত প্রযুক্তি অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশ সম্মত নয়। তা ছাড়া দরিদ্র মানুষদের পক্ষে বাজারজাত উচ্চ মূল্যের এসব পানি কিনে খাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। যার ফলে তারা অনিরাপদ পানি পান করে থাকে যে কারণে বিভিন্ন রকমের পেটের পীড়া, আমাশয়, ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। 
এ ব্যাপারে ঝাউডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজমল উদ্দীন জানান, খাবার পানি ও স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করতে সরকারি বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। উত্তরণ দীর্ঘদিন ধরে অত্র এলাকায় হতদরিদ্র ও সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান জানান, বর্তমানে নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা আগের চেয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। খোলা স্থানে মলত্যাগের হারও প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি বলেন, সুপেয় পানির জন্য দুটি পাওয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট রয়েছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি উত্তোলন যাচ্ছে না। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত