Ajker Patrika

দুই দশকে ভূপৃষ্ঠ থেকে উধাও কয়েক ট্রিলিয়ন টন পানি

অনলাইন ডেস্ক
ভারতে শুকিয়ে যাওয়া একটি হ্রদের মাটিতে হাঁটছেন একজন। ছবি: এএফপি
ভারতে শুকিয়ে যাওয়া একটি হ্রদের মাটিতে হাঁটছেন একজন। ছবি: এএফপি

পৃথিবীর স্থলভাগে পানির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। এটি শুধু বরফ গলার কারণেই নয়, ভূগর্ভস্থ পানি, হ্রদ, নদী এবং মাটির গভীরে সঞ্চিত পানির পরিমাণ গত দুই দশকে ট্রিলিয়ন টন হ্রাস পেয়েছে। গবেষকেরা বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদমাধ্যম সায়েন্সে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছেন।

বিপুল পরিমাণ স্বাদু পানির এই হ্রাস মূলত স্থলভাগ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। এর ফলে বিশ্বে খরা পরিস্থিতিও বাড়ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভূপদার্থবিদ কি-উইন সিও ও তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ার এই প্রবণতা চলতে থাকলে পরিস্থিতি সহজে বদলাবে না।

গবেষক দলটি ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে পৃথিবীর স্থলভাগে পানির পরিমাণ মূল্যায়নের জন্য কয়েকটি ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে—স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর মহাকর্ষ শক্তি পর্যবেক্ষণ, মাটির আর্দ্রতা পরিমাপ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং পৃথিবীর ভর বণ্টনের পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণনের ভিন্নতা পর্যবেক্ষণ অন্যতম। স্থলভাগ থেকে পানি সমুদ্রে চলে যাওয়ায় পৃথিবীর অক্ষরেখা প্রায় ৪৫ সেন্টিমিটার সরে গেছে।

গবেষকেরা বলছেন, সব তথ্য একই বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করছে। আর সেটি হলো—একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে স্থলভাগে পানির সঞ্চয় দ্রুত কমেছে। ২০০৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে স্থলভাগে পানির পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন টন কমেছে। গবেষকদের মতে, এটি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় সাড়ে ৩ মিলিমিটার বৃদ্ধির সমতুল্য।

মাটির আর্দ্রতা কমে যাওয়াকে গবেষকেরা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ এটি সরাসরি খরার সঙ্গে যুক্ত। স্যাটেলাইট ডেটা থেকে দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে মাটিতে সঞ্চিত পানির পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন টন কমে গেছে। এই পানি প্রতি বছর প্রায় দুই মিলিমিটার করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করেছে।

আবার, ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে বছরে প্রায় ৯০০ বিলিয়ন টন পানি সমুদ্রে পড়েছে বা প্রায় দশমিক ৮ মিলিমিটার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়েছে, যা মাটির আর্দ্রতা হ্রাসের তুলনায় অনেক কম। আগে মনে করা হতো, গ্রিনল্যান্ডই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বার্ষিক সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে।

পরিস্থিতি পরবর্তী বছরগুলোতেও অব্যাহত ছিল, যদিও কমার হার কিছুটা কমেছিল। ২০০৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে মাটি থেকে আরও প্রায় ১ ট্রিলিয়ন টন পানি চলে গেছে। এই পানি হ্রাসের প্রধান কারণ হলো—বায়ুমণ্ডল ও সমুদ্রপৃষ্ঠ উভয়ের তাপমাত্রা বৃদ্ধি। গত কয়েক দশকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তিত হয়েছে এবং বাষ্পীভবন ও প্রস্বেদন (উদ্ভিদ থেকে জলীয় বাষ্প নির্গমন) বেড়েছে।

প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প স্বল্প সময়ের জন্য তীব্র বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে। কিন্তু সেই পানি সাধারণত মাটিতে প্রবেশ করে না। এর বেশির ভাগই চুঁইয়ে হিসেবে দ্রুত সাগরে চলে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী ক্যাথারিন জ্যাকবস বলেছেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেসব এলাকা উচ্চ তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনের কারণে শুষ্ক হচ্ছে, সেগুলোর আকার বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির কারণে যেসব এলাকা ভেজা হচ্ছে তার চেয়ে বড় হচ্ছে।

জ্যাকবস আরও বলেন, একই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানির চাহিদাও বাড়ছে। জ্যাকবস মনে করেন, যারা পানি নিয়ে কাজ করেন তাদের অধিকাংশই ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সম্পর্ক সম্পর্কে অবগত নন। যদি তারা এই সংযোগ জানেনও, সম্ভবত তারা বোঝেন না যে, এই পরিবর্তন পরিমাপযোগ্য এবং এটি পৃথিবীর অক্ষের হেলে পড়াকেও প্রভাবিত করছে।

গবেষকেরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে দেখলে শতাব্দীর শুরু থেকে পৃথিবীর মাটিতে মোট পানির পরিমাণ কমছে। এবং ভবিষ্যতের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই পানির ঘাটতি পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কম। নাসার গডার্ড ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজের জলবায়ু মডেল গবেষক বেঞ্জামিন কুক এই ফলাফলকে উদ্বেগজনক বলেছেন। তিনি বলেন, ‘সবকিছুর জন্য পানি প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পানি না থাকলে আমরা বিপদে পড়ব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত