Ajker Patrika

পানি পাবে অনাবাদি জমি

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২২, ১৫: ১৫
পানি পাবে অনাবাদি জমি

দিনাজপুরের পুনর্ভবা নদীর পূর্ব-পশ্চিম পাড়ে ৩০ হাজারেরও অধিক মানুষের বাস। এখানকার কৃষকেরা চাষাবাদের জন্য নদীর পানি ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। খরা মৌসুমে সেচের সুবিধার জন্য নদীতে নির্মিত সেতু ও স্লুইস গেটটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এতে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি চাষযোগ্য হবে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর অনাবাদি জমি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, খরা মৌসুমে সম্পূরক সেচসুবিধা দেওয়ার জন্য গৌরীপুর-রাণীপুরে পুনর্ভবা নদীতে নির্মাণ করা হয় সেতু ও পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো তথা স্লুইস গেট। ৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। প্রকল্পটিতে ৪ ব্যান্ডবিশিষ্ট রেগুলেটর ৬ মিটার চওড়া, ৬ দশমিক ৫ মিটার উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে। রয়েছে ৯২ মিটার উইয়্যার (অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা)। নির্মিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ১২১ মিটার, প্রস্থ ৫ দশমিক ৩ মিটার, আর দুই পাশে সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয়েছে ৫০০ মিটার।

জানা যায়, পুনর্ভবার ভাটিতে পশ্চিম পাড়ে বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের রাণীপুর, কামদেবপুর, প্রাণপুর, বনগাঁও, শাহাপুর, ধর্মজৈন ও গোয়ালিয়াপাড়া। আর পূর্বে সদর উপজেলার গৌরীপুর, ঘুঘুডাঙ্গা ও আস্করপুর গ্রাম। নদীতীরের মানুষের অধিকাংশেরই পেশা কৃষি। কিন্তু শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় কৃষকদের চাষাবাদে বেশ বেকায়দায় পড়তে হয়। খরা মৌসুমে এসব এলাকার পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের ওপর নির্ভর করতে হয়।

এদিকে, প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও ইতিমধ্যেই এলাকাবাসী এর সুফল পেতে শুরু করেছে। তাঁরা স্লুইস গেটের ওপর নির্মিত সেতুটির ব্যবহার শুরু করেছেন। সেতু নির্মাণের আগে নদীর পশ্চিম পাড়ের বিরল উপজেলার ৮ নম্বর ধর্মপুর ইউনিয়নের প্রায় কুড়িটি গ্রামের মানুষকে ১৫-১৬ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে জেলা সদরে আসতে হতো। অফিশিয়াল কাজ ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত কিংবা চিকিৎসার জন্য দীর্ঘপথ ঘুরে আসতে হতো। দিনের বেলায় নদীর পড়ে এসে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হতো এক থেকে দেড় ঘণ্টা। বিশেষ করে রাতের বেলায় অসুস্থ রোগীদের নিয়ে পড়তে হতো চরম বিপাকে।

স্লুইস গেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতুর ওপর দিয়ে মানুষ উৎফুল্লভাবে চলাচল করছে। গেটের দুই পাড়ে উৎসুক মানুষের ভিড়, যেন একটি বিনোদনকেন্দ্র। দুই পাশেই গড়ে উঠেছে বেশ কিছু অস্থায়ী দোকানপাট। বিক্রি হচ্ছে নানা রকম ভাজাপোড়া, চায়ের দোকান, ছোট বাচ্চাদের খেলনাসামগ্রী।

বিরল উপজেলার বনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বর্তমানে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের শিক্ষক নুরুল আলম বাবুল বলেন, ‘মাত্র ১৫ মিনিটের রাস্তা অথচ ১৬-১৭ কিলোমিটার ঘুরে আমাদের শহরে আসতে হয়।’

সদর উপজেলার গৌরীপুর নিবাসী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুকনা মৌসুমে পানির লেয়ার নিচে নেমে যেত। শত শত একর জমি অনাবাদি থাকত। ১৫-২০ ফুট ছোট গর্ত করে শ্যালোমেশিন বসিয়ে সেখানে থেকে ৭০-৮০ ফুট গভীর করে ডিপটিউবওয়েল বসাতে হতো।’

দিনাজপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, গৌরীপুর স্লুইস গেটটির নির্মাণকাজ শেষ। আগামী মাসেই উদ্বোধন করা হবে। এটি নির্মাণের ফলে দুই উপজেলার প্রায় ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর অনাবাদি জমি শুষ্ক মৌসুমে চাষের আওতায় আসবে। এ ছাড়া স্লুইসগেটের ওপর দিয়ে সেতু নির্মাণের ফলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। যার সুফল এলাকাবাসী ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত