Ajker Patrika

ব্যস্ততা বেড়েছে ৭০ বছরের পুরোনো দরজিপাড়ায়

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
ব্যস্ততা বেড়েছে ৭০ বছরের পুরোনো দরজিপাড়ায়

এখানকার পুরোনো মানুষদের চোখেমুখে বনেদি অভিজ্ঞতার ছাপ স্পষ্ট। জায়গাটার নাম খলিফাপট্টি। তবে স্থানীয়ভাবে এটি দরজিপাড়া নামেও পরিচিত। ১৯৪৭ সালে আইয়ুব আলী নামের একজন দরজি তাঁর কয়েকজন সাগরেদ নিয়ে আন্দরকিল্লা মোড়সংলগ্ন ঘাট ফরহাদবেগে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেছিলেন। সাত দশকের পরিক্রমায় জায়গাটি খলিফাপট্টি নামে বিখ্যাত হয়ে গেছে। ঢাকার ইসলামপুর ও চট্টগ্রামের টেরিবাজার থেকে থান কাপড় এনে নিজস্ব নকশায় সব বয়সের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী পোশাক তৈরি হয় খলিফাপট্টিতে।

এখানে সাড়ে ৩০০-এর বেশি কারখানা আছে। এগুলোর একেকটির আয়তন দেড় থেকে ২০০ বর্গফুট। মাথার ওপর সারাক্ষণ জ্বলছে সাদা রঙের এনার্জি সেভার লাইট। বাতাস দিচ্ছে দেয়ালে লাগানো ফ্যান। বিদ্যুৎ চলে গেলেই ভাপসা গরমে অসহনীয় হয়ে ওঠে ঘরের ভেতর। প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা সেলাই মেশিন চলার খটখট শব্দ কানে আসে খলিফাপট্টির ঘরগুলো থেকে। উঁকি মারলেই দেখা যায় ঘরময় ছড়ানো-ছিটানো কাপড়—সেগুলোর কিছু সেলাই করা, কিছুতে সেলাইয়ের কাজ চলছে। চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়সংলগ্ন খলিফাপট্টিতে ঈদের এ মৌসুমে ব্যস্ততা এখন চূড়ান্ত। কিন্তু এখানে কারও সঙ্গে কথা বললেই শুনবেন, ব্যবসা আর আগের মতো নেই!

এখানকার কোনো কোনো কারখানায় ৩ থেকে ৪টি, আবার কোনোটিতে ৬টি সেলাই মেশিন বসানো। সেগুলোতে পুরুষের তুলনায় নারী ও শিশুদের পোশাক বেশি তৈরি হয়। পুরুষের পাশাপাশি এখানে নারীরাও কাজ করছেন। কর্মরত এই মানুষের বেশির ভাগই বংশপরম্পরায় পোশাক সেলাইয়ের এ ব্যবসায় যুক্ত। এসব কারখানায় ৪ হাজারের বেশি কর্মচারী কাজ করেন। এখানকার কারিগরদের তৈরি বাহারি নকশার শার্ট, থ্রি-পিস, ওয়ান পিস, টপস, স্কার্ট চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়। স্থানীয় বাজারগুলো ছাড়াও এখানকার পোশাক চলে যায় দেশের অন্য জেলাতেও। পাইকারি ও খুচরা দুই ধরনের ব্যবসাই হয় এখানে।

এখানেই দেড়-দুই শ বর্গফুটের একটি ঘরের সামনে টাঙানো সাইনবোর্ডে লেখা ‘মা খাদিজা গার্মেন্টস’। এর স্বত্বাধিকারী মো. কবির হোসেন। কথার শুরুতেই তিনি জানালেন, এখন ব্যবসা আগের মতো নেই। ঈদ ঘনিয়ে আসছে বলে দু-এক দিন হচ্ছে কাস্টমাররা আসতে শুরু করেছেন। কাস্টমার না আসার কারণ কী, জানতে চাইলে কবির জানালেন, বিভিন্ন মার্কেটে বিকিকিনি কম বলে তাঁদের কাছে পোশাক তৈরির অর্ডারও কম। তবে এটাও সত্য যে দুই বছরের করোনা অতিমারি এই খলিফাপট্টিতেও একটা ছোবল বসিয়েছিল। সে জন্য এখানকার অনেকের ব্যবসা ‘লাইনচ্যুত’ হয়ে গেছে। তাই আগের তুলনায় কারখানার ‘মালিক’ ও কর্মচারীদের সংখ্যা কমে গেছে। খলিফাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি খন্দকার নুরুল ইসলাম জানালেন তেমন তথ্য।

জোসনা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা। স্মৃতি হাতরে তিনি জানান, শবে বরাতের পর থেকেই কাস্টমাররা পোশাকের অর্ডার করত আগে। এবার রোজা প্রায় অর্ধেক চলে যাওয়ার সময় হলো, কিন্তু তেমন কাস্টমার আসছে না।

প্রায় ৪৫ বছর ধরে খলিফাপট্টিতে কাপড়ের ব্যবসা করছেন নোয়াখালীর বাসিন্দা মো. শরীফউল্লাহ। ১০ বছর বয়সে তিনি এখানে আসেন। ভাইয়ের দোকানে প্রথমে তিনি কাপড় সেলাইয়ের কাজ শেখেন। পরে নিজেই একটি দোকান দেন। মাঝখানে খারাপ সময় গেলেও ঈদ ঘিরে এখন মোটামুটি ব্যবসা হচ্ছে বলে জানালেন শরীফ। দেড় শ টাকা থেকে শুরু করে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দামের পোশাক বিক্রি হয় এখানে। তবে ক্রেতারা মূলত এখানে আসেন কম দামের পোশাক কিনতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিএনসিসির পদ ছাড়লেন এস্তোনিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

এনআইডির নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের দায়িত্বে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা

পদত্যাগ করব না, আলোচনা করে সমাধান করব: কুয়েট উপাচার্য

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত