Ajker Patrika

দুজন মানুষের সমান হয় যেসব কাঁকড়া

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৫: ৪৫
Thumbnail image

প্রশান্ত মহাসাগরের জাপান অংশে দেখা মেলে বিশাল এক জাতের কাঁকড়ার। এদের এক পায়ের ডগা থেকে আরেক পায়ের ডগা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ১২ ফুট। প্রথম দৃষ্টিতে একে মনে হবে প্রাগৈতিহাসিক কোনো প্রাণী, যে কিনা পুরোনো দিনের বিজ্ঞান কল্পকাহিনির কোনো দৃশ্য থেকে উঠে এসেছে।

এই কাঁকড়াদের নিয়ে নানা ধরনের গল্পগাথা আছে, এর মধ্যে অন্যতম বিশাল পা দিয়ে সাগরতলে মানুষ টেনে নেওয়ার কিংবদন্তি। কিন্তু বাস্তবে সাগরের নাবিকসহ জাপানের উপকূলের মানুষের কাছে এই কাঁকড়া পরিচিত জেন্টল জায়ান্ট নামে। কারণ আচার-আচরণে একেবারেই ভদ্র। দেখতে বিশাল আকারের মাকড়সার সঙ্গেও বেশ মিল পাবেন, যদিও এত বড় মাকড়সা হয় না। এমন চেহারার কারণেই এদের নাম জাপানিজ স্পাইডার ক্র্যাব।

সাধারণত ২৬০ থেকে ২০০০ ফুট গভীরতার সাগরতলের মাটিতে এরা ঘুরে বেড়ায়। সেখানকার বিভিন্ন গর্তেও এদের দেখা পাবেন। সাগরের গভীরে বাস। দশটা বিশালকায় পা আর কাঁটাময়, শক্তিশালী বহিঃকংকাল থাকায় এদের প্রাকৃতিক শত্রু থাকে কমই। তবে অক্টোপাস কিংবা স্টিং রের মতো প্রাণীরা কখনো কখনো বেশ ঝামেলা তৈরি করে।

জাদুঘরে জাপানিজ স্পাইডার ক্র্যাবএদের এক পা থেকে আরেক পায়ের ডগার দূরত্ব দুজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈর্ঘ্যের যোগফলের চেয়ে বেশি। সাধারণত এটা হয় ১২ ফুটের মতো। তবে ২০০৯ সালে যে কাঁকড়াটি প্রশান্ত মহাসাগরে ধরা পড়ে, সেটি ১২ ফুটের চেয়েও বড় ছিল। শত্রু কিংবা অন্য কাঁকড়াদের মোকাবিলার জন্য পুরুষ জাপানি স্পাইডার ক্র্যাবদের পা কিংবা দাঁড়াগুলো আকারে থাকে বড়। স্ত্রী কাঁকড়াদের শরীরটা তুলনামূলক চওড়া, গোলাকার ধরনের। মূলত ডিম ধারণ করার জন্য শরীরের গঠন এমন হয় তাদের।

জাপানিজ স্পাইডার কাঁকড়াদের মরাভোজী বলতে পারেন। সাধারণত শিকার করতে দেখা যায় না তাদের। মৃত প্রাণী আর উদ্ভিদের খোঁজে সাগরতলে ঘোরাফেরা করাটাই তাদের পছন্দ। 

গায়েগতরে বিশাল হলে কী হবে, মানুষ এদের শিকার করে খায়। বিশেষ করে এদের লম্বা পায়ের সুস্বাদু মাংস জাপানিদের ভারি পছন্দ। তবে প্রজননের সময় এ ধরনের কাঁকড়া ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। 

এদের এক পা থেকে আরেক পার ডগার দূরত্ব দুজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈর্ঘ্যের যোগফলের চেয়ে বেশিমজার ঘটনা, এই কাঁকড়ারা সাজসজ্জার জন্যও বিখ্যাত। এমন কাঁকড়ারা পরিচিত ‘ডেকোরেটেড ক্র্যাব’ নামে। সাগরতলে নামার সুযোগ হলে দেখবেন এরা নিজেদের খোলে জড়িয়েছে স্পঞ্জ, বিভিন্ন উদ্ভিদ ও সি-এনিমনদের। এ ধরনের সাজসজ্জা এদের পরিবেশের সঙ্গে মিশে শিকারি প্রাণীদের থেকে আত্মরক্ষা করতে বা লুকিয়ে পড়তে সাহায্য করে। 

এই কাঁকড়াদের আরেকটি মজার ঘটনা ঘটে। পাগুলো অস্বাভাবিক দীর্ঘ হওয়ায় কখনো কখনো মাছ ধরার জালে আটকে কিংবা কোনো হিংস্র শিকারি প্রাণীর কামড়ে ছিঁড়ে যায়। তবে এতে এই কাঁকড়ারা কুছ পরোয়া করে না। কারণ একসময় এই পা আবার গজিয়ে যায়। এদের লম্বা পাসহ অস্বাভাবিক চেহারাটা যে কাউকে ঘাবড়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে এরা বেশ শান্ত প্রাণী, চলাফেরায়ও খুব গতিসম্পন্ন নয়। 

ফিলিপাইনের ম্যানিলা ওশান পার্কে জাপানিজ স্পাইডার ক্র্যাবএকবারে এই কাঁকড়ারা ১৫ লাখের মতো ডিম পাড়ে। যদিও এদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যকই বাচ্চায় পরিণত হতে পারে না। ডিম আর বাচ্চার মধ্যে অবশ্য এদের লার্ভার একটি স্টেজ পেরোতে হয়। এদের মূল শরীর মানে শক্ত বহিঃ আবরণ একটা সীমার পর আর বড়ো হয় না। তবে পা লম্বা হতে থাকে। এমিনিতে এরা বেশ গভীর জলের (সাগরের) প্রাণী হলেও প্রজননের সময় অগভীর পানিতে চলে আসে। সাধারণত সময়টা জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। 

এবার এই কাঁকড়াদের সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। এদের জাপানি নাম টাকা–আসি–গানি, যার অর্থ ‘লম্বা পায়ের কাঁকড়া’। সাধারণত সাগরের ৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় এদের বাস। এদের ওজন কম নয়, ৪০ পাউন্ডের বেশি। কাঁকড়াদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘজীবী যেসব প্রজাতি, তার একটি এরা। বাঁচে ১০০ বছর পর্যন্ত। 

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ফ্যাক্ট এনিমেল ডট কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত