Ajker Patrika

গাঁজা গাছ দিয়ে নির্মাণ হচ্ছে পরিবেশবান্ধব টেকসই বাড়ি

গাঁজা গাছ দিয়ে নির্মাণ হচ্ছে পরিবেশবান্ধব টেকসই বাড়ি

যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজশায়ারে সবুজ মাঠে ঘেরা একটি ফ্ল্যাট। দূর থেকে দেখে মনে হয় শস্যাগার, কিন্তু ভেতরে প্রবেশের পর ডিজাইন আর জাঁকজমক দেখে আপনি চমকে যাবেন। আরও অবাক হবেন যখন জানবেন, বাড়িটা গাঁজার গাছ দিয়ে তৈরি। গাঁজার গাছের খড়ি দিয়ে বানানো বাড়িটিতে বেশ আলো-বাতাস চলাচল করে, সঙ্গে আরামদায়ক তো বটেই। 

এ বিষয়ে বাড়িটির মালিক জেমা ব্যারন বলেন, ‘বাড়িটির দেয়ালগুলো আমাকে ছোটবেলায় পাটখড়ি দিয়ে ঘর বানানোর দিনগুলো মনে করিয়ে দেয়। এমন বাড়িতে বাস করা বেশ আরামদায়ক। গত বছর শীতকালে ২৪ ঘণ্টাই ঘর গরম ছিল, ফলে আমাদের হিটিং মেশিন চালুই করতে হয়নি।’ 

গাঁজাকে এত দিন সাইকোঅ্যাকটিভ মাদক হিসেবে এবং স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকলেও এবার পরিবেশবান্ধব ও টেকসই বাড়িঘর তৈরির নির্মাণসামগ্রী হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।হেম্পক্রিটকে কংক্রিটের মতো টেকসই উপকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কম-কার্বন বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

দ্রুত বর্ধনশীল গাজার গাছ একটি নবায়নযোগ্য সম্পদ। এর কার্বন শোষণ ক্ষমতাও বেশি। যখন বাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়, তখন এটিকে সাধারণত ‘হেম্পক্রিট’ বা লাইম হেম্প কংক্রিটে পরিণত করা হয়। এটি তৈরি করা হয় গাঁজার গাছের কাণ্ড, শিকড়, পানি এবং চুনের মিশ্রণে। হেম্পক্রিট ভবনকে শক্তিশালী এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করে। এটি অক্ষত থাকা অবস্থা পর্যন্ত কার্বন শোষণ করতে থাকে। 

সারা বিশ্বের নির্মাণশিল্প এখন কার্বনমুক্ত বাড়ি তৈরির প্রক্রিয়ার দিকে ঝুঁকছে, ফলে টেকসই উপকরণের চাহিদা বাড়ছে। ভবন এবং নির্মাণশিল্প প্রায় ৩৭ শতাংশ বৈশ্বিক কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের জন্য দায়ী। এই শিল্প উৎপাদন প্রক্রিয়ায় গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরিত হয় এমন পদার্থ যেমন—কংক্রিট, ইস্পাত এবং কাচের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এমনটি হচ্ছে।

গাঁজার শণের কার্বন শোষণের মতো গুণকে কাজে লাগিয়ে নানা দেশ নির্মাণশিল্পকে আরও টেকসই ও কার্বন নির্গমন মুক্ত করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

যুক্তরাজ্যের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের জলবায়ু অ্যাকশনের প্রধান ইয়েতুন্দে আবদুল বলেছেন, ‘বিল্ডিং ডিজাইন, নির্মাণ এবং সংস্কারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়, এটি হ্রাসে হেম্পক্রিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, যা যুক্তরাজ্যকে জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষম করবে।’গাঁজার শণের দেয়ালের উচ্চ তাপীয় ভরের কারণে হেম্পক্রিটের ফ্ল্যাট বাড়িতে শীতকালে গরম থাকে।

ইউরোপীয় কমিশনের মতে, এক হেক্টরের গাঁজার বাগান ৯ থেকে ১৫ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে থাকে। গাঁজার গাছ বাড়তেও সময় নেয় মাত্র পাঁচ মাস। যার অর্থ কার্বন শোষণের ক্ষেত্রে সাধারণ বাণিজ্যিক বনায়নের চেয়ে এটি এগিয়ে। মাটি উর্বর করতে এবং মাটি থেকে ভারী ধাতু অপসারণেও গাঁজার গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

তবে নির্মাণশিল্পে গাঁজার শণের ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরুর আগে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, সরকারের আইন, প্রযুক্তিগত সনদ এবং গাঁজার চাষ বৃদ্ধি, সরবরাহ, সাশ্রয়ী করার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল এবং অবকাঠামোর পরিবর্তন। 

বর্তমানে গাঁজা গাছের হেম্পক্রিট দিয়ে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকাতে স্বল্প বাজেটে বাড়ি তৈরি করছেন পরিবেশ নিয়ে সচেতন স্থপতিরা। এসব অঞ্চলে গাঁজার ওপর নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাঁরা এটি করতে পারছেন। 

হেম্পক্রিট কংক্রিটের মতো স্তরে স্তরে স্থাপন করা যায় না। কাঠ বা পাথরের মতো ভার বহনকারী উপকরণের সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এটি পেট্রোকেমিক্যাল-ভিত্তিক উপকরণ ফাইবারগ্লাস এবং ফোম বোর্ডের চেয়ে কার্বন নিঃসরণ কম করে থাকে। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজশায়ারের হেম্পক্রিট দিয়ে তৈরি করা ফ্ল্যাট বাড়ি।

কেমব্রিজশায়ারে ২০২০ সালে ফ্ল্যাট বাড়িটি নির্মাণ করে লন্ডনের গবেষণা ও ডিজাইন স্টুডিও ‘ম্যাটেরিয়াল কালচার’। সংস্থাটির সহপ্রতিষ্ঠাতা সামার ইসলাম বলেছেন, ‘হেম্পক্রিট সবকিছুই করে। উচ্চ তাপধারণ ক্ষমতার কারণে এটি উত্তপ্ত হয় এবং ধীরে ধীরে তাপ ছাড়ে। পাশাপাশি দিনের বেলা বাড়ির ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি হাইড্রোস্কোপিক হওয়ার ফলে আর্দ্রতা শোষণ করে এবং ছাড়ে।’ 

কেমব্রিজশায়ারের বাড়িটিতে ব্যবহৃত গাঁজার শণ মার্জেন্ট ফার্মের আশপাশের জমি থেকে নেওয়া হয়েছিল। ম্যাটেরিয়াল কালচারস এই প্রকল্পকে ‘চক্রাকার বাস্তুতন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়েছে। আগে থেকেই করে রাখা প্যানেলের তাকে হেম্পক্রিট বসিয়ে বাড়িটির দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরের ভেতরে হেম্পক্রিটের ওপর কোনো পালিশ দেওয়া হয়নি। এ কারণে বাইরে থেকে দেখতে খড়ের গাঁটের মতো লাগে। অনেকটা পল্লি এলাকার বেড়ার বাড়ির মতো। 

হেম্পক্রিটের একটি অপূর্ণতা হলো এটি বৃষ্টির সংস্পর্শে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ নিয়ে কাজ করছে ম্যাটেরিয়াল কালচারস। প্রতিষ্ঠানটি গাঁজার গাছের ফাইবারকে প্রাকৃতিক চিনির রেজিন দিয়ে তাপীয়ভাবে সংকুচিত করে বৃষ্টি প্রতিরোধী ক্ল্যাডিং প্যানেল তৈরি করছে। 

গাঁজা গাছের শিকড় ছাড়াও বাইরের আঁশযুক্ত ত্বকের ব্যবহারও বেড়েছে। বাস্ট ফাইবার নামে পরিচিত এই অংশ এরই মধ্য মহাকাশ এবং গাড়ি নির্মাণ শিল্পে ফাইবারগ্লাসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ম্যাটেরিয়াল কালচার পূর্ব–সাসেক্সের লুয়েসে নতুন ফিনিক্স প্রকল্পেও গাঁজার শণ ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। 

অবশ্য হেম্পক্রিট নতুন কোনো আবিষ্কার নয়; এটি হাজার হাজার বছর ধরে ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। যাইহোক, গত শতাব্দীতে আরও আধুনিক নির্মাণসামগ্রীর উত্থান হয়েছে। তবে গাঁজা বিনোদনে ব্যবহার হওয়ায় এর শণ ব্যবহারে নানা নিষেধাজ্ঞা এসেছে। 

তবে ফ্রান্সে গাঁজা চাষ কখনোই বেআইনি ছিল না, ফলে নির্মাণশিল্পে গাঁজার ব্যবহারে দেশটি বিশ্বে শীর্ষে। ২০ শতকের শেষের দিকে হেম্পক্রিট আধুনিক প্রযুক্তিতে উৎপাদন শুরু হয় দেশটিতে। ফলে এ উপাদান ব্যবহার করে ফ্রান্সে বহু ভবন নির্মিত হয়েছে। 

হেম্পক্রিট দিয়ে ২০২০ সালে প্যারিসে সামাজিক আবাসন প্রকল্পের সাত তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মিত হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছিল প্যারিসভিত্তিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘ব্রাগো ফ্রেস্কো’। প্রতিষ্ঠানটি আগের দশকেও বিভিন্ন স্থাপনায় হেম্পক্রিট ব্যবহার করেছিল। তবে এই প্রকল্পে এটির ব্যবহার ছিল সবচেয়ে বেশি। 

ব্রাগো ফ্রেস্কোর সহপ্রতিষ্ঠাতা থিবাউট ব্রাগো হেম্পক্রিটকে ‘স্থাপত্যগুণ সম্পন্ন’ বলে বর্ণনা করেছেন। 

সামার ইসলাম বলেন, যুক্তরাজ্যে বড় পরিসরে গাজার শণ দিয়ে বাড়ি নির্মাণ প্রকল্প নেওয়ার এখনো কোনো উদ্যোগ নেই। এর জন্য যন্ত্রপাতি খুবই ব্যয়বহুল এবং সবখানে পাওয়া যায় না। এই পরিস্থিতিতে গাঁজার শণের ব্যবসা, অবকাঠামোর উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উপাদানের ব্যবহারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এটি না হওয়া পর্যন্ত হেম্পক্রিট ব্যয়বহুল এবং দুষ্প্রাপ্য উপাদান থেকে যাবে। 

গাঁজা চাষে নিষেধাজ্ঞা বাতিল ও এর বহুমুখী ব্যবহারের ফলে হেম্পক্রিটের ব্যবহার বাড়ছে। যদিও বর্তমানে প্রাথমিকভাবে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় এর চাষ হচ্ছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালে শণের জন্য গাঁজার চাষ ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। আর এ সময় ফ্রান্সেই মোট হেম্পের ৭০ ভাগ উৎপাদন হয়েছে। 

গত বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘ একটি প্রতিবেদনে গাঁজার শণ শিল্পের নানা সুবিধার তুলে ধরা হয়। জাতিসংঘ পরামর্শ দিয়েছে, গাঁজার শণের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে দেশগুলোকে আইনি অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর সীমাবদ্ধতা কাটাতে হবে এবং উৎপাদন ব্যবস্থার সুবিধার্থে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

বিবিসি অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার বাতাসে দূষণ বেড়েই চলেছে, সবচেয়ে দূষিত লাহোর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৪৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

হেমন্তের শুষ্ক দিনগুলোতে ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার বায়ুমান সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে আছে।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজকের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ১৯১।

বায়ুদূষণের শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় আজ তৃতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা।

আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে আছে পাকিস্তানের লাহোর। শহরটির বায়ুমান আজ ৪২১, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো, ভারতের দিল্লি ও কলকাতা এবং পাকিস্তানের করাচি। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৬৯, ১৭৬ ও ১৬৫।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ০৯
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ বেশ কিছু এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে। তবে খুব বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজ সকালের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মোন্থা আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি ২৭ অক্টোবর মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এটি ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা অথবা রাত নাগাদ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এভাবে বৃষ্টি ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চলতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

এদিকে আজ ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে বলে আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। তবে দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ কত দূরে, কোন উপকূলে কখন হানবে আঘাত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।

আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আজ (২৭ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি আগামীকাল ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা বা রাত নাগাদ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

এদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) জানিয়েছে, শেষ ৬ ঘণ্টায় দক্ষিণ-পশ্চিম এবং সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার গতিতে স্থলভাগের দিকে এগোচ্ছে মোন্থা। সর্বশেষ বুলেটিন অনুসারে, দুপুরে চেন্নাই থেকে ৪৪০ কিলোমিটার পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বে, কাকিনাড়া থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং বিশাখাপট্টনম থেকে ৫৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্ব এবং গোপালপুর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে অবস্থান করছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকালের মধ্যে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হবে। ‘প্রবল’ আকারেই মঙ্গলবার রাতে অন্ধ্র প্রদেশের মছলিপট্টনম এবং কাকিনাড়ার কাছে কলিঙ্গপট্টনম উপকূলের মধ্যবর্তী অংশে আছড়ে পড়বে। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার বেগ ছুঁতে পারে ১১০ কিলোমিটারের গণ্ডি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৪২
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’য় পরিণত হয়েছে। এটি দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় বর্তমানে অবস্থান করছে।

এটি আজ সোমবার ভোর সাড়ে ৫টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মোন্থা’ ২৭ অক্টোবর রাত সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থকে ১৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থকে ১৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থকে ১২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থকে ১২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। ‘মোন্থা’ আগামীকাল মঙ্গলবার ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা অথবা রাতের দিকে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে পরর্বতী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, ‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। যার কিছুটা প্রভাব বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে আঘাত হানতে পারে কাল সন্ধ্যা বা এর পরবর্তী সময়। আজ বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়বে না। তবে কাল আঘাত হানার সময় বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। রাজধানী ঢাকায়ও কাল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘মোন্থা’ প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ বেশ কিছু অঞ্চলে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।

এদিকে আজ সকাল ৭টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। উত্তর উত্তরপূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৫-১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত