মাঠে আ.লীগ, আলোচনায় বিএনপি

তফসিল ঘোষণার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগসহ অন্য দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে ক্ষমতাসীন দলে মনোনয়ন কে পাচ্ছেন, সেদিকেই এখন সবার নজর। সিটি নির্বাচনে বিএনপি শেষ মুহূর্তে অংশ নেয় কি না, তা নিয়েও কৌতূহলী অনেকে। ফুটপাতের চায়ের আড্ডা থেকে অফিসপাড়া—সবখানেই এখন সিটি নির্বাচন আলোচনার বিষয়। স্থানীয়দের ধারণা, বিএনপি নির্বাচনে না এলে নৌকার মনোনীত প্রার্থীই হবেন পরবর্তী নগরপিতা। এভাবে মাঠে না থেকেও আলোচনায় আছে বিএনপি।

রাজধানী লাগোয়া শিল্পনগরী গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী হাওয়া এখন ঢাকামুখী। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী মেয়র প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদান এবং জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ঢাকায় বেশি সময় ব্যস্ত থাকছেন। এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার পর মহানগরীতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তোড়জোড় বেড়েছে। পবিত্র রমজান মাসের সুবিধা কাজে লাগিয়ে অনেকেই ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে, কেউবা নিজ বাসায় সাহ্‌রি খাইয়ে আবার কেউ ঈদের উপহারসামগ্রী বিতরণসহ নানাভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। 
জানা গেছে, নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় ৯ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ১০ এপ্রিল গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্ন দিয়ে গাজীপুর সিটি গঠন করেছিলেন, তা পূরণ হয়নি। নাগরিকেরা সেবাবঞ্চিত হয়েছে। নগর ভবন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। এখানে একজন যোগ্য লোক প্রয়োজন। বিগত দিনের অবদানের মূল্যায়ন করে প্রধানমন্ত্রী আমাকেই দায়িত্ব দেবেন বলে বিশ্বাস।’

একই দিন সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে ১১ এপ্রিল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কিছু লোকের মিথ্যা অপপ্রচারের কারণে তাঁকে খেসারত দিতে হয়েছে। ভুল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে তিনি দলে ফিরেছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়েও বলা হয়েছে, নির্বাচন করতে তাঁর আইনগত বাধা নেই। তাঁর বিশ্বাস, নগরবাসী তাঁর সঙ্গেই আছেন এবং এবারও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।

এর আগের দিন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, মহানগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মেজবাহ উদ্দিন সরকার রুবেল, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহম্মেদ, গাজীপুর সিটির ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল এবং সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আসাদুর রহমান কিরণ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নে কাউন্সিলরসহ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেছি। আওয়ামী লীগ যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা যথাযথভাবে পালন করেছি। তাই প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিলে আরও ভালোভাবে এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে পারব।’

নির্বাচনে প্রার্থীর বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যে কেউ দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, আমরা সবাই তাঁর পক্ষে কাজ করব।’

এদিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কৌশলগতভাবে প্রস্তুতি নিয়েও দলটির জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সাবেক সংসদ সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার এখনো নীরব রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মাঠে আমাদের অবস্থা খুবই ভালো ছিল। ফলাফল আমাদের পক্ষে আসত। কিন্তু দল যেহেতু চায় না, তাই এ বয়সে দলের বাইরে যাব না।’

সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী দলটির গাজীপুর মহানগরীর সভাপতি ও সাবেক স্বাস্থ্যসচিব এম এম নিয়াজউদ্দীন ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। তিনি ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রচারপত্র বিলি করছেন। তাঁর মতে, বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টি তার সুবিধা পাবে।

এ ছাড়া মেয়র পদে প্রার্থী আছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।

নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৫ মে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৭ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৮ মে এবং প্রতীক বরাদ্দ ৯ মে।