Ajker Patrika

‘ব্যথার দান’ নিজেই অসুস্থ

মো. ফাহাদ বিন সাঈদ, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ৪৯
‘ব্যথার দান’ নিজেই অসুস্থ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) আট হাজার শিক্ষার্থীর জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র চারজন। প্রতি দুই হাজার শিক্ষার্থীর জন্য চিকিৎসক মাত্র একজন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন প্রায় এক হাজার। প্রায় ৯ হাজার জনের জন্য মেডিকেল সেন্টার ‘ব্যথার দানে’ নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও ওষুধ। এতে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে না পারা চিকিৎসাকেন্দ্রটি যেন নিজেই ধুঁকছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেল সেন্টারটিতে দায়িত্বরত চারজন চিকিৎসকের মধ্যে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন মাত্র দুজন। গভীর রাতে বা দাপ্তরিক সময়ের বাইরে সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য কোনো চিকিৎসক নেই। দুজন আবাসিক চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও শূন্য রয়েছে পদ। পাঁচ বছরে শিক্ষার্থী সংখ্যা দ্বিগুণ হলেও বাড়েনি চিকিৎসকের সংখ্যা।

এদিকে চিকিৎসা কেন্দ্রে ওষুধ সরবরাহের জন্য পাঁচ বছর আগে বাজেট ছিল ৭৫ হাজার, যা এখনো একই রয়েছে। দুজন নার্সের মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় বাকিজন দিয়েই চলছে কাজ। আর করোনার সময়ে প্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জাম কেনার জন্য দেওয়া বরাদ্দ নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্য খাতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কিছু সরঞ্জাম থাকলেও নেই ইসিজি কক্ষ বা প্যাথলজি ল্যাব। ইসিজি মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র থাকলেও জনবলের অভাবে পড়ে আছে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশেই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। হাসপাতালের কর্মীরা নিজেদের উদ্যোগে সেন্টারটি পরিষ্কার করেন বলে জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মেডিকেল সেন্টারটিতে সময়মতো চিকিৎসা পাওয়া যায় না, নির্ধারিত সময়ের আগেই চিকিৎসক চলে যান। নাপা-প্যারাসিটামল ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। লিখে দেওয়া অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। চিকিৎসক ও কর্মীরা দায়িত্বশীল আচরণ করেন না বলেও অভিযোগ তাঁদের

শাহরিয়ার চৌধুরী নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ব্যথার দানে গেলে অধিকাংশ সময়ই হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। হয় চিকিৎসক থাকেন না, অথবা থাকলেও পর্যাপ্ত সেবা দেন না। সামান্য অসুস্থতাতেও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন না তারা।’

জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এম এম আশরাফ উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স নেই। সব মিলিয়ে কর্মী আছেন মাত্র সাতজন। টেকনিশিয়ান তো নেইই। ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন টেকনিশিয়ানের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নতুন ভবন নির্মাণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন করছে না প্রশাসন।’

এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা তপন কুমার সরকার বলেন, ‘নতুন হল খোলা হলে প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে অবস্থান করবে। যেকোনো মুহূর্তে যে কারও সমস্যা হতে পারে। আমি চাই মেডিকেল সেন্টারটি যেন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হয়। পাশাপাশি যেন এর সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা সামনে মেডিকেল সেন্টারকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করার উদ্যোগ নিচ্ছি।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মেডিকেল সেন্টার নিয়ে সদিচ্ছা থাকলেও দক্ষ টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিতে না পারায় তেমন কিছু করা সম্ভব হয়নি। সর্বোপরি এটির অবস্থা ভালো নয়। খালি পদে জনবল নিয়োগের চেষ্টা থাকলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় সম্ভব হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত