Ajker Patrika

করোনা সংক্রমণ কমলেও দেশ উচ্চ ঝুঁকির তালিকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২২, ০৯: ০৮
করোনা সংক্রমণ কমলেও দেশ উচ্চ ঝুঁকির তালিকায়

দেশে করোনা হানা দেওয়ার পর গত দুই বছরে দুবার ভাইরাসটির ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা দেখেছে বাংলাদেশ। এ সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বিপদ কিছুটা কমই দেখে বাংলাদেশ। ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম ও প্রতিরোধব্যবস্থায় শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ হয়ে ওঠে অন্যতম। এবার চতুর্থ ঢেউ শুরু হলেও পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে। তবু যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে সংক্রমণ বিবেচনায় উচ্চ ঝুঁকির তালিকায় নাম এসেছে বাংলাদেশের।

গত ২৮ দিনে যেসব দেশে প্রতি ১ লাখে ১০০ জনের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে, সেসব দেশ ভ্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ফলে ইউরোপের দেশ ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, স্পেন, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেক দেশের মতো সম্ভাব্য সংকটাপন্ন দেশের তালিকায় বাংলাদেশও। যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধবিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা সেন্টার ফল ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) সূত্র দিয়ে বার্তা সংস্থা সিএনএন গতকাল মঙ্গলবার এসব তথ্য জানিয়েছে।

গত বছরের এপ্রিলে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রর নাগরিকদের বাংলাদেশসহ অনেক দেশে সফরের বিষয়ে সতর্ক করেছিল সিডিসি। তবে উন্নত টিকা ব্যবস্থাপনা ও করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকার পরও যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশের নাম রাখার যৌক্তিকতা দেখছেন না রোগতত্ত্ববিদেরা।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক মুশতাক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পৃথিবীর বহু দেশের চেয়ে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো। তারপরও এমন বিধিনিষেধের কোনো যৌক্তিকতা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী আমরা উচ্চ ঝুঁকিতে নেই। কিন্তু যেখানে ইউরোপ এমনকি খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই এখনো ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা, সেখানে বাংলাদেশকে এই তালিকায় রাখার কোনো কারণ নেই।’

এদিকে গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৬২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদিন সংক্রমণের হার ছিল ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। নতুন করে প্রাণ গেছে চারজনের। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯ হাজার ২৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে। সংক্রমণের মাত্রা শূন্যে নামার সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে মুশতাক হোসেন বলেন, দেশে শনাক্ত রোগী কখনোই শূন্যে নামেনি। তবে বিভিন্ন সময় কমেছে। এবারও চতুর্থ ঢেউ আঘাত হানার পর কিছুটা বাড়লেও আবারও তা নিম্নমুখী। চলতি মাসেই শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামবে।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হয়। টানা এক বছর চলে দাপট। এরপর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শূন্যের কাছাকাছি চলে আসে। পরে তা আবার বাড়তে থাকে। একই বছরের জুন থেকে আগস্টে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি শনাক্ত ও প্রাণহানি ঘটে। তবে অক্টোবরে পরিস্থিতি আবারও নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু তিন মাস না পেরোতেই ওমিক্রন দিয়ে শুরু হয় তৃতীয় ঢেউ। তবে সেটিও খুব বেশি স্থিতিশীল থাকেনি। জুনের শুরুতে চতুর্থ ঢেউয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ।

করোনা মোকাবিলায় নিয়োজিত সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চতুর্থ ঢেউ শুরু হলেও আগের মতো গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে না। অধিকাংশ মানুষ টিকা নেওয়ায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেড়ে গেছে। ফলে ধাক্কা সামলানো যাচ্ছে।

তবে লক্ষ্যমাত্রার এখনো প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ কোনো টিকাই নেননি বলে জানা গেছে। এ ছাড়া প্রথম ডোজ নিলেও দ্বিতীয় ডোজ নেননি ৯৪ লাখের মতো। এদিকে টিকা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় নভেম্বরের পর থেকে এ দুই ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সরকারের টিকাদান বিতরণ কর্মসূচির সদস্যসচিব ডা. শামসুল হক বলছেন, নভেম্বরের পর সরকারের হাতে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা থাকছে না। এখনো বুস্টার ডোজের প্রচুর টিকা মজুত রয়েছে, আরও আসছে। এ কারণে নভেম্বরের পর থেকে বুস্টার ডোজ ছাড়া আর কোনো টিকা দেওয়া হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত